বাণিজ্য || Commerce

বাণিজ্যের ধারণা

মনে করো, তুমি পাবনার একটি সুগার মিল থেকে ১০০ বস্তা চিনি কিনেছো। তোমার উদ্দেশ্য হলো কেনা দামের চেয়ে বেশি দামে ভোক্তার কাছে চিনি বিক্রি করে লাভবান হওয়া। কিন্তু, উক্ত চিনি মিল থেকে কেনার পর ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তুমি বেশ কিছু সমস্যায় পড়বে। চিনির বস্তাগুলো দূরের ভোক্তার কাছে নিয়ে যেতে হবে। নেওয়ার পথে চুরি বা ছিনতাই হতে পারে। কিছু চিনি নষ্টও হতে পারে। তাই চিনি মজুদ করার ব্যবস্থা করতে হবে । আবার, বিক্রির জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কাজগুলো করার জন্য তোমার অর্থের প্রয়োজন হবে।

এক্ষেত্রে পণ্য (চিনি) উৎপাদনের পর ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তোমাকে স্থানগত ঝুঁকিগত, কালগত, অর্থগত, স্বত্বগত প্রভৃতি সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এসব সমস্যা তুমি পরিবহন, বিমা, গুদামজাতকরণ, ব্যাংকিং, বাজারজাতকরণ, যোগাযোগ ও ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সমাধান করতে পারো। এ কাজগুলোর সমষ্টিকেই বাণিজ্য বলে। শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী পরবর্তী শিল্প বা প্রকৃত ভোগকারীর কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে যে ৰাধা দেখা দেয়, তা দূর করার জন্য বিনিময় (ক্রয়-বিক্রয়) ও এর সহায়ক যাবতীয় কাজ হলো বাণিজ্য। সাধারণত পণ্য উৎপাদনের পর বাণিজ্যের কাজ শুরু হয়। আবার, কৃষকের কাছ থেকে পাট সংগ্রহ করে শিল্প বা কারখানার মালিকের কাছে পরবর্তী উৎপাদনের জন্য সরবরাহ করাও বাণিজ্যের আওতায় পড়ে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রফেসর এম. সি. শুক্লা (M. C. Shukla) বলেন, 'The process of buying and selling and all those activities which facilitate trade such as storing, grading, packaging, financing, insuring and transporting are called commerce. অর্থাৎ, 'পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়া এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য কাজ, যেমন: গুদামজাতকরণ, শ্রেণিবদ্ধকরণ, মোড়কিকরণ, অর্থায়ন, বিমাকরণ ও পরিবহন; যা পণ্য বিনিময়কে সহজ করে, তাকে বাণিজ্য বলে।'

উপরের সংজ্ঞা ও আলোচনা থেকে বাণিজ্য সম্বন্ধে যে ধারণা পাওয়া যায় তা হলো-
ক. বাণিজ্য ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ শাখা;
খ. এতে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকে;
গ. এটি উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে;
ঘ. এটি উৎপাদকের কাছ থেকে ভোক্তার কাছে পণ্যদ্রব্য ও সেবা পৌঁছানো সংক্রান্ত কাজ;
ঙ. এটি পণ্য বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সব বাধা দূর করার কাজ করে। 
অতএব, শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী বা সেবা ভোক্তার কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে যেসব বাধা বা প্রতিবন্ধকতা আসে, সেগুলো দূর করার যাবতীয় কাজকে বাণিজ্য বলে।

বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য

বাণিজ্য ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যকে সফল করে। এতে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়—

১. ব্যবসায়ের শাখা (Branch of business): শিল্পের মতো বাণিজ্যও ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ শাখা। শিল্পের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরই বাণিজ্যের কাজ শুরু হয়। বাণিজ্যের কাজ সঠিকভাবে করা ছাড়া শিল্পে উৎপাদিত পণ্য চূড়ান্ত ভোক্তার কাছে পৌছানো সম্ভব হয় না।

২. মুনাফা অর্জন (Earning profit): ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। এর গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিসেবে বাণিজ্যেরও উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। এ কারণে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বাণিজ্যের কাজ করে।

