ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি || Micro and Macro Economics
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি
বর্তমানকালে অর্থনীতির আওতা অনেক প্রসারিত। অর্থনীতির বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও বাস্তব ধারণাকে সম্যকরূপে উপলব্ধি করার জন্য এর বৃহৎ আওতাকে ১৯৩৩ সালে ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাগনার ফ্রিশ (Ragner Frisch) ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Micro Economics) ও সামষ্টিক অর্থনীতি (Macro Economics) নামে দুভাগে বিভক্ত করেন। বর্তমানে জটিল অর্থনৈতিক সমস্যার আলোচনার ক্ষেত্রে এ শব্দ দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি
ব্যষ্টিক শব্দটি ইংরেজি Micro ও গ্রিক Mikros এর শাব্দিক অর্থ। এর বাংলা অর্থ অতি ক্ষুদ্র (Very small)। অর্থনীতির প্রতিটি এককের আচরণ ও কার্যকলাপ যখন পৃথক পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। যেমন— ব্যক্তিগত - চাহিদা, যোগান, আয়, ভোগ, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং কোনো একটি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের আয় - ব্যয়, মুনাফা প্রভৃতি ব্যষ্টিক অর্থনীতির উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য।
অধ্যাপক মরিস ডব - এর মতে, "অর্থনীতির আণুবীক্ষণিক (microscopic) অবলোকন ও বিশ্লেষণকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।"
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও. এম. এমোস (Orley M. Amos JR) - এর মতে, "ব্যষ্টিক অর্থনীতি হলো অর্থনীতির একটি শাখা যা অর্থনীতির একটি অংশ আলোচনা করে।"
ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় নিয়ে প্রবাহচিত্রে দেখানো হলো:
উপরোক্ত সংজ্ঞাসমূহ ও প্রবাহচিত্র থেকে বোঝা যায় যে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককের পৃথক পর্যালোচনা সঙ্গে সীমিতভাবে এককগুলোর যৌথ পর্যালোচনাও ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে স্থান পায়।
সামষ্টিক অর্থনীতি
সামষ্টিক শব্দের ইংরেজি শব্দ Macro এবং গ্রিক শব্দ Makros যার বাংলা অর্থ বড় বা সামগ্রিক (Large বা whole)। অর্থনীতির আওতাভুক্ত কোনো বিষয়কে যখন সামগ্রিক বা জাতীয় পর্যায়ে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। অর্থনীতির যেকোনো বিষয়ের সব এককের আচরণ বা কার্যাবলি সমষ্টিগতভাবে আলোচনা জাতীয় করা হয় এ শাখায়। যেমন — সামগ্রিক চাহিদা, সামগ্রিক যোগান, সামগ্রিক ভোগ, সাধারণ মূল্যস্তর, মজুরি স্তর, আয়, সামগ্রিক বিনিয়োগ ব্যয়, জাতীয় সঞ্চয়, নিয়োগ স্তর প্রভৃতি সামষ্টিক অর্থনীতির উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃত।
অধ্যাপক হেন্ডারসন (Henderson) এবং কুয়ান্ট (Quandt) - এর মতে, "সামষ্টিক অর্থনীতি আলোচনা করে সামগ্রিক বিষয়াদি যেমন মোট কর্মসংস্থান, জাতীয় আয় প্রভৃতি।"
ও. এম. এমোস (Orley M. Amos JR) - এর ভাষায়, "Macro Economics is the branch of Economics that studies the entire economy."
