শিল্প || Industry

শিল্পের ধারণা

'নিশাত ফার্নিচার'-এর মালিক নিশো হায়দার উন্নত মানের কাঠ সংগ্রহ করে আধুনিক ও রুচিসম্মত ডিজাইনের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করেন। এক্ষেত্রে তিনি গ্রাহকদের চাহিদা ও পছন্দকে প্রাধান্য দেন। তাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী তিনি নিয়মিতভাবে আসবাবপত্র তৈরি করে বিক্রি করেন। অন্যদিকে, দুলাল মিয়া কিছু জমি লিজ নিয়ে একই সাথে ধান ও মাছের চাষ করেন। তিনি উৎপাদিত ধান ও মাছ ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এক্ষেত্রে নিশো হায়দার ও দুলাল মিয়ার কাজ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। 

প্রকৃত অর্থে, প্রকৃতি প্রদত্ত কাঁচামাল বা প্রাথমিক দ্রব্যকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মাধ্যমিক বা চূড়ান্ত পণ্যদ্রব্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলা হয়। শিল্প হলো উৎপাদনের বাহন। এটি পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের উৎপাদন ও রূপান্তর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। মানুষ কোনো জিনিস সৃষ্টি করতে পারে না, শুধু রূপান্তর করতে পারে। অর্থাৎ, প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদকে মানুষ ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য তাতে রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযোগ (Utility) সৃষ্টি করতে পারে। এ উপযোগ সৃষ্টির কাজকে উৎপাদন বলা হয়। 
তাই বলা যায়, শিল্পের কাজ হলো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্যের নতুন উপযোগ সৃষ্টি করা। বনের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি, তুলা থেকে কাপড় তৈরি, সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ প্রভৃতি শিল্পের অন্তর্গত কাজ।

সি. বি. গুপ্ত (C. B. Gupta) বলেন, 'Industry is that branch of business which is concerned with production of goods or services.' অর্থাৎ, 'শিল্প হলো ব্যবসায়ের সেই শাখা, যা পণ্য বা সেবা উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত।'

এম. সি. শুক্লা (M. C. Shukla) এর মতে, The process of extraction, production, conversion, processing or febrication of products are described as industry.' অর্থাৎ, 'পণ্যদ্রবের নিষ্কাশন, উৎপাদন, রূপান্তর, প্রক্রিয়াকরণ অথবা সংযোজন প্রক্রিয়াকে শিল্প বলে।'

উপরের আলোচনা ও সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে শিল্পের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়-
ক. ব্যবসায়ের প্রথম ধাপ ও গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে শিল্প;
খ. এর প্রধান লক্ষ্য হলো মুনাফা অর্জন;
গ. এটি পণ্য ও সেবা উৎপাদনের সাথে জড়িত:
ঘ. এটি রূপান্তর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।

অতএব, যে কর্মপ্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ বা কাঁচামাল আহরণ এবং বিভিন্ন উপায়ে এগুলোর রূপগত উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য বা সেবা প্রস্তুত করা হয়, তাকে শিল্প বলে।
শিল্প

শিল্পের বৈশিষ্ট্য

সাধারণত প্রাকৃতিক সম্পদ ও কাঁচামালকে ভোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য পণ্যে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলে। শিল্পের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য বা দিক আছে, যা অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজ থেকে একে আলাদা করে থাকে। নিচে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো-

১. ব্যবসায়ের শাখা (Branch of business): শিল্প ব্যবসায়ের প্রথম ধাপ ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ব্যবসায়িক কাজের সূচনা হয় শিল্প সংক্রান্ত কাজের মাধ্যমে। আর শিল্পের কাজ সফলভাবে করার ওপরই নির্ভর করে ব্যবসায়ের সার্বিক সফলতা।

২. মুনাফা অর্জন (Earning profit): কোনো কাজ সম্পাদনের বিপরীতে পাওয়া আর্থিক সুবিধা হলো মুনাফা। শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করা। তবে এক্ষেত্রে মুনাফা অর্জনে কিছুটা বিলম্ব হয়। 

৩. উৎপাদনের সাথে জড়িত (Involved in production): ক্রেতা বা ভোক্তার অভাব পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন করাকে শিল্প বলে। কাঁচামাল ব্যবহার করে নতুন উপযোগ সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করাই শিল্পের কাজ। 

৪. রূপগত উপযোগ সৃষ্টি (Creating mutational utility): কোনো জিনিসের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে উপযোগ বলে। শিল্প প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত সম্পদগুলোকে রূপান্তর করে নতুন পণ্য তৈরির মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। 

৫. ঝুঁকি গ্রহণ (Taking risk): আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কাকে ঝুঁকি বলা হয়। শিল্পের কাজ সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন উপকরণের প্রয়োজন হয়। কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি, কাজ সম্পাদনের জন্য শ্রম ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এসব কাজে বেশি ঝুঁকি নিতে হয়। শিল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে, আবার না-ও পারে। তাই বলা যায়, শিল্পের সাথে ঝুঁকি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

৬. সৃজনশীল কাজ (Creative work): মেধা ও মননশীলতা দিয়ে নতুন কিছু করাই সৃজনশীল কাজ। শিল্প সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন পণ্য উৎপাদন করে। এছাড়া, এটি বিদ্যমান পণ্যের মান প্রতিনিয়ত পরিমার্জন ও উন্নয়ন করে। সাধারণত উৎপাদনের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা দেখাতে পারলে শিল্পের উদ্দেশ্য সফল হয়।

৭. কেন্দ্রীভূত কাজ (Centralized work): ব্যবসায়ের অন্যান্য কাজ সাধারণত বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয়। কিন্তু শিল্পের কাজটি ব্যতিক্রম। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট স্থানে করা হয়। যেমন- কারখানাতে পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ সম্পাদিত হয়। 

৮. ফলাফল লাভে বিলম্ব (Delay at gaining result): সাধারণত যেকোনো শিল্প গড়তে দীর্ঘ সময় ও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। কাঁচামাল, শ্রমিক, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ জোগাড় করতে প্রচুর সময় লাগে। পণ্যদ্রব্য বিক্রয়কে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পর উৎপাদনকারী লাভের মুখ দেখে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে ফল লাভে আরও বেশি দেরি হয়ে থাকে। তাই শিল্পের ফলাফল পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। 

সুতরাং, ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও প্রথম ধাপ হিসেবে শিল্পের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি আছে। আর এসব বৈশিষ্ট্য সংবলিত কাজকেই শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

শিল্পের প্রকারভেদ

শিল্প হলো প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ ও কাঁচামাল ব্যবহার করে ভোগের উপযোগী পণ্য বা সেবা প্রস্তুত করার কাজ। তাই এটি উৎপাদনের বাহন হিসেবে বিবেচিত হয়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিল্পকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়, যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করো হলো-
শিল্প
চিত্র: শিল্পের প্রকারভেদ

ক. প্রাথমিক শিল্প (Primary industry): প্রকৃতি থেকে সম্পদ উৎপাদন ও সংগ্রহের সব রকম কর্মপ্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়া হলো প্রাথমিক শিল্প। এ শিল্প প্রকৃতি বা অদৃশ্য শক্তির ওপর বেশি নির্ভরশীল। ধান চাষ বা ভূগর্ভ থেকে খনিজদ্রব্য সংগ্রহ প্রভৃতি এ শিল্পের অন্তর্গত। প্রাথমিক শিল্পকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়—

১. কৃষিজ শিল্প (Agricultural industry): যে শিল্পে সাধারণত ভূমি চাষাবাদের মাধ্যমে কোনো শস্য বা ফসল ফলানো হয়, তাকে কৃষিজ শিল্প বলে। প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত চাষাবাদ উপযোগী জমি, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, উর্বরতা, বাতাস প্রভৃতি কৃষি কাজে সহায়তা করে থাকে। ধান, পাট, চা, তামাক, রাবার, তুলা, বনজ চাষ প্রভৃতি কৃষিজ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া পুকুরে মাছ চাষ ও মুরগির বাচ্চা কিনে পালন কৃষিজ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত।

