মুদ্রা বা অর্থ || Money

মুদ্রা কি?

বর্তমানে মুদ্রাই বিনিময়ের সর্বজনস্বীকৃত মাধ্যম। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, মুদ্রা বা অর্থ এরূপ একটি বিনিময়ের মাধ্যম যা সবার নিকট গ্রহণযোগ্য, যার দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় এবং সকল প্রকার লেনদেন তথা দেনা-পাওনার হিসাব সম্পন্ন করা যায়। অর্থাৎ যা বিনিময়ের মাধ্যম, সঞ্চয়ের ভান্ডার, মূল্যের পরিমাপক হিসেবে কাজ করে, তাই মুদ্রা বা অর্থ।

মুদ্রা কাকে বলে?

যে বস্তু বিনিময়ের মাধ্যম, স্থগিত লেনদেনের মান ও ঋণ পরিশোধের উপায় হিসেবে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য ও আইনসিদ্ধ এবং যা মূল্যের পরিমাপক ও সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে কাজ করে তাকে মুদ্রা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, মুদ্রা হচ্ছে ঐ সকল উপাদানের মজুদ যাতে লেনদেনের উদ্দেশ্যে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য একটি অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

মুদ্রার সংজ্ঞা 

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রা বা অর্থের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেন।
অর্থনীতিবিদ ওয়াকার বলেন, ''অর্থ যা করে তাই অর্থ।"

অধ্যাপক রবার্টসন (Robertson) বলেন, "দ্রব্যসামগ্রীর দাম অথবা অন্যান্য ব্যবসায়গত কার্যকলাপের পাওনা হিসেবে যা সাধারণত সর্বত্র গ্রহণযোগ্য তাই অর্থ।"

অধ্যাপক লর্ড কেইনস্-এর মতে, "অর্থ এমন একটা দ্রব্য যা হস্তান্তর করে ঋণের চুক্তি ও দামের চুক্তি মেটানো যায় এবং যার মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখা যায়।"

মুদ্রার উদ্ভব

মানব ইতিহাসের বহু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে বিনিময় ব্যবস্থার উন্নয়নে। মুদ্রা ও ব্যাংকব্যবস্থা এ পথে এক বিস্ময়কর সংযোজন। অতীতে দ্রব্য-কড়ি বিনিময় ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও ক্রমবিবর্তনে মানুষের চলার পথকে সহজ এবং জীবনযাত্রা মানোন্নয়নে অর্থের উদ্ভব হয়।

মুদ্রার প্রথম প্রচলনের ইতিহাস 

ভূমধ্যসাগরের কোলঘেঁষা রাজ্য লিডিয়ার রাজা ‘অলিয়াটেসের (খ্রি. পূর্ব ৬২০ খ্রি. পূর্ব ৫৬০) হাত ধরে গর্জনরত সিংহের মুখের অবয়বে পয়সার মতো গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচার কাজ চালাতো। কুবলাই খান মোঙ্গল সাম্রাজ্যে ১৩ শতকে প্রথম সরকারি নোট প্রবর্তন করেন। ১৩ শতকেই মার্কো পোলো চীন থেকে ইউরোপে মুদ্রা নিয়ে যান। ইতালীয় ব্যাংকাররা এটি ব্যবহার করেন। ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে সুইডেন প্রথম কাগুজে মুদ্রার প্রচলন করে। ১৬৯৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড প্রথম মুদ্রা প্রচলন করেন।
মুদ্রা

মুদ্রার ইতিহাস

বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে মুদ্রার ব্যবহার প্রায় ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আধুনিক তুরস্কের একটি অঞ্চল লিডিয়ায়। এই মুদ্রাগুলি ইলেক্ট্রাম দিয়ে তৈরি ছিল, যা স্বর্ণ ও রৌপ্যের একটি প্রাকৃতিক সংকর ধাতু, এবং একটি সিংহ বা ষাঁড়ের নকশা দিয়ে স্ট্যাম্প করা হয়েছিল।

