ব্যবসা || Business
ব্যবসায়ের ধারণা
হাসান মাহমুদ তার নিজস্ব ও লিজকৃত মোট ২০০ একর জমিতে গমের আবাদ করেন। উৎপাদিত উন্নতমানের গম থেকে তিনি নিজের কারখানাতেই আটা ও ময়দা তৈরি করেন। উক্ত আটা ও ময়দার কিছু অংশ তিনি সরাসরি বিপণন করেন। বাকিটুকু দিয়ে ব্রেড ও বিস্কুট তৈরি করে তা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বা খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করেন। এভাবে তিনি ব্যবসায়টি থেকে মুনাফা অর্জন করেন।
উপরে বর্ণিত হাসান মাহমুদের সম্পাদিত কার্যাবলিকে ব্যবসায় বলা যায়।
ব্যবসা শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ কি?
'ব্যবসায়' শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Business। এর অর্থ হলো কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা (State of being busy)। সাধারণত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত উৎপাদন, বণ্টন ও এর সহায়ক যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলা হয়। এ উৎপাদনসংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে এবং বণ্টনসংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের জন্য হাঁস-মুরগি পালন বা সবজি চাষ, মানসিক আনন্দ পাওয়ার জন্য গান-বাজনা করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কারণ, এসব কাজের সাথে মুনাফা অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কেউ এ কাজগুলো মুনাফা অর্জনের আশায় করলে তা ব্যবসায় বলে বিবেচিত হবে। এ অর্থনৈতিক কাজগুলো অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইনে বৈধ হতে হবে। অবৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলা যায় না।
আমেরিকার টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রফেসর লিউস হেনরি হ্যানি (Lewis Henry Haney) বলেছেন, 'Business may be defined as a human activity directed towards producing or acquiring wealth through buying and selling of goods.' অর্থাৎ, 'পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পদ উৎপাদন বা অর্জনের মানবীয় কাজকে ব্যবসায় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।'
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ের যে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো দেখা যায় তা নিম্নে দেওয়া হলো—
ক. নির্দিষ্ট অভাবপূরণের লক্ষ্যে ব্যবসায় করা হয়;
খ. এতে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য থাকে;
গ. এ কাজে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা আছে;
ঘ. একে অবশ্যই দেশীয় আইনে বৈধ হতে হয়;
ঙ. এর কার্যক্রম পরিচালনায় নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়;
চ. এতে সেবার মনোভাব থাকতে হয়;
ছ. এর মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ তৈরি হয়;
জ. এটি স্বাধীন ও পরিবর্তনযোগ্য পেশা;
ঝ. এর কাজ ধারাবাহিক ও নিয়মিতভাবে করা হয়।
অতএব, মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যদ্রব্য, সেবাকর্ম বা তথ্যাদি উৎপাদন, বণ্টন ও এর সহায়ক যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলে।
ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশ
মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ও উন্নয়নের সাথে ব্যবসায়েরও বিবর্তন ও সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ অভাব বা চাহিদা মেটানোর জন্য পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিনিময় করত। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ের সূত্রপাত হয় এবং তা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের এ ধারাকে প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক এ তিন পর্যায়ে ভাগ করা যায়। নিচে ছকের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশ উপস্থাপন করা হলো—
চিত্র : ব্যবসায়ের ক্রমবিকাশের ইতিহাস
১. প্রাচীন যুগ (Ancient age): সভ্যতার আদিম স্তরে মানুষ প্রকৃতির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল ছিল। তারা নিজ প্রচেষ্টায় বন-বাদাড়ে ঘুরে ফলমূল সংগ্রহ এবং পশু ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। এরপর মানুষ 'পশুপালন ও কৃষিকাজ শুরু করে। উৎপাদিত দ্রব্যাদি তারা একে অপরের সাথে বিনিময় করত। এটি বিনিময় প্রথা (Barter System) নামে পরিচিত। এ প্রথার সমস্যা দূর করতে মানুষ দুষ্প্রাপ্য শামুক-ঝিনুক, স্বর্ণ-রৌপ্য, কড়ি- পাথর ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার ব্যবহার শুরু করে। এ সময়ে পণ্যদ্রব্য পারিবারিক প্রয়োজনের ভিত্তিতেই উৎপাদন করা হতো। এতে অনেকে উৎপাদনে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করে। মূলত এ সময়েই ব্যবসায়ের প্রচলন হয়।
