স্মার্ট হোম || Smart home
স্মার্ট হোম কি?
মানুষ যেখানে বসবাস করে, সেটিই তার বাসস্থান। কিন্তু গতানুগতিক এই ধারণা অনেকটাই বদলে যেতে শুরু করেছে আধুনিক ইন্টারনেটের যুগে মানুষ এক দেশে বসেই অন্য দেশে ভার্চুয়ালি বিচরণ বা বসবাস করতে পারছেন চায়নায় বসে কেউ কানাডার কোনো আত্মীয়ের সাথে ভিডিও চ্যাটিং করছেন। উভয় প্রান্তের লোকগুলো একে অপরকে সামনা - সামনি দেখছেন। ঠিক যেন তিনি চায়নায় না বসে কানাডায় উক্ত আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন। সবাই হয়ে উঠছেন ইন্টারনেটের অধিবাসী বা নেটিজেন।
গ্লোবাল বিশ্বে মানুষ তৈরি করছে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক বাসস্থান বা স্মার্ট হোম। স্মার্ট হোম হলো এমন একটি বাসস্থান, যেখানে রিমোট কন্ট্রোলিং বা প্রোগ্রামিং ডিভাইসের সাহায্যে বাড়ির হিটিং সিস্টেম , কুলিং সিস্টেম , লাইটিং সিস্টেম, সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্ট হোমের পদ্ধতিকে হোম অটোমেশন সিস্টেম (Home Automation System) বলা হয়।
একটি স্মার্ট হোমে ব্যবহৃত বিভিন্ন ডিভাইস যেমন- টেলিভিশন , এসি , লাইটিং , ফ্যান , সিকিউরিটি ক্যামেরা ইত্যাদি পরিচালনার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির মোবাইল বা রিমোট কন্ট্রোলিং ডিভাইস ব্যবহার করে সেগুলোকে কোনো কেন্দ্রীয় অবস্থানে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পোন্নত দেশ যেমন - চীন , সিঙ্গাপুর , কোরিয়া ইত্যাদি দেশে গ্লোবাদ রেসিডেন্স বা বৈশ্বিক বাসস্থান তৈরি করা হচ্ছে।
স্মার্টহোমের সুবিধা
তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক আধুনিক বাসস্থান বা স্মার্ট হোমে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় , সেগুলো হলো-
১. ঘরে বসেই অফিসের কাজ, কনফারেন্স , ডেটা আদান - প্রদান কাজ করা যায় বিধায় সময় ও অর্থ খরচ কম হয়।
২. রিমোট কন্ট্রোল বা ভয়েস কমান্ডের সাহায্যে গাড়ির গ্যারেজ , ঘরের দরজা - জানালা খোলা বা বন্ধ করা , লাইট , ফ্যান , কম্পিউটার ও টেলিফোন চালু কিংবা বন্ধ করা যায়।
৩. বাইরে থাকাকালে কোনো মেহমান বাসায় আসলে সিকিউরিটি এলার্মের সাহায্যে মোবাইল ফোনে তা জানা যায়।
৪. কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবোটের সাহায্যে চা বানানো , কাপড় খোয়া , ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও ময়লা নিষ্কাশন করা সম্ভব হয় ।
৫. ঘরে বসেই টেলিমেডিসিনের সাহায্যে ডাক্তারের সাথে সাক্ষাৎ করে স্বাস্থ্য পরামর্শ নেয়া যায় ।
৬. ট্র্যাকিং ও সেন্সিং প্রযুক্তির সাহায্যে বরের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেমন- চাবি , মানিব্যাগ ইত্যাদি সহজে খুঁজে বের করা যায় ।
৭. টিভি , এসি , ওয়াশিং মেশিন , ওভেন , ফ্যান , লাইট ইত্যাদিকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিছানায় শুয়েই পরিচালনা করা যায় ।
৮. ঘরের কোথাও বিদ্যুৎ লাইন , গ্যাস লাইনের সমস্যা হলে কিংবা আগুন লাগলে ডিটেক্টর এলার্সের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেয় এবং মূল লাইনের সুইচ বন্ধ করে বিপদ থেকে রক্ষা করে।
স্মার্টহোমের অসুবিধা
১. হোম অটোমেশনে ব্যাপক আর্থিক বিনিয়োগ প্রয়োজন।
২. এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়।
৩. এটি ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করে।
৪. রিমোট কিংবা ভয়েল নিয়ন্ত্রিত ডিভাইস ব্যবহারে নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতে পারে।
৫. বাসায় কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলে স্মার্ট হোম তার জন্য সহায়ক হতে পারে।
স্মার্টহোম তৈরিতে প্রযুক্তি
স্মার্ট হোম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডিজাইন , যার জন্য জনপ্রিয় CAD (Computer Aided Design) সফটওয়্যারটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া অনলাইনেও কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনামূল্যে স্মার্টহোমের ডিজাইন তৈরি ও পরীক্ষা করা যায়। www.homestyler.com হলো স্মার্ট হোম তৈরিতে ব্যবহৃত এমন একটি ফ্রি অনলাইন সফটওয়্যার। বাসস্থানে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলো যেসব সফটওয়্যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় , তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- HomeSeer , Contron , Vera , Staples Connect , Iris , Savant , Smart Things , Wink, Nexta ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশেও বাসস্থান নির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে।