টপোলজি কি? || What is Topology?
টপোলজি
তোমরা সবাই জেনে গেছো, কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনেকগুলো কম্পিউটার একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়, যেন একটি কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। জুড়ে দেওয়া কম্পিউটারগুলোর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় :
> PAN (Personal Area Network)
> LAN (Local Area Network)
> MAN (Metropolitan Area Network)
> WAN (Wide Area Network)
ব্যক্তিগত পর্যায়ে যে নেটওয়ার্ক (ব্লু - টুথ এর মাধ্যমে) তৈরি করা হয় তা হলো PAN। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যে সকল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় , এগুলো সবই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN। সচরাচর একটি শহরের মধ্যে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো MAN। দেশ জুড়ে বা পৃথিবী জুড়ে যে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় তা হলো WAN। এই নেটওয়ার্কের অন্তর্গত কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। এই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিকে বলা হয় নেটওয়ার্ক টপোলজি।
বাস টপোলজি: এই টপোলজিতে একটা মূল ব্যাকবোন বা মূল লাইনের সাথে সবগুলো কম্পিউটারকে জুড়ে দেওয়া হয়। বাস টপোলজিতে কোনো একটা কম্পিউটার যদি অন্য কোনো কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে চায় , তাহলে সব কম্পিউটারের কাছেই সেই তথ্য পৌঁছে যায়। তবে যার সাথে যোগাযোগ করার কথা কেবল সেই কম্পিউটারটি তথ্যটা গ্রহণ করে । অন্য সব কম্পিউটার তথ্যগুলোকে উপেক্ষা করে। মনে রাখতে হবে মূল বাস / ব্যাকবোন নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে যায়।
রিং টপোলজি: নাম শুনেই বুঝতে পারছো, রিং টপোলজি হবে গোলাকার বৃত্তের মতো ছবি দেখতে পারছ , এই টপোলজিতে প্রত্যেকটা কম্পিউটার অন্য দুটো কম্পিউটারের সাথে যুক্ত। এই টপোলজিতে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য যায় একটা নির্দিষ্ট দিকে। তবে মনে রেখো, রিং টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে কিন্তু বৃত্তাকারে থাকার দরকার নেই, সেগুলো এলোমেলোভাবে থাকতে পারে। কিন্তু যদি সব সময়েই কম্পিউটারগুলোর মাঝে বৃত্তাকার যোগাযোগ থাকে, তাহলেই সেটি রিং টপোলজি। উল্লেখ্য এক্ষেত্রে কোন একটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক বিকল হয়ে যাবে।
স্টার টপোলজি: কোনো নেটওয়ার্কের সবকটি ডিভাইস যদি একটি কেন্দ্রীয় হাব (Hub) বা সুইচ (Switch) - এর সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে সেটিকে বলে স্টার টপোলজি। এটি তুলনামূলকভাবে একটি সহজ টপোলজি এবং অনুমান করা যায়, কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি সহজে একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চায় , তাহলে সে স্টার টপোলজি ব্যবহার করবে। এই টপোলজিতে একটি কম্পিউটার নষ্ট হলেও বাকি নেটওয়ার্ক সচল থাকে। কিন্তু কোনোভাবে কেন্দ্রীয় হার / সুইচ নষ্ট হলে পুরো নেটওয়ার্কটিই অচল হয়ে পড়বে। স্টার টপোলজিতে কম্পিউটারগুলোকে স্টারের মতোই সাজাতে হবে তা কিন্তু সত্যি নয়।
ট্রি টপোলজি: ট্রি মানে হচ্ছে গাছ। কাজেই এই টপোলজ্জিটাকে গাছের মতো দেখানোর কথা। ছবিটা একটু ভালো করে দেখলেই ভূমি বুঝতে পারবে আসলে এটা গাছের মতো। গাছে যে রকম কার্ড থেকে ঢাল, একটা ডাল থেকে অন্য ভাল এবং সেখান থেকে আরো ভাল বের হয়, এখানেও তাই হচ্ছে । এই টপোলজিতে একটি মজার বিষয় হলো এখানে অনেকগুলো স্টার টপোলজিকে একত্র করা।
নেটওয়ার্কের ধারণা
