প্রসেসর কি? || What is Processor?

 প্রসেসর

 তোমাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কোনটি- প্রায় সবাই বলবে মস্তিষ্ক। কারণ আমাদের মস্তিষ্কের নির্দেশেই অন্যান্য অঙ্গ - প্রত্যঙ্গ কাজ করে থাকে। তেমনি কম্পিউটার , মোবাইল ফোন বা এ ধরনের আইসিটি ডিভাইসগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো প্রসেসর। একে সিপিইউ (CPU - Central Processing Unit) বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশও বলা হয়। এখনকার দিনে গাড়ি, ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, গেম কনসোল, টেলিভিশনসহ সব ধরনের হাইটেক যন্ত্রপাতিই প্রসেসর নিয়ন্ত্রিত।

 আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি হলো এ প্রসেসর। আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এর উন্নয়ন হয়েছে অত্যান্ত দ্রুতগতিতে। বলা যায় অকল্পনীয় গতিতে। মজার ব্যাপার হলো প্রসেসরের উন্নয়নে প্রসেসরেরই সাহায্য নেওয়া হয়। তাই বলা যায় প্রসেসর নিজেই নিজেকে প্রতিনিয়ত উন্নত করে গড়ে তুলছে।

 অসংখ্য ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) দিয়ে প্রসেসর তৈরি হয়। আইসিগুলো তৈরি হয় ট্রানজিস্টার (Transistor) দিয়ে। এগুলো সব একটি ক্ষুদ্র চিপ (Chip) এর মধ্যে থাকে। প্রসেসরে আইসির সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বাড়লেও চিপ - এর আকার ক্রমান্বয়ে ছোটো হয়ে আসছে। আকার ছোটো হলেও এর কাজ করার ক্ষমতা বেড়েই চলেছে। কম্পিউটারের সামগ্রিক প্রক্রিয়াকরণের কাজ সিপিইউ - এর মাধ্যমেই হয়ে থাকে। 

প্রসেসর

সফটওয়্যারের নির্দেশ বোঝা এবং সে অনুযায়ী তথ্য প্রক্রিয়া করা এর কাজ। অর্থাৎ ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের কাজটি সিপিইউ বা প্রসেসর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এক কথায় কম্পিউটার - সংশ্লিষ্ট সকল যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারের নির্দেশনার মধ্যে সমন্বয় করে কাজ সমাধা করে প্রসেসর। তিনটি অংশের সমন্বয়ে প্রসেসর গঠিত হয়। 

১. গাণিতিক যুক্তি ইউনিট (Arithmetic and Logic Unit): গাণিতিক যুক্তি অংশে গাণিতিক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্তমূলক কাজগুলো সংগঠিত হয়।

২. নিয়ন্ত্রক অংশ (Control Unit): এ অংশের মাধ্যমে সকল কাজ নিয়ন্ত্রিত হয় । অর্থাৎ কোন নির্দেশের পর কোন নির্দেশ পালিত হবে তা নির্ধারিত হয় এ অংশে।

৩. রেজিস্টার স্মৃতি (Register Memory): এটি ছোটো আকারের অত্যন্ত দ্রুতগতির অস্থায়ী মেমোরি বা স্মৃতি। এ স্মৃতি থেকে তথ্য নিয়ে দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়।

 আমরা জানি বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭১ সালেই ইন্টেল প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ৪০০৪। এটির উদ্ভাবক ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা, তাদের মধ্যে ছিলেন টেড হফ , স্ট্যান মেজর, ফেডরিকো ফ্যাগিন ও মাসাতোশি শিমা। 

তোমরা আগেই জেনেছো জন্মের পর থেকেই প্রসেসরের ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি তোমাদের কাছে স্পষ্ট হবে। ৪০০৪ মাইক্রোপ্রসেসরে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ছিল ২৩০০ টি আর বর্তমানের কোর আই সেভেন প্রসেসরের ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ২২৭,০০,০০,০০০ টি। ভবিষ্যতের কথা কল্পনা কর।