সময়ের সাথে সাথে, অন্যান্য সভ্যতা, যেমন গ্রীক এবং রোমানরা, তাদের নিজস্ব মুদ্রা তৈরি করতে শুরু করে, সাধারণত রূপা বা সোনার তৈরি, যার একদিকে একটি নকশা বা চিত্র এবং অন্য দিকে ধাতুর ওজন এবং বিশুদ্ধতা নির্দেশ করে একটি চিহ্ন।

মধ্যযুগে, মুদ্রাগুলি প্রায়শই তামা বা পিতলের মতো বেস ধাতু দিয়ে তৈরি হত এবং প্রায়শই শাসকদের দ্বারা অপমানিত হত যারা তাদের মধ্যে মূল্যবান ধাতুর পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল।

প্রারম্ভিক আধুনিক যুগে, অনেক দেশ কেন্দ্রীভূত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে, যার ফলে কাগজের টাকা এবং ব্যাঙ্কনোট তৈরি হয়। যাইহোক, কাগজের টাকার পাশাপাশি মুদ্রা ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল এবং অনেক দেশ তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র মুদ্রার নকশা এবং মূল্যবোধ তৈরি করেছে।

20 শতকে, ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ডের মতো বৈদ্যুতিন অর্থপ্রদানের পদ্ধতিগুলি আরও ব্যাপক হয়ে উঠলে মুদ্রার ব্যবহার হ্রাস পেতে শুরু করে। যাইহোক, বিশ্বের অনেক জায়গায় মুদ্রা ব্যবহার করা অব্যাহত রয়েছে, বিশেষ করে ছোট লেনদেনের জন্য, এবং কিছু দেশ এমনকি বিশেষ অনুষ্ঠান বা বার্ষিকী উপলক্ষে স্মারক মুদ্রা জারি করেছে।

মুদ্রা ধাতু

১০০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে, তখন শস্যের সঙ্গে গরু বা ভেড়ার বিনিময় ছিল সবচেয়ে বেশি। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩০০০ সালে রৌপ্যমুদ্রা মুদ্রার একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। খ্রিষ্ট-পূর্ব ১২০০ সালে ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা কুড়ি বা ঝিনুকের খোল দিয়ে মুদ্রার কাজ চালাতো। ১১০০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে চীনের মানুষেরা যেসব পণ্য কেনাবেচা করতো সেগুলোরই ছোট ছোট রেপ্লিকা বা প্রতিলিপি তৈরি করতো তামা দিয়ে। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৭০০ সালে গ্রিসের এজিনা দ্বীপে পৃথিবীর প্রথম কয়েন তৈরি করা হয়।

 মুদ্রার বৈশিষ্ট্য 

পূর্বে উল্লিখিত সংজ্ঞাসমূহ পর্যালোচনা করলে অর্থের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ পাওয়া যায় :
১. প্রত্যেক রাষ্ট্র নিজস্ব একক মুদ্রা (অর্থ) প্রচলন করে যার বিনিময় মূল্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
২. অর্থ বিনিময়ব্যবস্থার গতিশীলতা সৃষ্টি করে।
৩. সঞ্চয়ের বাহন, মূল্যের পরিমাপক এবং ভবিষ্যৎ দেনা-পাওনা মেটানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।
৪. ব্যবসায়িক লেনদেন, ঋণ ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।
৫. অর্থের উৎপাদিকাশক্তি বিদ্যমান।
৬. এটি আয় বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. অর্থ সামাজিক মর্যাদার বাহন হিসেবে কাজ করে।

মুদ্রার কার্যাবলী বা মুদ্রার প্রধান কাজ কী?