২. প্রজনন শিল্প (Genetic industry): যে শিল্পে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবিস্তার ও সেগুলো থেকে পুনরায় উৎপাদন করাহয়, তাকে প্রজনন শিল্প বলে। অর্থাৎ, এ শিল্পের মাধ্যমে গাছপালা ও প্রাণীর বংশ বাড়ানো হয়। যেমন- নার্সারি, ফলমূল চাষ, পোলট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম ও হ্যাচারি।

৩. নিষ্কাশন শিল্প (Extraction industry): যে শিল্পে প্রাকৃতিক উৎস তথা ভূগর্ভ, পানি বা বায়ু থেকে সম্পদ আহরণ বা উত্তোলন করা হয়, তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে সেগুলোর উপযোগিতা বাড়ানো হয়। এতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরের জিনিসকে তাদের ব্যবহারের আওতায় আনা হয়। যেমন- খনি থেকে কয়লা, তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজদ্রব্য উত্তোলন, নদ-নদী থেকে বালু উত্তোলন ও সাগর থেকে মাছ আহরণ।

খ. দ্বিতীয় পর্যায় শিল্প (Secondary industry): প্রাথমিক শিল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত বা উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীকে সব ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী করার কাজে নিয়োজিত শিল্পকে বলা হয় দ্বিতীয় পর্যায় শিল্প। এরূপ শিল্পকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

** উৎপাদন বা প্রস্তুত শিল্প (Manufacturing industry): যে শিল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির সাহায্যে কাঁচামালকে রূপান্তর করে চূড়ান্ত পণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে উৎপাদন বা প্রস্তুত শিল্প বলে। যেমন- চিনি শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, প্রকৌশল শিল্প, আসবাবপত্র শিল্প। উৎপাদন শিল্পকে আবার নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে—

১. সংযোজন শিল্প (Assembling industry): যে শিল্পে পৃথক পৃথক অংশকে একত্র করে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নতুন পণ্য তৈরি করা হয়, তাকে সংযোজন শিল্প বলে। যেমন- মোটরগাড়ি, লঞ্চ-স্টিমার, উড়োজাহাজ, সাইকেল, রেডিও, টেলিভিশন, ঘড়ি, মোবাইল তৈরির শিল্প।

২. বিশ্লেষণ শিল্প (Analytical industry): যে প্রক্রিয়ায় একটি দ্রব্যকে (কাঁচামাল) বিশ্লেষণ করে পৃথককরণ প্রক্রিয়ায় একাধিক ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দ্রব্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে বিশ্লেষণ শিল্প বলে। যেমন- অশোধিত খনিজ তেল থেকে বিভিন্ন দ্রব্য (কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রল, অকটেন) বিশ্লেষণ বা পরিশোধন করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়; খনিজ কয়লা থেকে ন্যাপথলিন, আলকাতরা প্রভৃতি তৈরি করা হয়।

৩. যৌগিক বা সংশ্লেষণ শিল্প (Synthetic industry): কয়েকটি পৃথক পদার্থকে একত্র বা সংযুক্ত করেও সেগুলোর সংমিশ্রণে নতুন কোনো দ্রব্য তৈরি করার প্রক্রিয়াকে যৌগিক শিল্প বলে। চর্বি ও তেলের সাথে ক্ষারের সংযোগে সাবান প্রস্তুতকরণ, সোডিয়াম ও ক্লোরিন মিশিয়ে লবণ তৈরি, একইভাবে সিমেন্ট তৈরি, সার উৎপাদন প্রভৃতি যৌগিক শিল্পের উদাহরণ।

