স্বাধীনতা || Liberty

স্বাধীনতার ধারণা

স্বাধীনতা হলো মানুষের সাথে একান্তভাবে সম্পর্কযুক্ত এক মৌল রাজনৈতিক ধারণা। স্বাধীনতা সভ্য সমাজের অপরিহার্য উপাদান। স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নতি লাভ করতে পারে না। অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে স্বীয় ইচ্ছামতো কাজ করার অধিকারকেই বলা হয় স্বাধীনতা। 

স্বাধীনতা (Liberty) শব্দটির উৎপত্তি

স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Liberty'। ল্যাটিন শব্দ 'Liber' থেকে ইংরেজি 'Liberty' শব্দের উৎপত্তি। 'Liber' শব্দের অর্থ free বা স্বাধীন বা মুক্ত । সুতরাং 'Liberty' এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দাঁড়ায় স্ব-অধীনতা, নিজের অধীনতা বা সকল প্রকার বন্ধনমুক্ত অবস্থায় যা খুশি তাই করা । 

স্বাধীনতা অর্থ কি?

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বা আধুনিক সভ্য সমাজে স্বাধীনতার একটি বিশেষ অর্থ আছে। নিজের ইচ্ছেমতো, যা খুশি তাই করা স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা হলো অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার অধিকার। স্বাধীনতা বলতে যৌক্তিকভাবে নিয়ন্ত্রিত অধিকারকে নির্দেশ করে।
স্বাধীনতা

স্বাধীনতার সংজ্ঞা

স্বাধীনতার ধারণাটি বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন। যেমন—
অধ্যাপক লাস্কি (Prof. H. J. Laski)-এর মতে, "যে অনুকূল পরিবেশে মানুষ তার জীবনের চরম ও পরম বিকাশ সাধনের পূর্ণ সুযোগ লাভ করতে পারে তার আগ্রহ সংরক্ষণকে আমি স্বাধীনতা বলি।" ("By liberty I mean the eager maintenance of the atmosphere in which men have opportunity to be their best self.")

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিলী (Shelly) বলেছেন, "অতি শাসনের বিপরীত ব্যবস্থাই হলো স্বাধীনতা।" ("Liberty is the opposite of over Government.")

জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill) তার বিখ্যাত 'Eassay on Liberty' গ্রন্থে বলেন, “মানুষের মৌলিক শক্তির বলিষ্ঠ, অব্যাহত ও বিভিন্নমুখী প্রকাশই স্বাধীনতা।" 

অধ্যাপক গেটেল (Gettell) বলেন, “স্বাধীনতা হলো সেসব কাজ করা ও উপভোগ করা যেগুলো করা ও উপভোগ করার যোগ্য।" ("Liberty is the opposite power of doing and enjoying those things which are worthy of enjoyment and work.") 

টি. এইচ. গ্রীন (T. H. Green)-এর মতে, “যা উপভোগ করার এবং সম্পন্ন করার যোগ্য তা উপযোগ ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে।" ("Freedom consists in positive power of capacity of doing or enjoying something worth doing or worth-enjoying.") 

উপরে নির্দেশিত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে তৈরি অনুকূল পরিবেশই স্বাধীনতা, যা ব্যক্তি অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে ইচ্ছেমতো উপভোগ করতে পারে। স্বাধীনতার অর্থ নিয়ন্ত্রিত অধিকার। প্রত্যেকে প্রত্যেকের অধিকার রক্ষার মধ্যে স্বাধীনতার তাৎপর্য নিহিত।

স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিকদের স্বাধীনতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে সাত প্রকার স্বাধীনতার উল্লেখ করেছেন যা নিম্নে ছকের সাহায্যে দেখানো হলো :

১. প্রাকৃতিক স্বাধীনতা (Natural liberty): সামাজিক চুক্তিবাদী দার্শনিক হবস, লক এবং রুশো বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্র পূর্বাবস্থায় প্রকৃতির রাজ্যে (State of Nature) মানুষ কতকগুলো সুযোগ-সুবিধা বা স্বাধীনতা ভোগ করত। কিন্তু স্বাধীনতার এরকম ধারণা অলীক, অসার ও অবাস্তব বলেই প্রতিপন্ন হয়। কারণ অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন, রাষ্ট্র এবং আইনের অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।

