মূল্যবোধ || Values

মূল্যবোধের ধারণা

পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মূল্যবোধ। মূল্যবোধ সমাজ কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান। মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, কার্যক্রম, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতি মূল্যবোধ অনুযায়ী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন আদর্শ নাগরিকের মধ্যে মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকা উচিত। কেননা মূল্যবোধ মানুষকে উচিত-অনুচিত সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং যা কিছু মন্দ তা পরিত্যাগ করে, যা কিছু ভালো তা গ্রহণের দিকে তাড়িত করে। এজন্য নাগরিক জীবনে মূল্যবোধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মূল্যবোধ মানুষের জীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করে, সমাজিক জীবনকে সুদৃঢ় করে এবং ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে যথার্থ সম্পর্ক নির্ণয় করে। মূল্যবোধ সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক শৃঙ্খলা, সংহতি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।

মূল্যবোধ (Values) শব্দের উৎপত্তি

মূল্যবোধ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Values এটি গঠিত হয়েছে তিনটি ল্যাটিন শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের ভিত্তিতে। শব্দগুলো হচ্ছে: Vale (অর্থাৎ strength বা শক্তি), Val (অর্থাৎ worth বা মূল্য) এবং Valu (অর্থাৎ valor বা সাহস, পরাক্রমা, বিক্রম, শৌর্য)। সামষ্টিকভাবে এ শব্দগুলোর অর্থ হচ্ছে ‘সব উত্তম জিনিস’।

মূল্যবোধ কি?

সমাজকাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান হলো মূল্যবোধ। যে চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের সামগ্রিক আচরণ-ব্যবহার ও কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে, তাকে সাধারণত মূল্যবোধ বলা হয়। মূল্যবোধ হলো সমাজ যে বিষয়গুলোর উপর মূল্য আরোপ করে কিংবা আমরা যাকে মূল্য দেই। মূল্যবোধ নির্ধারিত হয় সমাজের মানুষের আচার-আচরণ তথা সামষ্টিক গ্রহণযোগ্য রীতিনীতি ও নৈতিকতার দ্বারা। 
মূল্যবোধ

মূল্যবোধের সংজ্ঞা

সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সামাজিক মূল্যবোধের সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। যেমন-
এম. ডব্লিউ পাম্পফ্রে (M. W. Pumphrey)-এর মতে, “ব্যক্তি বা সামাজিক দলের প্রত্যাশিত আচার-আচরণের সুবিন্যস্ত প্রকাশই হলো মূল্যবোধ ।" (Formulation of performed behavior held by Individual or social group.)

তবে সামাজিক মূল্যবোধের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন নিকোলাস রেসার। তিনি বলেন, “সামাজিক মূল্যবোধ বলতে সে সব গুণাবলিকে বোঝায় যা ব্যক্তি নিজের সহকর্মীদের মধ্যে দেখে খুশি হয়।"

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, মূল্যবোধ সেই সব বিশ্বাস, আদর্শ, রীতিনীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচার-ব্যবহার, কার্যাবলি, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে ।

বস্তুত সামাজিক মূল্যবোধ হলো সামাজিক শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ, শৃঙ্খলাবোধ, সহানুভূতি প্রভৃতি মানবিক সুকুমার বৃত্তির সমষ্টি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ থাকতে পারে। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে।

মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য

সামাজিক মূল্যবোধের ধারণা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য মূর্ত হয়ে ওঠে। বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১. সামাজিক মানদণ্ড: সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের আচার-আচরণ বিচারের মানদণ্ড। মূল্যবোধের মাপকাঠিতে মানুষের কাজের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধ মানুষের ব্যবহার, রীতিনীতি পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ করে। 

২. সামাজিক সেতুবন্ধন: মূল্যবোধের চেতনা সমাজের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। মূল্যবোধ সমাজের রীতিনীতি, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির মধ্যে যোগসূত্র ও সেতুবন্ধন রচনা করে।

৩. পরিবর্তনশীলতা: মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, চাহিদা ইত্যাদি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ মানুষের মননশীলতার ওপর মূল্যবোধ নির্ভরশীল।