৪. প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প (Processing industry): যে শিল্পে একাধিক স্তর বা প্রক্রিয়া ব্যবহার করে কোনো একটি পূর্ণাঙ্গ দ্রব্য তৈরি করা হয়, তাকে প্রক্রিয়াজাত শিল্প বলে। তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড়, কাপড় থেকে পোশাক তৈরি; একইভাবে পাট থেকে সুতলি, সুতলি থেকে চট, চট থেকে ব্যাগ/বস্তা তৈরি প্রভৃতি এ শিল্পের উদাহরণ।

৫. সংযুক্ত বা সমন্বিত শিল্প (Integrated industry): যে ক্ষেত্রে একই সাথে বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রক্রিয়ার সমন্বয় হয়, তাকে সংযুক্ত বা সমন্বিত শিল্প বলে। যেমন- লৌহ ও ইস্পাত শিল্প। অর্থাৎ, একই শিল্পে লোহা তৈরি এবং তা থেকে ইস্পাত তৈরি হয়।

** নির্মাণ শিল্প (Construction industry): অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা কোনো স্থাপনা তৈরির কাজে নিয়োজিত শিল্পকে নির্মাণ শিল্প বলে। যেমন- দালানকোঠা, ফ্লাইওভার, সেতু ও বাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, রাস্তাঘাট উন্নয়ন প্রভৃতি। এতে উৎপাদিত বা তৈরিকৃত বিষয় সাধারণত স্থায়ী প্রকৃতির ও অস্থানান্তরযোগ্য হয়ে থাকে।

** সেবা পরিবেশক শিল্প (Service industry): আরামদায়ক, সুন্দর ও সহজ জীবনযাত্রার জন্য সেবা সৃষ্টি ও সরবরাহের কাজকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। যেমন- গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, চলচ্চিত্র, পর্যটন স্থান, ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্রকাশনা শিল্প, পরিবহন ব্যবস্থা, বার্তা সংস্থা, ব্যাংক ও বিমা এবং টেলিফোন ও মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ।

সুতরাং, শিল্প বিভিন্নভাবে উৎপাদনের বাহন হিসেবে কাজ করে। কার্যপ্রণালি ও প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে শিল্পকে উপরোক্ত বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।

উৎপাদন শিল্পের উদাহরণ

ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি বিভিন্ন পদ্ধতি এবং কৌশল ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত এমন একটি বিস্তৃত ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে উত্পাদন শিল্পের কিছু উদাহরণ রয়েছে:

স্বয়ংচালিত শিল্প: এই শিল্পে গাড়ি, ট্রাক এবং মোটরসাইকেলের মতো যানবাহন উত্পাদন জড়িত।

ভোক্তা পণ্য শিল্প: এই শিল্পে ভোক্তাদের দ্বারা ব্যবহৃত পণ্য যেমন গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স এবং পোশাকের উৎপাদন জড়িত।

খাদ্য ও পানীয় শিল্প: এই শিল্পে প্যাকেটজাত পণ্য, স্ন্যাকস এবং পানীয় সহ খাদ্য ও পানীয় পণ্য উৎপাদন জড়িত।

ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প: এই শিল্পে ওষুধ এবং অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন জড়িত।

রাসায়নিক শিল্প: এই শিল্পে প্লাস্টিক, ক্লিনিং এজেন্ট এবং সার সহ বিস্তৃত পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের উত্পাদন জড়িত।

মহাকাশ শিল্প: এই শিল্পে বিমান, মহাকাশযান এবং সংশ্লিষ্ট উপাদানের উৎপাদন জড়িত।

নির্মাণ সামগ্রী শিল্প: এই শিল্পে সিমেন্ট, ইস্পাত এবং কাঠের পণ্য সহ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহৃত সামগ্রীর উৎপাদন জড়িত।

টেক্সটাইল শিল্প: এই শিল্পে কাপড়, সুতা এবং তৈরি পোশাক সহ বস্ত্র এবং পোশাক উৎপাদন জড়িত।

