খাদ্যে ভেজাল || What is Food Adulteration?
খাদ্যে ভেজালের ধারণা
মানুষের জীবনধারণের জন্য খাদ্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। মায়ের গর্ভে যখন একটি শিশুর জন্মের প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন থেকে পরবর্তীকালে বেড়ে ওঠা এবং মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জন্য খাবার প্রয়োজন। সৃষ্টির আদিকাল থেকে চলছে মানুষের খাবারের পেছনে অবিরাম ছুটে চলা। শুধু বেঁচে থাকার নিমিত্তেই নয় আমাদের দেহ ও মনের সর্বাঙ্গীন সুষ্ঠু বিকাশ নির্ভর করে খাদ্যের ওপর। যে খাদ্য মানুষের শক্তির উৎস এবং বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার প্রধান উপাদান তাতে ভেজাল মেশালেই আবার তা বিষে পরিণত হয়। খাদ্যের মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান মেশানোকে খাদ্যে ভেজাল হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের নাগরিকরা খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ তারাই খাদ্যে ভেজালের মুখোমুখি হন সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে 'বিশুদ্ধ খাদ্য আইন' নামে একটি আইন রয়েছে। সে আইনানুযায়ী 'খাদ্য' বলতে বোঝায় যেকোনো ধরনের ভোজ্য তেল, মাছ, মাংস, ফল অথবা সবজি বা এমন কিছু যা খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। খাবার পানীয়কেও এখানে খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইনে খাদ্যে ভেজাল বলতে বোঝানো হয়েছে, যদি এর মান কমানোর জন্য কোনো উপাদান এতে যোগ করা হয়। এছাড়াও যে উপাদান ব্যবহার করার কথা তার পরিবর্তে অন্য কোনো উপাদান ব্যবহার করলে কিংবা ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা রং মেশানো হলেও ভেজাল দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। সাধারণত খাদ্যে ভেজাল বিষয়টি দুই ভাবে সম্পন্ন হয়। যথা—
১. অসাবধানতাবশত বা অনিচ্ছাকৃত: এটি সাধারণত জ্ঞান ও দায়িত্ব সচেতনতার অভাবে হয়ে থাকে। অসাবধানতাবশত ভেজাল এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো- ফসলে পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে বেহিসাবি বা অসচেতনভাবে কীটনাশক ব্যবহার করা। এতে অনেক সময় উৎপাদিত ফসল ভেজালযুক্ত হয়ে যেতে পারে।
২. ইচ্ছাকৃত: অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাদ্যের সাথে নিম্নমানের খাবার বা খাদ্য নয় এমন বস্তু মেশানো হয়। ইচ্ছাকৃত ভেজালটি সবচেয়ে ক্ষতিকর। অধিক মুনাফার প্রতিযোগিতায় অনেক সময় এমন সব রাসায়নিক দ্রব্যাদি খাদ্যে মেশানো হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
খাদ্যে ভেজালের কারণ
খাদ্যের স্বাদ বা ফ্লেভার বাড়াতে বা খাদ্যকে দৃষ্টিনন্দন করতে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। তাছাড়া গুণগত মানের দিক দিয়ে অনেক খাদ্য খারাপ হলেও তাকে খাবারযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতেও খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। আর এ সবের পেছনেই রয়েছে অধিক মুনাফা লাভের লিপ্সা।
আমাদের দেশে সাধারণত খাদ্যের পচন ঠেকাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য বেশি প্রয়োগ করা হয়, তাছাড়া ফলমূল তাড়াতাড়ি পাকাতেও ক্ষতিকর দ্রব্যের ব্যবহার হয়। তবে সবকিছুর মূল কথা হলো কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী করার প্রধান উপায় হল খাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ। সাধারণ ক্রেতা যেমন পণ্যের মান সম্পর্কে সচেতন হওয়াকে গুরুত্ব দেয় না তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও এ ব্যাপারে মনোযোগী নয়। এ দুর্বলতাও ব্যবসায়ীদেরকে খাদ্যে ভেজাল মেশাতে উৎসাহিত করে।
রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা একচেটিয়া মুনাফা করে যাচ্ছেন, যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ওপর, যারা সৎ উপায়ে ব্যবসায় চেষ্টা করছেন। দ্রুত পাকানো আর পচন রোধের ওষুধ দেওয়া খাবারের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তারা হয় বিরাট লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন অথবা সময়ের স্রোতে ভেসে নিজেরাও ভেজালের কারবারে যুক্ত হচ্ছেন।
খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অনেক ক্রেতা ও বিক্রেতার তেমন কোনো ধারণা নেই।
