নেতৃত্ব || Leadership

নেতৃত্বের ধারণা 

তাশফিন আহমেদ একজন উৎপাদন ব্যবস্থাপক। তার অধীনে ৫ জন সহকারী ব্যবস্থাপক, ১৫ জন সুপারভাইজার ও ৩০০ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন। তিনি তাদের কাজের সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন। সময়মতো প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। সবার সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। সবার কাজকর্ম তদারকিও করেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে তিনি সবাইকে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে সব সময় আন্তরিক রাখেন। ফলে, প্রতিষ্ঠানটি উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় তাশফিন আহমেদ তার প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের ভূমিকা পালন করছেন, তা-ই নেতৃত্ব। অর্থাৎ, নেতৃত্ব হলো দলীয় সদস্য বা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত কর্মপ্রচেষ্টাকে কৌশলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া।

নেতৃত্ব বলতে মূলত নেতার বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে বোঝায়। এর মাধ্যমে তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর আচরণকে প্রভাবিত করতে পারেন। 

নেতৃত্ব শব্দের উৎপত্তি 

ইংরেজি 'Leadership' শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নেতৃত্ব। ইংরেজি 'Lead' থেকে 'Leadership' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। ‘Lead' শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ দেখানো (To guide), পরিচালনা করা (To conduct), প্ররোচিত করা (To persuade), প্রভাবিত করা (To influence) প্রভৃতি।

দল বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কাজকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টাকে নেতৃত্ব বলে। এ দায়িত্ব পালনকারীই হলেন নেতা। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তার অধীনস্থ কর্মীদের কাজকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে পরিচালনা করেন। এজন্য ব্যবস্থাপককেও ক্ষেত্রবিশেষে নেতা বলা যায়। এভাবে, যিনি পরিবার চালান তাকে পরিবারের নেতা বলা যায়। সুতরাং, নেতৃত্ব বলতে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সদস্য বা কর্মীদের পরিচালনা করার কৌশলকে বোঝায়। এর মাধ্যমে সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত হন। তাছাড়া এর দ্বারা সদস্যদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা হয়।

■ যুক্তরাষ্ট্রের ভান্ডারবান্ট বিশ্ববিদ্যালয়-এর ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক রিচার্ড এল. ডাফ্ট (Rechard L. Daft) বলেন, ''Leadership is the ability to influence people toward the attainment of organizational goal.' অর্থাৎ 'প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে লোকজনকে প্রভাবিত করার সামর্থ্যই হলো নেতৃত্ব।"

Investopedia.com, অনুযায়ী, ''প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য প্রতিষ্ঠা ও অর্জন, দ্রুত ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া, প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে যাওয়া এবং অন্যদের সুন্দরভাবে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতাকে নেতৃত্ব বলে।"

searchio.techtarget.com, অনুযায়ী, ''নেতৃত্ব বলতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দ্বারা তাদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠানের অন্য সদস্যদের প্রভাবিত করা ও নির্দেশনাদানের যোগ্যতাকে বোঝায়।''

অতএব, দলের কর্মী বা সদস্যদের প্রভাবিত করে তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য কাজে লাগানোর কৌশলকে নেতৃত্ব বলে।

নেতৃত্বের গুরুত্ব

সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে অধীনস্থ বা অনুসারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত হয়। ব্যবস্থাপক তথা নেতাকে ঘিরেই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সম্পাদিত হয়। সঠিক নেতৃত্বের ওপরই নির্ভর করে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য । এছাড়াও নেতৃত্ব নিম্নোক্ত কারণে গুরুত্বপূর্ণ-
Leadership
১. লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা (Helping to achieve the goal): নেতৃত্ব একটি কৌশল। এর মাধ্যমে দলীয় সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত হয়। তাই, প্রতিষ্ঠানে যোগ্য নেতৃত্বের ফলে জনশক্তির সব কর্মপ্রচেষ্টা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত হতে পারে। এতে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।

২. দলীয় প্রচেষ্টা জোরদারকরণ (Enhancing group effort): ব্যক্তি ও দলীয় প্রচেষ্টাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করাই নেতার মূল কাজ। এটি নির্ভর করে নেতার গুণ ও কাজের দক্ষতার ওপর। নেতৃত্বের মান দুর্বল হলে প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ও দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। নেতার সঠিক নেতৃত্ব কৌশলের মাধ্যমেই সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই, দলবদ্ধ প্রচেষ্টা জোরদারকরণে দক্ষ নেতৃত্ব অপরিহার্য।

৩. সহযোগিতা বৃদ্ধি (Increasing cooperation): কর্মীদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। কার্যকর নেতৃত্ব সংগঠনের অভ্যন্তরে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। একে ঘিরেই জনশক্তি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় কাজ করে থাকে।

৪. ঐক্য সৃষ্টি (Creating unity): লক্ষ্য অর্জনে সবাই একমত হওয়াকে ঐক্য বলে। ব্যবস্থাপনার অন্যতম দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের জনশক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে পরিচালনা করা। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কখনও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানে কার্যকর নেতৃত্ব থাকলে নেতাকে ঘিরে কর্মীরা একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে থাকে।

৫. সুষ্ঠু সমন্বয় (Proper coordination): একজন যোগ্য নেতা তার কর্মীদের প্রকৃতি, যোগ্যতা, চাহিদা প্রভৃতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকেন। ফলে কীভাবে, কাকে, কোন দায়িত্ব কতটুকু দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে, তা নেতা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেন। তাই, নেতৃত্বের কৌশল ব্যবস্থাপনাকে যথাযথভাবে কর্তৃত্ব অর্পণে সহায়তা করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের কাজে সুষ্ঠু সমন্বয় সহজ হয়।

৬. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency): সময়, অর্থ ও শ্রমের অপচয় না করে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করার সামর্থ্যকে দক্ষতা বলে। যোগ্য নেতৃত্ব প্রাতিষ্ঠানিক সব কাজের দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে। এটি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে জনশক্তির সব কর্মপ্রচেষ্টাকে ধাবিত করে বলে কাজে গতি বাড়ে।

৭. উৎসাহ সৃষ্টি (Creating inspiration): ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান কাজ হলো কর্মীদের দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে কাজ করিয়ে নেওয়া। যোগ্য নেতৃত্বের ফলে অধীনস্থ কর্মীরা কাজ করতে সব সময়ই উৎসাহবোধ করে। ফলে, তাদের মনোবলও বাড়ে। তাছাড়া, তাদের উচ্চ মনোবল উত্তম কাজের পরিবেশ সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬. পরিবর্তনে সহায়তা (Help to change): পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মিল রেখে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেওয়া নেতার অন্যতম দায়িত্ব। এজন্য তাকে অনেক সময় পরিকল্পনা ও কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হয়। তবে যেকোনো পরিবর্তন অধীনস্থরা সহজে মেনে নিতে পারে না। যোগ্য নেতৃত্ব সেক্ষেত্রে কর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সহজেই পরিবর্তন আনতে পারে।

তাই বলা যায়, ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নেতৃত্ব। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সব সময় লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত রাখা যায়। তাই, প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য কার্যকর নেতৃত্ব একান্ত জরুরি।

নেতৃত্বের প্রকারভেদ বা ধরন

নেতৃত্বের ধরন বলতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিভিন্ন উপায় বা পদ্ধতিকে বোঝায়। নেতার দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, অধীনস্থদের যোগ্যতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও কাজের কৌশলে পার্থক্য থাকায় নেতৃত্বের ধরনেও পার্থক্য দেখা যায়। এগুলোর ভিত্তিতে নেতৃত্বকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

ক. ক্ষমতাভিত্তিক নেতৃত্ব (Power based leadership): নেতা তার অনুসারী বা সদস্যদের ওপর কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রভাবিত করতে পারেন। নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তিনি উক্ত কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা কীভাবে বা কতটুকু প্রয়োগ করবেন, তার ওপর ভিত্তি করে নেতৃত্বকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Autocratic leadership): যে নেতৃত্বে নেতা সব ক্ষমতা নিজের কাছে কেন্দ্রীভূত করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তাকে স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে নেতা যা ভালো মনে করেন, তা-ই করে থাকেন। তিনি কাজের জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন না। এক্ষেত্রে, নেতা কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো ও শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে কাজ আদায়ের চেষ্টা করেন। কর্মীরা এরূপ নেতৃত্বকে সন্তুষ্টচিত্তে নিতে পারেন না। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এরূপ নেতৃত্ব সাময়িকভাবে কার্যকর প্রতীয়মান হলেও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের নেতৃত্বকে নিরুৎসাহিত করা হয়। Genghis Khan, Napoleon Bonaparte, Muammar Gaddafi, Idi Amin, Bashar al- Assad” প্রমুখ ব্যক্তি এরূপ নেতৃত্ব দানের জন্য ইতিহাসে আলোচিত হয়ে আছেন।

২. পিতৃসুলভ নেতৃত্ব (Paternalistic leadership): যে নেতৃত্বে নেতা কর্মীদের ওপর বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হলেও পিতার মতো সদয় ও কল্যাণকামী হয়ে থাকেন, তাকে পিতৃসুলভ নেতৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে নেতা কর্মীদের মনে শ্রদ্ধাবোধ জাগাতে চেষ্টা করেন। স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের উন্নত ও ইতিবাচক সংস্করণই হলো পিতৃসুলভ নেতৃত্ব। এরূপ নেতৃত্বেও কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা নেতার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। এক্ষেত্রে নেতা তার কাজের জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন না। শ্রমিক আন্দোলন নিরসনে এরূপ নেতৃত্ব বেশ ফলদায়ক। Henry Ford, Fidel Castro, Nelson Mandela প্রমুখ ব্যক্তি এরূপ নেতৃত্বদানের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।

৩. গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Democratic leadership): যে নেতৃত্বে নেতা সব কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা নিজের কাছে কেন্দ্রীভূত না রেখে সদস্য বা কর্মীদের সাথে আলাপ-আলোচনা ও পরামর্শ করে কাজ পরিচালনা করেন, তাকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বলে। গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব পরামর্শমূলক নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি মূলত স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিপরীত। এ নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সদস্যদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা হয়। তাই এরূপ নেতৃত্বের প্রতি কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকেন এবং মনোবল বাড়ে। এতে কর্মীদের মনে স্বতঃস্ফূর্ততা বজায় থাকে। অধীনস্থ কর্মীরা অধিক দক্ষ ও যোগ্য হলে এরূপ নেতৃত্ব বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বে এরূপ নেতৃত্ব অনেক তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হয়। George Washington, Abraham Lincon, Jimmy Carter, Larry Page (Google), Muhtar Kent (Coca-Cola) প্রমুখ ব্যক্তি এরূপ নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সফলতা বয়ে এনেছেন।

৪. মুক্ত বা লাগামহীন নেতৃত্ব (Free-rein or laissez faire leadership): লাগামহীন নেতৃত্বে নেতা কর্মীদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে নিজে কর্মবিমুখ থাকেন। তিনি কর্মীদের প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে আদেশ-নির্দেশ দেন না বা কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। এক্ষেত্রে কর্মীরা নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে থাকেন। এরূপ নেতৃত্বে নেতা শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়ে নিজে দাায়িত্ব এড়িয়ে চলেন। উক্ত লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা থাকে না। নেতার অবহেলা ও কর্মবিমুখতার কারণে এরূপ নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রায় সব সময়ই বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে। এছাড়া কর্মীরা অনেক সময় স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন। কর্মীরা কী কাজ করবেন, কীভাবে করবেন সে সিদ্ধান্ত নেতা নেন না, কর্মীরাই ঠিক করেন। নেতা তার অনুসারীদের দ্বারা নেওয়া সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেন মাত্র। Herbert Hoover, Ronald Regan, Steve Jobs, Queen Victoria প্রমুখ ব্যক্তি এ ধরনের নেতৃত্বের উদাহরণ রেখে গেছেন। 

খ. আনুষ্ঠানিকতাভিত্তিক নেতৃত্ব (Formality based leadership): একটি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামোতে নেতার অন্তর্ভুক্তির ভিত্তিতে অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকতার বিচারে নেতৃত্বকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়- 

১. আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব (Formal leadership): প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামোগত পদমর্যাদা থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে নেতৃত্ব দেওয়া হয়, তাকে আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব বলে। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম অনুসারে এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীনস্থ কর্মীর নেতা হিসেবে গণ্য হন। সাংগঠনিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বলেই এরূপ নেতা অধীনস্থদের পরিচালনা করেন এবং অধীনস্থরা ঊর্ধ্বতনকে মানতে বাধ্য থাকেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান, কলেজের অধ্যক্ষ, ক্লাবের সেক্রেটারি, দলের প্রেসিডেন্ট, দেশের রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রনায়ক প্রমুখ ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে যে নেতৃত্ব প্রদান করেন, তা আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব বলে বিবেচিত হয়।

২. অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব (Informal leadership): সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে যে নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়, তাকে অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্ব বলে। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে অনেক লোক একত্রে কাজ করে। এরূপ অনেক ক্ষেত্রে গোষ্ঠী, সম্প্রদায়, জন্মস্থান, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ইচ্ছা - অনিচ্ছা প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়। 

এরূপ নেতৃত্বের কোনো বিধিবদ্ধ কর্তৃত্ব না থাকলেও কর্মীদের ওপর নেতাদের যথেষ্ট প্রভাব দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানের একজন সৎ, ধার্মিক, বয়োজ্যেষ্ঠ, জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাছ থেকে যেকোনো ঊর্ধ্বতন, অধস্তন বা সহকর্মী পরামর্শ নিয়ে থাকেন। আবার আত্মীয়তা বা পারিবারিক সম্পর্কের কারণেও কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া বা আলাপ-আলোচনা করা হয়। এগুলো অনানুষ্ঠানিক নেতৃত্বের উদাহরণ।

গ. প্রেষণাভিত্তিক নেতৃত্ব (Motivation based leadership): নেতা নেতৃত্ব দেওয়ার সময় সদস্যদের মাঝে বিভিন্নভাবে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি করে থাকেন। অধীনস্থরা এ উৎসাহের কারণে নেতার নেতৃত্ব অনুসরণে নিয়োজিত হন। এ উৎসাহ সৃষ্টির পদ্ধতির ভিত্তিতে নেতৃত্বকে নিম্নোক্তভাবে ভাগ করা যায়—

১. ইতিবাচক নেতৃত্ব (Positive leadership): নেতা যখন কর্মীদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন, তাকে ইতিবাচক নেতৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে কর্মীদের কাজের প্রশংসা করা হয় এবং স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের আর্থিক বা অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এরূপ নেতৃত্ব অধীনস্থ কর্মীদের মাঝে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলে ।

২. নেতিবাচক নেতৃত্ব (Negative leadership): এ ধরনের নেতৃত্ব ইতিবাচক নেতৃত্বের বিপরীত হয়ে থাকে। এতে নেতা তার অধীনস্থ কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে অথবা শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে জোর করে কাজ করিয়ে থাকেন। এটি সাময়িকভাবে কার্যকর বলে মনে হলেও এর ফলে অনেক সময় কর্মীদের মনোবল ও কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। এর মাধ্যমে শ্রম ঘূর্ণায়মানতাও বাড়ে।

ঘ. দৃষ্টিভঙ্গিভিত্তিক নেতৃত্ব (Outlook based leadership): নেতা তার নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কোন বিষয়কে প্রাধান্য বা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে নেতৃত্বকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

১. কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব (Function oriented leadership): যে নেতৃত্বে নেতা কর্মীর চেয়ে কাজকে বেশি প্রাধান্য দেন, তাকে কর্মকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বলে। এক্ষেত্রে নেতা মনে করেন, কাজ সম্পাদনই মূল বিষয়। এজন্য নেতা সব সময় কর্মীদের কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজ আদায়কেই সাফল্য মনে করেন। অর্থাৎ, কর্মীদের থেকে বেশি কাজ আদায়কেই নেতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

২. কর্মীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব (Employee oriented leadership): যে নেতৃত্বে নেতা কাজের পাশাপাশি কর্মীদের মানসিক দিকটি বিবেচনা করেন, তাকে কর্মীকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বলে। এ নেতৃত্বে নেতা সহানুভূতির সাথে কর্মীদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন, এক্ষেত্রে কর্মীদেরকে সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ, এরূপ নেতৃত্বে কর্মীর কল্যাণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উপসংহারে বলা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত বিভিন্ন ধরনের নেতৃত্ব দেখা যায়। একজন সফল নেতা পরিবেশ- পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী নেতৃত্বের ধরন অনুসরণ করে থাকেন।

নেতা ও নেতৃত্ব কি?