পৃথিবীর নানা জাতি - গোষ্ঠীর মানুষ যে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে আদেশ - নির্দেশ দেয় তার সবই কম্পিউটার ঠিক ঠিক পালন করে। কিন্তু কীভাবে সবার ভাষা কিংবা নির্দেশ কম্পিউটার বুঝে ফেলে? — এই প্রশ্নটির উত্তর জানার জন্য নিশ্চয়ই তোমাদের মন আঁকুপাকু করছে। এর সহজ উত্তর হচ্ছে কম্পিউটার তথা প্রসেসর আসলে কারও ভাষাই বোঝে না। সে তার নিজের ভাষাই শুধু বোঝে।

কম্পিউটারের ভাষায় কেবলমাত্র দুটো অক্ষর '০' এবং ‘১’ ৷ ‘০’ মানে হচ্ছে ০ থেকে ২ ভোল্ট বিদ্যুৎ আর ‘১’ মানে হচ্ছে ৩ থেকে ৫ ভোল্ট বিদ্যুৎ। এ ভাষার নাম মেশিন ভাষা (Machine Language)। ধর , তুমি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারো কিন্তু বাংলা ও ইংরেজি না জানা ফরাসী ভদ্রলোকের সাথে কথা বলতে চাও – এক্ষেত্রে একজন দোভাষীর সাহায্য নিয়ে কথা বলতে হবে। তেমনি প্রসেসরকে আমাদের ভাষা বোঝাতে অনুবাদক প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়।

 আমাদের তথা পৃথিবীর তাবৎ ভাষার প্রতিটি অক্ষর ও প্রতীকের জন্য মেশিন ভাষার নির্দিষ্ট কোড রয়েছে । অনুবাদক প্রোগ্রাম আমাদের ভাষাকে প্রসেসর বা মেশিনের বোধগম্য কোডে রূপান্তর করে। নানা ধরনের কোড রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ ASCII (American Standard Code for Information Interchange) কোডের কথা উল্লেখ করা যায় । ASCII কোড ৮ বিটের কোড। এ কোড অনুযায়ী 

 A = ০ ১০০০০০১ 

 B = ০১০০০০১০ 

 ? = ০০১১১১১১ 

  , = ০০১০১১০০ ইত্যাদি। 

  বর্তমানে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় কোড হলো Unicode.

ওয়ার্ড প্রসেসর

আমাদের পড়াশোনা করার জন্যে নিশ্চয়ই অনেক লেখালেখি করতে থাকি। খাতার পৃষ্ঠায় কিংবা কাগজে আমরা পেন্সিল বা কলম দিয়ে সেগুলো লিখি। যার হাতের লেখা ভালো, সে একটু গুছিয়ে লিখতে পারে তার খাতাটা দেখতে হয় সুন্দর। যার হাতের লেখা ভালো না, গুছিয়ে লিখতে পারে না, কাটাকাটি হয়, তারটা দেখতে তত সুন্দর হয় না। 

কিন্তু মাঝেমধ্যে আমাদের নিশ্চয়ই সুন্দর করে লেখার দরকার হয়, স্কুল ম্যাগাজিন বের করছি কিংবা কোনো অতিথিকে মানপত্র দিয়েছি, কিংবা কোনো একটা জাতীয় প্রতিযোগিতায় রচনা জমা দিয়েছি — তখন আমরা কী করবো? এক সময় কিছু করার ছিল না- বড়জোর কষ্ট করে টাইপরাইটারে লিখতে হবে। এখন কিন্তু কম্পিউটার ব্যবহার করে লিখে প্রিন্টারের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে ছাপিয়ে নেওয়া যায়। লেখালেখির জন্যে যে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে তার নাম হচ্ছে ওয়ার্ড প্রসেসর। লেখালেখি করতে হলেই শব্দ বা ওয়ার্ড লিখতে হয়, সুন্দর করে লিখতে হলে শব্দগুলোকে সাজাতে হয় গোছাতে হয় আর এটা হচ্ছে এক ধরণের প্রক্রিয়া যার ইংরেজি হচ্ছে প্রসেসিং (Processing)। দুটি মিলে হয় ওয়ার্ড প্রসেসিং, আর যে সফটওয়্যার ওয়ার্ড প্রসেসিং করে সেটা হচ্ছে ওয়ার্ড প্রসেসর। 