৩. বিভিন্ন উপযোগ সৃষ্টি (Creating various utility): বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উপযোগ সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে পরিবহনের মাধ্যমে স্থানগত, গুদামজাতকরণের মাধ্যমে সময়গত, বিমার মাধ্যমে ঝুঁকিগত, ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থগত এবং যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্যসংক্রান্ত উপযোগ সৃষ্টি হয়।

৪. চলতি মূলধনের আধিক্য (Abundance of working capital): বাণিজ্যের প্রধান কাজ হলো শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী ক্রেতা ও ভোক্তার কাছে পৌছানো। এজন্য এতে চলতি মূলধন বেশি প্রয়োজন হয়। উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী সময়ের ব্যবধানে বিক্রি হয়ে আবার নগদ অর্থে ফিরে আসে। এভাবে কেনা-বেচা যত বেশি হয়, মুনাফার সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে। তাই বাণিজ্যে বিনিয়োগের জন্য চলতি মূলধনই মুখ্য।

৫. চাহিদা ও যোগানের সমন্বয় (Coordination of demand and supply): বাণিজ্যের মাধ্যমে চাহিদা ও যোগানের মাঝে সমন্বয় করা হয়। এর মাধ্যমে পণ্য আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এরপর চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করে ভোক্তাদের অভাব পূরণ করা হয়।

৬. পরিধির ব্যাপকতা (Wideness of scope): শিল্পের মাধ্যমে পণ্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে উৎপাদিত হয়। কিন্তু উক্ত পণ্য বিক্রি ও ব্যবহৃত হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বিশ্বব্যাপী। যেমন- এপেক্স-এর জুতা উৎপাদন হয় ঢাকায়। কিন্তু বিক্রি হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অতএব, বাণিজ্যের আওতা অত্যন্ত ব্যাপক ও তা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত।

সুতরাং, ব্যবসায়ের শাখা হিসেবে বাণিজ্যে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এসব বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতির কারণে বাণিজ্যকে ব্যবসায়ের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বাণিজ্যের প্রকারভেদ 

ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান শাখা হিসেবে বাণিজ্য শিল্পে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে। বিনিময়ের এ কাজটি আধুনিক বিশ্বে ব্যাপকতা লাভ করেছে। পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্তে, ব্যবহার হচ্ছে অন্য প্রান্তে। বাণিজ্যের কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে। এর প্রকারভেদ নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
বাণিজ্য

চিত্র: বাণিজ্যের প্রকারভেদ

ক. ট্রেড (Trade) বা পণ্য বিনিময় (ক্রয়-বিক্রয়): মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্যসামগ্রী কেনা-বেচা করাকে পণ্য বিনিময় বা ট্রেড বলে। উৎপাদনকারী ও ভোগকারীর মধ্যে স্বত্ব, মালিকানা বা ব্যক্তিগত বাধা দূর করাই এর উদ্দেশ্য। উৎপাদনকারীর কাছ থেকে পণ্য ভোগকারীর কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে একাধিকবার কেনা-বেচার প্রয়োজন হতে পারে, যার সবই বাণিজ্যের আওতাধীন। নিচে ট্রেড বা পণ্য বিনিময়ের আওতাভুক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো-

** অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময় (Home trade): মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কোনো দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে কেনা-বেচার কাজ সম্পন্ন হয়, তা-ই অভ্যন্তরীণ পণ্য বিনিময়। এক্ষেত্রে ক্রেতা/ ভোক্তা ও বিক্রেতা একই দেশে থাকেন। লেনদেনের প্রকৃতি অনুযায়ী এরূপ পণ্যবিনিময় বাণিজ্যকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়—

১. পাইকারি পণ্য বিনিময় (Wholesale trade): উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে পণ্যসামগ্রী কিনে তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করাকে পাইকারি পণ্য বিনিময় বলে। যে সকল ব্যক্তি এ ধরনের বিনিময় কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাদের পাইকার বলা হয়। এরা উৎপাদনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। তাই পাইকারকে 'প্রতিনিধিত্বকারী মধ্যস্থব্যবসায়ী' বলা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় বলে পাইকারদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো থাকতে হয়।

২. খুচরা পণ্য বিনিময় ( Retail trade): পাইকার বা আমদানিকারকের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী কিনে চাহিদা অনুযায়ী চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হলে, তাকে খুচরা পণ্য বিনিময় বলে। যে সকল ব্যক্তি এ ধরনের বিনিময় কাজে জড়িত থাকে, তাদের খুচরা ব্যবসায়ী বলে। স্বল্প পুঁজি, সহজ গঠন ও পরিচালনা এবং অবস্থানগত সুবিধার কারণে খুচরা ব্যবসায় খুবই জনপ্রিয়। এটি সাধারণত ক্ষুদ্রায়তনের হয়ে থাকে।

** বৈদেশিক পণ্য বিনিময় (Foreign trade): দু'টি ভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থাৎ কোনো স্বাধীন দেশের ব্যবসায়ীর সাথে অন্য দেশের ব্যবসায়ীর যে কেনা-বেচার কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় বলে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা দু'জনই ভিন্ন দেশের অধিবাসী হয়ে থাকেন। বৈদেশিক পণ্য বিনিময় মূলত আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি এ তিন প্রকার। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটে অন্ট্রাপো-এর উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় হতে পারে—


১. পাইকারি পণ্য বিনিময় (Wholesale trade): উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে পণ্যসামগ্রী কিনে তা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করাকে পাইকারি পণ্য বিনিময় বলে। যে সকল ব্যক্তি এ ধরনের বিনিময় কাজে নিয়োজিত থাকেন, তাদের পাইকার বলা হয়। এরা উৎপাদনকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। তাই পাইকারকে 'প্রতিনিধিত্বকারী মধ্যস্থব্যবসায়ী' বলা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় বলে পাইকারদের আর্থিক সামর্থ্য ভালো থাকতে হয়।

২. খুচরা পণ্য বিনিময় ( Retail trade): পাইকার বা আমদানিকারকের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী কিনে চাহিদা অনুযায়ী চূড়ান্ত ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হলে, তাকে খুচরা পণ্য বিনিময় বলে। যে সকল ব্যক্তি এ ধরনের বিনিময় কাজে জড়িত থাকে, তাদের খুচরা ব্যবসায়ী বলে। স্বল্প পুঁজি, সহজ গঠন ও পরিচালনা এবং অবস্থানগত সুবিধার কারণে খুচরা ব্যবসায় খুবই জনপ্রিয়। এটি সাধারণত ক্ষুদ্রায়তনের হয়ে থাকে।

** বৈদেশিক পণ্য বিনিময় (Foreign trade): দু'টি ভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থাৎ কোনো স্বাধীন দেশের ব্যবসায়ীর সাথে অন্য দেশের ব্যবসায়ীর যে কেনা-বেচার কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় বলে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা দু'জনই ভিন্ন দেশের অধিবাসী হয়ে থাকেন। বৈদেশিক পণ্য বিনিময় মূলত আমদানি, রপ্তানি ও পুনঃরপ্তানি এ তিন প্রকার। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক গেজেটে অন্ট্রাপো-এর উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বৈদেশিক পণ্য বিনিময় হতে পারে—

১. আমদানি (Import): বিক্রির উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পণ্যসামগ্রী কিনে নিজ দেশে আনাকে আমদানি বলে। বর্তমান বিশ্বে সব দেশই অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে। সাধারণত কোনো দেশে যেসব পণ্যের অভাব থাকে, তা অন্য দেশ থেকে আমদানি করে আনা হয়। যেমন: চীন থেকে মোবাইল সেট এনে বাংলাদেশে বিক্রি করা হয়।

২. রপ্তানি (Export): বিদেশি কোনো ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রি করাকে রপ্তানি বলে। অর্থাৎ, বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্যসামগ্রী বিদেশে পাঠানোকে রপ্তানি বলে। কোনো দেশের রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে বেশি হলে, সেই দেশ অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারে। সাধারণত চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত পণ্য অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়। আবার, বেশি মূল্য তথা মুনাফা বেশি পাওয়ার জন্যও রপ্তানি করা হয়। যেমন: বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমেরিকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

৩. পুনঃরপ্তানি (Re-export): আমদানিকৃত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে গুণগত মান বা আকৃতির যেকোনো একটির অথবা দু'টোরই পরিবর্তন করে রপ্তানি করাকে পুনঃরপ্তানি বলে। অর্থাৎ, এক দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তার পরিবর্তন করে অন্য দেশে রপ্তানি করাই হলো পুনঃরপ্তানি। এক্ষেত্রে আমদানি মূল্যের সাথে কমপক্ষে ১০% মূল্য যোগ করতে হয়।