অর্থাৎ সামষ্টিক অর্থনীতি হচ্ছে অর্থনীতির শাখা যা সমগ্র অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে।"
অধ্যাপক স্যামুয়েলসন ও নরড্যুস - এর মতে, "বাহ্যিক চলককে অনিয়ন্ত্রিত ধরে নিয়ে অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে সামগ্রিক লক্ষ্যে উপনীত হবার প্রচেষ্টা যে বিষয়ের মাঝে নিহিত, তাই হলো সামষ্টিক অর্থনীতি।"
সামষ্টিক অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় নিম্নের প্রবাহচিত্রে দেখানো হলো:
আলোচনা থেকে ধারণা লাভ করা যায় যে, সামষ্টিক অর্থনীতি পুর্ণ নিয়োগ, বেকার সমস্যা, সামগ্রিক ভোগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত তত্ত্ব/সমস্যা, অর্থের চাহিদা ও যোগান, সামষ্টিক বন্টন ধারণা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা সংকোচন, মুক্তবাজার অর্থনীতি, বাণিজ্য চক্রের, উত্থান-পতনসহ অর্থনৈতিক জীবনের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করে।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি সমান্তরাল ধারায় প্রবাহিত। উভয়েই সমমর্যাদা সম্পন্ন হলেও এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
বিষয়বস্তু | ব্যষ্টিক অর্থনীতি | সামষ্টিক অর্থনীতি |
---|---|---|
১. সংজ্ঞা | অর্থনীতির যে শাখায় অর্থব্যবস্থার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। | অর্থনীতির যে শাখায় অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। |
২. অর্থ | ব্যষ্টিক বা Micro শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। | সামষ্টিক বা Macro শব্দের অর্থ বৃহৎ। |
৩. উদ্ভব | Micro শব্দটি গ্রিক শব্দ Mikros হতে উদ্ভূত। |
Macro শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ Makros হতে উদ্ভূত। |
৪. আলোচনা | এখানে অর্থনীতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। | এখানে অর্থনীতির সামগ্রিক দিকের উপর আলোকপাত করা হয়। |
৫. পরিধি | ব্যষ্টিক অর্থনীতির আওতা ও পরিধি ক্ষুদ্র। | সামষ্টিক অর্থনীতির আওতা ও পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। |
৬. যোগসূত্র | পৃথক পৃথকভাবে সমস্যা আলোচনা করা হয় বিধায় এদের মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকে না। | সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয় বলে এদের মধ্যে যোগসূত্র থাকে। |
৭. চিত্র | এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির খন্ড বা আংশিক চিত্র পাওয়া যায়। | এর মাধ্যমে দেশের অর্থব্যবস্থার সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায়। |
৮. মূল ও মূল্যায়ন | এর মাধ্যমে কোনো সমস্যার মূলে প্রবেশ করা যায়। | এর মাধ্যমে সমস্যার সামগ্রিক মূল্যায়ন করা হয়। |
৯. ভূল সিদ্ধান্ত | ব্যষ্টিক অর্থনীতি অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত দেয়। | পক্ষান্তরে, এতে ব্যষ্টিক অর্থনীতির তুলনায় ভুল সিদ্ধান্ত কম হয়। |
১০. পূর্ণ নিয়োগ | ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে দেশে পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা বিরাজমান বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এটি অবাস্তব ধারণা। | অপরদিকে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে কখনোই দেশে পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা ধরে নেওয়া যায় না। |
১১. গুরুত্ব | অর্থনীতির যেকোনো একক খাত বা বিষয়কে উত্তমরূপে বিশ্লেষণের জন্য ব্যষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্ব রয়েছে। | কোনো দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্ব রয়েছে। |
১২. সমর্থক | ক্লাসিক্যাল ও নিওক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ এর সমর্থক। | আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ সামষ্টিক অর্থনীতির সমর্থক। |
বিশ্লেষণ পদ্ধতি ও বিষয়বস্তুর দৃষ্টিকোণ হতে বিচার করে ওপরের আলোচনার মাধ্যমে ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন পার্থক্য সম্বন্ধে অবগত হলেও এদের মধ্যে কোনো মৌলিক বিরোধ নেই। ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি পরস্পরের প্রতিযোগী নয় বরং পরিপূরক।
তাই অধ্যাপক পি. এ. স্যামুয়েলসন (P.A. Samuelson) মন্তব্য করেন, "There is really no opposition between Micro and Macro Economics . Both are absolutely vital."
অর্থাৎ ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সত্যিকার কোনো বিরোধ নেই। উভয়ই অতীব প্রয়োজনীয়।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ G. Ackley (অ্যাকলে'র) মতে, "ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য করা যায় না। অর্থনীতির সাধারণ আলোচনায় এ দু'ধরনের বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।"
সুতরাং বলা যায়, অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সঠিক বিশ্লেষণ ও সমাধানের জন্য ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি একে অপরকে সাহায্য করে।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির পারস্পরিক গুরুত্ব
সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদার পরিধি, বিষয়বস্তু, প্রকৃতি ও পরিমাণের অর্থাৎ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের পরিবর্তন ও প্রসার ঘটছে। দিন দিন মানুষের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ( Plato. 427-347B.C.) বিশ্বাস করেন যে, শ্রমরিভাগই হলো মানবীয় কার্যাবলির কেন্দ্রীয় বিষয় এবং সেই শ্রমবিভাগের উৎপত্তি ঘটে মানুষে মানুষে প্রকৃতিগত বৈষম্যের কারণে। এরিস্টটল (Aristotle, 384 322. B.C) দার্শনিক প্লেটোর ছাত্র। তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তি , সামাজিক সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তির কারণ এসব বিষয়ে তাঁর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নিজস্ব দর্শন প্রকাশ করেন। এভাবে দর্শনের পরিবর্তন হতে থাকে।
মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার প্রক্রিয়াগত বিবর্তন সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। St. Thomas Aquinas- এর "Just Price" এবং সুদের হার সম্পর্কিত বিশ্লেষণ ১২০০ সালে ও তার পরবর্তীতে বিকাশ লাভ করে। দু’হাজার বছর পূর্ব থেকে অর্থনৈতিক চিন্তাধারার সূচনা হলেও ১৭৭৬ সালে Adam Smith- এর "The Wealth of Nations" গ্রন্থ প্রকাশের পর এর বিষয়ভিত্তিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৮ শতকের "Political Economy", ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নতুন নামকরণের মাধ্যমে "Economics" নামে চালু হয়।
বর্তমানে অর্থনীতি শুধুমাত্র মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণই করে না, সমস্যা সমাধানের পথও নির্দেশ করে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, মিতব্যয়িতা প্রভৃতি বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য এবং ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সমাজকর্মী, শ্রমিকনেতা, রাজনীতিবিদদের জ্ঞান আহরণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে অর্থনীতির তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক ধারণা লাভ করা প্রয়োজন। অর্থনীতির এ ব্যাপকতাকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করার প্রয়োজনে ১৯৩৩ সালে Ragner Frisch অর্থনীতিকে দু'ভাগে বিভক্ত করে। Micro এবং Macro Economics নামে দুটি প্রধান শাখায় ভাগ করেন ।
এক্ষেত্রে Micro economics বা ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন ধারণা বা বিষয়কে ক্ষুদ্র ও খণ্ডিত এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ের সামগ্রিক বিশ্লেষণ এখানে অনুপস্থিত। অন্যদিকে অর্থনীতির বিভিন্ন ধারণা বা বিষয়ের সামগ্রিক বিশ্লেষণ সামষ্টিক অর্থনীতি বা Macroeconomics- এ করা হয়।
অধ্যাপক Ragan এবং Thomas- এর মতে, "Microeconomics is the study of the individual units thar comprise the economy" এবং "Macroeconomics is the study of the aggregate economy."
অর্থনীতির বিভিন্ন এককের সমষ্টিই সামগ্রিক অর্থনীতি। তাই ব্যষ্টিক বিশ্লেষণ ব্যতীত সামষ্টিক বিশ্লেষণ এবং সামষ্টিক বিশ্লেষণ ব্যতীত ব্যষ্টিক বিশ্লেষণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেক সময় ব্যষ্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে যা সত্য বলে মনে হয় সামষ্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা মিথ্যা হতে পারে। যেমন— সঞ্চয় ব্যক্তির জন্য কল্যাণকর হলেও সমাজের সকল মানুষ যদি অতি সঞ্চয়ী হয়ে ওঠে তবে তা অর্থনৈতিক মন্দা ত্বরান্বিত করে।
তাই বলা যায়, ব্যক্তির জন্য যা সত্য তা সমাজের সকলের জন্য সত্য নাও হতে পারে। এ ধারণা ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির জ্ঞান আহরণ থেকে জানতে পারি। তাই অর্থনীতির সঠিক বিশ্লেষণের জন্যই ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক উভয় প্রকার বিশ্লেষণেরই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এরা পরস্পরের প্রতিযোগী নয় বরং একে অপরের পরিপূরক।
ক্লাসিক্যাল আয় ও নিয়োগ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য
ক্লাসিক্যাল আয় ও নিয়োগ তত্ত্ব, যা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতি নামেও পরিচিত, এটি একটি চিন্তাধারা যা 18 শতকের শেষের দিকে এবং 19 শতকের প্রথম দিকে উদ্ভূত হয়েছিল। এটি বেশ কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
Say's Law: এটি ক্লাসিক্যাল অর্থনীতির কেন্দ্রীয় নীতি, যা বলে যে "সরবরাহ তার নিজস্ব চাহিদা তৈরি করে।" অন্য কথায়, যদি প্রযোজকরা পণ্য এবং পরিষেবা তৈরি করে, তবে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই পণ্য এবং পরিষেবাগুলি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় আয় তৈরি করবে।
Laissez-faire's Law: ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা মুক্তবাজার এবং ন্যূনতম সরকারী হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করতেন। তারা যুক্তি দিয়েছিল যে অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবেই ভারসাম্যের অবস্থায় পৌঁছাবে যদি একা ছেড়ে দেওয়া হয়, এটিকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারী নীতির প্রয়োজন ছাড়াই।
মজুরি এবং মূল্যের নমনীয়তা: ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করতেন যে মজুরি এবং দামগুলি নমনীয় হওয়া উচিত, যা তাদের সরবরাহ এবং চাহিদার পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় অবাধে সামঞ্জস্য করতে দেয়।
যৌক্তিক আচরণ: ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদরা ধরে নিয়েছিলেন যে ব্যক্তিরা যুক্তিবাদী এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থে কাজ করে। এর মানে হল যে তারা যা বিশ্বাস করে তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে তাদের নিজস্ব উপযোগ সর্বাধিক হবে।
