মহাকাশ অভিযান কি? || What is Space Exploration?

 মহাকাশ অভিযান 

মহাশূন্যের রহস্য আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মহাকাশচারীসহ কিংবা মহাকাশচারী ছাড়াই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাঁধন কাটিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে একশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমণ্ডলের বাইরে গিয়ে কোনো মহাকাশযান কর্তৃক চালিত অনুসন্ধান বা অভিযানকে মহাকাশ অভিযান বলা হয়। পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে সম্পূর্ণ নতুন একটি মহাজাগতিক বিশ্বের আবিষ্কার সকলের মনকেই আন্দোলিত করে। প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বকে জানার অবিরাম চেষ্টা চলছে; হচ্ছে বিস্তর গবেষণা। 

আজ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছে , তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া কখনই অর্জন করা সম্ভব হতো না। একবিংশ শতাব্দীতে মহাকাশ আবিষ্কারে আরও বেশি গবেষণার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হচ্ছে। মহাকাশে মানুষ ও রোবটিক অনুসন্ধান বিশ্ববাসীর জন্য বিরাট সুফল বয়ে এনেছে। চাঁদের মাটিতে অবতরণ, স্পেস স্টেশন ও অন্যান্য গ্রহে মিশন প্রেরণের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

মহাকাশ অভিযান কি?

মহাকাশ অভিযান বা মহাকাশ যাত্রা হলো মানব বা যানবাহনের সাহায্যে মহাকাশে যাওয়া প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার সমষ্টি, যা মহাকাশে গিয়ে নতুন জগৎের অনুভব করতে সাহায্য করে। মহাকাশ অভিযানের লক্ষ্য মহাকাশে বা উপগ্রহে প্রক্ষেপণ করা, গবেষণা করা, বা তার সম্প্রেষণ করা।

মহাকাশ অভিযান প্রথমবারের সাথে সত্যিকারে বিখ্যাত হয়েছিল 1957 সালে, যখন সভ্য মানব ব্যাপারে মহাকাশের সাথে সম্পর্ক করেননি। তবে, পরবর্তী বছরের মধ্যে এই মাধ্যমে মহাকাশে স্থায়ী স্থানান্তর সম্পর্কে বেশ কিছু সাফল্য পেতে সম্মান্য চেষ্টা নেওয়া হয়েছে।

এই অভিযানের মাধ্যমে মানবকে নতুন বুদ্ধিমত্তা প্রাপ্তি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, গতি সম্পর্কে জানানো এবং আমাদের বৃহত্তর মহাকাশ সম্প্রেষণে যে সমস্যাগুলি সমাধান করতে হবে তা নির্ধারণ করাই মহাকাশ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

সর্বশেষে, মহাকাশ অভিযান মানবকে আপেক্ষিকতা, আদর্শ ও সাম্প্রতিক পৃষ্ঠপোষণে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ দেয় এবং আমাদের বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক এবং সম্প্রেষণের সম্ভাবনাগুলি প্রশংসা করে।

Space Exploration

মহাকাশ অভিযানের কতিপয় ঘটনা 

১. ৩ অক্টোবর, ১৯৪২ সালে জার্মান বিজ্ঞানীরা রকেট "V-2" পরীক্ষামূলকভাবে মহাশূন্যে পাঠান। 
২. ৪ অক্টোবর, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম উপগ্রহ ' স্পুটনিক -১ মহাকাশে প্রেরণ করে। 
৩. ' ভস্টক -১ ' বিশ্বের প্রথম মানুষ বহনকারী সোভিয়েত মহাকাশযান। ১২ এপ্রিল , ১৯৬১ সালে রাশিয়ার মহাকাশযাত্র ফরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন। 
৪. ১৬ জানুয়ারি , ১৯৬৩ সালে বিশ্বের ১ম মহিলা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্যালেনটিনা তেরেসকোভা ' ভস্টক -৬ ' এ করে আটচল্লিশবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। 
৫. ' অ্যাপোলো -১১ তে করে ২০ জুলাই , ১৯৬৯ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে অবতরণ করেন। 
৬. শুক্রগ্রহে ১৯৭০ সালে ' ভেনেরা -৭ ' অবতরণ করে সেখান থেকে ২০ মিনিট যাবৎ পৃথিবীতে সরাসরি তথ্য প্রেরণ করে। ১৯৭১ সালে ' মার্স -৩ ' মিশনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মঙ্গলগ্রহ থেকে সরাসরি পৃথিবীতে ২০ সেকেন্ড যাবৎ তথ্য প্রেরণ করা হয়।
৭. ১২ এপ্রিল , ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ করে। 

মহাকাশ অভিযানের জন্য কোনো মহাকাশযানের ঘণ্টায় প্রায় ৩০,০০০ মাইল (৪৮,০০০ কি.মি.) গতিবেগ প্রয়োজন। এটি শব্দের গতিবেগ থেকে প্রায় আটগুণ বেশি। মহাকাশযানকে আবার পৃথিবীতে ফেরানোর ক্ষেত্রে এই প্রচণ্ড গতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় বাতাসের ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপকে বিক্রিরণ করে মহাকাশযানের গতিবেগ স্বাভাবিক করতে হয়। মহাশূন্যে বসে গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে স্পেস স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পৃথিবী থেকে গবেষকদের একটি দল এ স্টেশনে গিয়ে অবস্থান করেন এবং আধুনিক সব প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দূর নক্ষত্রসমূহের ওপর গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন।

মহাকাশযানের গতিপথ বের করার জন্য মহাকাশযানের অসংখ্য যন্ত্রপাতি নিখুঁতভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য , স্পেস স্টেশনের কোনো যন্ত্রাংশ বিকল হলে তা সরিয়ে নেওয়া বা মেরামতের জন্য এবং সর্বক্ষণ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে মহাকাশচারীরা পুরো কার্যক্রমই পরিচালনা করেন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন রোবটিক ব্যবস্থা , টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। 

মহাকাশ অভিযানের গুরুত্ব 

১. কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ও রোবটিক মহাকাশযানের মাধ্যমে সৌরজগৎ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়। 
২. কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কন্ঠস্বর , ছবি ও তথ্য মুহূর্তেই পাঠানো যায়। 
৩. কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দ্বারা বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর ব্যবহার পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করেছেন। 
৪. বায়ুমণ্ডল ও আবহাওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্যই কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হয়। 
৫. পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলোর সহায়তা নিচ্ছে , যা নৌ , বিমান ও সেনাবাহিনীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। 
৬. হাবল টেলিস্কোপে তোলা গ্রহ - নক্ষত্রের ছবি বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ও রোবটিক মহাকাশযানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সৌরজগৎ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন।

বিশ্বের প্রথম মহাকাশ অভিযাত্রীর নাম কি?

বিশ্বের প্রথম মহাকাশ অভিযাত্রী নাম যেনেশ টেগারেভ (Yuri Gagarin) ছিলেন। উনি 1961 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বার্ষিক কমান্ডান্টস্কি প্রশাসনের দ্বিতীয় স্পেশাল স্কুলের সুপারিশে একটি মহাকাশ প্রয়ানে মহাকাশে যান। তার যাত্রা এপ্রিল 12, 1961 তে ঘটে, এবং সেই সময়ে তিনি বিশ্বের প্রথম মানব যাত্রী হিসেবে মহাকাশে যান। এই ঘটনাটি মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে পরিচিত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url