প্রজনন শিল্পের উদাহরণ

প্রজনন শিল্প মানে হল মানবকে পারিবারিক পরিবেশে সংগঠিত প্রক্রিয়ায় তৈরি প্রকৃতি বস্তু বা উৎপাদন সমূহের উৎপাদন এবং বিক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাজসমূহ। এই শিল্পে কৃষি, পশুপালন, মাছ চাষ, কবুতর পালন, প্রস্তুতকরণ এবং বিক্রয় এবং আর্থিক উন্নয়ন সম্পর্কিত কাজসমূহ উল্লেখযোগ্য হতে পারে। একটি উদাহরণ হতে হল পালিত মাছ চাষ এবং উৎপাদন।

মাছ চাষ একটি প্রজনন শিল্প যা একটি ব্যবসায়িক সংস্থা বা একজন ব্যক্তি চাষ করতে পারে। মাছ চাষ শুরু করার জন্য প্রথমে পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করার জন্য চাষ বাড়িতে তৈরি করা হয়। এটি চাষ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট জমি এবং একটি সিস্টেম যেখানে পানি পাইপ সিস্টেমের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় ব্যবহার করা হয়।

নিষ্কাশন শিল্প কি?

নিষ্কাশন শিল্প হল একটি কারখানা পরিচালিত উদ্যোগ যেখানে সাধারণত কাঠের টুকরা বা লম্বা প্লাঙ্ক ব্যবহার করে পোশাক, জুতা, টেবিলওয়ার, ফার্নিচার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই শিল্পে বিভিন্ন প্রকারের কাঠ বা লম্বা প্লাঙ্ক ব্যবহার করা হয় এবং এদের সাথে চিপস, পেপার, বাঁশ, বাঁশের পাতা, গম ইত্যাদি মিশে নেয়া হয়। প্রধান কারণ হল এদের গুণমান এবং দাম একটাই একটাই সাধারণ মানুষের জন্য উপলব্ধ। এই উদ্যোগটি পরিবেশের সংরক্ষণে একটি ভূমিকা পালন করে এবং পরিবেশসম্পদ বাঁচানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নির্মাণ শিল্পের উদাহরণ

নির্মাণ শিল্প বিল্ডিং, অবকাঠামো এবং অন্যান্য কাঠামোর নকশা, পরিকল্পনা, নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তৃত ক্রিয়াকলাপকে অন্তর্ভুক্ত করে। এখানে নির্মাণ শিল্পের মধ্যে ক্রিয়াকলাপের কিছু উদাহরণ রয়েছে: 
 বিল্ডিং নির্মাণ: এর মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প ভবন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি কাঠ, কংক্রিট, ইস্পাত এবং ইট এর মতো বিস্তৃত উপকরণ এবং কৌশলগুলির ব্যবহার জড়িত। 

 সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং: এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা, সেতু, বিমানবন্দর এবং বাঁধের মতো অবকাঠামো নির্মাণ। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পরিবহন ব্যবস্থা, জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার পরিকল্পনা, নকশা এবং রক্ষণাবেক্ষণও জড়িত। 
 
ভারী নির্মাণ: এর মধ্যে স্টেডিয়াম, পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং তেল শোধনাগারের মতো বড় কাঠামোর নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারী নির্মাণের জন্য বিশেষ সরঞ্জাম এবং দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। 

 ভূমি উন্নয়ন: এর মধ্যে রয়েছে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প ব্যবহারের জন্য জমির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন। এর মধ্যে রাস্তা, ড্রেনেজ সিস্টেম এবং ইউটিলিটিগুলির নকশা এবং নির্মাণ জড়িত। 

 সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ: এর মধ্যে বিদ্যমান ভবন এবং কাঠামোর সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে ছোট ছোট সংস্কার, যেমন পেইন্টিং এবং ছোটখাটো মেরামত থেকে শুরু করে বড় সংস্কার, যেমন নতুন কক্ষ যোগ করা বা বিল্ডিংয়ের লেআউট পরিবর্তন করা সবকিছু অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। 
 সামগ্রিকভাবে, নির্মাণ শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত যা শহর, শহর এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিল্প সমন্বিত প্রকল্প ধারণা

