সার্কের মূলনীতি || Principles of SAARC

সার্কের মূলনীতি 

সার্কের মূলনীতিগুলো হলো : 

১. এ সংস্থার যেকোনো সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হবে। 

২. দ্বিপক্ষীয় বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো এ সংস্থায় তোলা হবে না।

৩. আঞ্চলিক অখণ্ডতা , সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করার নীতি এবং পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার নীতিকে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।

৪. এ অঞ্চলের দেশগুলোর আশা - আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ্য রেখে সার্ক ভূমিকা গ্রহণ করবে।


 সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য 

 ‘ সার্ক সনদ ' এবং ' ঢাকা ঘোষণা অনুযায়ী সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নিম্নরূপ:

১. দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ সাধন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।

২. অর্থনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা , বিজ্ঞান ও কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতা দান।

৩. সার্কভুক্ত দেশসমূহের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে যৌথ প্রচেষ্টা গ্রহণ।

৪. বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ , আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থাপন ও বৃদ্ধি। 

৫. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ - সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও অনুকূল অবস্থান গ্রহণ। 

৬. একে অপরের সার্বভৌমত্ব , ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা ও স্বাধীনভাবে চলার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা , অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা।
সার্কের মূলনীতি

সার্ক সচিবালয় 

সার্ক সচিবালয় নেপালের রাজধানী কাঠমাভুতে অবস্থিত। ১৯৮৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সার্ক সচিবালয়ের উদ্বোধন করা হয় । সার্ক সচিবালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে সার্কের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবাহন ও মনিটর করা, সংস্থার বিভিন্ন সভায় কার্যকর ভূমিকা পালন করা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সার্কের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। একজন সেক্রেটারি জেনারেল, ৭ জন পরিচালক এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা - কর্মচারী নিয়ে সার্ক সচিবালয় গঠিত হয়। 


সার্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক 

সার্কের বর্তমান ৮ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের সাথেই সার্কের ইতিহাস সবচেয়ে নিবিড়। সার্কের সাথে এ দেশের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার প্রথম সার্ক গঠনের উদ্যোগ নেয় ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের উদ্দ্যোগে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কের কারা শুরু হয়। 

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সার্কের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ৭ ও ৮ ডিসেম্বর । এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান । পরবর্তীকালে ১৯৯৩ সালে সন্ধ্যা শীর্ষ সম্মেলন ও ২০০৫ সালে ত্রয়োদশ শীর্ষ সম্মেলনও ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় । তিনটি সসোলনেই নতুন আশাবাদ ও কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়। সার্কের উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশ সার্কের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বলিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সার্কের সদস্য হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা - বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ভারসাম্য রক্ষা , আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান সংকট সমাধানে বাংলাদেশ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । 

এছাড়া সদস্য দেশগুলোতে মানবপাচার রোধ , সন্ত্রাস দমন , পরিবেশ সংরক্ষণ , যোগাযোগ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন , রোগ ব্যাধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ । এসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতায় নানা ধরনের যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে । এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্কের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করার জন্য বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সারা বিশ্বের বিভিন্ন আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে গঠিত জোট ও সংস্থাগুলোর মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয় সার্ক ( SAARC )। পারস্পরিক সংহতি , সৌহার্দ্য , সহযোগিতা , উন্নয়ন , প্রগতি , সমৃদ্ধি ও শান্তি এসব মূলনীতিকে সামনে রেখে সার্ক গঠিত হয়েছে । ১৯৮৫ সালের ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে সংস্থাটি যাত্রা শুরু করেছিল সেটি তার দীর্ঘ পথ চলার সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সাধন করেছে এবং তা এ অঞ্চলের সহযোগিতার ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে সমান সহযোগিতার কথা বলা হলেও ভারত এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র হওয়ায় সার্কের কার্যকর মনোভাব ও উন্নয়নমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশটির ভূমিকা সিদ্ধান্তমূলক ও অগ্রগণ্য। 

এক্ষেত্রে ভারতের কার্যক্রমের ওপর সংস্থাটির বিকশিত হয়ে ওঠা অনেকাংশে নির্ভর করে। ত্রয়োদশ সার্ক সম্মেলনে আফগানিস্তানের সদস্যপদ প্রাপ্তি এবং চীন ও জাপানের পর্যবেক্ষক দলের যোগ্যতা অর্জন সার্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। নিজেদের ভুল - ত্রুট আর হিংসাত্মক মনোভাব ভুলে শুধু আঞ্চলিক স্বার্থকে বিবেচনায় এনে পারস্পরিক সহযোগিতা অর্জন করতে পারলেই সার্কের কার্যক্রমে গতি আসবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url