২. মধ্য যুগ (Middle age): এ সময় মানুষ পরিবার ও সমাজবদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ হয় ও চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। এ সময় সমাজে কামার, কুমার, তাঁতি, স্বর্ণকার প্রভৃতি শ্রেণির উদ্ভব হয়। গড়ে উঠতে থাকে রাস্তাঘাট, বাজার ও শহর। সর্বজনস্বীকৃত মাধ্যম হিসেবে অর্থ ও মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন হয় এ সময়েই। ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক কাজগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায় সংগঠনেরও উদ্ভব হতে থাকে। এ যুগেই ব্যবসায় সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। একমালিকানা, অংশীদারি, ব্যবসায়ী সংঘ (Merchant Guild), কারিগরি সংঘ (Craft Guild) ও উৎপাদক সংঘ (Producer Guild) এ যুগেই উদ্ভব হয়। এ সময় একক বিক্রেতা (Monopoly) ও উৎপাদনকারীরা বাজার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতেন।
৩. আধুনিক যুগ (Modern age): আধুনিক ব্যবসায়ের শুরু হয় মূলত ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের (১৭৫০- ১৮৫০) সময় থেকে। তখন প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে শিল্প-কারখানায় শুরু হয় বিপুল উৎপাদন। গড়ে ওঠে নতুন নতুন কল-কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ সময় ব্যাংক ও বিমা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, এটিএম কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রচলন হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধ্যান-ধারণার উদ্ভাবন ব্যবসায়কে আরও সহজ ও প্রসারিত করছে। কোম্পানি সংগঠন, ব্যবসায় জোট, রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় ও যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ের ব্যাপক প্রসার হচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থাগুলো (Multinational Corporations MNCs) বিশ্বের সব জায়গায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। ক্রেতা-ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যবসায় সংগঠনগুলো নিচ্ছে বিভিন্ন কৌশল। বিভিন্ন ধরনের জোট ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization - WTO)-এর তত্ত্বাবধানে সারা বিশ্বে ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য
ব্যবসায় হলো মুনাফা অর্জনের আশায় সম্পাদিত যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক কাজের সমষ্টি। কোনো কাজকে ব্যবসায় বলে গণ্য হতে হলে এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। নিচে ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করা হলো-
১. মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য (Goal to earn profit): প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত ফল বা মূল অভিপ্রায়কে লক্ষ্য বলা হয়। ব্যবসায়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের চেষ্টা। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যবসায়ের সব কাজ ঝুঁকি নিয়ে পরিচালিত হয়। তাই মুনাফাকে ঝুঁকি গ্রহণের পুরস্কার বলা হয়। যে কাজ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় না, তা ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত হবে না ।
২. আইনগত বৈধতা (Legality): ব্যবসায় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈধ হতে হয়। অবৈধভাবে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন ও সেবা দানকাজ পরিচালনা করে অর্থ উপার্জন করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। চোরাকারবারি, মানবপাচার, মাদকদ্রব্য কেনা-বেচা প্রভৃতি ব্যবসায় বলে বিবেচিত হয় না। কারণ, এসব কাজ অবৈধ ও বেআইনি।
৩. আর্থিক মূল্য (Monetary value): ব্যবসায় একটি অর্থনৈতিক কাজ। এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো আর্থিক মূল্যে এর কাজের মূল্য নিরূপণ যোগ্যতা। যেসব কাজ অর্থের মাপকাঠিতে নিরূপণ করা যায়, তা-ই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।
