নিয়ন্ত্রণ || Controlling
নিয়ন্ত্রণের ধারণা
ভার্চুয়াল কর্পোরেশন লি.-এর বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা মাসে ১০,০০০ একক নির্ধারণ করা হয়। এজন্য বিক্রয় বিভাগের সবাইকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি মাসে ৭,০০০ একক অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়। এজন্য বিক্রয় বিভাগের কর্মীদের যথেষ্ট চাপের মধ্যে রাখা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকদেরও কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনা হয়। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি নতুন বিক্রয় কৌশল নির্দিষ্ট করে। এরপরও বিক্রি ৭,৮০০ একক অতিক্রম করছে না। সব দিক বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৮,০০০ একক নির্ধারণ করে।নিয়ন্ত্রণ শব্দের অর্থ কি?
নিয়ন্ত্রণের (Controlling) আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছু পরিচালনা করা, সংযত করা, দমন করা, বিরত রাখা, আয়ত্তে রাখা প্রভৃতি। ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ হলো নিয়ন্ত্রণ। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না, তা যাচাই করা এবং কোনো ধরনের সমস্যা পাওয়া গেলে তার সংশোধন করা হলো নিয়ন্ত্রণ ।প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রথমে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এরপর পরিকল্পনার আলোকে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ ও সম্পদ সংগঠিতকরণ, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা ও সমন্বয়সাধন করতে হয়। কিন্তু অধীনস্থরা সব সময় সব কাজ সঠিকভাবে করতে পারেন না। প্রাকৃতিক অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে কখনো পরিবেশ- পরিস্থিতিও প্রতিকূলে যায়। তাই প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। এর মাধ্যমে ভুল-ত্রুটি খুঁজে বের করা হয় এবং সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়ে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়া যায়।
■ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক হ্যারন্ড কুঞ্জ এবং সানফ্রানসিসকো বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক হেইঞ্জ ওয়েরিচ (Harold Koontz and Heniz Weihrich) এর মতে, 'Controlling is measuring and correcting individual and organizational performance to ensure that events conform to plans.' অর্থাৎ, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন নিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তির ও প্রতিষ্ঠানের সম্পাদিত কাজ পরিমাপ ও সংশোধন করাকে নিয়ন্ত্রণ বলে।
■ ডেভিড এইচ. হন্ট (David H. Holt) এর মতে, 'Controlling is the management function of monitoring performance and adopting work variables to improve results' অর্থাৎ, 'নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কাজ সম্পাদন তদারকি করা এবং ফলাফল উন্নয়নে শিল্প প্রতিষ্ঠানের খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থাপকীয় কাজ বিশেষ।
উল্লিখিত আলোচনা ও সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে নিচের ধারণা পাওয়া যায়-
১. নিয়ন্ত্রণ একটি চলমান প্রক্রিয়া;
২. এটি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ কাজ;
৩. পরিকল্পনা বা আদর্শমানের ওপর ভিত্তি করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়;
৪. এতে প্রকৃত কার্যফল পরিমাপ করে আদর্শমানের সাথে তুলনা করা হয়;
নিয়ন্ত্রণের বৈশিষ্ট্য
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। প্রণীত পরিকল্পনার আলোকে সব কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো নিয়ন্ত্রণ। আদর্শ নিয়ন্ত্রণের উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো-১. লক্ষ্যকেন্দ্রিক (Goal oriented): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিয়ন্ত্রণের কাজ করতে হয়। নিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য হলো পরিকল্পনামাফিক সবকিছুই চলছে কিনা তা দেখা। পরিকল্পিত কাজগুলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন করা। যেমন: 'পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন'। এ ধরনের লক্ষ্য থাকলে প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
২. ভবিষ্যতমুখী (Future oriented): নিয়ন্ত্রণ সব সময়ই ভবিষ্যৎ কেন্দ্রিক বা পশ্চাৎমুখী। অর্থাৎ, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করা হয়। প্রকৃত কার্যফলের আলোকে পরিকল্পনার সমস্যা, গতি-প্রকৃতি, সমাধান প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে নিয়ন্ত্রণ পরে গিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।
৩. আদর্শমান নির্ভরতা (Dependent on standard): নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় কোনো কাজ সম্পাদনে দক্ষতা, সময় ও ব্যয়ের আদর্শমান নির্ধারণ করা হয়। আদর্শমানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি কাজের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৪. কালান্তিক কাজ (Periodical work): নির্দিষ্ট সময় পর পর যে কাজ প্রতিনিয়ত করা হয়, তাকে কালান্তিক কাজ বলে। নিয়ন্ত্রণ দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক বা বার্ষিক হতে পারে। এটি প্রতিষ্ঠানের আকার, আয়তন, পণ্য বা সেবা প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে। এজন্য নিয়ন্ত্রণকে কালান্তিক কাজও বলা হয়।
৫. অবিরাম প্রক্রিয়া (Continuous process): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ হলেও এটি একটি অবিরাম বা চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের বিলোপসাধন না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের কাজ চলতে থাকে। একবার কোনো কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হলে তার সাথে মিল রেখে নির্দিষ্ট সময় শেষে নিয়ন্ত্রণের কাজও করতে হয়। তাই এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