নেতা হল একজন ব্যক্তি যা অন্যদের পরিচালনা করে একটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে। একটি নেতা হল সে ব্যক্তি যা কিছু নতুন আইডিয়া ও বিচারধারা দিয়ে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারে এবং তাদের উন্নয়ন করতে পারে।

নেতৃত্ব হল নেতার দক্ষতা যা সফলভাবে দক্ষতা, আদর্শ, সাহস, নির্ভয়তা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য সংগঠিত একটি পদক্ষেপের সাথে সম্পর্কিত। নেতৃত্ব একটি সৃষ্টি করে যা সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য নতুন আইডিয়া এবং রণনীতি উত্পন্ন করে। সফলভাবে নেতৃত্ব দেখায় একটি দক্ষ নেতা যা তার দলের সমর্থন পেতে সক্ষম হয় এবং তারা সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারে।

নেতা ও নেতৃত্বের পার্থক্য

নেতা ও নেতৃত্ব দুটি পার্থক্যপূর্ণ পদ। নেতা হল একটি ব্যক্তি যে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে এবং তার অধীনে লোকের প্রতি নির্দেশ দেয়। নেতার প্রধান কাজ হল তার অনুযায়ী লোকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া। নেতৃত্ব হল নেতার কাজের একটি সুলভ প্রতিফলন, যেখানে নেতা সমস্ত অনুযায়ীদের প্রতি নির্দেশ দেয় এবং সেই নির্দেশের সাথে পথ প্রদর্শন করে।

একটি নেতা একটি সংস্থার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে এবং তার অধীনে কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেয়। নেতার কাজ হল কার্যকর এবং ভবিষ্যতে সংস্থার উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করা। আর, নেতৃত্ব হল নেতার প্রধান কাজ এবং এটি অন্যদের প্রভাবিত করার উপকারিতা রয়েছে। নেতা সমস্ত অনুযায়ীদের প্রতি নির্দেশ দেয়।

স্বৈরতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যে পার্থক্য

স্বৈরাচারী এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব নেতৃত্বের দুটি বিপরীত শৈলী। স্বৈরাচারী নেতৃত্ব হল একটি টপ-ডাউন পদ্ধতি যেখানে নেতার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং গোষ্ঠী বা সংস্থার নির্দেশনার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। বিপরীতে, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব একটি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত যেখানে নেতা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দলের সদস্যদের কাছ থেকে ইনপুট এবং প্রতিক্রিয়া আমন্ত্রণ জানান।
এখানে স্বৈরাচারী এবং গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে:

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: স্বৈরাচারী নেতারা তাদের অধীনস্থদের ইনপুট বা মতামত বিবেচনা না করে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন। বিপরীতে, গণতান্ত্রিক নেতারা তাদের অধস্তনদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় জড়িত করে, তাদের ধারণা এবং পরামর্শকে বিবেচনায় নিয়ে।

ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ: স্বৈরাচারী নেতারা তাদের অধস্তনদের উপর উচ্চ মাত্রার ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে, যখন গণতান্ত্রিক নেতারা ক্ষমতা ভাগ করে নেয় এবং তাদের অধস্তনদের থেকে অংশগ্রহণকে উত্সাহিত করে।

যোগাযোগ: স্বৈরাচারী নেতারা নেতা থেকে অধস্তনদের একমুখী যোগাযোগের প্রবণতা রাখে। বিপরীতে, গণতান্ত্রিক নেতারা দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রচার করে, অধস্তনদের তাদের চিন্তাভাবনা এবং মতামত শেয়ার করতে উত্সাহিত করে।

সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন: স্বৈরাচারী নেতৃত্ব সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনকে দমিয়ে দিতে পারে, কারণ অধস্তনরা নতুন ধারণা বা পরামর্শ প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করে, কারণ অধস্তনদের তাদের ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

সামগ্রিকভাবে, স্বৈরাচারী নেতৃত্ব এমন পরিস্থিতিতে কার্যকর হতে পারে যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, বা যখন নেতার বিশেষ দক্ষতা থাকে যা অন্যদের অভাব থাকে। যাইহোক, এটি অনুপ্রেরণার অভাব, কাজের সন্তুষ্টি হ্রাস এবং উচ্চ টার্নওভারের কারণ হতে পারে। বিপরীতে, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব কাজের সন্তুষ্টি, ব্যস্ততা এবং অনুপ্রেরণার উচ্চ স্তরের দিকে নিয়ে যেতে পারে, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি ধীর হতে পারে এবং সংকটের সময়ে কম কার্যকর হতে পারে।

লাগামহীন নেতৃত্ব কি?

লাগামহীন নেতৃত্ব হল একটি নেতৃত্বের শৈলী যা উচ্চ মাত্রার স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা এবং ঝুঁকি গ্রহণের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি এমন একটি নেতৃত্বের পদ্ধতিকে বোঝায় যেখানে নেতারা কঠোর নিয়ম বা আনুষ্ঠানিক কাঠামোর দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় বরং তাদের সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য গণনাকৃত ঝুঁকি নিতে উত্সাহিত করা হয়।

লাগামহীন নেতারা তাদের উদ্ভাবনী ধারণা, উচ্চ শক্তি এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। তারা প্রায়শই বাক্সের বাইরে চিন্তা করে এবং নতুন জিনিস চেষ্টা করতে ইচ্ছুক, এমনকি যদি তারা অপ্রচলিত বা অজনপ্রিয় হয়। তারা স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে, কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে বা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায় না।

যাইহোক, লাগামহীন নেতৃত্ব ঝুঁকিপূর্ণ এবং অপ্রত্যাশিতও হতে পারে। আনুষ্ঠানিক কাঠামো এবং প্রক্রিয়ার চেক এবং ভারসাম্য ব্যতীত, লাগামহীন নেতারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা সংস্থার লক্ষ্য বা মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, অথবা এর অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে। তাই, অবারিত নেতাদের জন্য দৃঢ় আত্ম-সচেতনতা, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধের স্পষ্ট ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা তাদের সংগঠন এবং স্টেকহোল্ডারদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

পিতৃসুলভ নেতৃত্ব কি?

পৈতৃক নেতৃত্ব একটি নেতৃত্বের শৈলী যেখানে একজন নেতা তাদের অধস্তনদের পরিচালনার জন্য পিতামাতার বা পিতামাতার পদ্ধতি গ্রহণ করেন। এই নেতৃত্বের শৈলীতে, নেতা তাদের দলের সদস্যদের প্রতি একটি প্রতিরক্ষামূলক এবং সহায়ক ভূমিকা গ্রহণ করেন, অনেকটা পিতার মতো তার সন্তানদের সাথে।

পৈতৃক নেতারা সাধারণত তাদের অধীনস্থদের প্রতি লালনপালন, যত্নশীল এবং সহানুভূতিশীল। তারা তাদের দলের সদস্যদের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করে এবং তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়নে আগ্রহ দেখায়। তারা তাদের দলের সদস্যদের দিকনির্দেশনা, সমর্থন এবং পরামর্শ প্রদান করে এবং তাদের ভূমিকায় উন্নতি করতে এবং পারদর্শী হতে সহায়তা করে।

পৈতৃক নেতৃত্ব বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে যেখানে দলের সদস্যদের প্রচুর সমর্থন এবং নির্দেশনা প্রয়োজন। যাইহোক, লালন-পালন করা এবং অত্যধিক অবাধ্য হওয়ার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। পৈতৃক নেতাদের জন্য একটি উপযুক্ত স্তরের দূরত্ব বজায় রাখা এবং তাদের অধস্তনদের ব্যক্তিগত জীবনে খুব বেশি মানসিকভাবে জড়িত হওয়া এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব কি?

ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব বলতে ব্যক্তি বা পরিচালকদের সাধারণ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যদের নির্দেশনা, প্রভাব এবং অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা বোঝায়। এটি সংগঠনের সাফল্য চালনা করার জন্য লোক, সংস্থান এবং প্রক্রিয়াগুলির কার্যকর সমন্বয় এবং নির্দেশনা জড়িত।
পরিচালনার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি মূল উপাদান রয়েছে:

দৃষ্টিভঙ্গি: কার্যকর নেতারা একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে যা সংস্থার ভবিষ্যত দিকনির্দেশ এবং লক্ষ্যগুলির রূপরেখা দেয়। তারা কর্মীদের অনুপ্রাণিত এবং অনুপ্রাণিত করে যা অর্জন করা যেতে পারে তার একটি আকর্ষক ছবি আঁকার মাধ্যমে।

যোগাযোগ: ভালো নেতারা যোগাযোগে পারদর্শী। তারা সক্রিয়ভাবে শোনে, স্পষ্ট নির্দেশ দেয় এবং খোলামেলা কথোপকথনকে উৎসাহিত করে। কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করে যে সবাই দৃষ্টি, উদ্দেশ্য এবং প্রত্যাশা বুঝতে পারে, সহযোগিতা এবং ব্যস্ততা বৃদ্ধি করে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণ: নেতারা উপলব্ধ তথ্য এবং তাদের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে জ্ঞাত সিদ্ধান্ত নেন। তারা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে, ভালো-মন্দ বিবেচনা করে এবং সর্বোত্তম কর্মপন্থা বেছে নেয়। কার্যকর নেতৃত্বের জন্য সিদ্ধান্তশীলতা অপরিহার্য।

অনুপ্রেরণা: নেতারা তাদের দলের সদস্যদের তাদের সেরাটা পারফর্ম করতে অনুপ্রাণিত করে এবং অনুপ্রাণিত করে। তারা স্বতন্ত্র এবং দলের সাফল্যগুলিকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রশংসা করে, গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া প্রদান করে এবং একটি ইতিবাচক কাজের পরিবেশ তৈরি করে যা ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং কাজের সন্তুষ্টিকে উত্সাহিত করে।

প্রতিনিধি দল: সফল নেতারা প্রতিনিধি দলের গুরুত্ব বোঝেন। তারা দলের সদস্যদের তাদের দক্ষতা এবং শক্তি অনুসারে কাজ এবং দায়িত্ব অর্পণ করে, তাদের মালিকানা নিতে এবং তাদের সর্বোত্তম প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষমতা দেয়।

অভিযোজনযোগ্যতা: ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের জন্য পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করার ক্ষমতা প্রয়োজন। নেতৃবৃন্দ সংস্থার মধ্যে উদ্ভাবন এবং নমনীয়তাকে উত্সাহিত করে চ্যালেঞ্জগুলির প্রত্যাশা করেন এবং নেভিগেট করেন।

সততা: নৈতিক আচরণ এবং সততা কার্যকর নেতৃত্বের মৌলিক দিক। নেতারা নৈতিক মান মেনে, স্বচ্ছতা প্রচার করে এবং কর্মচারী ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে একটি উদাহরণ স্থাপন করেন।

মানসিক বুদ্ধিমত্তা: উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নেতারা তাদের নিজস্ব আবেগ বুঝতে এবং পরিচালনা করতে পারেন, সেইসাথে অন্যের আবেগকে চিনতে এবং সহানুভূতি দিতে পারেন। এটি তাদের দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে, দ্বন্দ্ব সমাধান করতে এবং একটি ইতিবাচক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্ম সংস্কৃতি তৈরি করতে সক্ষম করে।

পরামর্শ এবং বিকাশ: ভাল নেতারা তাদের দলের সদস্যদের বৃদ্ধি এবং বিকাশে বিনিয়োগ করে। তারা শেখার জন্য দিকনির্দেশনা, সমর্থন এবং সুযোগ প্রদান করে, ব্যক্তিদের তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে এবং সাংগঠনিক সাফল্যে অবদান রাখতে ক্ষমতায়ন করে।

সামগ্রিকভাবে, পরিচালনার নেতৃত্বে কৌশলগত চিন্তাভাবনা, কার্যকর যোগাযোগ, অনুপ্রেরণা এবং সংস্থাকে তার লক্ষ্যগুলির দিকে চালিত করার জন্য সম্পর্ক তৈরি ও লালন করার ক্ষমতার সমন্বয় জড়িত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url