অজ্ঞানতা ও অশিক্ষার ফলেই দিন দিন খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাদ্যের ফ্লেভার বাড়াতে বা এর দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে যে সব ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তা অসাধু খাদ্যব্যবসায়ীরা খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা এবং এগুলোর ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে খাদ্যদ্রব্যে খুব সহজেই বিষ মিশ্রিত হয়ে যাচ্ছে। শিল্প গ্রেড ক্যালসিয়াম কার্বাইডে বিষাক্ত আর্সেনিক ও ফসফরাস রয়েছে যা সুস্থ ফলকে বিষময় ফলে রূপান্তর করে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিতে কীটনাশক পরিমাণমতো ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও মাঠে কী হচ্ছে, তা যথাযথভাবে নজরদারী করা হচ্ছে না। কৃষকদের সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত কীটনাশক যেমন ব্যবহার করা হয়, তেমনি কীটনাশক ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় পর শস্য বা ফল বাজারে নেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় না। এর পেছনেও কাজ করে অর্থলিপ্সা। গুণগত মানের চেয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধির চিন্তা ও প্রচেষ্টা প্রাধান্য পায়।
জনস্বাস্থ্যের ওপর খাদ্যে ভেজালের প্রভাব
আমাদের সুস্থতা এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্য প্রয়োজন। সে খাদ্য হতে হবে অবশ্যই পুষ্টিকর ও ভেজালমুক্ত। কিন্তু বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য খেয়ে আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খাদ্যে ভেজালের রয়েছে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ভয়ঙ্কর প্রভাব। গর্ভবতী মা ও শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন রোগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিষাক্ত কেমিক্যাল শরীরে স্থায়ী স্ট্রেসের সৃষ্টি করে। কেমিক্যালযুক্ত খাদ্যের দরুণ নষ্ট হচ্ছে আমাদের শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ যেমন- লিভার, কিডনি, হূৎপিণ্ড, ফুসফুস, চোখ, কান ইত্যাদি।
মানুষ প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে লিভার ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, ব্ল্যাড ক্যান্সার, কিডনি ফেইলিউর, হৃদরোগ, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি রোগে। খাদ্যে অরুচি, ক্ষুধামন্দা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, পাকস্থলী - অন্ত্রনালির প্রদাহ ইত্যাদি এখন নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। বন্ধ্যাত্ব, হাবাগোবা বা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়া, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যার জন্য ভেজাল খাবার একটি অন্যতম কারণ।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪৫ লক্ষ লোক খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশের ২১,৮৬০ টি খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষায় পঞ্চাশ শতাংশ পণ্যে ভেজাল পাওয়া গেছে। বর্তমানে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ভেজাল খাদ্য খেয়ে অসুস্থ হওয়া জটিল রোগের চিকিৎসায় দেশের বাইরে চিকিৎসার ফলে প্রচুর অর্থ খরচের কারণে সংশ্লিষ্ট পরিবার হুমকির মধ্যে পড়ছে। মারাত্মক এসব রোগের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা করেও লাভ হয় না। অকারণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে চিকিৎসার প্রয়োজনে। কাজেই জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাপক চাপ বাড়ছে অর্থনীতির ওপর।
খাদ্য ভেজালের আইনগত প্রতিকার
খাদ্যে ভেজাল ঠেকানোর জন্য এবং সাধারন মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে প্রথমত প্রয়োজন যথাযথ আইনের প্রয়োগ। আইন প্রয়োগ এবং অপরাধীদের শাস্তি বিধানের মাধ্যমে এ অপরাধ প্রশমিত করা যায়। নিরাপদ খাবার তৈরি, এবং সাধারণ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য বৃষ্টি কমাতে আইনের বিপণন ও বিক্রি এবং জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশে বেশ ক'টি আইন রয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন -১৯৫৬ , বিএসটিআই (সংশোধিত) আইন -২০০৩, বিশুদ্ধ বাদ্য (সংশোধিত) আইন -২০০৫, মোবাইল কোর্ট অভিনেন্স- ২০০৯, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন -২০০৯।
বাংলাদেশ বিশৃদ্ধ খাদ্য (সংশোধিত) আইন- ২০০৫ - এ মানব - স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য যেমন ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, কীটনাশক (ডিডিটি, পিসিবি তেল) বা বিষাক্ত রং ধান্যে ব্যবহার এবং ক্ষতিকর বিষার রাসায়নিক দ্রব্য যেমন— ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, কীটনাশক (ডিডিটি), পিসিবি তেল বা বিষাক্ত রং মেশানো খাদ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪২ ধারা অনুযায়ী, মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য, কোনো খাদ্য পণ্যের সাথে মিশ্রণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি উক্তরূপ দ্রব্য কোনো খাদ্য পণ্যের সাথে মিশ্রিত করলে তিনি অনুর্ধ্ব তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩: বর্তমান বাংলাদেশ সরকার খাদ্যে ভেজাল রোধে 'নিরাপদ খাদ্য আইন- ২০১৩' জাতীয় সংসদে ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর পাস করে। ১৯৫৯ সালের পিওর ফুড অধ্যাদেশ ' রহিত করে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ' নামে একটি সংস্থা গঠন করার বিধান রয়েছে। এ আইনে অপরাধভেদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া সর্বনিম্ন হয় মাসের কারাদণ্ড কিংবা ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড বা ৪ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ভেজাল, নিম্নমান, মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য বা উপকরণ বিক্রির উদ্দেশ্যে উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়া রোগাক্রান্ত ও পচা মাছ, রোগাক্রান্ত ও মৃত পশু - পাখির মাংস , নষ্ট ডিম বা দুধ দ্বারা কোনো খাদ্যদ্রব্য কিংবা খাদ্যোপকরণ প্রস্তুত , সংরক্ষণ বা বিক্রিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইনে অ - আমলযোগ্য অপরাধ করলে তা সংশোধনে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হবে। এ নির্দেশ পালনে কোনো ব্যক্তি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা আরোপের বিধান রাখা হয়েছে। তবে আমলযোগ্য অপরাধ হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপযুক্ত আদালতে মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন।
বিধিমালা অনুযায়ী ভেজাল খাদ্য জব্দ করবেন পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কর্মকর্তা আর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে পরিদর্শক নিয়োগ ও দায়িত্ব প্রদানের এখতিয়ার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের।
খাদ্যে ভেজালের প্রতিকার হিসেবে আর যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা হলো-
১. নিরাপদ খাদ্য আইনের আওতায় গঠিত কর্তৃপক্ষের সাথে ভেজালবিরোধী বা খাদ্যে রাসায়নিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনাকারী অন্য সরকারি সংস্থা ও পরীক্ষাগারের কাজের সমন্বয় ঘটাতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআই ' (Bangladesh Standards and Testing Institution) - এর জনবল বৃদ্ধি এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে।
২. খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মেশানোর সাথে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়। এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট , ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
৩. নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং বিদ্যমান আইনসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
৪. জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজালরোধে কোনো রকম বৈষম্য বা রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৫. পণ্য আমদানি পর্যায়ে এনবিআর ( National Board of Revenue ) কর্তৃক ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি পরীক্ষা করা । এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
৬. গণমাধ্যমে প্রচার - প্রচারণার মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ফরমালিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি অপপ্রয়োগের বিষয়ে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের দিকগুলো তুলে ধরা।
৭. খাদ্যের বিষমুক্ততা নিশ্চিত হয়ে গণমাধ্যমে খাদ্য সামগ্রীর বিজ্ঞাপন প্রচার করার অনুমতি দেওয়া।
৮. বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) সহায়তায় সরকারিভাবে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে খাদ্যে রাসায়নিকের পরিমাণ চিহ্নিত করার জন্য স্থাপিত পরীক্ষাগারটির জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগপূর্বক তা চালু করা।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সচেতনতা, সাবধানতা এবং ব্যবসায়ী, কর্মচারীদের সততার কোনো বিকল্প নাই। তাই প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া দেশের স্বার্থে খাদ্যে ভেজাল আর ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ বিষয়ে সচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত তথ্যভিত্তিক প্রচারণা চালাতে পারে। সমাজের সকল স্তর থেকে সচেতনতার পাশাপাশি প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য পুষ্টিকর ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, কর্মঠ ও দক্ষ জাতি গঠন সম্ভব হবে।