৪. বিভিন্নতা: স্থান-কালভেদে মূল্যবোধ বিভিন্ন রকম হতে পারে। অর্থাৎ একেক সমাজে মূল্যবোধ একেক ধরনের। যেমন- মুসলিম সমাজের মূল্যবোধ আর খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়। আবার হিন্দু সমাজের মূল্যবোধ এবং খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়।

৫. নৈতিক প্রাধান্য: মূল্যবোধ আইন নয় বরং কতকগুলো রীতিনীতি, আচার-আচরণের সমষ্টি যা নৈতিকতা থেকে উৎসারিত এবং সমাজের মানুষের স্বীকৃতির ফলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। এগুলো লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান নেই তবে সামাজিক ঘৃণা কুড়াতে হয়।

৬. সমষ্টির প্রভাব: মূল্যবোধ সমাজের মানুষের সামগ্রিক ধ্যান-ধারণার সমষ্টি। এজন্য মূল্যবোধ ব্যক্তিগত আগ্রহ অনাগ্রহকে প্রভাবিত করে না। এখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা গৌণ হয়ে পড়ে বিধায় ব্যক্তি সমষ্টিগত মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।

৭. আপেক্ষিকতা: সামাজিক মূল্যবোধ যেমন সমাজভেদে ভিন্ন হয়। তেমনি একই মূল্যবোধ সমাজভেদে ইতিবাচক ও নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই সামাজিক মূল্যবোধ একটি আপেক্ষপ্রত্যয়। 
বস্তুত ব্যক্তি ও সমষ্টির কাছে কোনটি উচিত আর কোনটি উচিত নয় তা মূল্যবোধের মানদণ্ডেই গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

মূল্যবোধের শ্রেণিবিভাগ

মানুষের আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী চিন্তা-ভাবনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো মূল্যবোধ। মূল্যবোধ বিভিন্নরকম হতে পারে । ডেনিল এইচ পারকার (Denill I Parker) মূল্যবোধকে (১) বাস্তব জীবন ভিত্তিক মূল্যবোধ ও (২) কল্পনা প্রসূত মূল্যবোধ এ দু'ভাগে বিভক্ত করেছেন। কেউ কেউ আবার মূল্যবোধকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এ দু'ভাগে ভাগ করেছেন। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. ব্যক্তিগত মূল্যবোধ (Personal values): ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ব্যক্তির ধ্যান-ধারণার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, মর্যাদা ইত্যাদি ব্যক্তিগত মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে। সমাজে সকল ব্যক্তির মধ্যে এরূপ চিন্তা-চেতনা কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়।

২. রাজনৈতিক মূল্যবোধ (Political values): যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, আদর্শ মানুষের রাজনৈতিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে, তার সমষ্টিকে রাজনৈতিক মূল্যবোধ বলে। রাজনৈতিক সততা, শিষ্টাচার, সহনশীলতা, নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে মেনে নেওয়া ইত্যাদি রাজনৈতিক মূল্যবোধ।

৩. সামাজিক মূল্যবোধ (Social values): মানুষের সামাজিক আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণকারী চিন্তা, ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসমূহকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়বোধ, সহমর্মিতা, সৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ প্রভৃতি গুণাবলির সমষ্টি। সামাজিক মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির এরূপ ধ্যান-ধারণা যার মধ্যে অপরের কল্যাণ নিহিত থাকে। এরূপ মূল্যবোধে অপরের কল্যাণ প্রাধান্য লাভ করে। সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিকশিত হয়।

৪. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ (Democratic values): গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত হলো স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি। গণতন্ত্র সুদৃঢ়, সুসংহত এবং শক্তিশালী রূপদানের জন্য এরূপ মূল্যবোধের গুরুত্ব অত্যধিক। মানুষের যে সব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড, আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে, তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক একে অপরের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিবে, নিজের মতামত প্রকাশ করবে। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড যেমন, নির্বাচনের অংশ নেয়া, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়া, অধিকার কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকা ইত্যাদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।