৬. ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ (Last step of management process): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ কাজ। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের আলোকে সর্বপ্রথম পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ সঠিকভাবে সম্পাদিত হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হলো নিয়ন্ত্রণের কাজ।
৭. মিতব্যয়িতা (Economies): দক্ষ ও কার্যকরভাবে সম্পদ ও উপকরণ ব্যবহারকে মিতব্যয়িতা বলে। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় অপচয় কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণে এমন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত নয় যেখানে খরচ বেশি হতে পারে। এ ব্যবস্থা ব্যয়সাপেক্ষ হলে তাতে জটিলতা বাড়ে।
৮. আওতা (Scope): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের সব স্তরে পরিব্যাপ্ত। ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগ ও উপবিভাগে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর থাকে। এছাড়া প্রতিটি পরিকল্পনার বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে যে কাজ যেভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা সেভাবে সম্পন্ন করতে কোনো অসুবিধা হয় না।
৯. প্রতিরোধক (Preventive): একই ধরনের ভুল বারবার যেন না হয় সে বিষয়টি আদর্শ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা এমনভাবে নেওয়া বা বাস্তবায়ন করা হয়, যা সম্ভাব্য ত্রুটির বিপক্ষে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
১০. দ্রুত ভুল-ত্রুটি নির্দেশক (Deviation indicator): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিকল্পনার আলোকে সব কাজ সম্পাদন হচ্ছে কি না এবং কাজ সম্পাদনে কোথাও কোনো ভুল-ত্রুটি হচ্ছে কি না, তা দ্রুততার সাথে নির্ধারণ করা হয়। .
১১. সংশোধন ব্যবস্থার নির্দেশক (Direction of corrective action): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা বা প্রকৃত কার্যফলের ত্রুটি নির্ণয় করে থাকে। অন্যদিকে কীভাবে ত্রুটি সংশোধন করতে হবে, তা বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিয়ে থাকে। তাই নিয়ন্ত্রণ হলো সংশোধন ব্যবস্থার নির্দেশক।
১২. পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি (Basis of next plan): নিয়ন্ত্রণ পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়। এ ব্যবস্থা পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে নতুনভাবে কাজে লাগানো যায়। এতে নিয়ন্ত্রণই পথনিদের্শনা দিয়ে দেয়, পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত।
নমনীয়তাকে কেন নিয়ন্ত্রণের বিশেষ গুণ বলা হয়?
নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব
নিচে এর গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
১. পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (Implementation of plan): পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কাজগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন হয় নিয়ন্ত্রণের। প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতির সব তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যথাসময়ে পাওয়া যায়, এর জন্য পরিকল্পনার সঠিক ও সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
২. দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ (Taking prompt action): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় যেকোনো ভুল-ত্রুটি খুব সহজে ধরা পড়ে এবং প্রতিটি সমস্যার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যায়। চিহ্নিত কারণের আলোকে দ্রুততার সাথে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
৩. পরবর্তী পরিকল্পনার মান উন্নয়ন (Developing the quality of next plan): সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দ্বারা দ্রুততার সাথে ভুল-ত্রুটি নিরূপণ ও দূর করা যায়। এ ব্যবস্থা পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি স্থিরীকরণে ও মান উন্নয়নে সাহায্য করে। প্রতিটি বিভাগ ও কর্মী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে কি না, তা বোঝা যায়। ফলে উদ্দেশ্য অর্জনের পথে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়। এভাবে উত্তম পরিকল্পনা প্রণয়ন সম্ভব হয়।
৪. অর্জিত ফলাফল পরিমাপ (Measuring performance): পরিকল্পনা ও নির্ধারিত মান অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করার জন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পাদন সম্ভব হয়।
৫. বিচ্যুতির কারণ নির্ণয় (Determining the cause of deviation): আদর্শমানের সাথে সম্পাদিত কাজের পার্থক্যকে বিচ্যুতি বলে। এরূপ বিচ্যুতি থাকলে তার পরিমাণ নির্ধারণ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিচ্যুতির প্রকৃত কারণ নির্ধারিত হয়।
৬. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ (Taking corrective action): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় পরিকল্পনার ত্রুটি- বিচ্যুতিগুলো ধরা পড়ে। এছাড়া বিচ্যুতির কারণ ও সমস্যার প্রকৃতি বের করা হয়। ফলে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এভাবে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনাকে সাহায্য করে থাকে।
৭. সময় ও অপচয় হ্রাস (Minimizing time and wastage): কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানের সব কাজ পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সময় ও অপচয় কমে যায়।
৮. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বণ্টন (Assigning authority and responsibility): সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি স্তরের বিভিন্ন নির্বাহী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব নির্ধারণ ও বণ্টন করে দেওয়া হয়। এতে সহজে প্রত্যেকের কাজ পরিমাপ করা যায়।