২. আইনগত স্বাধীনতা (Legal liberty): রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে আইনগত স্বাধীনতা বলে। রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনে এ ধরনের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। ব্যক্তি কল্যাণের স্বার্থে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে আইনগত স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে। আইনগত স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট এবং আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩. সামাজিক স্বাধীনতা (Civil liberty): সামাজিক স্বাধীনতা বলতে অনেকেই Rule of Law-তথা আইনের শাসনকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ সমাজের সুসভ্য সদস্য হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলোকে সামাজিক স্বাধীনতা বলে। যেমন— জীবন রক্ষার স্বাধীনতা, সম্পত্তি রক্ষার স্বাধীনতা, ধর্মচর্চার স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরা করার স্বাধীনতা। বস্তুত, সামাজিক ধারণা থেকে সামাজিক স্বাধীনতা উদ্ভূত এবং এ স্বাধীনতা এমনভাবে ভোগ করতে হয় যাতে অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না হয়।

৪. রাজনৈতিক স্বাধীনতা (Political liberty): রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির অংশগ্রহণের ক্ষমতা বা পরিবেশকে বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লাস্কিও রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির অংশগ্রহণকে বুঝিয়েছেন। আবার, অধ্যাপক লীকক (Prof. Leacock)-এর মতে, "Political liberty as Constitutional liberty."

৫. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা (Personal liberty): ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হলো সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির এমন স্বাধীনতা যেগুলো ব্যক্তির একান্তই নিজের, যার প্রতি অন্য কেউ কোনোরূপ হস্তক্ষেপ (interfere) করতে পারে না। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, উন্নত জীবনযাপন, বিবাহ, সন্তান-সন্ততির শিক্ষা ইত্যাদি এ শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত।

৬. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (Economic liberty): অর্থনৈতিক কার্যাদির ব্যাপারে জনগণের স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বুঝানো হয়। অধ্যাপক এইচ. জে. লাস্কি (H. J. Laski) তাঁর 'A Grammar of Politics' গ্রন্থে বলেন, “অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত বেকারত্বের আশংকা ও আগামীকালের অভাব থেকে মুক্তি এবং দৈনন্দিন জীবিকার্জনের সুযোগ- সুবিধাকে বোঝায়।" ("By economic liberty. I mean, security and the opportunity to find reasonable significance in the earning of one's daily bread........ against the wants tomorrow.")

৭. জাতীয় স্বাধীনতা (National liberty): বৈদেশিক অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করে যখন একটি জাতি পূর্ণ সার্বভৌমত্ব লাভ করে তখন তাকে জাতীয় স্বাধীনতা বলে। অর্থাৎ কোনো জাতি বা দেশ যখন অন্য কোনো দেশের পরাধীনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে তখনই সে জাতি বা রাষ্ট্রকে স্বাধীন বলা যায়। জাতীয় স্বাধীনতা সব ধরনের স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

তবে এসব স্বাধীনতা উপভোগের জন্য অবশ্যই অনুকূল পরিবেশ দরকার। সমাজে যদি বিশৃঙ্খলা, ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সন্ত্রাস ইত্যাদি থাকে তাহলে কোনো স্বাধীনতাই অর্থবহ হয় না ।

স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব (Importance of Liberty)

ব্যক্তি, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে স্বাধীনতা। স্বাধীনতা ছাড়া গণতান্ত্রিক শাসন ও সমাজব্যবস্থার কথা চিন্তা করা কল্পনামাত্র। তাই যুগে যুগে বিভিন্ন দার্শনিক ও চিন্তাবিদ স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। ফরাসি দার্শনিক রুশো (Rousseau) যথার্থই বলেছেন যে, স্বাধীনতা প্রয়োজন এজন্য যে, এটি ব্যতীত ব্যক্তিকেই অস্বীকার করা হয়।' (To renounce liberty is to renounce being a man.) ব্যক্তিস্বাধীনতার অপর একজন দিকপাল হলেন ইংরেজ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill)। তিনি লিখেছেন যে, 'কেবল অন্যের অনিষ্ট করা হতে নিবৃত্ত করার ক্ষেত্রেই কোনো সভ্য সমাজের সদস্যকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলপূর্বক কাজ করানো যেতে পারে। তার দৈহিক বা মানসিক উপকার হবে এ উদ্দেশ্যে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করানো উচিত নয়।' তিনি আরও লিখেছেন, 'নিজের ওপরে নিজের দেহ ও মনের ওপরে ব্যক্তিই সার্বভৌম।' (Over himself, over his own body and mind, the individual is sovereign.) এভাবে আমরা দেখি যে, স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীনতা ব্যতীত মানুষের জীবন পশুর জীবনের সমতুল্য। তবে অবারিত স্বাধীনতা কারও কাম্য হতে পারে না।