৫. ধর্মীয় মূল্যবোধ (Religious values): যেসব ধর্মীয় অনুশাসন, রীতিনীতি, আচার-আচরণ মানুষের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে, তাকেই ধর্মীয় মূল্যবোধ বলা হয়। যেমন- অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, অন্য ধর্মমতকে সহ্য করা, অন্য ধর্ম পালনে বাধা না দেওয়া ইত্যাদি ধর্মীয় মূল্যবোধ।

৬. সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ (Cultural values): মানুষের সাংস্কৃতিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত ও প্রভাবিত করে এমন সব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যই হলো সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ভিন্ন জীবনাচার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ধ্যান-ধারণা, আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ড ও সংগঠন থাকতে পারে। এসবের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, বাধা না দেওয়াই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সমাজিক বন্ধনকে সুসংহত করে।

৭. অর্থনৈতিক মূল্যবোধ (Economic values): মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পন্ন করতে যেসব কাজ-কর্ম, বিধি-নিষেধ, আদর্শ মেনে চলে তাকে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ বলে। আর্থিক লেনদেন, বিক্রয়, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন, বিপনন এসবের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ জড়িত। অর্থনৈতিক মূল্যবোধ রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক সমতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

৮. আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ (Spiritual values): সব মানুষের মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক বা আত্মিক মূল্যবোধ থাকে। এ জন্য মানুষ সৎভাবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চায়। মানুষ তার সহজাত আত্মিক মূল্যবোধের কারণে অসত্য, অসুন্দর, অকল্যাণকর সবকিছুকে অপছন্দ করে। আর যা কিছু ভালো তা পছন্দ করে, সমর্থন করে। মানুষের অন্তর্নিহিত আত্মিক শক্তিই এসব কাজে প্রেরণা যোগায়। আত্মিক মূল্যবোধ মানুষকে মহিমান্বিত করে।

৯. নৈতিক মূল্যবোধ (Moral values): নৈতিক মূল্যবোধ হলো যেসব আচরণ, মনোভাব, কর্মকাণ্ড যা মানুষ সবসময় ভালো, কল্যাণকর, অপরিহার্য বিবেচনা করে মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ ও তৃপ্তিবোধ করে। সত্যকে সত্য বলা, মিথ্যাকে মিথ্যা, অন্যায়কে ঘৃণ করা, অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সুখ-দুঃখে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অংশীদার হওয়া ইত্যাদিকে নৈতিক মূল্যবোধ বলা যায়। নীতি, উচিত-অনুচিত বোধ হলো নৈতিক মূল্যবোধের উৎস।

১০. আধুনিক মূল্যবোধ (Modern values): সময় ও সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে। এ জন্য অতীতের অনেক মূল্যবোধই এখন তাৎপর্যহীন হয়ে পড়েছে। একসময় আমাদের সমাজে মেয়েদের লেখাপড়াকে ভালো চোখে দেখা হতো না; এখন নারী শিক্ষা, নারীর অগ্রগতি আমাদের কাম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ সমাজে প্রচলিত ছিল। হিন্দু সমাজে একসময়ে সতীদাহ, সহমরণ প্রথা চালু ছিল। এখন আর এগুলো নেই। বর্তমানের অনেক মূল্যবোধই হয়তো ভবিষ্যতে থাকবে না। গড়ে উঠবে নতুন মূল্যবোধ। তাই বলা যায়, আধুনিক ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস-আচার-আচরণের সমষ্টিই আধুনিক মূল্যবোধ।

১১. শৈল্পিক বা নান্দনিক মূল্যবোধ (Artistic values): সুকুমার বৃত্তিসমূহের সূক্ষ্ম প্রকাশই শৈল্পিক বা নান্দনিক মূল্যবোধ। মানুষের কথা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানে তার উপস্থিতি, অংশগ্রহণের ধরনসহ প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে রুচী-দৃষ্টিভঙ্গির চমৎকার, ইতিবাচক, আকর্ষণীয় বহিঃপ্রকাশের সমষ্টিই নান্দনিক মূল্যবোধ। কেউ চমৎকার বাচন- ভঙ্গি দিয়ে, কথা দিয়ে, কেউবা ব্যবহার দিয়ে, কেউ আবার পরিপাটি রুচীশীল পোশাক পরে মানুষকে মুগ্ধ করে। শৈল্পিকতা নান্দনিক মূল্যবোধ মানবিক গুণাবলিকে অধিক মাত্রায় উন্নত করে।

