এইচ. এস. সি. কৃষিশিক্ষা ২য় পত্র অনুধাবনমূলক প্রশ্ন || HSC, Agriculture 2nd paper, Comprehension questions
প্রথম অধ্যায়: মাৎস্য চাষ
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. মাৎস্য চাষ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আক্ষরিক অর্থে মাৎস্য চাষ বলতে মাছসহ অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন আরও অনেক জলজ জীবের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পালন, প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, আহরণ ও সংরক্ষণকে বোঝায়। মৎস্য, চিংড়ি, কাঁকড়া , কুচিয়া, হাঙর, নানা ধরনের ঝিনুক, জলজ উদ্ভিদ, তিমি ইত্যাদি সকল জীবই মাৎস্য সম্পদের অন্তর্গত। এগুলো মানুষের ভোগ্যপণ্য, খাদ্য হিসেবে এবং অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২ . মাছ চাষের পুকুরে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা জরুরি কেন?
উত্তর: মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা। রাক্ষুসে মাছ (শোল, গজার, টাকি ইত্যাদি) পুকুরে মজুদকৃত পোনা বা চাষকৃত মাছ খেয়ে ফেলে। সাথে সাথে পুকুরে উৎপাদিত খাদ্যকণাও খেয়ে শেষ করে। ফলে চাষকৃত মাছের সার্বিক উৎপাদন ব্যহত হয়। তাই মাছ চাষের পুকুরে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা জরুরি।
৩. রাজপুঁটি মাছ চাষ করা লাভজনক কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ফলনের দিক দিয়ে রাজপুঁটি মাছটি অন্য যেকোনো দেশীয় পুঁটি মাছের চেয়ে প্রায় ৪০-৫০% বেশি উৎপাদনশীল। পারিবারিক শ্রম দ্বারা অল্প খরচে ও স্বল্প ব্যবস্থাপনায় মৌসুমি বা বাৎসরিক পুকুরে এ মাছের চাষ করা যায় । ধানক্ষেতেও এর চাষ করা যায়। কার্প জাতীয় মাছের সাথে মিশ্রচাষ করা যায়। এ মাছ ৩-৬ মাসের মধ্যে বিক্রয়যোগ্য হয়। খেতে সুস্বাদু বলে বাজারমূল্যও বেশি। এসকল কারণে রাজপুঁটি মাছ চাষ লাভজনক।
৪ . নাইলোটিকা মাছ চাষ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: নাইলোটিকা মাছ একটি উচ্চ ফলনশীল ও দ্রুত বর্ধনশীল মাছ বলে এর চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাছ ৩-৪ মাসে বিক্রয়যোগ্য হয়। এগুলো তুলনামূলকভাবে অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন। নাইলোটিকা অগভীর জলাশয়, স্বাদু ও লবণাক্ত পানিতে চাষ করা যায়। এদের সম্পূরক খাদ্য কম লাগে। প্রতি বিঘা জমিতে বার্ষিক নাইলোটিকা চাষে ৩-৫ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ মাছের চাষ পদ্ধতি সহজ , চাষ ব্যয় কম ও উৎপাদন এবং লাভ বেশি বলে এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
৫. প্লাংকটন বলতে কী বোঝ?
উত্তর: প্লাংকটন হলো পানিতে মুক্তভাবে ভাসমান আণুবীক্ষণিক জীব যা খেয়ে মাছ জীবন ধারণ করে। প্লাংকটন দু'প্রকার, যথা: ফাইটোপ্লাংকটন ও জুপ্লাংকটন। ক্ষুদ্র জীবগুলো উদ্ভিদ হলে তাদেরকে ফাইটোপ্লাংকটন বলা হয় এবং প্রাণী হলে তাদেরকে জুপ্লাংকটন বলা হয়। ক্লোরেলা, ডায়াটম, নস্টক, অ্যানাবেনা ইত্যাদি হলো ফাইটোপ্লাংকটন এবং ড্যাফনিয়া, বসমিনা, কেরাটেলা ইত্যাদি হলো জুপ্লাংকটন।
৬ . ফাইটোপ্লাংকটন মাছের কোন ধরনের খাবার?
উত্তর : ফাইটোপ্লাংকটন হলো পানিতে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালা উদ্ভিদ। মাছ এসব জলজ উদ্ভিদ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। ফাইটোপ্লাংকটনের মধ্যে রয়েছে সিনোডেসমাস, নাভিকুলা, উৎপন্ন হয় বলে স্পাইরোগাইরা ইত্যাদি। প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয় বলে ফাইটোপ্লাংকটনকে মাছের প্রাকৃতিক খাবার বলা হয়।
৭. রোগাক্রান্ত মাছ কীভাবে চেনা যায়?