অধ্যাপক বার্কার (Barker) বলেছেন, 'প্রত্যেকের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা সকলের স্বাধীনতার প্রয়োজনের দ্বারা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত ও সীমাবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।' স্বাধীনতা উপভোগের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিবেশ। গণতন্ত্রই এমন পরিবেশ সংরক্ষণ করে যেখানে ব্যক্তি তার সর্বোত্তম সত্তা বিকাশের সুযোগ পায়। গণতন্ত্র আইনসিদ্ধভাবে নাগরিকের স্বাধীনতা রক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। গণতন্ত্র জনগণের সম্মতিতে রচিত আইনের মাধ্যমে সাম্যভিত্তিক আদর্শ সৃষ্টি করে স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষ জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে। তাই ব্যক্তিজীবনে স্বাধীনতা প্রয়োজন আর স্বাধীনতা ভোগের জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক পরিবেশের ব্যবস্থা করা।

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ

স্বাধীনতা ভোগ করার চেয়ে স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা কঠিন কাজ। অর্থাৎ স্বাধীনতার সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়; যা স্বাধীনতার রক্ষাকবচ নামে পরিচিত। এজন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা রক্ষার কতকগুলো রক্ষাকবচের উল্লেখ করেছেন। সেগুলো নিম্নরূপ-
১. আইন (Law): আইন স্বাধীনতার পূর্বশর্ত (Law is the pre-condition of liberty)। আইনের উপস্থিতিতেই স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব হয় । আইনহীন সমাজে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়। এ প্রসঙ্গে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ, জন লক (John Locke) বলেন, “যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।" (Where there is no law, there is no liberty)। আইনের যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা উপভোগ অর্থবহ হয়ে ওঠে ।

২. মৌলিক অধিকার ( Written fundamental rights): স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশের সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ লিপিবদ্ধকরণ। কারণ মৌলিক অধিকার উপভোগের সুযোগ ব্যতীত নাগরিক জীবন পূর্ণতা পায় না। তাই সংবিধানে মৌলিক অধিকার সন্নিবেশিত হলে নাগরিকেরা তদসম্পর্কে সচেতন থাকে। মৌলিক অধিকার ভঙ্গের কারণে ভিকটিম সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ন্যায়বিচার লাভ করতে পারে।

৩. আইনের শাসন (Rule of law): আইনের শাসন স্বাধীনতার একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ। আইনের শাসনের অর্থ মূলত (ক) আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান (খ) বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না এবং (গ) বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখা যাবে না। আইনের শাসন বলতে আইনের পরিপূর্ণ প্রাধান্যকেই নির্দেশ করে যেখানে শাসকমহল আইনের ঊর্ধ্বে উঠে কোনো কিছু করতে পারে না। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অতি নগণ্য ব্যক্তিটিও একই আইনের অধীন।

৪. গণতন্ত্র (Democracy): গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের মৌলিক অধিকার উপভোগের সর্বাধিক সুযোগ থাকে। গণতন্ত্র বলতে জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা জনগণের পক্ষে পরিচালিত শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে সকলের সমান অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের চেষ্টা করা হয়। গণতন্ত্রের মূল শ্লোগান "জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।” শাসকগোষ্ঠী জনগণের ভোটাধিকার লাভ করে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। এরূপ সরকার সাধারণত জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করে না । রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সম্ভাব্য জনমত যাচাই করা হয়। এতে জনমত (Public opinion)-এর প্রতিফলন ঘটে ।

৫. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Separation of power): ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ স্বাধীনতা সংরক্ষণের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। এ নীতির মূলকথা হলো সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে। এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে অহেতুক হস্তক্ষেপ করবে না বা প্রভাব বিস্তার করবে না। কারণ একই ব্যক্তির হাতে একাধিক বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে স্বৈরশাসনের সৃষ্টি হয় ।

৬. সদাসতর্ক জনমত (Eternal public vigilance): আধুনিককালে স্বাধীনতার বলিষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ হলো সদাসতর্ক জনমত । অধ্যাপক লাস্কি (Prof. H. J. Laski) বলেন, “চিরন্তন সতর্কতার মধ্যেই স্বাধীনতার মূল্য নিহিত।" ("Eternal vigilance is the price of liberty. ") নাগরিকদের উচিত স্বাধীনতা বিঘ্নকারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা এবং চরম ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা। এ প্রসঙ্গে হেনরি নেভিনশন যথার্থই বলেন, “স্বাধীনতার সংগ্রাম কোনোদিন শেষ হয় না কিংবা এর সংগ্রামক্ষেত্র কোনোদিন নীরব হয় না।”

৭. স্বাধীন বিচার বিভাগ (Independent Judiciary): স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ। ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। কারণ বিচার বিভাগ স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ থাকলে কোনো নাগরিকের অধিকার ভঙ্গ হলে সর্বোচ্চ আদালত তা প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অধিকতর ন্যায়বিচার লাভ করতে পারে।

৮. দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা (Responsible Government): স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জনগণের সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীলতা দুভাবে নিশ্চিত করা যায়। এক. জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দ্বারা গঠিত আইনসভা জনগণের কাছে দায়িত্বশীল থাকবে। দুই. নির্বাচিত আইনসভার সদস্য নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা বা শাসন বিভাগ তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য আইনসভার কাছে এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। এরূপ দায়িত্বশীলতা বা জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা থাকলে নাগরিকের স্বাধীনতা অধিকতর রক্ষা পাবে ।

৯. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization of Power): স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। কারণ একটিমাত্র কেন্দ্রের হাতে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত হলে একদিকে শাসনব্যবস্থায় স্থবিরতা আসে এবং অন্যদিকে শাসক স্বৈরাচারিতার পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পায় । এজন্য তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষমতার অবাধ প্রবাহ প্রয়োজন ।

১০. সরকার ও জনগণের মধ্যে সহযোগিতা (Co-operation between Government and people): সরকার ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতাও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচ্য। কারণ বিরোধিতা শুধু ধ্বংস ডেকে আনে । আর বিপরীতে মধুর সম্পর্কের সমৃদ্ধি বয়ে আনে। এজন্য সরকার যদি জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং জনগণ যদি সরকারের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাহলে স্বাধীনতা রক্ষিত হবে।

১১. প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি (Direct democratic system): গণ ভোট, গণ উদ্যোগ, পদচ্যুতির মতো প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিসমূহ স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ। প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়োগ করে জনগণ শাসকদের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করে নিজেদের স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে। এভাবে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় এবং শাসকবর্গ জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকে।

১২. বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বিলোপ (Abolition of special facilities): অনেক সময় রাষ্ট্রের মধ্যে সরকারের যোগসাজশে বিশেষ মহলের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এতে সাধারণ নাগরিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। সুতরাং নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এরূপ সুযোগ-সুবিধা বিলোপ করতে হবে।

১৩. সামাজিক ন্যায়বিচার (Social justice): সামাজিক ন্যায়বিচার গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে স্বীকৃত। সামাজিক ন্যায়বিচার হলো রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সকল মানুষের সমানভাবে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার অধিকার বা পরিবেশ নিশ্চিত করা। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। সামাজিক ন্যায়বিচার গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

১৪. অর্থনৈতিক সাম্য (Economic equality): স্বাধীনতার জন্য অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সমাজের সকল মানুষের জন্য সমান অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই হলো অর্থনৈতিক সাম্য। অর্থনৈতিক অসমতা বা সাম্যের অভাব সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে যায়। ফলে গরিব বা সম্পদহীন মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়। তাই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা খুবই প্রয়োজন।

১৫. প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা (Freedom of press): সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনসহ প্রচার মাধ্যসমূহ জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে সমাজে প্রচার মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়, সেখানে স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে পড়ে। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা আবশ্যক।

১৬. সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল (Organized political party): সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব অপরিসীম। গণতন্ত্রে বিরোধী দল সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে সরকারকে সতর্ক করে দেয়। এভাবে বিরোধীদলসমূহ স্বাধীনতা রক্ষায় অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করে।

১৭. শোষণমুক্ত সামাজিক কাঠামো (Exploitation free social structure): আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক শোষণ অবসানের কথা বলেন। সমাজের এক শ্রেণি কর্তৃক যাতে অন্যকোনো শ্রেণি শোষণ, বঞ্চনার শিকার না হয় সেজন্য তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। আর এজন্য প্রয়োজন শোষণমুক্ত সামাজিক কাঠামো গড়ে তোলা। এভাবে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা সম্ভব।