সঞ্চয় ও বিনিয়োগ: ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেছিল যে উচ্চ স্তরের সঞ্চয় আরও বিনিয়োগ এবং শেষ পর্যন্ত আরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে।
শ্রম বিভাজন: ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদরা উৎপাদনশীলতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে শ্রম বিভাগের সুবিধার স্বীকৃতি দিয়েছেন।
সামগ্রিকভাবে, ক্লাসিক্যাল আয় ও নিয়োগ তত্ত্ব মুক্ত বাজারের গুরুত্ব, ন্যূনতম সরকারী হস্তক্ষেপ, যৌক্তিক আচরণ এবং চাহিদা নির্ধারণে সরবরাহের ভূমিকার উপর জোর দেয়।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক
হ্যাঁ, ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি হল অর্থনীতির দুটি শাখা যা একে অপরের পরিপূরক। ব্যষ্টিক অর্থনীতির সম্পদ বরাদ্দ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার এবং সংস্থাগুলির আচরণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এটি পরীক্ষা করে যে কীভাবে সরবরাহ এবং চাহিদা পৃথক বাজারে দাম এবং পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারস্পরিক ক্রিয়া করে এবং কীভাবে ব্যক্তিরা তাদের পছন্দ এবং বাজেটের সীমাবদ্ধতার উপর ভিত্তি করে ব্যবহার এবং উত্পাদন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, সামষ্টিক অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, পরিবার, ব্যবসা এবং সরকারগুলির সামগ্রিক আচরণের দিকে তাকিয়ে। এটি মোট দেশীয় পণ্য (জিডিপি), বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো ব্যবস্থা সহ অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সামগ্রিক স্তর পরীক্ষা করে।
যদিও ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি আলাদা, তারা পরস্পর নির্ভরশীল এবং পরিপূরক। উদাহরণস্বরূপ, আর্থিক এবং রাজস্ব নীতির মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলি সুদের হার, কর এবং সরকারী ব্যয়কে প্রভাবিত করে ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। একইভাবে, ব্যবহার এবং উৎপাদন সম্পর্কে মাইক্রোঅর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সামগ্রিক স্তর এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে।
সামগ্রিকভাবে, অর্থনীতির ব্যাপক বোঝার জন্য এবং কার্যকর অর্থনৈতিক নীতির বিকাশের জন্য মাইক্রোঅর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি উভয়েরই গভীর উপলব্ধি প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে, অর্থনীতির ব্যাপক বোঝার জন্য এবং কার্যকর অর্থনৈতিক নীতির বিকাশের জন্য মাইক্রোঅর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি উভয়েরই গভীর উপলব্ধি প্রয়োজন।
সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
সামষ্টিক অর্থনীতি হল স্বতন্ত্র বাজার বা নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক এজেন্টগুলিতে ফোকাস না করে সামগ্রিকভাবে একটি অর্থনীতির আচরণ এবং কর্মক্ষমতা অধ্যয়ন। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রাথমিক লক্ষ্য হল অর্থনীতির সামগ্রিক আচরণ বোঝা এবং বিশ্লেষণ করা এবং অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারে এমন নীতিগুলি ডিজাইন করতে এই বোঝাপড়াকে ব্যবহার করা। সামষ্টিক অর্থনীতির উদ্দেশ্যগুলিকে বিস্তৃতভাবে তিনটি বিভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে:
উচ্চ স্তরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন: সামষ্টিক অর্থনীতির প্রাথমিক উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে একটি হল উচ্চ স্তরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান বাড়াতে এবং সামগ্রিক কল্যাণে উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদরা উৎপাদনশীলতা, উদ্ভাবন, বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের মতো অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে এমন কারণগুলি অধ্যয়ন করে।
মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা: সামষ্টিক অর্থনীতির আরেকটি মূল উদ্দেশ্য হল মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, যা মুদ্রাস্ফীতির হার কম এবং স্থিতিশীল রাখাকে বোঝায়। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ক্রয় ক্ষমতা হারাতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করতে পারে। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদরা মুদ্রাস্ফীতির কারণগুলি বিশ্লেষণ করে, যেমন অর্থ সরবরাহে পরিবর্তন, সরবরাহের ধাক্কা এবং চাহিদার কারণগুলি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নীতিগুলি তৈরি করে।
বেকারত্ব কমাতে: সামষ্টিক অর্থনীতির তৃতীয় উদ্দেশ্য হল বেকারত্ব কমানো, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার একটি প্রধান উৎস। সামষ্টিক অর্থনীতিবিদরা বেকারত্বের কারণগুলি অধ্যয়ন করেন, যেমন প্রযুক্তির পরিবর্তন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, এবং অর্থনীতিতে চক্রাকারে ওঠানামা, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এবং বেকারত্বের হার কমানোর জন্য নীতি তৈরি করেন।
সামগ্রিকভাবে, সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বেকারত্ব হ্রাস করে অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা উন্নত করা।