দুই বা ততোধিক ডিভাইসকে যোগাযোগের কোনো মাধ্যম দিয়ে একসাথে জুড়ে দিলে যদি তারা নিজেদের ভেতর তথ্য কিংবা উপাত্ত আদান - প্রদান করতে পারে- তাহলে তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলতে পারি। বুঝতেই পারছেন সত্যিকারের নেটওয়ার্কে আসলে দু - তিনটি ডিভাইস থাকে না। সাধারণত অনেক কম্পিউটার থাকে। আজকাল এমন হয়ে গেছে যে, কেউ একটা কম্পিউটার কিনলে যতক্ষণ না সেটাকে একটা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দিতে পারে, ততক্ষণ তার মনে হতে থাকে কম্পিউটার ব্যবহারের আসল কাজটিই বুঝি করা হলো না। তার কারণ হচ্ছে কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে যখন তথ্য দেওয়া নেওয়া হয়, তখন একটা অনেক বড় কাজ হয়। একজন ব্যবহারকারী তখন নেটওয়ার্কের অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারে। যে রিসোর্স তার কাছে নেই , সেটিও সে নেটওয়ার্ক থেকে ব্যবহার করতে পারে। নেটওয়ার্কের পুরোপুরি ধারণা পেতে হলে নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক আছে এরকম কিছু যন্ত্রপাতির কথা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সার্ভার: সার্ভার নাম শুনেই বুঝায় যায় এটা serve করে। অর্থাৎ সার্ভার হচ্ছে শক্তিশালী কম্পিউটার যেটি নেটওয়ার্কের অন্য কম্পিউটারকে নানা রকম সেবা দিয়ে থাকে। একটি নেটওয়ার্কে অনেকগুলো সার্ভার থাকতে পারে।
ক্লায়েন্ট: কেউ যদি অন্য কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সেবা নেয়, তখন তাকে ক্লায়েন্ট বলে। কম্পিউটার নেটওয়ার্কেও ক্লায়েন্ট শব্দটির অর্থ মোটামুটি সেরকম। যে সব কম্পিউটার সার্ভার থেকে কোনো ধরনের তথ্য নেয় তাকে ক্লায়েন্ট বলে। যেমন মনে কর, তুমি তোমার কম্পিউটার থেকে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ই - মেইল পাঠাতে চাও। তাহলে তোমার কম্পিউটার হবে ক্লায়েন্ট।
নেটওয়ার্কের যে ডিভাইসটি “ই-মেইল পাঠানোর কাজটুকু আপনার জন্য করে দেবে সেটা হবে সার্ভার” - এক্ষেত্রে সার্ভারটি হল ই-মেইল সার্ভার।
মিডিয়া: যে বস্তু ব্যবহার করে কম্পিউটারগুলো জুড়ে দেওয়া হয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া। বৈদ্যুতিক তার, কো-এক্সিয়াল তার, অপটিক্যাল ফাইবারও মিডিয়া হতে পারে। কোনো মিডিয়া ব্যবহার না করেও তার বিহীন (যেমন- Wi - Fi) পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায়।
নেটওয়ার্ক এডাপ্টার: একটি কম্পিউটারকে সোজাসুজি নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে দেয়া যায় না। সেটি করার জন্য কম্পিউটারের সাথে একটি নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC) লাগাতে হয়। সেই কার্ডগুলো মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ব্যবহার উপযোগী করে কম্পিউটারকে দিতে পারে। আবার কম্পিউটার থেকে তথ্য নিয়ে সেই তথ্য নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দিতে পারে।
রিসোর্স: ক্লায়েন্টের কাছে ব্যবহারের জন্য যে সকল সুযোগ - সুবিধা দেওয়া হয়, তার সবই হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটারের সাথে যদি একটি প্রিন্টার কিংবা একটি ফ্যাক্স মেশিন লাগানো হয় সেটি হচ্ছে রিসোর্স। কম্পিউটার দিয়ে কেউ যদি সার্ভারে রাখা একটি ছবি আর্কার সফটওয়ার ব্যবহার করে সেটিও রিসোর্স। যারা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা শুধু যে রিসোর্স গ্রহণ করে তা নয়, আপনার কাছে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে এবং সেটি যদি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যরাও ব্যবহার করতে থাকে তাহলে আপনার কম্পিউটারও একটি রিসোর্স হয়ে যাবে।
ইউজার: সার্ভার থেকে যে ক্লায়েন্ট রিসোর্স ব্যবহার করে, সে - ই ইউজার ( user ) বা ব্যবহারকারী।
প্রটোকল: ভিন্ন ভিন্ন কম্পিউটারকে একসাথে যুক্ত করতে হলে এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যোগাযোগ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম মেনেই তথ্য আদান - প্রদান করতে হয়। যারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা আগে থেকেই ঠিক করে নেয় , কোন ভাষায়, কোন নিয়ম মেনে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করবে। এই নিয়মগুলোই হচ্ছে প্রটোকল। যেমন ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য প্রটোকল হলো http