উপরের বিস্তৃত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, যদিও স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার তথাপি স্বাধীনতা বিনাশ্রমে উপভোগ করা যায় না। স্বাধীনতার স্বাদ পরিপূর্ণরূপে পেতে হলে উপর্যুক্ত ব্যবস্থাবলি গ্রহণ আবশ্যক। অন্যথায় স্বাধীনতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ।

আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক

স্বাধীনতা ও আইনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পরস্পর বিরোধী মতামত লক্ষ করা যায়। অধ্যাপক ডাইসি, মিল, হার্বার্ট স্পেন্সার (Prof. Dicey, J. S. Mill, Herbert Spencer) প্রমুখ দার্শনিক মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী। তাদের মতানুসারে ব্যক্তিগত কার্যকলাপের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বা আইনের অধিক নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী। আবার একদল দার্শনিক মনে করেন আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কেউ কেউ আবার আইন স্বাধীনতার পূর্বশর্ত বলে মন্তব্য করেছেন। জন লক (John Locke) বলেন, “আইন স্বাধীনতাকে খর্ব করে এমন ধারণা ভুল; বরং আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারিত করে।" 
নিম্নে আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হলো :

১. আইন স্বাধীনতার রক্ষক: বাস্তবতার কষ্টিপাথরে যাচাই করলে দেখা যায় যে, আইনের উপস্থিতিতেই কেবল স্বাধীনতা উপভোগ করা যায় । সুতরাং আইন স্বাধীনতার রক্ষক। কেননা, আইন না থাকলে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হবে। অর্থাৎ "Might is right" এ নীতির বিজয় হবে। আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে বলবৎ করতে না পারলে কিংবা স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের কোনো প্রতিকার করতে না পারলে স্বাধীনতার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। জন লকের মতে, “যেখানে আইন থাকে না, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।" (Where there is no law, there is no liberty) বস্তুত, আইন ও আদালত আছে বলেই স্বাধীনতার ওপর কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিমহল হস্তক্ষেপের সাহস পায় না।

২. আইন স্বাধীনতার শর্ত: কোনো কোনো চিন্তাবিদ আইনকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত (Precondition) বলে গণ্য করেছেন। তাদের মতে, এক একটি আইন এক একটি স্বাধীনতা। আইনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা সুসংঘবদ্ধ রূপ লাভ করে। আইন স্বাধীনতাকে প্রতিপালন করে সবল ও সুষ্ঠু রূপ দান করে। 

সুতরাং স্বাধীনতা আইনের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। আইনের নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়। আর আইনের অধীনে স্বাধীনতা বিকশিত হয়ে ওঠে। উইলোবী (W. W. Willoughby) বলেন, “নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতা রক্ষা পায়।"

৩. আইন স্বাধীনতার সহায়ক: আইন স্বাধীনতাকে রক্ষা করে বলে ব্যক্তির আত্মোপলব্ধি ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব হয়। আইন স্বাধীনতার দ্বারকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এ সম্পর্কে রিচি (Richi) বলেন, “আত্মবিকাশের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা স্বাধীনতার স্বরূপে প্রকাশিত হয়, সেগুলো আইনের দ্বারা সৃষ্ট।"

৪. আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে: আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। যেমন- শ্রমিক কল্যাণের জন্য যেসব আইন প্রণীত হয়েছে এর দ্বারা মালিক শ্রেণির স্বেচ্ছাচারিতা সংকুচিত হয়েছে। আবার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের প্রতিনিধিপুষ্ট আইনসভার মাধ্যমে যে আইন প্রণীত হয় তা জনগণের স্বাধীনতাকে প্রসারিত করে। রুশো বলেন, “সুনির্দিষ্ট আইনের প্রতি আনুগত্যই স্বাধীনতা।" 
সুতরাং আইনের নিয়ন্ত্রণ অর্থ স্বাধীনতা নয়; বরং রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের দ্বারা স্বীকৃত- সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত পরস্পরের আপেক্ষিক স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা।

৫. আইন স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে: একদিকে আইনের যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে; অন্যদিকে স্বাধীনতার পূর্ণ বিকাশের সাথে সাথে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সহজতর হয়। আইনহীন সমাজে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতা আর অরাজকতার নামান্তর। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কাজের সীমা নির্দেশ করে এবং স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। অতএব, আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

৬. আইনের দ্বারা স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত: স্বাধীনতা আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনের দ্বারা স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা হয়। স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হলে সামাজিক নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী বলেন, "নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতার অস্তিত্ব সম্ভব।"

৭. পরস্পর পরিপূরক: আইন ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক। আইন না থাকলে যেমন স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি স্বাধীনতা না থাকলে আইনের অস্তিত্ব থাকে না। আর স্বাধীনতা না থাকলে আইনের প্রয়োজনও হয় না। 

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আইন যদি জনগণের মতভিত্তিক হয় এবং স্বাধীনতা যদি জনকল্যাণমূলক সুবিধা উপভোগ করা বোঝায় তা হলে তারা পরস্পর বিরোধী হতে পারে না। বরং একে অপরের সহায়ক সমর্থক এবং পরিপূরক হতে বাধ্য।

স্বাধীনতা রক্ষাকবচ কি?

প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা বলতে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যেমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসা বা সরকারী সংস্থা। প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার কিছু মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে:
দীর্ঘমেয়াদী ফোকাস: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং কৌশল নির্ধারণ করা জড়িত থাকে, যেমন ভবিষ্যতে 5-10 বছর।

ব্যাপক পদ্ধতি: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠানের মিশন, দৃষ্টি, লক্ষ্য, সম্পদ, শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকি সহ সংস্থার সমস্ত দিক বিবেচনা করে।

সহযোগিতামূলক প্রক্রিয়া: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার যেমন প্রশাসক, অনুষদ, কর্মচারী, ছাত্র এবং বহিরাগত অংশীদারদের কাছ থেকে ইনপুট এবং অংশগ্রহণ জড়িত।

প্রমাণ-ভিত্তিক: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা তথ্য, গবেষণা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানানো হয় যাতে সিদ্ধান্তগুলি অনুমান বা অন্তর্দৃষ্টির পরিবর্তে সত্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে হয়।

নমনীয় এবং অভিযোজিত: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা একটি গতিশীল এবং পুনরাবৃত্তিমূলক প্রক্রিয়া যা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সামঞ্জস্য এবং অভিযোজন করার অনুমতি দেয়।

কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা পরিমাপযোগ্য ফলাফল অর্জন এবং প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্যগুলির দিকে অগ্রগতি মূল্যায়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

ক্রমাগত উন্নতি: প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা হল পর্যালোচনা, প্রতিফলন এবং সংশোধনের একটি চলমান প্রক্রিয়া যা সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে চায়।

স্বাধীনতা ও আইনের বিরোধ নেই

স্বাধীনতা এবং আইন দুটি ধারণা যা প্রায়শই একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করা হয়। যাইহোক, স্বাধীনতা এবং আইনের পক্ষে সংঘর্ষ ছাড়াই সহাবস্থান করা সম্ভব।
স্বাধীনতা, তার সারমর্মে, বাহ্যিক জবরদস্তি বা সংযম ছাড়া কাজ বা কথা বলার ক্ষমতা। অন্যদিকে, আইন বলতে নিয়ম ও প্রবিধানের একটি ব্যবস্থাকে বোঝায় যা একটি গভর্নিং কর্তৃপক্ষ দ্বারা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং একটি সমাজের মধ্যে ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। যদিও এটা সত্য যে কিছু আইন কিছু স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে, যেমন বাক বা সমাবেশের স্বাধীনতা, তবে এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যক্তিরা নিরাপদ এবং ন্যায্যভাবে তাদের স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইনগুলিও প্রয়োজনীয়।

উদাহরণস্বরূপ, ঘৃণাত্মক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনগুলি একজন ব্যক্তির তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে, তবে তারা প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিকে বৈষম্য এবং সহিংসতা থেকে রক্ষা করে। একইভাবে, ট্রাফিক আইন একজন চালকের গতি বা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর স্বাধীনতাকে সীমিত করতে পারে, তবে তারা অন্যান্য চালক এবং পথচারীদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

সংক্ষেপে, আইনের উদ্দেশ্য স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করা নয়, বরং এমন একটি কাঠামো তৈরি করা যার মধ্যে ব্যক্তিরা অন্যের অধিকার লঙ্ঘন না করে তাদের স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে পারে। যখন আইনগুলি একটি ন্যায্য এবং ন্যায্য পদ্ধতিতে ডিজাইন এবং প্রয়োগ করা হয়, তখন তারা প্রকৃতপক্ষে তাদের সীমাবদ্ধ করার পরিবর্তে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে উন্নত ও রক্ষা করতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url