সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা || Importance of Studying Sociology
সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কিত আলোচনা থেকে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই বোঝা যায়। সমাজবিজ্ঞান যেহেতু সমাজকাঠামো তথা ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভূমিকা ও কার্যাবলি সম্পর্কে পাঠ করে, সেহেতু সমাজবিজ্ঞান পাঠ করে যেকোনো কৌতূহলী পাঠক সমাজ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবে। এ কারণেই সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নে ইউরোপ, আমেরিকার পুঁজিবাদী শিল্প সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে যেমন জ্ঞান অর্জিত হয় তেমনি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করা যায়।
নিচে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হলো-
সমাজ সম্পর্কে জানতে: সমাজ ছাড়া মানুষ বসবাস করতে পারে না।
প্রখ্যাত আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী এফ. এইচ. গিডিংস (Giddings) বলেন, "মানুষ পরস্পরের সাথে যৌথভাবে মিলেমিশে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যদি ঐক্যবদ্ধ হয় বা কোনো সংগঠন গড়ে তোলে তবে তাকে সমাজ বলে।"
এ সমাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।
সম্প্রদায় সম্পর্কে জানতে: সম্প্রদায় হচ্ছে রীতিনীতি, আচার - ব্যবহার, ধর্ম, ভাষা ও অন্যান্য সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ একই এলাকায় বসবাসকারী জনসমষ্টি। যেমন— মুসলিম সম্প্রদায় , হিন্দু সম্প্রদায় , বাঙালি সম্প্রদায় ইত্যাদি। যদিও বাংলাদেশে সম্প্রদায়ের সাথে ধর্মীয়বোধ যুক্ত তবে তা সমাজবিজ্ঞানসম্মত নয়। সমাজবিজ্ঞানীরা সামাজিক ব্যাখ্যায় সম্প্রদায়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। সমাজবিজ্ঞান পাঠের ফলে সম্প্রদায় সম্পর্কে গভীরভাবে জানা যায়।
সংঘ সম্পর্কে জানতে: সুনির্দিষ্ট এক বা একাধিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে যখন কিছু সংখ্যক মানুষ সমষ্টিবদ্ধ হয় তখন তাকে সংঘ বা সমিতি বলে। যেমন— ফুটবল টিম, ক্রিকেট দল, রাজনৈতিক দল, শিক্ষক সমিতি ইত্যাদি। সামাজিক মানুষ সমাজে সংঘ বা সমিতির মাধ্যমে নানা উদ্দেশ্য সাধন করে। যেমন- ফুটবল খেলোয়াড়গণ ক্লাবের সদস্যভুক্ত হয়ে তাদের খেলাধুলার উদ্দেশ্য সাধন করে। এ সংঘ বা সমিতির বিস্তারিত আলোচনা একমাত্র সমাজবিজ্ঞানেই হয়ে থাকে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে: প্রতিষ্ঠান হলো ব্যক্তির আচরণের প্রতিষ্ঠিত রূপ বা ধরন। সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি যখন পালন করা অলঙ্ঘনীয় ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন তাকে প্রতিষ্ঠান বলে। বস্তুত সমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী গিডিংস ( Giddings ) বলেন, "মানবসমাজের যা কিছু মহৎ ও কল্যাণকর সে সবই সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক যুগ হতে অন্য যুগে বর্তায়।"
সমাজকাঠামো সম্পর্কে জানতে: সমাজকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রয়োজনে গড়ে উঠেছে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আর এ প্রতিষ্ঠানের দ্বারা গড়ে উঠেছে সুষ্ঠু মানব প্রক্রিয়া, যাকে সমাজ বলা হয়। সমাজের এসব প্রতিষ্ঠানকে একত্রে সমাজকাঠামো বলে। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেতে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।
সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে ধারণা পেতে: সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে যে উঁচু - নীচু ভেদাভেদ তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস। ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী টি.বি. বটোমোর (Bottomore) তাঁর Sociology গ্রন্থে বলেন, 'কোনো সমাজই শ্রেণিহীন বা স্তরবিন্যাস ব্যতীত নেই। এ প্রসঙ্গে স্কটিশ সমাজবিজ্ঞানী জন মিলার ( John Millar ) বলেন, “শ্রেণি , পদমর্যাদা , সামাজিক উঁচু - নীচু ভেদাভেদ সর্বজনীন। আবার এটা বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় বিভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল। এ সম্পর্কে বিশদভাবে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত জরুরি।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে: সমাজকে সুসংঘবদ্ধ ও সুশৃঙ্খলভাবে টিকিয়ে রাখতে কতকগুলো রীতিনীতি এবং আচার - অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজস্থ মানুষের কার্যকলাপকে পরিচালনা করতে হয়। যখন ব্যক্তি বা সমষ্টির আচার আচরণের ওপর সমাজের এরূপ চাপ আরোপিত হয় তখন তাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে। এ সম্পর্কে জানার জন্য সমাজ গবেষক ও শিক্ষার্থীসহ সকলকে সমাজবিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়।
সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানতে: বিজ্ঞানের উন্নতি আর উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানব সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব সমস্যার স্বরূপ এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা একান্ত প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞানীরা এসব সমস্যার কারণ ও প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন, যা সমস্যাগুলো সমাধানের পথ উন্মোচন করে দেয়।
সামাজিক পরিবর্তনের গতি - প্রকৃতি জানতে: মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর সমাজব্যবস্থা, রীতিনীতি ও চিন্তাধারা পরিবর্তিত হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক জীবনধারা পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক আচারবিধি, রীতিনীতি ও চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অর্জন আবশ্যক।
সামাজিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে: সামাজিক ইতিহাস হলো একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের অতীতের নির্দিষ্ট সময়ের সমাজব্যবস্থার পূর্ণ বিবরণ। ভবিষ্যতে সমাজকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হলে অতীতের মানব গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা , আইন কানুন, রীতি - নীতি জানা দরকার। এক্ষেত্রে সামাজিক ইতিহাসের জ্ঞান প্রয়োজন।
উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দিতে: বর্তমানে যেসব উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার সাথে যদি সামাজিক জ্ঞান না থাকে তবে তার বাস্তব রূপ দেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ নতুন পরিকল্পনার সাথে সাথে সমাজব্যবস্থায় যে নতুন মূল্যবোধের সৃষ্টি হবে তার সাথে পুরোনো মূল্যবোধের বিরোধ বাধার সম্ভাবনা থাকবে । এ সমস্যা দূর করার জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান একান্ত প্রয়োজন।
সামাজিক নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে: সমাজব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা আবশ্যক। সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি না থাকলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এ বিশৃঙ্খলা রোধ করার জন্য সামাজিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। কার্যত সমাজের মৌল নীতি নির্ধারিত হওয়ার পর তা বাস্তবায়নের উপযুক্ত পদ্ধতির সন্ধান সমাজবিজ্ঞানের ধারণার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়।
পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে: মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক ও দ্বন্দ্বমূলক। কিন্তু একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন আদর্শ সমাজ গড়ার জন্য সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক সহযোগিতামূলক হওয়া প্রয়োজন। সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথ নির্দেশ করে।
বেহেনচোদ এতো এড দেখায় কেউ?