৪. উপযোগ সৃষ্টি (Creating utility): কোনো কিছুর অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। ব্যবসায় পণ্য ও সেবাকর্মের উপযোগ সৃষ্টি করে। এ উপযোগ রূপগত, স্বত্বগত, স্থানগত, কালগত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। শিল্পের মাধ্যমে বস্তুর রূপগত, বণ্টনের মাধ্যমে স্বত্বগত, পরিবহনের মাধ্যমে স্থানগত ও গুদামজাতকরণের মাধ্যমে কাল বা সময়গত উপযোগ সৃষ্টি করে মানুষের বিভিন্ন ধরনের অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়।
৫. উদ্যোগ গ্রহণ (Taking initiative): স্বাধীনভাবে নিজ কর্মপ্রচেষ্টায় কোনো কিছু করার উদ্যোগ প্রাথমিক উদ্যোগ নিতে হয়। যে ব্যক্তি ব্যবসায় গঠনের উদ্যোগ নেন, তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়। উদ্যোক্তা ছাড়া কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠিত হতে পারে না।
৬. ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা (Risk and uncertainty): আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলা হয়। আর ভবিষ্যৎ অজানা অবস্থাকে বলা হয় অনিশ্চয়তা। ব্যবসায়ের সব পর্যায়েই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। ব্যবসায়ে সবসময় লাভ বা মুনাফা হবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এতে লোকসানের সম্ভাবনাও থাকে। তাই ব্যবসায়ীকে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলতে হয়। কোনো বিনিয়োগ ক্ষেত্রের ওপর আয় নির্ধারিত থাকলেও সেক্ষেত্রে ঝুঁকির অনুপস্থিতির কারণে তা ব্যবসায় বলে বিবেচিত হবে না।
৭. পণ্যদ্রব্য ও সেবা উৎপাদন (Producing product and service): মানুষের বিভিন্নমুখী অভাব ও চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের। ব্যবসায় সমাজের মানুষের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রেখে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের যোগান নিশ্চিত করে ।
৮. পণ্যদ্রব্য ও সেবা বণ্টন (Distribution of product and service): ব্যবসায়ী অর্থের বিনিময়ে পণ্যদ্রব্য ও সেবা বণ্টন করে। তার কাজ হলো মানুষের অভাবের ধরন জেনে সে অনুযায়ী পণ্যদ্রব্য ও সেবা সরবরাহ করা। তাই, পণ্যদ্রব্যের বণ্টন ও সরবরাহ ব্যবসায়ের একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।
৯. ক্রয়-বিক্রয়ের পৌনঃপুনিকতা (Recurring purchase and sale): পণ্যদ্রব্য বারবার কেনা-বেচার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টাকে লেনদেনের পৌনঃপুনিকতা বলে। অর্থাৎ, ব্যবসায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পণ্যদ্রব্যের কেনা-বেচার ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। যেমন: নিয়মিতভাবে আসবাবপত্র তৈরি করে তা বিক্রি করলে ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। কিন্তু বাড়িতে ব্যবহৃত পুরোনো আসবাবপত্র কারও কাছে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করলেতা ব্যবসায় হিসেবে বিবেচিত হবে না।
১০. নমনীয়তা (Flexibility): পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধন বা পরিবর্তন করার - সুযোগকে নমনীয়তা বলা হয়। মানুষের চাহিদা, পছন্দ, রুচি প্রভৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়কে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হয়।
১১. স্বাধীন পেশা / বৃত্তি (Free profession / occupation): স্বাধীনভাবে কাজ করা ব্যবসায়ের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য । ব্যবসায়ী তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী ব্যবসায়িক কাজ পরিচালনা করেন। এটি স্বাধীন পেশা হওয়ায় ব্যবসায়ী সব ধরনের চাপ ও বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন। এজন্য অনেকে চাকরির পরিবর্তে ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে নিয়ে থাকেন।
১২. সেবামূলক মনোভাব (Service motive): সেবার মনোভাব বলতে মানুষের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রেখে যথাসময়ে ও ন্যায্যমূল্যে উপযুক্ত পণ্যসামগ্রী ও সেবা পৌছে দেওয়ার ইচ্ছাকে বোঝায়। ব্যবসায়ীকে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতি এরূপ সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হয়।
সুতরাং, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবসায়কে মানুষের অন্যান্য সাধারণ কাজ থেকে আলাদা করেছে। তাই কোনো কাজকে ব্যবসায় হিসেবে স্বীকৃত হতে হলে এসব বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
লেভিরেট কী?
লেভারেজ হল একটি ফিনান্সিয়াল টার্ম যা ট্রেডারদের ব্যবহার করা হয়। এটি একটি হিসাব যন্ত্রক যা একটি ট্রেডার ব্যবহার করে কোনও নির্দিষ্ট সমমানের উপর পরিমাণ ট্রেড করতে দেয়। একজন ট্রেডার একটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় করতে চাইলে লেভারেজ ব্যবহার করে তার নির্দিষ্ট মুদ্রার বিনিময় করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যক্তি যদি লেভারেজ ১:১০০ ব্যবহার করে তাহলে তিনি ১ ডলার মুদ্রার জন্য ১০০ ডলার বিনিময় করতে পারেন। এটি বেশি ক্ষতিকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ যদি বিনিময় করা মুদ্রার মূল্য পড়ে তবে লেভারেজ ব্যবহার করা হিসাবটি হারানো ভাল নয়।
ব্যবসায় জোট কি?
একটি ব্যবসায়িক জোট হল দুই বা ততোধিক ব্যবসার মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক চুক্তি যা তাদের সাধারণ ব্যবসায়িক লক্ষ্য অর্জনের জন্য পারস্পরিকভাবে উপকারী উপায়ে সহযোগিতা করে। একটি ব্যবসায়িক জোট গঠনের উদ্দেশ্য হল একে অপরের শক্তিকে কাজে লাগানো, সম্পদ ভাগ করে নেওয়া এবং ব্যবসার সুযোগ অনুসরণে ঝুঁকি কমানো। ব্যবসায়িক জোট অনেক রূপ নিতে পারে, যার মধ্যে যৌথ উদ্যোগ, কৌশলগত অংশীদারিত্ব, সহ-বিপণন চুক্তি এবং লাইসেন্সিং চুক্তি রয়েছে। জোটের শর্তাবলী সাধারণত আলোচনা করা হয় এবং একটি লিখিত চুক্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়, যা লক্ষ্য, ভূমিকা, দায়িত্ব এবং জড়িত প্রতিটি পক্ষের সুবিধার রূপরেখা দেয়। সফল ব্যবসায়িক জোটগুলি সমন্বয় এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলি তৈরি করতে পারে, দলগুলিকে তাদের উদ্দেশ্যগুলি তাদের নিজের থেকে আরও কার্যকরভাবে অর্জন করতে সক্ষম করে।
ব্যবসায়িক ঝুঁকি কি?
ব্যবসায়িক ঝুঁকি বলতে আর্থিক ক্ষতি বা ব্যর্থতার সম্ভাব্যতা বোঝায় যা একটি কোম্পানি তার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হয়। এটি বিভিন্ন কারণ এবং অনিশ্চয়তাকে অন্তর্ভুক্ত করে যা একটি ব্যবসার উদ্দেশ্য অর্জন এবং মুনাফা অর্জনের ক্ষমতাকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ব্যবসায়িক ঝুঁকিগুলি অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় উত্স থেকেই উত্থাপিত হতে পারে এবং একটি কোম্পানির ক্রিয়াকলাপের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করতে পারে, এর অর্থ, খ্যাতি, ক্রিয়াকলাপ এবং বাজারের অবস্থান সহ। এখানে কিছু সাধারণ ধরনের ব্যবসায়িক ঝুঁকি রয়েছে:
আর্থিক ঝুঁকি: এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির আর্থিক কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি, যেমন উচ্চ ঋণের মাত্রা, অপর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ, দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বা অর্থনৈতিক মন্দা যা আর্থিক অস্থিতিশীলতা বা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
অপারেশনাল ঝুঁকি: এই ঝুঁকিগুলি কোম্পানির ক্রিয়াকলাপের দক্ষতা এবং কার্যকারিতার সাথে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে সাপ্লাই চেইন ব্যাঘাত, উৎপাদন সমস্যা, প্রযুক্তির ব্যর্থতা, অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো বা মানবিক ত্রুটির মতো সমস্যা থাকতে পারে।
বাজারের ঝুঁকি: এটি বাজারের অবস্থার পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত ঝুঁকি বোঝায়, যেমন গ্রাহকের পছন্দের পরিবর্তন, প্রতিযোগিতামূলক চাপ, চাহিদা ও সরবরাহের ওঠানামা, বা শিল্পকে প্রভাবিত করে প্রবিধান ও আইনের পরিবর্তন।