মূল্যবোধ ও সুশাসনের মধ্যে সম্পর্ক

মূল্যবোধ এমন একটি মানদণ্ড যার দ্বারা সমাজের মানুষের কর্মকাণ্ডের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির আচার-আচরণ সুনিয়ন্ত্রিত হয়। মূল্যবোধ এমন কতকগুলো গুণাবলি যা আদর্শ হিসেবে মানুষ অনুসরণ করে। মানুষের ব্যবহার ও রীতিনীতি মূল্যবোধের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বিধায় এর মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর এজন্যই মূল্যবোধ এবং সুশাসন উভয়ের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।

সুশাসন হলো ন্যায়ভিত্তিক জনকল্যাণকর শাসন, যেখানে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ থাকে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়টি মূল্যবোধের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। মূল্যবোধের একটি অন্যতম ভিত্তি বা উপাদান হলো জবাবদিহিতা। এই জবাবদিহিতা শুধু সরকারের একার জন্য নয়, বরং সরকারসহ সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকের জন্য। আবার সুশাসনের জন্য গণতান্ত্রিক শাসন অপরিহার্য, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ, থাকে। কারণ জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র অর্থবহ ও কার্যকর হয় না।

মূল্যবোধের আদর্শ যেসব বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সেগুলো হলো— ঔচিত্যবোধ, ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা, নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, আইনের শাসন, সরকারের জবাবদিহিতা এবং সরকার ও রাষ্ট্রের জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড।

উপর্যুক্ত বিষয়গুলো সুশাসনের জন্যও অপরিহার্য। মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েই মানুষ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ হয়। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন শাসনের সুফল ভোগ করে, তখন সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে, মানব মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য, পক্ষপাতিত্ব এবং নীতিবর্জিত কাজ যেমন মূল্যবোধের পরিপন্থী, তেমনি সুশাসনের পথে অন্তরায়।

আইনের শাসন মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইনের শাসন ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। আইনের শাসনের ফলে ব্যক্তি তার সামাজিক মর্যাদা অনুধাবন করতে পারে এবং অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়। আইনের শাসন সুশাসনেরও একটি আবশ্যকীয় উপাদান। আইনের শাসন না থাকলে যেমন সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না, তেমনি সুশাসন না থাকলে আইনের শাসন চালু করা সম্ভব নয়। এদিক দিয়ে মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।

মূল্যবোধ মানুষের নৈতিক গুণাবলি জাগ্রত করে। সমাজজীবনকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে। মূল্যবোধ সামাজিক ঐক্য ও শৃঙ্খলা সুপ্রতিষ্ঠিত করে। আর ঐক্য ও শৃঙ্খলাবোধ সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে প্রশস্ত করে।

সুতরাং মূল্যবোধের আদর্শ জাগ্রত আছে এমন সমাজ ও রাষ্ট্র সুশাসন প্রতিষ্ঠার অনুকূল। তাই বলা হয়, ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মূল্যবোধ ও সুশাসনের সম্পর্ক খুবই নিবিড় ও গভীর।


গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হল একটি মুক্ত ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি, এবং তারা ব্যক্তি অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলি কেন গুরুত্বপূর্ণ তা এখানে কিছু কারণ রয়েছে:
ব্যক্তি অধিকারের সুরক্ষা: একটি গণতান্ত্রিক সমাজে, নাগরিকদের কিছু মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা রয়েছে যা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এর মধ্যে রয়েছে বাক স্বাধীনতা, ধর্ম, সমাবেশ এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সেইসাথে সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার এবং একটি ন্যায্য ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার অধিকার।

সামাজিক ন্যায়বিচার: গণতন্ত্র সামাজিক অবস্থান, জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের সরকারী সিদ্ধান্তে সমান বক্তব্য রয়েছে তা নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রচার করে। এটি সমতা উন্নীত করতে এবং বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে৷

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: গণতন্ত্রগুলি অন্যান্য ধরণের সরকারের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল হতে থাকে কারণ নাগরিকদের একটি বক্তব্য থাকে যে তারা কীভাবে পরিচালিত হয়। যখন লোকেরা অনুভব করে যে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে এবং তাদের উদ্বেগের সমাধান করা হচ্ছে, তখন তারা সহিংস প্রতিবাদ বা বিদ্রোহে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেমন আইনের শাসন, সম্পত্তির অধিকার এবং মুক্ত বাজার এমন পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য সহায়ক। কারণ গণতন্ত্র উদ্ভাবন, উদ্যোক্তা এবং প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করে।

আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা: গণতন্ত্রগুলি অন্যান্য ধরনের সরকারের তুলনায় বেশি শান্তিপূর্ণ এবং যুদ্ধের প্রবণতা কম। এর কারণ হল গণতান্ত্রিক নেতারা তাদের নাগরিকদের কাছে দায়বদ্ধ এবং অন্য দেশের বিরুদ্ধে বেপরোয়া সামরিক অভিযান বা আগ্রাসনে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

সংক্ষেপে, ব্যক্তি অধিকার রক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রচার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অপরিহার্য।

সামাজিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য

সামাজিক মূল্যবোধ হল এমন বিশ্বাস এবং নীতি যা একটি সমাজে সামগ্রিকভাবে ধারণ করে এবং তারা স্বতন্ত্র আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা দেয়।  সামাজিক মূল্যবোধের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে:

 ১. ভাগ করা বিশ্বাস: সামাজিক মূল্যবোধগুলি এমন বিশ্বাস যা সাধারণত একটি সমাজের সদস্যদের দ্বারা ভাগ করা হয়।  তারা বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিদের দ্বারা ধারণ করে না, বরং ব্যাপকভাবে গৃহীত এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে স্বীকৃত হয়।

২. স্থায়ী: সামাজিক মূল্যবোধ স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী।  এগুলি ঘন ঘন বা সহজে পরিবর্তিত হয় না এবং প্রায়শই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে যায়।

৩. আদর্শিক: সামাজিক মূল্যবোধগুলি আদর্শিক, যার অর্থ তারা কীভাবে মানুষের আচরণ এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা উচিত তার নির্দেশিকা প্রদান করে।  তারা গ্রহণযোগ্য এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণের জন্য মান স্থাপন করে।

 ৪. প্রসঙ্গ-নির্ভর: সামাজিক মূল্যবোধগুলি প্রসঙ্গ-নির্ভর, যার অর্থ তারা যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে প্রকাশ করা হয় তার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।

 ৫. বহুমুখী: সামাজিক মূল্যবোধগুলি বহুমুখী, যার অর্থ তারা নৈতিক, নৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সহ বিস্তৃত বিশ্বাস এবং নীতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

 ৬. পরিবর্তন সাপেক্ষে: সামাজিক মূল্যবোধগুলি স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা থাকলেও, তারা স্থির নয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।  সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটতে পারে।

 ৭. আচরণকে প্রভাবিত করে: সামাজিক মূল্যবোধগুলি কী গুরুত্বপূর্ণ এবং কী নয় তা বোঝার জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে আচরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করে।  তারা লোকেদের তাদের জগত বোঝাতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে কাজ করতে হয় তার নির্দেশিকা প্রদান করে।

নৈতিক মূল্যবোধের উৎস কোনটি?

নৈতিক মূল্যবোধের উৎস মানব বুদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়। মানবতার প্রারম্ভিক কালে মানব সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ উন্নয়ন পেয়েছে। সমাজের বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের মাধ্যমে মানবজন নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশ করেছে। অনেকে বলে যে নৈতিক মূল্যবোধের উৎস দেবদূত দ্বারা বহন করা হয়েছে, কিন্তু এটি বিভিন্ন ধর্মে উল্লেখিত হয়েছে।

ধর্মগুলি নৈতিক মূল্যবোধের উদ্ভাবনী হতে পারে, কিন্তু নৈতিক মূল্যবোধের উৎস হল মানব বুদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়। একজন মানুষ আত্মস্থল থেকেই নৈতিক মূল্যবোধ উন্নয়ন করতে পারে এবং সেই নৈতিক মূল্যবোধ বিভিন্ন ধর্ম এবং সংস্কৃতি দ্বারা উন্নয়ন করা হয়।

নান্দনিক মূল্যবোধ কি?

নান্দনিক মূল্যবোধ হল আনন্দ বা সুখের অনুভূতি যা কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় অনুভব করে। এটি ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের আনন্দ বা সুখের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না, বরং এটি ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোকিত একটি বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, কোন ব্যক্তির জন্য একটি বিনা খরচে সাপ্লাই হওয়া কম্পিউটার পাওয়া সুখের উপর নান্দনিক মূল্যবোধ থাকতে পারে, যেমন তার জীবনে প্রথমবারের মতো লেখালেখি করা বা ইন্টারনেটে সার্ফিং করা। নান্দনিক মূল্যবোধ একটি স্বভাবিক মানসিক প্রক্রিয়া যা মানুষের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জীবনের পরিবর্তন, সমস্যা সমাধান ও আরো উন্নয়নের সুপারিশে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।

মূল্যবোধ মানুষের কোন আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে?

মানব আচরণ জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ সহ বিভিন্ন কারণের একটি জটিল ইন্টারপ্লে দ্বারা প্রভাবিত হয়। এখানে কিছু মূল মান রয়েছে যা মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করতে পরিচিত:
আত্মস্বার্থ: মানুষ স্বভাবতই তাদের নিজস্ব স্বার্থে কাজ করতে ঝুঁকছে, নিজের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চায়।

পরার্থপরতা: একই সময়ে, মানুষেরও পরার্থপরতার একটি ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের এমনভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে যা বিনিময়ে কিছু আশা না করে অন্যদের উপকার করে।

সামাজিক নিয়ম: মানুষের আচরণও সামাজিক নিয়ম দ্বারা গঠিত হয়, যা আচরণের অলিখিত নিয়ম যা একটি প্রদত্ত সমাজে লোকেরা কীভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে তা নিয়ন্ত্রণ করে।

সংস্কৃতি: সংস্কৃতি বলতে বোঝায় ভাগ করা মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং রীতিনীতি যা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রেরণ করা হয়। এই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলি মানুষের আচরণকে বিভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করতে পারে, মানুষের পোশাক এবং খাওয়ার পদ্ধতি থেকে শুরু করে তারা অন্যদের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করে।

ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ: প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের নিজস্ব অনন্য সেট রয়েছে, যা তাদের আচরণকেও প্রভাবিত করতে পারে। এগুলি লালন-পালন, শিক্ষা, ধর্ম এবং জীবনের অভিজ্ঞতা সহ বিভিন্ন কারণের দ্বারা আকৃতি হতে পারে।

আবেগ: মানুষের আচরণ গঠনে আবেগ একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। ইতিবাচক আবেগ, যেমন আনন্দ এবং ভালবাসা, মানুষকে এমনভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে যা তাদের অন্যদের কাছাকাছি নিয়ে আসে, যখন নেতিবাচক আবেগ, যেমন ভয় এবং রাগ, মানুষকে এমনভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে যা নিজেকে বা অন্যদের রক্ষা করে।
সামগ্রিকভাবে, এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে মানুষের আচরণ জটিল এবং বহুমুখী, এবং এটিকে প্রভাবিত করতে পারে এমন অনেকগুলি বিভিন্ন মান এবং কারণ রয়েছে।

মানুষের চিন্তা চেতনা

মানুষের চিন্তাভাবনা এবং চেতনা হল জটিল এবং বহুমুখী ধারণা যা বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং পণ্ডিতদের দ্বারা শতাব্দী ধরে অধ্যয়ন করা হয়েছে। একটি মৌলিক স্তরে, চেতনা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে আমাদের সচেতনতাকে বোঝায়, যখন চিন্তাভাবনা উপলব্ধি, জ্ঞান, আবেগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাথে জড়িত বিভিন্ন মানসিক প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে।

চেতনা এবং চিন্তার অনেকগুলি বিভিন্ন তত্ত্ব এবং মডেল রয়েছে, বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শুরু করে যে চেতনা কেবল মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যকলাপের একটি উপজাত, আরও আধ্যাত্মিক বা আধিভৌতিক দৃষ্টিভঙ্গি যা চেতনাকে মহাবিশ্বের একটি মৌলিক দিক বলে নির্দেশ করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের মস্তিষ্কের কাজকর্ম এবং চেতনা ও চিন্তার অন্তর্গত প্রক্রিয়াগুলির উপর নতুন আলোকপাত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মস্তিষ্কের ইমেজিং কৌশলগুলি ব্যবহার করে গবেষণাগুলি প্রকাশ করেছে যে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল জ্ঞান, উপলব্ধি এবং আবেগের বিভিন্ন দিকগুলির জন্য দায়ী।

এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, চেতনা এবং চিন্তা সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না, এবং এই ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে এখনও অনেক বিতর্ক এবং জল্পনা রয়েছে।

সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক

মানুষ সহজাতভাবে সামাজিক জীব, এবং সমাজের সাথে আমাদের সম্পর্ক আমাদের অস্তিত্বের জন্য মৌলিক। সমাজ আমাদের এমন কাঠামো প্রদান করে যার মধ্যে আমরা অন্যদের সাথে যোগাযোগ করি, যোগাযোগ করি এবং সংযোগ স্থাপন করি। এটি আমাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ এবং আচরণকে আকার দেয় এবং আমাদের পরিচয় এবং আত্মীয়তার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। এখানে সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্কের কিছু মূল দিক রয়েছে:

সামাজিক মিথস্ক্রিয়া: সোসাইটি সামাজিক মিথস্ক্রিয়াগুলির জন্য সুযোগ দেয়, যা আমাদেরকে অন্যদের সাথে যুক্ত হতে, সম্পর্ক তৈরি করতে এবং সম্প্রদায় গড়ে তুলতে দেয়। এই মিথস্ক্রিয়াগুলি বিভিন্ন স্তরে ঘটে, পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পাড়া, কর্মক্ষেত্র এবং বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে বিস্তৃত সংযোগ পর্যন্ত।

নিয়ম এবং মূল্যবোধ: সমাজ নিয়ম, নিয়ম এবং প্রত্যাশা স্থাপন করে যা আমাদের আচরণ এবং মিথস্ক্রিয়াকে গাইড করে। এই নিয়ম এবং মূল্যবোধগুলি গ্রহণযোগ্য এবং অগ্রহণযোগ্য কী তা আমাদের বোঝার গঠন করে এবং তারা সামাজিক কাঠামোর মধ্যে শৃঙ্খলা এবং সুসংগততার অনুভূতি প্রদান করে।

পরিচয় এবং সম্পৃক্ততা: ব্যক্তি ও সমষ্টিগত পরিচয় গঠনে সমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা যে সামাজিক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যেমন আমাদের সাংস্কৃতিক, জাতিগত, ধর্মীয়, বা পেশাগত অনুষঙ্গগুলির দ্বারা আমাদের আত্মবোধ প্রভাবিত হয়৷ সমাজ একত্রিত হওয়ার অনুভূতি প্রদান করে এবং বিশ্বে আমাদের স্থান নির্ধারণে সহায়তা করে।

সামাজিক প্রতিষ্ঠান: সমাজ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সংগঠিত হয়, যেমন পরিবার, শিক্ষা, সরকার, অর্থনীতি এবং ধর্ম। এই প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যক্তিদের জন্য কাঠামো এবং সহায়তা প্রদান করে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং সম্মিলিত চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষাগুলিকে সম্বোধন করে।

সামাজিকীকরণ: সমাজ সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তিদের সামাজিকীকরণ করে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে, আমরা ভাষা অর্জন করি, সামাজিক নিয়ম শিখি এবং সাংস্কৃতিক চর্চাকে অভ্যন্তরীণ করি। সামাজিকীকরণ আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নেভিগেট করতে এবং সমাজে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হতে সাহায্য করে।