ওয়ার্ড প্রসেসর

ওয়ার্ড প্রসেসর ব্যবহার করে কী কী করা যায়, সেটা আমরা পরে আলোচনা করবো। তোমরা যখন সত্যিকারের কম্পিউটারে ওয়ার্ড প্রসেসর ব্যবহার করে কিছু একটা লিখবে তখন আরও খুঁটিনাটি বিষয় জেনে যাবে, যেগুলো বই পড়ে বুঝা সহজ হয় না। তারপরও ওয়ার্ড প্রসেসর নিয়ে দু - একটি কথা না বললেই নয়। 

প্রথমত , সাধারণ লেখালেখি বা টাইপরাইটারের সাথে ওয়ার্ড প্রসেসরের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে ওয়ার্ড প্রসেসরে এডিটিং বা পরিবর্তন করা যায়। টাইপরাইটারে কিছু একটা লেখার পর আমরা যদি দেখি কিছু একটা ভুল হয়ে গেছে তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। ভুলটা শুদ্ধ করতে হলে আবার পুরোটা গোড়া থেকে টাইপ করতে হয়। ওয়ার্ড প্রসেসরে ভুল শুদ্ধ করার মতো সহজ কাজ আর কিছুই হতে পারে না। শুধু ভুল নয় ইচ্ছে করলেই যেকোনো পরিবর্তন করা যেতে পারে, পুরাতন অংশ বাদ দিয়ে দেওয়া যায় , নতুন অংশ যোগ দেওয়া যায়।

 লেখালেখির সাথে ওয়ার্ড প্রসেসরের দ্বিতীয় বড় পার্থক্যটি হচ্ছে সংরক্ষণ। হাতে লেখা কাগজ সংরক্ষণ করা খুব সহজ নয়। কোথায় রাখা হয়েছে মনে থাকে না। দরকারের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। খুঁজে পাওয়া গেলেও হয়তো দেখা যায় উইপোকা খেয়ে ফেলেছে। ওয়ার্ড প্রসেসরে এগুলোর কোনো ভয় নেই। লেখালেখি করে একটা ফাইল হিসেবে হার্ডড্রাইভে রেখে দেওয়া যায়। দরকার হলে একটা পেনড্রাইভে বা সিডিতে কপি করে রাখা যায়। আরও বেশি সাবধান হলে অন্য কোনো কম্পিউটারেও কপি সংরক্ষণ করা যায়। যেহেতু ওয়ার্ড প্রসেসর সবার জন্যে প্রয়োজনীয় আর খুব জনপ্রিয় সফটওয়্যার তাই সফটওয়্যারের সব বড় কোম্পানিই চমৎকার সব ওয়ার্ড প্রসেসর তৈরি করছে। যেমন, মাইক্রোসফট কোম্পানির মাইক্রোসফট ওয়ার্ড সেরকম একটি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার। 

কেউ যদি টাকা না দিয়ে বিনামূল্যে ওয়ার্ড প্রসেসর সংগ্রহ করতে চায় তাহলে তার জন্যেও সফটওয়্যার আছে আর সেটি হলো ওপেন অফিস রাইটার। কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, কাগজ আবিষ্কার করে একদিন মানুষের সভ্যতার একটা নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল। হাজার বছর পর আজ কাপজ ছাড়াও লেখা সম্ভব এবং সেটা দিরে সভ্যতার আরেকটা নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url