৪. অন্ট্রাপো (Entre-port): আমদানিকৃত পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ ও আকৃতির কোনো প্রকার পরিবর্তন না করেই তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি করা হলে, তাকে অন্ট্রাপো বাণিজ্য বলে। এক্ষেত্রে সংযোজনকৃত পণ্যমূল্য ৫%-এর বেশি হবে না এবং পণ্যদ্রব্য বন্দর সীমানার বাইরে আনা যাবে না। সাধারণত দু'টি দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকলে তৃতীয় কোনো দেশ উত্ত দুই দেশের এক দেশ থেকে পণ্য আমদানি করেতা অপর দেশে রপ্তানি করে থাকে।

খ. পণ্য বিনিময়ের সহায়ক কার্যাবলি (Auxiliaries to trade): অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পণ্য বিনিময় সঠিকভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে বেশকিছু বাধার সৃষ্টি হয়। এসব বাধা দূর করার জন্য সম্পাদিত কার্যাবলিকে পণ্য বিনিময় সহায়ক কার্যাবলি বলে। বাণিজ্যের আওতাধীন এসব কাজকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়—

** চা ব্যাংকিং (Banking): বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া আর্থিক নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু লেনদেনের ওপর ব্যবসায়ের সাফল্য নির্ভর করে। এ অর্থসংক্রান্ত বাধা দূর করার জন্য ব্যাংক দায়িত্ব পালন করে। বর্তমানে বৈদেশিক বাণিজ্য তথা আমদানি-রপ্তানি ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল।

** বিমা (Insurance): বাণিজ্য তথা ব্যবসায়ের সাথে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ ঝুঁকি ব্যবসায়ীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসায় পরিচালনায় যেমনি বাধা তৈরি করে, তেমনি অনেক সময় মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। এই ঝুঁকিগত বাধা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিমা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিমা করা থাকলে ব্যবসায়ী তার ব্যবসায়ের কাজগুলো নিশ্চিন্তে ও স্বাচ্ছন্দ্যে সম্পন্ন করতে পারেন।

** পরিবহন (Transportation): উৎপাদনকারী ও ভোগকারীর মধ্যে স্থানগত দূরত্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে। এ বাধা দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা কাজ করে থাকে। এ ব্যবস্থায় উৎপাদিত সামগ্রী মধ্যস্থব্যবসায়ীর মাধ্যমে বা সরাসরি চূড়ান্ত ভোগকারীর কাছে পৌঁছে।

** গুদামজাতকরণ (Warehousing): পণ্যসামগ্রী উৎপাদনের পর ভোগের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে তা সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। পণ্য উৎপাদন হয় এক সময়ে কিন্তু ভোগ করা হয় অন্য সময়ে। গুদামজাতকরণ এ ধরনের সময়গত বাধা দূর করে সরবরাহের ধারাবাহিকতা বা নিরবচ্ছিন্নতা রক্ষা করে।

** বাজারজাতকরণ প্রসার (Marketing promotion): সম্ভাব্য ক্রেতা বা ভোক্তার মনে পণ্য বা সেবার প্রতি বিভিন্ন কৌশলে আকর্ষণ তৈরি করাকে বাজারজাতকরণ প্রসার বলে। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাকে চূড়ান্ত ও স্থায়ী ক্রেতা বা ভোক্তায় পরিণত করার চেষ্টা করা হয়। এটি সাধারণত প্রচার ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে করা হয়। বাজারজাতকরণ প্রসারের মাধ্যমে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান জ্ঞানগত বাধা দূর করা হয়।

** যোগাযোগ (Communication): যোগাযোগ বলতে বোধগম্য উপায়ে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা পক্ষের মধ্যে তথ্য বা ভাবের বিনিময়কে বোঝায়। ক্রেতা ও ভোক্তাদেরকে যথাসময়ে সঠিক তথ্য দেওয়া বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর ওপর বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করে। তথ্যসংক্রান্ত সমস্যা দূর করার জন্য ক্রেতা বা ভোক্তাদের সাথে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করা হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url