আধুনিক অর্থনীতি একান্ত অর্থভিত্তিক। ফলে অর্থ বর্তমান অবস্থায় একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পরিগণিত। মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অর্থ প্রধানত তিন ধরনের কার্য সম্পাদন করে থাকে। যথা—
ক. বাণিজ্যিক কার্যাবলি,
খ. সামাজিক কার্যাবলি এবং
গ. মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলি।

ক. বাণিজ্যিক কার্যাবলি (Commercial Functions): অর্থের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই বাণিজ্যিক কার্যাবলি। অর্থের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কার্যাবলি হলো—
"মাধ্যম, পরিমাপক, মান ও ভাণ্ডার এই ৪টি কাজ অর্থের।"

অর্থের বাণিজ্যিক কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. বিনিময়ের মাধ্যম: অর্থের প্রাথমিক ও প্রধান কাজ হলো বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে লেনদেন সম্পন্ন করা। অর্থই বিনিময়ের সর্বজনগ্রাহ্য মাধ্যম। তাই এর দ্বারা যেকোনো পরিমাণ পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যায়, ফলে লেনদেন সহজ ও গতিশীল হয়।

২. মূল্যের পরিমাপক: দ্রব্য বিনিময় প্রথায় মূল্য পরিমাপের কোনো সাধারণ মানদণ্ড না থাকায় বিভিন্ন দ্রব্যের আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন ছিল। কিন্তু অর্থ সকল দ্রব্য, সেবা বা সম্পদের মূল্য পরিমাপের সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে বিধায় বিনিময় ব্যবস্থার উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও লেনদেন সহজতর হয়েছে।

৩. স্থগিত লেনদেনের মান: স্থগিত লেনদেন বলতে ভবিষ্যৎ দেনা-পাওনাকে নির্দেশ করে। দ্রব্যমূল্য দ্রুত পরিবর্তনশীল হলেও অর্থের মূল্য দ্রুত পরিবর্তনশীল নয়। ঋণদাতা অর্থ দ্বারা ঋণ দেয় এবং ঋণগ্রহীতা অর্থ দ্বারা তা পরিশোধ করে। ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলতে থাকে।

৪. সঞ্চয়ের বাহন: অধিকাংশ দ্রব্যসামগ্রী পচনশীল ও ক্ষণস্থায়ী বলে দ্রব্য বিনিময় প্রথায় দ্রব্যের মাধ্যমে সঞ্চয় সম্ভব নয়। কিন্তু অর্থ দ্বারা সবকিছু বিনিময় করা যায় বলে এরূপ দ্রব্যসামগ্রী বা সেবার মূল্য অর্থের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা সম্ভব। বর্তমানে মানুষ তার উৎপাদিত আয় থেকে ভোগ ব্যয় বাদ দিয়ে যা উদ্বৃত্ত থাকে তা অর্থের মাধ্যমে সঞ্চয় করতে পারে।

৫. মূল্য স্থানান্তরের বাহন: অনেক দ্রব্যসামগ্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজ ও নিরাপদে স্থানান্তর করা যায় না। যেমন—অনেক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আছে যা একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তর করা যায় না কিন্তু অর্থের মাধ্যমে তা বিক্রয় করে এর মূল্য সহজে দূরে স্থানান্তর করা যায়। এভাবে মূল্য স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ সম্পদ ব্যবহার ও আর্থিক লেনদেনে সাহায্য করে।

৬. ঋণের ভিত্তি: অর্থ ঋণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। বর্তমানকালে ব্যবসায়িক লেনদেনের অধিকাংশ বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্র, যেমন— চেক, ব্যাংক ড্রাফট, বিনিময় বিল প্রভৃতির সাহায্যে সম্পন্ন হয়। ব্যাংকে আমানতকৃত নগদ অর্থের ভিত্তিতেই ব্যাংক এসব ঋণপত্র প্রচলন করে।

৭. তারল্যের মান: অর্থ সবচেয়ে তরল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থের তারল্য গুণের ফলে, দ্রব্যসামগ্রীকে যেমন সহজেই অর্থে রূপান্তর করা যায়, তেমনি অর্থকেও দ্রব্যসামগ্রীতে রূপান্তর করা যায়। এভাবে অর্থ তারল্যের মান হিসেবে কাজ করে।

৮. তৃপ্তি বৃদ্ধি করার উপায়: ভোক্তার প্রধান লক্ষ্য হলো সীমিত আয়ের মধ্য থেকে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করা। মার্শালের মতানুসারে, বিভিন্ন দ্রব্যের একক হতে প্রাপ্ত প্রান্তিক উপযোগ (MU) যখন উক্ত দ্রব্যের প্রতি এককের দামের (P) সমান হয় তখনই ক্রেতা সর্বোচ্চ তৃপ্তি লাভ করে। এছাড়াও ভোক্তা অর্থের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা ও প্রয়োজনমাফিক দ্রব্যাদি ক্রয় করে তৃপ্তি বাড়াতে পারে।

৯. বণ্টনের কাজ: দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন, উৎপাদনে অংশগ্রহণকারী উপকরণগুলোর পারিশ্রমিক অর্থের মাধ্যমে বণ্টিত হয়। বণ্টনব্যবস্থা সহজীকরণের ক্ষেত্রে অর্থ মৌলিক ভূমিকা পালন করে।

খ. সামাজিক কার্যাবলি (Social Functions): অর্থ নানাবিধ সামাজিক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। অর্থের সামাজিক কার্যাবলি বর্তমানকালে গুরুত্বের সাথে স্বীকার করা হয়। যেমন—
১. সামাজিক মর্যাদা ও নিশ্চয়তার প্রতীক: সমাজে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা দ্রব্যসামগ্রী ও সম্পদের আর্থিক মূল্যমানের দ্বারাই নির্ণীত হয়।

২. সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা: বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের ক্ষেত্রে অর্থ দ্বারা উপহার-উপঢৌকন প্রদান করে অনেক সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালন করা যায়। এর ফলে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে।

গ. মনস্তাত্ত্বিক কার্যাবলি (Psychological Functions): আধুনিককালে অর্থ সামাজিক মর্যাদার বাহন হিসেবে কাজ করে। ধনী ব্যক্তিদেরকে সমাজে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। এছাড়া নগদ অর্থ মানুষের মনোবল বাড়ায় এবং মানুষকে উৎফুল্ল রাখে। এর ফলে সমাজে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পায় এবং বস্তুগত প্রগতি ত্বরান্বিত হয়। এভাবে অর্থ তার বিভিন্নমুখী ব্যবহার ও উপযোগ দ্বারা ব্যক্তিজীবনে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সৃষ্টি করে।

আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অর্থ পূর্বোক্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে দ্রব্য বিনিময় প্রথার সকল অসুবিধাকে দূর করে বিনিময় ব্যবস্থাকে সহজ, উন্নততর এবং সার্বজনীন করেছে।

মুদ্রার অবমূল্যায়ন কি?
বিদেশি  মুদ্রার সাপেক্ষে একটি দেশের অর্থ মূল্যের নিম্নগামী সমন্বয়কে মুদ্রা অবমূল্যায়ন বলে। মুদ্রা ইস্যুকারী সরকার একটি মুদ্রার অবমূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি মুদ্রার অবমূল্যায়ন একটি দেশের রপ্তানির খরচ এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।

মুদ্রা বাজার কাকে বলে? 
বিশ্বব্যাপী  স্বল্পকালীন ঋণ আদান প্রদানের একটি ক্ষেত্রকে মুদ্রা বাজার বলা হয়। বিশ্বব্যাপী আর্থিক ক্ষেত্রের প্রয়োজনে এখান থেকেই নগদ টাকার যোগান বজায় রাখা হয়। মুদ্রা বাজার হলো এমন একটি স্থান যেখানে স্বল্পমেয়াদী অর্থের যোগান দিয়ে থাকে।

মুদ্রার বিনিময় হার

মুদ্রার বিনিময় হার বলতে একটি মুদ্ৰা অন্য মুদ্রায় যে হারে বিনিময় করা হয় সেই হারকে বুঝায়। মুদ্রা বলতে সাধারণত জাতীয় মুদ্রা বোঝানো হয়, তবে ক্ষেত্র বিশেষ উপ-জাতীয় মুদ্রা, যেমন: হংকং- এর মুদ্রা এবং সুপার-জাতীয় মুদ্রা, যেমন: ইউরোকেও বোঝানো হয়।

মুদ্রার মান কিভাবে নির্ধারিত হয়?

টাকার মান নির্ধারণ হয় টাকার ক্রয়ক্ষমতা দিয়ে। দ্রব্যের দামের সাথে টাকার যানের সম্পর্ক বিপরীত। দ্রব্যের দাম কমলে টাকার মান বাড়ে, বিপরীতক্রমে দ্রব্যের দাম বাড়লে টাকার মান কমে।

মুদ্রার মূল্য কি?

মুদ্রার নিজস্ব কোনো মূল্য নেই। সাধারণ অর্থে মুদ্রার মূল্য বলতে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতাকে বোঝায়। মুদ্রা দ্বারা পণ্য ও সেবা ক্রয় করা যায়। এজন্য মুদ্রার মূল্য পণ্যসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা দ্বারা যে পরিমাণ পণ্য বা সেবা ক্রয় করা যায় তাকে মুদ্রার মূল্য বলা হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা দ্বারা ২ কেজি চাল ক্রয় করা গেলে ঐ ২ কেজি চালই হলো ১০০ টাকার মূল্য। পণ্যসামগ্রীর মূল্য যেমন মুদ্রার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তেমনিভাবে মুদ্রার মূল্যও পণ্যসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। 
মুদ্রার মূল্য সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। 

অর্থনীতিবিদ জে. এল. হ্যানসেন-এর মতে, “অর্থ যা ক্রয় করে তাই অর্থের মূল্য।”

অধ্যাপক ডি. এইচ. রবার্টসন-এর মতে, "এক একক অর্থের বিনিময়ে সাধারণভাবে যে পণ্য বা সেবাকর্ম ক্রয় করা যায় তাকেই অর্থের মূল্য বোঝায়।"

মুদ্রার চাহিদা
একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেশের জনগণ বিভিন্ন প্রয়োজনে যে পরিমাণ নগদ মুদ্রা হাতে ধরে রাখতে চায় তাকেই মুদ্রার চাহিদা বলে। বিশদভাবে বলতে গেলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো অর্থনীতিতে জনসাধারণ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহ (ব্যাংক ব্যতীত) যে পরিমাণ নগদ মুদ্রা হাতে ধরে রাখতে চায় তা হলো মুদ্রার চাহিদা। মুদ্রা দিয়ে প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনের নিষ্পত্তি করা যায়, হঠাৎ করে উদ্ভূত কোনো আর্থিক সংকটের মোকাবিলা করা যায় কিংবা সুযোগ বুঝে ঋণপত্র কিনে লাভবান হওয়া যায় অর্থাৎ ফটকা কারবার করা যায়। এসব কারণে জনসাধারণ হাতে নগদ মুদ্রা ধরে রাখতে চায়। সুতরাং, মুদ্রা সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য জনসাধারণ যে পরিমাণ নগদ মুদ্রা হাতে ধরে রাখে তাকে মুদ্রার চাহিদা বলে।

মুদ্রার যোগান
অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলোর মধ্যে মুদ্রার যোগান অন্যতম। সাধারণভাবে অর্থের যোগান দ্বারা একটি দেশের মোট অর্থের পরিমাণ প্রকাশ পায়। মোট অর্থের মধ্যে প্রচলিত মুদ্রা (কারেন্সি) ও চাহিদা আমানত অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রচলিত মুদ্রা বলতে সব রকমের ধাতব মুদ্রা ও কাগজি নোটের সমষ্টিকে বোঝানো হয়। ব্যাংকের চাহিদা আমানত বলতে সেই আমানতকে বোঝানো হয়, যা থেকে আমানতকারী চাওয়া মাত্র অর্থ তুলতে পারে। সুতরাং অর্থের যোগানের সংজ্ঞা দাঁড়ায়— একটি দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রচলিত মুদ্রা (কারেন্সি) ও চাহিদা আমানতের সমষ্টিকে অর্থের যোগান বলে।

ভ্যালু কাকে বলে?

