কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস || Computer Viruses and Antivirus
কম্পিউটার ভাইরাস
কম্পিউটার ভাইরাস বিষয়ে আমরা অনেক কিছুই ইতোমধ্যে জেনে ফেলেছি। তবু আমাদের আইসিটি যন্ত্রের নিরাপত্তার কথাটি মাথার রেখে এ বিষয়ে আরও জানা প্রয়োজন। প্রাণীদেহে ভাইরাস আক্রমণের মতোই এ ভাইরাসগুলো আমাদের আইসিটি যন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে। VIRUS শব্দের পূর্ণরূপ হলো Vital Information Resources Under Siege যার অর্থ দাঁড়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ দখলে নেওয়া বা ক্ষতি সাধন করা।
১৯৮০ সালে এ নামকরণ করেছেন প্রখ্যাত গবেষক ' University of New Haven'- এর অধ্যাপক ফ্রেড কোহেন (Fred Cohen)। ভাইরাস হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যা তথ্য ও উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং যার নিজের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষমতা রয়েছে। ভাইরাস কম্পিউটারে প্রবেশ করলে সাধারণত সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে ও বিভিন্ন তথ্য - উপাত্তকে আক্রমণ করে এবং এক পর্যায়ে গোটা কম্পিউটার বা আইসিটি বলকে সঙ্কুমিত করে অচল করে দেয়। যেমন- বুট ভাইরাস ডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রমণ করে। অতি পরিচিত কিছু ভাইরাস হলো স্টোন (Stone), ভিয়েনা (Vienna), সিআইএইচ (CTH), ফোল্ডার (Folder), Trojan Horse ইত্যাদি।
কোনোভাবে কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে সংক্রমিত হলে তা ক্রমে ক্রমে বিস্তার ঘটে। সিডি, পেনড্রাইভ কিংবা অন্য যেকোনোভাবে ভাইরাসযুক্ত একটি ফাইল ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা কোনো আইসিটি যন্ত্রে চালালে ফাইলের সংক্রমিত ভাইরাস কম্পিউটার বা যন্ত্রটির মেমোরিতে অবস্থান নেয় । কাজ শেষ করে ফাইল বন্ধ করলেও সংক্রমিত ভাইরাসটি মেমোরিতে রয়েই যায়। ফলে ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এভাবে মেমোরিতে স্থান দখলকারী ভাইরাস পরবর্তীতে অন্যান্য প্রোগ্রাম এবং ফাইলকেও আক্রমণ করে। কোনো কোনো ভাইরাস তাৎক্ষণিকভাবে সকল প্রোগ্রাম ও ফাইলকে গ্রাস করে, আবার কোনো কোনো ভাইরাস শুধু নতুন প্রোগ্রাম ও ফাইলকেই আক্রান্ত করে। ফাইল ও প্রোগ্রামসমূহ গ্রাস করতে করতে ভাইরাস তার ইচ্ছামতো কম্পিউটারের অভ্যন্তরে সার্বিক ক্ষতিসাধন শুরু করে। এভাবে একটি ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ধীরে ধীরে ভাইরাসে সংক্রমিত হয় এবং উক্ত সংক্রমিত কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি , হার্ডডিস্ক , ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্যান্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।
কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্র ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহঃ
১. প্রোগ্রাম ও ফাইলে ঢুকতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে ;
২. মেমোরি কম দেখায়, গতি কমে গেছে ;
৩. কম্পিউটার চালু অবস্থায় কিছু অপ্রত্যাশিত বার্তা প্রদর্শিত হচ্ছে;
৪. নতুন প্রোগ্রাম ইনস্টল করতে বেশি সময় লাগছে;
৫. ফাইলগুলো বেশি জায়গা দখল করছে ;
৬. কাজ করতে করতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা রিস্টার্ট হচ্ছে;
৭. ফোল্ডারের ফাইলগুলোর নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে ইত্যাদি।
ভাইরাসের ক্ষতিকর দিকগুলো হলো:
১. কম্পিউটারে সংরক্ষিত ডাটা মুছে ফেলতে পারে ;
২. ডেটা বিকৃত বা Corrupt হয়ে যেতে পারে ;
৩. কম্পিউটারে কাজ করার সময় আচমকা অবাঞ্ছিত বার্তা প্রদর্শিত হতে পারে;
৪. কম্পিউটার মনিটরের ডিসপ্লেকে বিকৃত করতে পারে ;
৫. সিস্টেমের কাজ ধীরগতি সম্পন্ন হতে পারে , ইত্যাদি।
কম্পিউটার এন্টিভাইরাস
এন্টিভাইরাস আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কম্পিউটার বা আইসিটি যন্ত্রের ভাইরাসের প্রতিষেধক হলো এন্টিভাইরাস। সিস্টেম ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে এটি নির্মূল করতে হয়। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এন্টিভাইরাস ইউটিলিটি ব্যবহার করা হয়। এই ইউটিলিটিগুলো প্রথমে আক্রান্ত কম্পিউটারে ভাইরাসের চিহ্নের সাথে পরিচিত ভাইরাসের চিহ্নগুলোর মিলকরণ করে।
অতঃপর এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি তার পূর্বজ্ঞান ব্যবহার করে সংক্রমিত অবস্থান থেকে আসল প্রোগ্রামকে ঠিক করে। একটি ভালো এন্টিভাইরাস সাধারণভাবে প্রায় সব ধরনের ভাইরাস নির্মূল করতে পারে। নতুন ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এন্টিভাইরাস Update করলে এর শক্তি ও কার্যক্ষমতা প্রতিনিয়ত উন্নত হয় । ফলে নতুন নতুন ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে । বর্তমানে অনেক এন্টিভাইরাস রয়েছে যেগুলো ভাইরাস চিহ্নিত করে , নির্মূল করে এবং প্রতিহত করে। আজকাল প্রায় প্রত্যেক অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার দেওয়া থাকে। এছাড়াও এখনকার এন্টিভাইরাসগুলো ভাইরাস আক্রমণ করার পূর্বেই তা ধ্বংস করে অথবা ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে। ফলে এগুলো পূর্বের এন্টিভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এখানে একটি কথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার সবসময় হালনাগাদ ( Update ) রাখতে হবে।
ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আজকাল বিনামূল্যে ইন্টারনেট থেকে এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করে অনেকাংশ নিশ্চিত হওয়া যায়।
উল্লেখযোগ্য কিছু এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের নাম হলো-
১. এভিজি এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (www.avg.com)
২. এভিরা এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (www.avira.com)
৩. এভাস্ট এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার (www.avast.com)
কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত রাখতে আমরা নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারি:
১. অন্য যন্ত্রে ব্যবহৃত সিডি , পেনড্রাইভ , মেমোরি কার্ড ইত্যাদি নিজের যন্ত্রে ব্যবহারের পূর্বে ভাইরাস মুক্ত করে নেয়া। (এন্টি ভাইরাস দ্বারা স্ক্যান করে নেওয়া )
২. অন্য কম্পিউটার থেকে কপিকৃত সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে আনার আগে সফ্টওয়্যারটিকে ভাইরাস মুক্ত করা।
৩. ইন্টারনেট থেকে কোনো সফ্টওয়্যার নিজের কম্পিউটারে ডাউনলোড করে ইনস্টল করার সময়ে সতর্ক থাকা। কারণ , ডাউনলোডকৃত সফ্টওয়্যারে ভাইরাস থাকলে তা থেকে তোমার কম্পিউটারটিও ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারে।
৪. অন্যান্য কম্পিউটারে বা যন্ত্রে ব্যবহৃত সফ্টওয়্যার কপি করে ব্যবহার না করা।
৫. কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে সতর্কতামূলক বার্তা প্রদর্শন করার জন্য এন্টিভাইরাস সফ্টওয়্যারটিকে হালনাগাদ করে রাখা প্রয়োজন।
৬. প্রতিদিনের ব্যবহৃত তথ্য বা ফাইলসমূহ আলাদা কোনো ডিস্ক বা পেনড্রাইভে ব্যাকআপ রাখা , তবে এক্ষেত্রে ডিস্ক বা পেনড্রাইভটি অবশ্যই ভাইরাস মুক্ত হতে হবে।
৭. ই - মেইল আদান - প্রদানে সতর্কতা অবলম্বন করা। যেমন : সন্দেহজনক সোর্স থেকে আগত ই - মেইল open না করা। করলেও ভাইরাসমুক্ত করে তা খোলা উচিত।
৮. গেম ফাইল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ভাইরাস চেক করতে হবে।