৯. নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা (Discipline and order): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাহায্যে ব্যক্তিগত কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। এটি ক্ষেত্রবিশেষে পুরস্কার, তিরস্কার, বহিষ্কার বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়; যা প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করে।
নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা
নীতি বা আদর্শ বলতে কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য যথাযথ পথনির্দেশনাকে বোঝায়। নীতি বা আদর্শের মাধ্যমে কী করা উচিত এবং কীভাবে কাজটি করলে লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যায়। নিচে নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলো তুলে ধরা হলো-১. লক্ষ্যকেন্দ্রিক (Goal oriented): প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্যই নিয়ন্ত্রণ কাজ করা হয়। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে মিল না হলে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে নতুন করে জটিলতার তৈরি হয়।
২. সরলতা (Simplicity): নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া সহজ-সরল হওয়া উচিত। এতে সবার কাছে তা বোধগম্য হয়। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রক (যিনি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করবেন) এবং অধীনস্থ (যাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হবে) সবাই নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো যেন সহজে বুঝতে পারেন। নিয়ন্ত্রণ কৌশল অস্পষ্ট হলে তা কখনোই ফলপ্রসূ হয় না। তাই, নিয়ন্ত্রণের বিষয় সবাই বুঝতে পারার মতো হওয়া উচিত।
৩. গ্রহণযোগ্যতা (Acceptability): নিয়ন্ত্রণ একটি কার্যপ্রক্রিয়া এবং এর বাস্তবায়ন হয় অধীনস্থ কর্মীদের মাধ্যমে। অধীনস্থ কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও এর প্রয়োগবিধিকে মন থেকে মেনে নিলেই সত্যিকার অর্থে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়।
৪. ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা (Future guidelines): গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ার কারণ বের করা এবং ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য নির্বাহীদের কী করা উচিত, তার নির্দেশনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়া হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে তা ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
৫. নমনীয়তা (Flexibility): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে তা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আগে থেকে নেওয়া ব্যবস্থা সব সময় সঠিক হবে, এরূপ প্রত্যাশা করা যায় না। অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রণীত ব্যবস্থা সংশোধন বা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতে কাজে গতিশীলতা আসে ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে যথাসম্ভব নমনীয় হতে হবে।
৬. ব্যতিক্রম (Exception): সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্তৃক সম্ভব নয় এমন ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে বিশেষ কর্মব্যবস্থা নেওয়া হলো ব্যতিক্রমের নীতি। সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধরনের বিচ্যুতি দেখা দিলে সেগুলোকে চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত ঊর্ধ্বতন নির্বাহী সরাসরি হস্তক্ষেপ করে কাজ সম্পন্ন করেন। তাই ব্যতিক্রম ক্ষেত্রগুলোতে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়।
৭. মিতব্যয়িতা (Economies): সম্পদ ও উপকরণকে দক্ষ ও কার্যকরভাবে, কম খরচে ও সময়ে এবং অপচয় না করে ব্যবহার করাকে মিতব্যয়িতা বলে। মান নির্ধারণ, প্রকৃত কার্যফল মূল্যায়ন, বিচ্যুতির কারণ নির্ণয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সময় ও খরচ কমে যায়। তাই নিয়ন্ত্রণে মিতব্যয়িতার নীতি অনুসরণ করা অবশ্যই প্রয়োজন।
৮. দক্ষতা (Efficiency): দক্ষতা বলতে স্বল্প সময় ও খরচে সঠিকভাবে কাজ সম্পাদনকে বোঝায়। নিয়ন্ত্রণ কাজে বিচ্যুতি নিরূপণ ও প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটি করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী পরিকল্পনা সঠিকভাবে তৈরি করা যায় না। ফলে নিয়ন্ত্রণ কাজে দক্ষতা বাড়ায়। এজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় দক্ষতার নীতি অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন।
৯. দ্রুততা (Promptness): নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে ত্রুটি- বিচ্যুতি বের করে পরবর্তী সময়ে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। তাই বিচ্যুতির বিপরীতে নেওয়া সংশোধনীগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
১০. প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ (Direct control): নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরোক্ষ না হয়ে প্রত্যক্ষ হওয়া উচিত। অর্থাৎ, যিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং যাদের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হবে, তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হয়।
১১. নিরবচ্ছিন্নতা (Continuousness): নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে হওয়া উচিত। পরিবর্তনশীল পরিবেশ- পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কোনো পরিবর্তন, উদ্দেশ্যের পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে বারবার পরিকল্পনার পরিবর্তনের সাথে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনতে হয়।
১২. আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার (Use of modern technology): নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সফলতা আশা করা যায় না। তাই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন।