সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব || Purpose and Importance of social forestry
সামাজিক বনায়ন
বিশ্বের যেকোনো দেশে অভ্যন্তরীণ কাঠ, জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য মোট জমির অন্তত ২৫% বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে বন ও বৃদ্ধাচ্ছাদনের পরিমাণ প্রায় ৩৩ লক্ষ হেক্টর যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ২২.৩৭ % [তথ্যসূত্র: বন অধিদপ্তর, ২০১৯-২০)। এই প্রাকৃতিক বনের মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি বন, জলাভূমির বন , শালবন ও সুন্দরবন ( ম্যানগ্রোভ)। এর বাইরে সারা দেশে বিস্তৃত রয়েছে সামাজিক বনায়ন।
সামাজিক বনের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি বন, বসত বন, সড়ক বাঁধ - বন ইত্যাদিসহ কৃষিবন ও বহুমুখী বন , যা মূলত এগ্রোফরেস্ট্রি (Agro forestry) নামে জনপ্রিয়।
সুন্দরবন বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। এরপরও এখানে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে বলা যায় দেশের কাঠ, জ্বালানি, পাল্পউডসহ যে চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় জোগান অপ্রতুল এবং ক্রমহ্রাসমান। এমতাবস্থায় সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করতে হবে।
"জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি (FAO) সংস্থার মতে, সামাজিক বনায়ন হলো এমন বন ব্যবস্থাপনা বা কর্মকাণ্ড যার সাথে পল্লির দরিদ্র জনগোষ্ঠী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে উপকারভোগী জনগণ জ্বালানি , খাদ্য , পশুখাদ্য ও জীবিক নির্বাহের সুযোগ পেয়ে থাকে।”
সামাজিক বনের প্রকারভেদ
সামাজিক বন বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যথা
১. বসতবন: বসতবাড়ির আশেপাশে রেইনট্রি, আম, নারিকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে বসভবন তৈরি করা হয়।
২. কৃষিবন: ফসলের মাঠে ও তার আশেপাশে কড়ই, বাবলা, ডাল ফসল, খেজুর ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে কৃষিবন তৈরি করা হয়।
৩. প্রাতিষ্ঠানিক বন: সোনালু , কৃষ্ণুচূড়া, বোতল ব্রাশ ইত্যাদি বৃক্ষ অফিস - আদালত, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে লাগানো হয়।
১. বসতবন: বসতবাড়ির আশেপাশে রেইনট্রি, আম, নারিকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে বসভবন তৈরি করা হয়।
ক্ষেত্রভিত্তিক বনায়নে সামাজিক বনায়নের পরিধি বা বিস্তার
সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য
২. উডলট তৈরি।
৩ . জ্বালানি ও নির্মাণ কাঠের সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
৪. কুটির শিল্পের কাঁচামাল যোগান দেওয়া।
৫. জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৬. ভূমিক্ষয় রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
৭. চিত্তবিনোদনের স্থান সৃষ্টি করা।
৮. ভূমির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. ব্যক্তিগত পর্যায়ে নার্সারি স্থাপনের মাধ্যমে চারা উত্তোলন ও সরবরাহ করা।
১০. বনজ সম্পদ রক্ষায় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা।
১১. কৃষিতে জিডিপি বৃদ্ধি করা।
১২. সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন সাধন করা।
সামাজিক বনায়নের গুরুত্ব
১. সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে নিজেদের উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করেছে।
২. সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণসহ মহিলাদেরকে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কাজেই গ্রামীণ নারীর মধ্যে নেতৃত্ব সৃষ্টি ও ক্ষমতায়নে সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
৩. গ্রামীণ কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নার্সারি সৃজন ও পরিচালনা এবং চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
৪ . সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর 'কমিউনিটি ফরেস্টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে আজ সবুজের সমারোহ। এর ফলে উত্তরবঙ্গে জলবায়ু ও আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
৫. সামাজিক বনায়ন দেশের কাঠ ও জ্বালানি কাঠ, পশুখাদ্য, কুটির শিল্পের কাঁচামাল, ভেষজ দ্রব্য ইত্যাদি সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৬. প্রান্তিক ভূমি, যেমন— সড়ক, সংযোগ সড়ক, রেললাইন, চরাঞ্চল, বাঁধ এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পতিত ভূমিতে বনায়নের মাধ্যমে ভূমিহীন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব হচ্ছে।
৭. বনায়ন কর্মকাণ্ড বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই -অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রেখে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া রোধ করছে।
৮. বন ভূমিক্ষয় রোধ ও উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ কমায়।
৯. এছাড়া বৈচিত্র্যেময় গাছপালা মানুষের মনকে সতেজ রাখে। গবেষণাজনিত কাজেও সামাজিক বনায়নের ভূমিকা রয়েছে।
১০. সামাজিক বনায়ন চিত্তবিনোদনের স্থান সৃষ্টি করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।