উত্তর: আচরণগত ও শারীরবৃত্তীয় অস্বাভাবিকতা দ্বারা রোগাক্রান্ত মাছ চেনা যায়। রোগাক্রান্ত মাছের লক্ষণগুলো হলো-
১. খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয় অথবা স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করে না।
২. শরীরের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য থাকে না।
৩. ফুলকার স্বাভাবিক লাল রং নষ্ট হয়ে যায়।
৪. দ্রুতগতিতে কিংবা অস্থিরভাবে সাঁতার কাটে।
৫ . মাছ শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং পানির উপর মুখ হা করে থাকে।
৮. কী কী কারণে মাছ রোগাক্রান্ত হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মূলত পানির দূষিত পরিবেশই মাছ রোগাক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী। দূষিত পানিতে মাছের রোগ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন জীবাণু, যেমন- ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবী ইত্যাদির বিস্তার বেশি হয়। এছাড়া পানির দূষিত পরিবেশে মাছের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
৯. মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করার পাশাপাশি মাছ আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিল্পক্ষেত্রে সার হিসেবে, হাঁস - মুরগির খাদ্য হিসেবে মাছের নানা ব্যবহার আছে বলে কর্মসংস্থানের একটি ভালো উপায় হলো মাছের চাষ। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও উৎপাদিত মাছের বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াতে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থেকে দেশের আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে । দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫৭%। তাই বলা যায় , মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।
১০. চিংড়িকে সাদা সোনা বলা হয় কেন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ বাজারমূল্য চিংড়িকে বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্যে পরিণত করেছে। বিদেশে মাছ রপ্তানির শতকরা ৬৫ ভাগই হলো চিংড়ি। বর্তমানে চিংড়ি রপ্তানি থেকে আয় মোট জাতীয় আয়ের ৭.৮%। যে কারণে চিংড়িকে সাদা সোনা বলা হয়।
১১. চিংড়িকে নিশাচর বলা হয় কেন?
উত্তর: চিংড়ি তার বেশিরভাগ স্বাভাবিক কার্যক্রম সাধারণত রাতের বেলায় সম্পন্ন করে থাকে। এদের খাদ্য গ্রহণ, খোলস পাল্টানো, প্রজনন ক্রিয়া, ডিম পাড়া প্রভৃতি কাজগুলো রাতেই সম্পন্ন হয়। এ কারণেই চিংড়িকে নিশাচর বলা হয়।
১২. চিংড়ি চাষ কেন লাভজনক? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে চিংড়ির চাহিদা ও বাজারদর বেশি থাকায় চিংড়ি চাষ লাভজনক। চিংড়ির পোনা সহজলভ্য, অল্প বিনিয়োগেই চিংড়ির খামার গড়ে তোলা যায় এবং সারা বছর চিংড়ি চাষ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে বর্তমানে হেক্টরপ্রতি ফলন ৪৫০ কেজি থেকে ৬০০ কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। আমাদের দেশে মাছ রপ্তানি আয়ের শতকরা ৫৮ ভাগ আসে চিংড়ি থেকে। চিংড়ির চাষ করে চাষির আয় ও কর্মসংস্থান ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব। দেশের আর্থ - সামাজিক অবস্থার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে চিংড়ি চাষের সম্ভাবনা উন্নয়ন, খুবই উজ্জ্বল।
দ্বিতীয় অধ্যায়: পোল্ট্রি পালন
১. বাংলাদেশে পোল্ট্রির প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পোল্ট্রি বলতে মানুষের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পরিচর্যায় পালিত বিভিন্ন প্রকার গৃহপালিত পাখি, যেমন - হাঁস, মুরগি, কবুতর ইত্যাদিকে বোঝায়। পোল্ট্রি পালনের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, যা আমাদের শরীরের পুষ্টি সাধন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি ও কর্মশক্তি যোগাতে সহায়তা করে। পোল্ট্রি পালনের মাধ্যমে অর্থ আয় ও বেকারত্ব দূর করা যায়। পোল্ট্রির হাড়, বিষ্ঠা থেকে তৈরি জৈবসার জমিতে ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। এছাড়াও পরিবেশের উন্নয়ন, শিল্পের উপকরণ ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর ব্যবহার রয়েছে। তাই বলা যায়, গ্রামীণ দুঃস্থ লোকদের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় অর্থনীতিতে পোল্ট্রির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
২. পোল্ট্রি খামারে জৈব নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জৈব নিরাপত্তা বলতে জীবাণু থেকে জীবকে রক্ষা করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। আমাদের দেশে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশে অন্যতম সমস্যা হলো বিভিন্ন রোগবালাই এর আক্রমণ। পোল্ট্রির এ পর্যন্ত ১৪০ টি রোগ শনাক্ত হয়েছে। খামারিদের এসকল রোগবালাই সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা না থাকায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। কখনো কখনো একটি রোগের আক্রমণেই খামার শেষ হয়ে যায়। সম্প্রতি বার্ড ফ্লু রোগে অনেক খামার ধ্বংস হয়ে গেছে। জৈব নিরাপত্তার মাধ্যমে এসব রোগ থেকে খামারের পোল্ট্রিকে রক্ষা করা নিশ্চিত করা হয়। তাই পোল্ট্রি খামারে জৈব নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ডিম সংরক্ষণ সয়মকালের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সুস্থ সবল বাচ্চা উৎপাদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ করতে হয়। সাধারণত ১২.৭৮ ° -১৮.৩৩° সে. (৫৫-৬৬° ফা.) তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ করা ভালো। এর অতিরিক্ত বা কম তাপমাত্রায় সংরক্ষিত ডিমের ফুটার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বেশিরভাগ ডিমই নষ্ট হয়ে যায়। তাই গ্রীষ্মকালে ৩-৫ দিন এবং শীতকালে ৭-১০ দিনের বেশি বাচ্চা ফুটানোর ডিম সংরক্ষণ করা উচিত নয় । অর্থাৎ , ডিম সংরক্ষণ সময়কালের উপর তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে।
৪. ক্যান্ডলিং বলতে কী বোঝ?
উত্তর : আলোর সামনে ডিম পরীক্ষা করাকে ক্যান্ডলিং বলে। ডিম বসানোর সপ্তম দিনে এগুলোকে পরপর আলোর সামনে ধরলে ডিম উর্বর না অনুর্বর তা বোঝা যায়। উর্বর ডিমে সরিষার দানার মত ছোট কালো বস্তু অর্থাৎ ডিমের ভ্রূণ দেখা যায়। ভ্রূণ জীবিত থাকলে দাগটিকে কেন্দ্র করে তা থেকে সরু সরু রক্তের নালীগুলো মাকড়সার জালের মত বিস্তৃত থাকে এবং আলোর সামনে ডিমটি ধরলে তাপ পেয়ে ভ্রূণ নড়তে থাকে। কিন্তু কুসুমের উপর গোলাকার লাল সুতোর মতো দাগ দেখা না গেলে ও ভ্ৰূণ না নড়লে বুঝতে হবে ভ্রূণ মরে গেছে অর্থাৎ ডিমটি অনুর্বর।
৫. ইনকিউবেটর বলতে কী বোঝ?
উত্তর: পোল্ট্রি শিল্পে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটোনার যন্ত্রকে ইনকিউবেটর বলে। এ যন্ত্রটি দ্বারা ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতিটি সবচেয়ে আধুনিক ও উন্নত। বড় বড় মুরগির খামারে ইনকিউবেটরের সাহায্যে ডিম ফুটানো হয়। এ পদ্ধতিতে এক সাথে অনেক ডিম ফুটোনা যায়। ডিম ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। তাছাড়া ডিমে তা দেওয়ার জন্য মুরগির প্রতি যত্নশীল হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করা যায়।
৬. খাঁচায় মুরগি পালন সুবিধাজনক কেন?
উত্তর: খাঁচায় মুরগি পালন একটি আধুনিক ব্যবস্থা। বর্তমানে শহরে বদ্ধ বা স্বল্প জায়গায় অনেকেই এ পদ্ধতিতে মুরগি পালন করে থাকেন। এই পদ্ধতিতে অল্প স্থানে অনেক মুরগি পালন করা যায়। ডিম পাড়ার সাথে সাথে গড়িয়ে খাঁচার বাইরে চলে আসে বলে ডিম কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসুস্থ মুরগি চিহ্নিতকরণ সহজ হয়। এ ব্যবস্থায় লিটারের প্রয়োজন হয় না। মুরগির প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা সহজ হয়। ডিম সংগ্রহ করতেও সুবিধা হয় এবং ডিমে কোন ময়লা লাগে না। এসব কারণেই খাঁচায় মুরগি পালন সুবিধাজনক।
৭. ডিপ লিটার পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পশুপাখির বিছানাকে ইংরেজিতে লিটার বলে। মেঝেতে তুষ, কাঠের গুঁড়া, ছাই, খড় প্রভৃতি বিছিয়ে লিটার তৈরি করা হয়। ঘরের মধ্যে লিটার বিছিয়ে সেই ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে মুরগি পালন করাকে ডিপ লিটার বলে। ঘরের মেঝেতে ১৫-২০ সেমি পুরু করে কাঠের গুঁড়া বিছিয়ে এই ডিপ লিটার তৈরি করা হয়। ডিমপাড়া মুরগির জন্য ডিপ লিটার পদ্ধতি প্রযোজ্য।
৮. ব্রয়লার জাতগুলো অল্প সময়ে অধিক খাদ্য খেয়ে বেশি মাংস উৎপাদন করে— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অল্প সময়ে বেশি পরিমাণে ও নরম মাংস লাভের জন্য মাংসল জাতের ৬-৮ সপ্তাহ বয়সের মুরগিকে ব্রয়লার বলা হয়। ব্রয়লারের খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা ২ : ১ (খাদ্য প্রয়োগ ও খাদ্য গ্রহণের ফলে জীবের দৈহিক বৃদ্ধির অনুপাতকে খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা বলে)। অর্থাৎ ব্রয়লার ২ কেজি খাদ্য খেয়ে ১ কেজি ওজন প্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে, দেশি মুরগির জাতের খাদ্য গ্রহণের ও বৃদ্ধির পরিমাণ সে তুলনায় অনেক কম । তাই বলা যায় , ব্রয়লার জাতগুলো অল্প সময়ে অধিক খেয়ে বেশি মাংস উৎপাদন করে।
৯. ব্রয়লার মুরগির ব্রুডার ব্যবস্থাপনা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে হাউজে ১-২১ দিন বয়সের বাচ্চাকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্লুডার বলে। ব্রুডার টিন / কাঠ / হার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি করা যায়। এক মিটার ব্যাসের ব্রুডারের নিচে ২০০-২৫০টি বাচ্চা রাখা যায়। ব্রুডার ঘর ছনের চালা বা চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে নির্মাণ করা যায়। চিকগার্ড বা বেষ্টনি ব্রুডার থেকে ৭৫ সে মি দূরে ও ৪৫ সেমি উঁচু চাটাই বা হার্ডবোর্ড দিয়ে বেষ্টনি তৈরি করতে হয় যেন বাচ্চা ঘর থেকে দূরে যেতে না পারে । বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে জায়গার পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রতি ২০০ টি বাচ্চার জন্য মোট জায়গা লাগবে ১৮ বর্গমিটার, খাবার পাত্র পাত্রের জন্য বাচ্চার ০-২ সপ্তাহ বয়সে ৪৫৪ বর্গ সেমি ও ২-৬ সপ্তাহ বয়সে ৭০০ বর্গ সেমি রাখতে হয়। পানির পাত্র প্রথম ১০ দিন বয়সে ২ লিটারের ৮ টি ও ১০ দিন থেকে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ২ লিটারের ১৬ টি লাগবে।
১০. হাঁস-মুরগি পালনে সুষম খাদ্য প্রয়োজন কেন?
উত্তর: সুষম খাদ্য হাঁস-মুরগিকে সরবরাহ করা না হলে যে খাদ্য উপাদানের ঘাটতি থাকে তার কারণে দেহে নানা রকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সুষম খাদ্য নিয়মিত সরবরাহ করলে-
i. হাঁস-মুরগির বৃদ্ধি দ্রুত হয়।
ii. হাঁস-মুরগির সার্বিক উৎপাদন অর্থাৎ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন ও গুণগতমান ভালো হয়।
iii. অপুষ্টিজনিত এবং অন্যান্য রোগ কম হয়। বাচ্চা ফোটার হার বৃদ্ধি পায়।
iv . তাই হাঁস-মুরগি পালনে সুষম খাদ্য প্রদান করা প্রয়োজন।
১১. তোমার জানা মুরগির দুটি ভাইরাসজনিত রোগের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: আমার জানা মুরগির ভাইরাসজনিত দুটি রোগের নাম নিচে দেওয়া হলো-
i. রাণীক্ষেত ও
ii . বার্ড - ফু।
তৃতীয় অধ্যায়: পশু পালন
১. পশুপালন গুরুত্বপূর্ণ কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পশুপালন তথা গরু, মহিষ ও ছাগল পালনের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এদেশের কৃষিখাতের আয়ের একটি বিরাট অংশ নির্ভর করে পশুসম্পদের উপর। গরু, মহিষ ও ছাগলের মাংস, দুধ, চামড়াসহ বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যাদি যেমন- হাড়, শিং, নাড়িভুঁড়ি, গোবর ইত্যাদি অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কৃষিকাজ, গাড়িটানা, সেচকাজ , ঘানিটানা, ভারবহন, বিনোদন প্রভৃতি কাজে গবাদিপশুর বহুল ব্যবহার হয়। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে পশুসম্পদের অবদান প্রায় ১৩.৬২ % । ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণেও পশুপালন গুরুত্বপূর্ণ।
২. খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলতে বুঝায় খামারে যেন কোনো রোগের জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। খামারের জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে- খামারের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক জীবাণুমুক্ত হয়ে খামারে প্রবেশ করা। অহেতুক দর্শনার্থী খামারে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বিড়াল, পাখি, ইঁদুর, কুকুর ইত্যাদি খামারে প্রবেশ করতে না দেওয়া । খামারে ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করে খামারে প্রবেশ করানো।
৩ . প্রজাতি সংকরায়ণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: প্রজাতি সংকরায়ন বলতে দুটি ভিন্ন প্রজাতির পশুর মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে নতুন উন্নত ও কর্মঠ সংক্র পশু তৈরি করাকে বোঝায়। যেমন পুরুষ গাধা ও স্ত্রী ঘোড়ার প্রজনন ঘটিয়ে 'খচ্চর' তৈরি করা হয়। তেমনি পুরুষ ঘোড়া ও স্ত্রী গাধার প্রজনন ঘটিয়ে হিন্নি ' তৈরি করা হয়। তবে খচ্চর ও হিন্নি সাধারণত বন্ধ্যা হয়। আবার ইউরোপিয়ান গরু ও আমেরিকান বাইসন এর প্রজনন ঘটিয়ে পুরুষ ও বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম স্ত্রী পশু তৈরি করা হয়।
৪ . হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান গাভি পালন করা হয় কেন?
উত্তর: হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান উন্নত জাতের গরু। দুধাল জাতের মধ্যে এরা সবচেয়ে বড় আকারের গরু। এরা দৈনিক ৩০-৪০ লিটার দুধ দেয় যা দেশি ও বিদেশি জাতের তুলনায় অনেক বেশি। দুধের চর্বির পরিমাণ ৩.৫-৪%। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের বড় আকারের গাভির ওজন ৫০০-৬০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৮০০-৯০০ কেজি। ফলে অধিক মাংস উৎপাদনকারী হিসেবেও এরা জনপ্রিয়। এই জাতের গরুর দেহ দূত বৃদ্ধি পায় , প্রজনন ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। তাই অধিক আয়ের জন্য হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু পালন করা হয়।
৫ . সঙ্কর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাধারণত জার্সি, শাহীওয়াল, লালসিন্ধি, হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান এদের সাথে সাথে দেশি জাতের গাভির প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাতের গাভি পাওয়া যায়। সংকর জাতের গরুর গায়ের রং সাদা - কালোর মিশ্রণ বা কালো রঙের হতে পারে। এ সকল জাতের গাভির ঘাড়ে ভাঁজ ও গলকম্বল নেই। দেশীয় গরুর তুলনায় এরা আকারে বেশ বড়। গাভি ও ষাঁড়ের ওজন যথাক্রমে ৩০০-৪০০ কেজি ও ৫০০-৬০০ কেজি হয়। দুধ ও মাংস উৎপাদন ক্ষমতা দেশি গরুর চেয়ে বেশি । এরা দৈনিক গড়ে ২৬ লিটার দুধ দেয়। পরিবেশের সাথে এদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও অভিযোজন ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি।
৬. পশুর জন্য সবুজ কাঁচা ঘাস প্রয়োজন কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য সবুজ কাঁচা ঘাস যা সুষম খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। এটি আঁশজাতীয় খাদ্য একটি দেশি গরুকে দৈনিক ১০-১২ কেজি এবং উন্নত জাতের একটি গরুকে দৈনিক ১২-১৫ কেজি সবুজ কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হয়। গাড়ি হতে অধিক দুধ পেতে হলে তাকে অবশ্যই প্রচুর কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। এতে পশু সুস্থ ও সবল হয়, স্বাস্থ্য ভালো থাকে, কর্মক্ষমতা ও মাংসের উৎপাদন বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে পশুর জন্য সবুজ কাঁচা ঘাস অত্যন্ত জরুরি।
৭. খাদ্যপ্রাণ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: খাদ্য উপাদানের অন্তর্গত এক ধরনের জৈব যৌগ যা প্রাণীর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজন তাকে খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন বলে। এগুলো শরীরের অভ্যন্তরের বহুবিদ কাজ সম্পাদন করে। যেমন ভিটামিন 'এ' রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ভিটামিন 'সি' স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে, আয়রন পুষ্টি উপাদানসমূহ থেকে শক্তি রূপান্তরে সাহায্য করে এবং শক্তির বাহক হিসেবে কাজ করে।
৮. সাইলেজ কেন পশুখাদ্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাইলেজ আঁশজাতীয় রসালো খাদ্য। সাইলেজ তৈরির ক্ষেত্রে উন্নত জাতের ঘাস (যেমন- পারা, নেপিয়ার, জার্মান, ভুট্টা ইত্যাদি) নরম ও রসালো অবস্থায় ফুল আসার পূর্বে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এতে সংরক্ষণের পরেও প্রাথমিক অবস্থার মতো পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। সাইলেজ তৈরিতে আর্দ্রতা ৭০-৭৫% ভাগ রাখা হয়। কোনো মৌসুমে ঘাস কম হলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘাস পাওয়া না গেলে গবাদিপশুকে সংরক্ষিত এই সাইলেজ খাওয়ানো যায়।
৯. সাইলেজ কোন ধরনের খাদ্য?
উত্তর: সাইলেজ হলো সংরক্ষণকৃত আঁশজাতীয় রসালো খাদ্য। উন্নত জাতের ঘাস (যেমন- পারা, নেপিয়ার, জার্মান, ভুট্টা ইত্যাদি) নরম ও রসালো অবস্থায় ফুল আসার পূর্বে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে বা গর্তে বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। এতে সংরক্ষণের পরেও প্রাথমিক অবস্থার মতো পুষ্টিমান বিদ্যমান থাকে। সাইলেজ তৈরিতে আর্দ্রতা ৭০-৭৫ % ভাগ রাখা হয়। কোনো মৌসুমে ঘাস কম হলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঘাস পাওয়া না গেলে গবাদিপশুকে সংরক্ষিত এই সাইলেজ খাওয়ানো যায়।
১০. ফডার ক্রপ বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ফডার ক্রপ হলো গবাদিপশুকে খাওয়ানোর জন্য চাষ করা ঘাস। নেপিয়ার, পারা, ভুট্টা, সরগম, জার্মান, গিনি, ওটস ইত্যাদি ফডার ক্রুপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যদিও বাংলাদেশে ঘাস চাষ ততটা ব্যাপক নয়। তথাপি রবি ফসল হিসেবে অনেক জেলায় ঘাসের চাষ হয়ে থাকে। অধিক দুধ উৎপাদন, গরু মোটাতাজাকরণ ও দানাদার খাদ্যের খরচ কমাতে ফডার ক্রুপের গুরুত্ব অপরিসীম।
১১. কোন ধরনের খাবারকে তুমি গবাদিপশুর সুষম খাবার বলবে?
উত্তর: যেসকল খাবারে গবাদিপশুর জন্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ যেমন— আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ উপযুক্ত পরিমাণে ও অনুপাতে বিদ্যমান থাকে সেগুলোকেই আমি গবাদিপশুর সুষম খাদ্য বলব। বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশ্রিত করে সুষম খাদ্য তৈরি করা হয়। সুষম খাদ্য সুস্বাদু ও সহজপাচ্য হয় যা পশুকে শক্তি ও কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করে, শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে এবং রোগমুক্ত রাখে।
১২. ছাগলকে গরিবের গাভি বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে আত্মকর্মসংস্থানের একটি সহজ উপায় হলো ছাগল পালন। ছাগল অল্প খরচে পালন করা যায়। এদের খাদ্য কম লাগে, রোগব্যাধি কম হয় এবং বাসস্থানের জন্যও বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। দুস্থ মহিলা এবং ভূমিহীন প্রান্তিক চাষিরা যাদের গাভি কেনার ও পালনের সামর্থ্য নেই , তারা অল্প পুঁজিতে ছাগল কিনে অধিক লাভবান হতে পারেন। এ কারণে ছাগলকে গরিবের গাভি বলা হয়।
১৩. ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ব্ল্যাক বেঙ্গল বাংলাদেশের নিজস্ব ছাগলের জাত। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দুধে চর্বির কণা খুবই ক্ষুদ্র হওয়ায় সহজেই হজম হয় যা শিশু ও দুর্বল ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপযোগী। এ ছাগলের মাংসের আঁশ খুব সূক্ষ্ম হওয়ায় ও মাংসে চর্বি পাতলাভাবে সন্নিবেশিত থাকায় মাংস বেশ কোমল ও সুস্বাদু হয়। এদের চামড়া হয় নরম, পুরু ও উন্নতমানের। এ জাতের ছাগলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো , এরা প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে এবং বেশ কষ্টসহিষ্ণু হয়। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তুলনামূলকভাবে বেশি। এজন্য ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল অধিক হারে পালন করা হয়।
১৪. বাবোসিয়াসিস বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বাবোসিয়াসিস হলো বাবোসিয়া নামক এক প্রকার প্রোটোজোয়া আঠালির মাধ্যমে ছড়ানো ছাগলের সংক্রামক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ছাগলের লোহিত রক্ত কণিকা ধ্বংস হয়। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায়, ফলে প্রস্রাব লাল এবং গাঢ় কালচে রঙের হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, আক্রান্ত ছাগলকে সময়মতো চিকিৎসা না করালে অধিকাংশ ছাগলই মারা যায়।
চতুর্থ অধ্যায়: পশু পালন
১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বন কী ভূমিকা রাখে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বন হলো লতা, গুল্ম ও ছোট - বড় গাছপালায় আচ্ছাদিত আদি , ব্যাপক ও নিরবচ্ছিন্ন এলাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন বায়ুপ্রবাহের গতিরোধ করে বিপর্যয় কমায়। বন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ কমায়। আবার এ বন ঝড়ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাসজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিগত দশকে সিডর, আইলাসহ অনেক দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে চরম ক্ষয়ক্ষতি হতে সুরক্ষা দিয়েছে।
২. উপকূলীয় বনের অধিকাংশ প্রজাতির শ্বাসমূল থাকে কেন?
উত্তর: যে সকল বন প্রতিনিয়ত সামুদ্রিক জোয়ারের লোনাপানিতে প্লাবিত হয় তাকে উপকূলীয় বন বলে। জোয়ারের সময় উপকূলীয় বনের উদ্ভিদসমূহের মূলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। তাই অধিকাংশ প্রজাতির উদ্ভিদ যেমন— সুন্দরি, কেওড়া, গরান ইত্যাদি রূপান্তরিত শ্বাসমূল সৃষ্টি করে যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাসকার্য চালায়।
৩. সামাজিক বনায়ন কাকে বলে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দেশের প্রাকৃতিক বন ব্যতিরেকে বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনসাধারণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে বসতবাড়িতে, রেললাইনের পাশে, পতিত জমিতে, রাস্তা, বাঁধ, খাস ও প্রাতিষ্ঠানিক জমিতে স্বল্প পরিসরে সারাদেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ করাকে সামাজিক বনায়ন বলে। সামাজিক বনায়নে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে ও সকলে সমান উপকারভোগী হয়। এ ধরনের বন ব্যক্তিগত বা যৌথ মালিকানাধীন দু'ধরনেরই হতে পারে।
৪. চারা পাতলাকরণ বা থ্রিনিং বলতে কী বোঝ?
উত্তর: চারাগাছ রোপণের ৪-৫ বছর পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ঠিক রাখার জন্য কিছু গাছ কমিয়ে বা সরিয়ে ফেলে গাছের ঘনত্ব কমানো হয়। এই প্রক্রিয়াকে থিনিং বা চারা পাতলাকরণ বলা হয়। চারা পাতলাকরণ করার ফলে বাগানে পর্যাপ্ত আলো - বাতাসের সরবরাহ নিশ্চিত হয় যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর ফলে বাগান থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত, বাগানের অবস্থা বুঝে ৫ বছর পরপর থিনিং করা হয়।
৫ . সড়ক বন বা বাঁধ বনকে সামাজিক বন বলা হয় কেন?
উত্তর: সামাজিক বনায়ন হলো বিশেষ ধরনের বনায়ন কার্যক্রম, যা সরকার ও দরিদ্র জনগণের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় । সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জ্ঞান ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে আর জনগণ মেধা ও শ্রম ব্যবহার করে বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য হলো সরকারি বনাঞ্চলের বাইরে প্রান্তিক ও পতিত জমিতে বনায়নের মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি বনজ সম্পদ বৃদ্ধি, দরিদ্র ও কর্মহীন জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানো। সড়ক ও বাঁধে বনায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন বনজ সম্পদ বৃদ্ধি ও ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার হয়, তেমনি অন্যদিকে বনায়নের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নত হয়। তাই সড়ক বন বা বাঁধ বনকে সামাজিক বন বলে।
৬. গাছের গোড়ায় জাবড়া প্রয়োগ করা হয় কেন?
উত্তর: চারা গাছের গোড়া ঠাণ্ডা রাখতে এবং মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য জাবড়া প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত জাবড়া হিসেবে খড়কুটা , কচুরিপানা , শুকনা আগাছা ব্যবহার করা হয়। জাবড়া প্রয়োগের আরেকটি সুবিধা হলো এটি প্রয়োগের ফলে চারাগাছে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার সরবরাহ করার দরকার হয় না। তাছাড়া জাবড়া প্রয়োগ আগাছা দমনেও সাহায্য করে।
৭. বৃদ্ধে প্রুনিং করতে হয় কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃক্ষের শাখা প্রশাখা, মূল, পাতা, ফুল - ফল ইত্যাদির অপ্রয়োজনীয় অংশ ছাঁটাই করাকে প্রুনিং বলে। প্রুনিংয়ের ফলে বৃক্ষের আকার ও আকৃতি ঠিক থাকে, রোগ - বালাই দ্বারা আক্রান্ত শাখা - প্রশাখা ছেঁটে দেয়ার ফলে রোগ ও পোকার আক্রমণ হয় না। ফুল ও ফলের গুনগতমান উন্নত হয়, ঝড় তুফানে গাছের ক্ষতি হয় না। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একই শাখায় ঘন করে ফল ও ফুল ধরলে ছোট ফল ও ফুল ছাঁটাই করে দিলে অন্য ফল ও ফুল বড় হয়। অধিকাংশ ফল গাছে ফল ধরার পর কুশি ছাটাই করলে নতুন কুশি গজায়, নতুন কুশি থেকে নতুন মুকুল ধরে। এসকল কারণে বৃক্ষে প্রুনিং করতে হয় ।
৮. প্রান্ত সকল প্রুনিং ট্রেনিং নয় কেন?
উত্তর: ট্রেনিং ও প্রুনিং উভয় ক্ষেত্রেই গাছের অংশবিশেষ ছাঁটাই করা হয়। গাছকে নির্দিষ্ট উচ্চতা, আকার - আকৃতি , সুন্দর সুগঠিত ও শক্ত কাঠামো দেওয়ার জন্য ট্রেনিং করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু গাছের শাখা - প্রশাখা ছাঁটাই করা হয়। এতে ব্যবহারযোগ্য কাঠের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে প্রুনিং - এ গাছের শাখা, পাতা, কাণ্ড, ফুল, ফল - মূল ইত্যাদি কেটে অপসারণ করা হয়। প্রুনিং গাছের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে ফুল ও ফল ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় , রোগ ও পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং গাছে বেশি আলো - বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করে। তাই বলা যায় , সকল ট্রেনিং হলো প্রুনিং কিন্তু সকল প্রুনিং ট্রেনিং নয়।
৯. বাওয়ার পদ্ধতিতে কীভাবে গাছের ট্রেনিং করা হয়?
উত্তর: লতা জাতীয় ফল গাছকে বাওয়ার পদ্ধতিতে ট্রেনিং করা হয়। বাওয়ার পদ্ধতিতে গাছের ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে সারিতে লাগানো গাছের উপরে প্রশস্ত মাচা তৈরি করা হয় এবং লতানো গাছকে এ মাচার উপর বাড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রতি বছর শাখাগুলোকে করে কেটে দেওয়া হয় যাতে প্রতি শাখায় ২ টি থেকে ৩ টি কুঁড়ি থাকে। পরবর্তী বছরে ঐসব কুঁড়ি থেকে নতুন শাখা বের হয়।
১০. ক্ষতস্থান ড্রেসিং বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বৃক্ষের ক্ষতস্থানকে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষার পদ্ধতিকে ক্ষতস্থান ড্রেসিং বলে। ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড় ইত্যাদি গাছের কাণ্ড বা ডালে সৃষ্ট ক্ষতের মধ্যে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে। এসব রোগের কারণে গাছের আক্রান্ত অংশে ক্যাংকার (Canker) সৃষ্টি হয় । কখনোবা সেখানে পচন ধরে যায়। এ ক্ষতস্থান প্রথমে পরিষ্কার করে তারপর রোগ প্রতিরোধী পদার্থের প্রলেপ (যেমন- আলকাতরা, বিটুমিন জাতীয় গাঢ় রঙ, বোর্দো মিশ্রণ ইত্যাদি) দেওয়া হয় । গ্রামগঞ্জের মানুষ বৃক্ষের ক্ষতস্থান এঁটেল মাটি ও গোবরের মিশ্রণ দ্বারা লেপে দেয় । এরপর স্থানটি পলিথিন দিয়ে বেঁধে দেয় । এভাবে ড্রেসিং এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যে ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়।