ভ্যালু হল কোন জিনিস বা সেবা যা কোন কারণে কেনা বা ব্যবহৃত হলে তার মূল্য বা দাম বোঝায় এবং সেটির মূল্য উপকারিতা থেকে তুলনায় নির্ধারিত হয়। মূলত ভ্যালু বলতে একটি পণ্য বা সেবার মূল্যবান অংশ বোঝায় যা গ্রাহক পাওয়ার জন্য পরিশোধ করেন। ভ্যালু শব্দটি অর্থ হতে পারে পরিমাণ, মূল্য বা অর্থবোধ। ক্রয়কৃত পণ্য বা সেবার ভ্যালু সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ক্রেতা সঠিক মূল্য পরিশোধ করতে পারেন এবং বিক্রেতা সঠিক দাম নির্ধারণ করতে পারেন।

ফটকা কারবার কাকে বলে?

ফটকা ব্যবসা বলতে এমন এক ধরনের ব্যবসায়িক উদ্যোগ বা বিনিয়োগকে বোঝায় যেখানে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি এবং অনিশ্চয়তা জড়িত। অনুমানমূলক ব্যবসায়, উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা ক্ষতির একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ। ফটকা ব্যবসায় নতুন এবং অ-পরীক্ষিত পণ্য বা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা, অজানা বাজারে প্রবেশ করা বা ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক কৌশল অনুসরণ করা জড়িত থাকতে পারে। এতে প্রায়ই উল্লেখযোগ্য মাত্রার ঋণ গ্রহণ করা বা বৃদ্ধি অর্জনের জন্য সম্পদ লাভ করা জড়িত। যদিও অনুমানমূলক ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলি সম্ভাব্যভাবে উচ্চ আয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সেগুলি প্রায়শই ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়িক মডেলের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকির সাথে থাকে। যেমন, তাদের উচ্চ স্তরের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ঝুঁকি গ্রহণ ও পরিচালনা করার ইচ্ছা প্রয়োজন।

অর্থের সময় মূল্য কি?

অর্থের সময় মূল্য হল একটি ধারণা যা অর্থ বা অর্থানুভবের সাথে সম্পর্কিত। মূল্য বা দাম হল কোনো বস্তু, সেবা বা অস্ত্রের মান বা প্রায়শই অর্থের পরিমাণ দ্বারা পরিমাপ করা হয়। অর্থের সময় মূল্য হল ব্যবহারকারীর মনে যে সময়ের মান সবচেয়ে বেশি হয় এমন সময়টি।

উদাহরণ হিসাবে ধারণা করা যাক একটি পন্য বা সেবার মূল্য 10 ডলার এবং আপনার দিনের মান সবচেয়ে বেশি হল 1 ডলার। এতে প্রকাশিত মান অর্থের সময় মূল্য হল 10 ডলার। আরেকটি পন্যের ক্ষেত্রে মূল্য আরো কম হলে আপনি ঐ পন্যটির মান অর্থের সময় মূল্য হিসাবে চিন্তা করতে পারেন।

অর্থের সময় মূল্য একটি ব্যক্তিগত ধারণা হতে পারে এবং এটি ব্যক্তির আর্থিক সংসারের ভিত্তি ও মান মাপের সাথে সম্পর্কিত। এটি প্রতিটি ব্যক্তির পরিবর্তয়ের উপর ভিত্তি করে যেমন অর্থের সময় মূল্য পরিবর্তিত হতে পারে আয়ের পরিবর্তে, ব্যয়ের পরিবর্তে এবং ব্যবহারের পরিবর্তে। প্রতিটি ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত সীমানায় বিবেচনা করে অর্থের সময় মূল্য সেট করে থাকেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url