সাংস্কৃতিক কোলাজ: একটি কোলাজ তৈরি করুন যা আপনার সম্প্রদায় বা স্কুলে সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। বিভিন্ন ঐতিহ্য, উদযাপন, এবং প্রতীক প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন শিল্প কৌশল এবং উপকরণ ব্যবহার করুন।

সায়েন্স ফিকশন ইলাস্ট্রেশন: একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বা ধারণা চয়ন করুন এবং একটি ধারাবাহিক চিত্র তৈরি করুন যা মূল দৃশ্য বা ভবিষ্যত ল্যান্ডস্কেপ চিত্রিত করে। কল্পনাপ্রসূত বিশ্বকে জীবন্ত করতে আপনার শৈল্পিক দক্ষতা ব্যবহার করুন।

মিউজিক-অনুপ্রাণিত পেইন্টিং: এমন একটি মিউজিক শুনুন যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করে এবং এমন একটি পেইন্টিং তৈরি করুন যা সঙ্গীত দ্বারা প্রকাশ করা আবেগ এবং মেজাজকে ক্যাপচার করে। তাল এবং সুর প্রকাশ করতে রঙ, ব্রাশস্ট্রোক এবং রচনা ব্যবহার করুন।

ঐতিহাসিক ম্যুরাল: একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা বা যুগ নিয়ে গবেষণা করুন এবং একটি ম্যুরাল তৈরি করুন যা গল্পটিকে দৃশ্যমানভাবে বলে। দর্শকদের শিক্ষিত এবং জড়িত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, ল্যান্ডমার্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি অন্তর্ভুক্ত করুন।

পরিবেশগত ভাস্কর্য: পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে একটি ভাস্কর্য তৈরি করুন। দূষণ, বন উজাড় বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো একটি নির্দিষ্ট সমস্যায় ফোকাস করুন এবং একটি শক্তিশালী বার্তা জানাতে আপনার শিল্পকর্ম ব্যবহার করুন।

সাহিত্যিক চরিত্রের প্রতিকৃতি: একটি প্রিয় বই বা নাটক চয়ন করুন এবং মূল চরিত্রগুলিকে চিত্রিত করে এমন একটি সিরিজ প্রতিকৃতি তৈরি করুন। তাদের ব্যক্তিত্ব, আবেগ এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলি ক্যাপচার করতে আপনার শৈল্পিক ব্যাখ্যা ব্যবহার করুন।

বডি মুভমেন্ট ফটোগ্রাফি: ফটোগ্রাফির মাধ্যমে গতিশীল এবং অভিব্যক্তিপূর্ণ মুভমেন্ট ক্যাপচার করতে একজন নর্তকী বা পারফর্মারের সাথে সহযোগিতা করুন। গতিশীল মানব দেহের শক্তি এবং করুণা বোঝাতে বিভিন্ন আলো, কোণ এবং রচনাগুলির সাথে পরীক্ষা করুন।

ফ্যাশন ডিজাইন এবং সামাজিক ভাষ্য: একটি পোশাক সংগ্রহ ডিজাইন করুন যা একটি সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা সমাধান করে। আপনার ধারনা প্রকাশ করতে, স্টেরিওটাইপকে চ্যালেঞ্জ করতে বা অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্যকে উন্নীত করতে ফ্যাশনকে একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুন।

পাবলিক ইনস্টলেশন আর্ট: একটি পাবলিক স্পেসের জন্য একটি ইন্টারেক্টিভ আর্ট ইনস্টলেশন তৈরি করুন। শিল্পকর্মের সাথে পরিবেশ এবং মানুষের মিথস্ক্রিয়া বিবেচনা করুন। শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে এবং মুগ্ধ করতে আলো, শব্দ এবং আন্দোলনের মতো উপাদানগুলি ব্যবহার করুন।

আপনার আগ্রহ, উপলব্ধ সংস্থান এবং আপনার শিল্প-সংহত প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলির উপর ভিত্তি করে এই ধারণাগুলিকে মানিয়ে নিতে মনে রাখবেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url