পরস্পর নির্ভরশীলতা: মানুষ পরস্পর নির্ভরশীল প্রাণী, বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি এবং সুস্থতার জন্য একে অপরের উপর নির্ভর করে। সোসাইটি সহযোগিতা, সহযোগিতা এবং শ্রমের বিভাজনকে উৎসাহিত করে, যা আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষীকরণ করতে এবং একে অপরের দক্ষতা এবং অবদান থেকে উপকৃত হতে দেয়।

সামাজিক পরিবর্তন: সমাজ গতিশীল এবং ক্রমাগত বিকশিত। এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। মানুষ সক্রিয়ভাবে সমাজকে গঠন করে এবং এর মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন হয় তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

সামাজিক ভূমিকা এবং দায়িত্ব: সমাজ বয়স, লিঙ্গ, পেশা এবং সামাজিক অবস্থানের মতো বিষয়গুলির উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিদের নির্দিষ্ট ভূমিকা এবং দায়িত্ব প্রদান করে। এই ভূমিকাগুলি আমাদের অধিকার, কর্তব্য এবং প্রত্যাশাগুলিকে সংজ্ঞায়িত করে এবং তারা সমাজের সামগ্রিক কার্যকারিতা এবং স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।

সামাজিক সমর্থন এবং সুস্থতা: সমাজ একটি সহায়তা নেটওয়ার্ক প্রদান করে যা আমাদের সামগ্রিক কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। সামাজিক সংযোগ, সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা, এবং সংস্থান এবং পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে এবং আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে।

সমষ্টিগত কর্ম: সমাজ সাধারণ উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করতে এবং ভাগ করা লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে সমষ্টিগত পদক্ষেপকে সক্ষম করে। সামাজিক আন্দোলন, অ্যাডভোকেসি এবং নাগরিক ব্যস্ততার মাধ্যমে, ব্যক্তিরা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, সমাজের সাথে মানুষের সম্পর্ক জটিল এবং বহুমুখী। সমাজ সেই প্রেক্ষাপট প্রদান করে যেখানে আমরা বাস করি, যোগাযোগ করি এবং অর্থ খুঁজে পাই। এটি আমাদের মূল্যবোধ, পরিচয় এবং সুযোগগুলিকে আকার দেয়, যখন আমাদের ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপ এবং পছন্দগুলি, ফলস্বরূপ, সমাজকে প্রভাবিত করে এবং এর ক্রমাগত বিকাশে অবদান রাখে।

ভালোমন্দ কোন ধরনের মূল্যবোধ

হ্যাঁ, "ভাল" এবং "খারাপ" শব্দগুলি কোন কিছুর নৈতিক বা নৈতিক গুণ সম্পর্কে মূল্যবোধ বা রায় বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি প্রায়শই কর্ম, আচরণ, ফলাফল বা বিষয়গুলির অবস্থার আকাঙ্খিততা বা ক্ষতিকারকতা মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়।

যাইহোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কি "ভাল" বা "খারাপ" বলে বিবেচিত হয় তা সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। নৈতিকভাবে সঠিক বা ভুল কী তা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি বা সমাজের বিভিন্ন মানদণ্ড থাকতে পারে। অতিরিক্তভাবে, নৈতিক কাঠামো যেমন উপযোগিতাবাদ, ডিওন্টোলজি, বা গুণ নৈতিকতা নৈতিক মূল্যবোধ বোঝার এবং মূল্যায়ন করার জন্য বিভিন্ন পন্থা প্রদান করে।

কিছু ক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত পছন্দ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে, ভাল এবং খারাপের ধারণাগুলি বিষয়ভিত্তিক হতে পারে। যাইহোক, এমন কিছু দৃষ্টান্তও রয়েছে যেখানে সামাজিক ঐকমত্য বা প্রতিষ্ঠিত নৈতিক নীতিগুলি কী ভাল বা খারাপ বিবেচিত হবে তা নির্ধারণের জন্য আরও উদ্দেশ্যমূলক ভিত্তি প্রদান করে।

সামগ্রিকভাবে, মূল্যবোধ হিসাবে ভাল এবং মন্দ বোঝার মধ্যে নৈতিক বা নৈতিকভাবে সঠিক বা ভুল কী তা বিচার করা জড়িত, তবে সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে নির্দিষ্টকরণগুলি পরিবর্তিত হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url