কৌশলগত ঝুঁকি: এটি কোম্পানির কৌশলগত সিদ্ধান্ত এবং দিকনির্দেশের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। দুর্বল কৌশলগত পরিকল্পনা, বাজারের পরিবর্তনের জন্য অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া, সঠিক বিশ্লেষণ ছাড়াই নতুন বাজারে প্রবেশ করা, বা একক পণ্য বা গ্রাহকের উপর খুব বেশি নির্ভর করা কৌশলগত ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সম্মতি এবং আইনি ঝুঁকি: এই ঝুঁকিগুলি আইন, প্রবিধান এবং শিল্পের মানগুলির সাথে অ-সম্মতি থেকে উদ্ভূত হয়। লঙ্ঘন আইনি পদক্ষেপ, জরিমানা, খ্যাতির ক্ষতি, বা লাইসেন্স হারাতে পারে।
রেপুটেশনাল রিস্ক: এটি খারাপ পণ্যের গুণমান, অনৈতিক আচরণ, ডেটা লঙ্ঘন বা নেতিবাচক জনসাধারণের ধারণার মতো কারণগুলির কারণে একটি কোম্পানির খ্যাতির সম্ভাব্য ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত। সম্মানজনক ঝুঁকি গ্রাহকের বিশ্বাস, ব্র্যান্ডের মান এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
ঝুঁকি প্রশমন, বৈচিত্র্যকরণ, বীমা, আকস্মিক পরিকল্পনা, এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের মতো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলির মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে এই ঝুঁকিগুলি চিহ্নিত করা, মূল্যায়ন করা এবং পরিচালনা করা ব্যবসাগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবসায় অপারেশন মানে কি?
ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে, "অপারেশন" বলতে বোঝায় চলমান ক্রিয়াকলাপ এবং প্রক্রিয়াগুলি যা একটি কোম্পানি পণ্য উত্পাদন, পরিষেবা সরবরাহ এবং রাজস্ব উৎপন্ন করার জন্য গ্রহণ করে। এটি দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে ব্যবসা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত দৈনন্দিন কাজ এবং ফাংশনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
ইনপুটগুলিকে আউটপুটে রূপান্তর করতে অপারেশনগুলি কাঁচামাল, সরঞ্জাম, সুবিধা এবং মানব পুঁজির মতো সংস্থানগুলির পরিচালনার সাথে জড়িত। এই ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে উত্পাদন, উত্পাদন, সরবরাহ শৃঙ্খল পরিচালনা, তালিকা নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ, মান নিয়ন্ত্রণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ব্যবসায় ক্রিয়াকলাপের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলি হল দক্ষতা অপ্টিমাইজ করা, খরচ কমানো, উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, গুণমান নিশ্চিত করা, গ্রাহকের চাহিদা মেটানো এবং সর্বাধিক লাভজনকতা। ক্রমাগত উন্নতির উদ্যোগ, প্রক্রিয়া অপ্টিমাইজেশান, অটোমেশন এবং সর্বোত্তম অনুশীলন বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায়শই অপারেশনাল শ্রেষ্ঠত্ব অনুসরণ করা হয়।
অপারেশন ম্যানেজমেন্ট হল ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনার একটি মূল শৃঙ্খলা যা পণ্য ও পরিষেবাদি সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া এবং সংস্থান পরিকল্পনা, সংগঠিত এবং নিয়ন্ত্রণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এতে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সম্পদ বরাদ্দ, কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ, এবং কর্মক্ষম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সমস্যা সমাধান জড়িত।
সামগ্রিকভাবে, ক্রিয়াকলাপগুলি একটি ব্যবসার সাফল্য এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ তারা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে মূল্য সরবরাহ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, বাজারের চাহিদা পূরণ করে এবং টেকসই বৃদ্ধি অর্জন করে।