ই - লার্নিং কি? || What is E-Learning?
ই - লার্নিং
ইলেক্ট্রনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাই হচ্ছে ই - লার্নিং । প্রচলিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত না থেকেও শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার বা মোবাইল , ইন্টারনেট ও ই - মেইল , ভিডিও কনফারেন্সিং , ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্রভৃতি অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার পদ্ধতিকে ই লার্নিং বলে। ই - লার্নিং পদ্ধতিতে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে জানা বা শিক্ষা উপকরণের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। বর্তমানে পড়ালেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ই - লার্নিং পোর্টাল চালু হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। ই - লার্নিং সাধারণত অনলাইনে সুনির্দিষ্ট ডিগ্রি কোর্স বা প্রোগ্রাম শিক্ষায় বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের কোর্সসমূহ নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে অনলাইনে করার সুযোগ দেয়। ফলে ঘরে বসেই বিদেশের ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি অর্জন করা যায় । ই - লার্নিং - এর দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো-
১. ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড ,
২. ই - বুক।
ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড হলো ই - লার্নিং এর ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর একটি হোয়াইট বোর্ড। এখানে লিখিত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে প্রদর্শিত হয়ে থাকে। ই - বুক হলো প্রিন্টকৃত বইয়ের ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ভার্সন যেটি কমপিউটার, মোবাইল বা বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত কোনো বহনযোগ্য ডিভাইসে পাঠ করা যায়। অনেক দেশেই একসময় মূল্যবান পাঠ্যবইগুলো খুব দুর্লভ বিষয় থাকলেও ই - বুকের কারণে এখন সবাই পাঠ্যবইগুলো বিনামূল্যে বা স্বল্পমূলো পেতে পারে।
ই - বুক ( Ebook ) : ই - বুক এর পূর্ণাঙ্গ অর্থ হলো "ইলেকট্রনিক বুক" । প্রিন্টকৃত বইয়ের ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল ভার্সনকে ই - বুক বলা হয় , যা কম্পিউটার , মোবাইল বা বিশেষভাবে ডিজাইনকত কোনো বহনযোগ্য ডিভাইসে পাঠ করা যায়। ই - বুক টেক্সট , চিত্র , ভিডিও , এনিমেশন বা এর সবগুলো নিয়েই নিয়ে গঠিত হতে পারে। এটি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা যায় , যা বিভিন্ন ধরনের ই - রিভার দিয়ে পড়া যায়। প্রচলিত রিডারের মধ্যে অ্যামাজন ডটকমের কিন্ডল ( kindle ) সবচেয়ে জনপ্রিয়। ই - বুক বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ( যেমন- স্মার্টফোন , আইপ্যাড , আইফোন , উইন্ডোজ , ম্যাক কম্পিউটার , ডেফটপ ও ল্যাপটপ ) -এ যায় এছাড়া ই - বুক বিভিন্ন ব্রাউজারের প্লাগইনস দিয়েও পড়া যায়।
ই - বুক ব্যবহারের সুবিধা
১. ই - বুক ডাউনলোড করে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য পাওয়া সম্ভব।
২. ব্যবহারিকভাবে ই-বুক সংক্ষণের জন্য কোন লাইব্রেরি বা কক্ষের প্রয়োজন নেই। কম্পিউটার বা রিডিং ডিভাইসে ই - বুক সহজে সংরক্ষণ করা যায় ।
৩. ই - বুক সহজে যেখানে - সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়।
৪. ই - বুক সহজে তথ্য সার্চ করা যায়।
৫. ই - বুক ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় বলে কোন ধরনের শিপিং বা প্যাকিং খরচ নেই ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে E-learning
ই - লার্নিং - এর সুবিধা / ব্যবহার
১. ই - লার্নিং - এর জন্য শারীরিকভাবে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে শিক্ষা উপকরণগুলো ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য ডাউনলোড ও সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
২. একসাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা সম্ভব ।
৩. ই - লার্নিং সময় এবং খরচ কমিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
ই-লার্নিং এর অসুবিধা
১. ই - লার্নিং এর জন্য উন্নত ইন্টারনেট কাঠামো এবং উন্নত প্রযুক্তির ডিভাইস প্রয়োজন যা এখনও বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত নয়।
২. মানবীয় উপাদানের অনুপস্থিতির কারণে অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে না।
৩. ই - লার্নিং বিষয়ে এখনও জনসচেতনতার অভাব রয়েছে।
ওয়েব এক্স ( WebEx ): ওয়েবএক্স হলো জনপ্রিয় একটি অনলাইন মিটিং টুল যা ইউজারকে ভিডিও কনফারেন্সিং বা অনলাইন মিটিং হোস্ট করতে বা তাতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ প্রদান করে এবং অনলাইন মিটিং - এ স্ক্রিন শেয়ারিংসহ আরও নানান সুবিধা প্রদান করে। ডেস্কটপ কম্পিউটার , স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলয়েড ডিভাইসগুলোতে ওয়েবএক্স ব্যবহার করে অনলাইন মিটিং পরিচালনা বা এতে অংশগ্রহণ করা যায়। এর সাহায্যে সহস্রাধিক ইউজার একসাথে এমনভাবে ভার্চুয়াল মিটিং - এ অংশগ্রহণ করতে পারে , কেন তার একটি ক্লাসরুম বা কোম্পানির বোর্ডরুমে অবস্থান করছে।
ওয়েবাইনার ( Webinar ) : ওয়েবাইনার হলো একটি ওয়েববেসড সেমিনার , যেখানে কোনো প্রেজেন্টেশন , লেকচার কিংবা ওয়ার্কস ভিডিও কনফারেন্সিং টুল ব্যবহার করে অনলাইনে সঞ্চালন করা হয় । অনলাইন ওয়েবাইনার হলো একটি ভার্চুয়াল রুম , যেখানে আমরা সকলের কথা শুনতে পারি , কথা বলতে পারি এবং সকলকে দেখতে পারি। আমাদের দেশে ওয়েবাইনারের প্রচলন তেমন নেই , তবে উন্নতদেশে এটির ব্যবহার ব্যাপক।
গুগল ক্লাসরুম ( Google Classroom ) : ক্লাসরুম হলো স্কুলগুলোর জন্য গুগল কর্তৃক ডেভেলপকৃত একটি বিনামূল্যের ওয়েব পরিষেবা , যার লক্ষ্য হলো অনলাইনে শিক্ষা উপকরণ তৈরি, বিতরণ এবং গ্রেডিং কার্যক্রমকে সহজতর করে তোলা। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফাইল শেয়ারিং প্রক্রিয়াটি সহজতর করা । ২০১৯ সাল হতে গুগল ক্লাসরুম পরিষেবাটি ব্যাপকভাবে চালু করা হয়েছে।
দূরশিক্ষণ ( Distance Learning ): দূরশিক্ষা শিক্ষা প্রদানের এমন একটি প্রথা , যেখানে একজন শিক্ষার্থী প্রচলিত শ্রেণিককে উপস্থিত না হয়েও ঘরে বসে ইন্টারনেট , ই - মেইল , ভিডিও কনফারেন্সিং , চ্যাট , ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্রভৃতি কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে এবং প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম হয়। মূলত দূরশিক্ষণ ই - লার্নিং - এরই একটি অংশ । ১৮৪০ সালে Sir Issac Pitesan দূরশিক্ষণের ধারণা প্রবর্তন করেন । এর ফলে সরাসরি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ( যাদের এ সুযোগ রয়েছে না গিয়েও নিজ অবস্থানে থেকে সাশ্রয়ে পছন্দের বিষরে ডিগ্রী অর্জন করতে পারে। এক কথায় , দূরশিক্ষণে তথ্য প্রযুক্তির অবদান হলো- ঘরে বসে অনলাইনে পৃথিবীর যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস পরীক্ষা দেওয়া এবং উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি অর্জন করা।
ব্লেন্ডেড লার্নিং ( Blended Learning ): ফেস - টু - ফেস টিচিং ও অনলাইন লার্নিং - এর সমন্বয়কেই ব্লেন্ডেড লার্নিং বলা হয়। ব্লেন্ডেড লার্নিং মূলত ট্র্যাডিশনাল টিচিং মেথডের সাথে ই - লার্নিং - এর সমন্বয়ে একটি হাইব্রিড টিচিং মেথড তৈরি করে। বর্তমানে সকল শিখন প্রোগ্রামের মধ্যে ব্লেন্ডেড লার্নিং একটি জনপ্রিয় শিক্ষা পদ্ধতি। সম্পূর্ণ Face - to - Face বা সম্পূর্ণ অনলাইন লার্নিং - এর চেয়ে ব্যান্ডেড লার্নিং ইনস্ট্রাকশন পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকরী। এই প্রকারের লার্নিং মডেলে High Level Suudents' Achievement দেখা গিয়েছে। একই সাথে এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীগণ, শিক্ষক/ ইন্সট্রাক্টর ব্যতীত ডিজিটাল ইনস্ট্রাকশন ও ফেস টু ফেসের মাধ্যমে নিজেদের নতুন ধারণার ও সক্ষমতার সাহায্যে শিখন কার্যাবলি চালিয়ে যেতে পারে।