জাতীয় সংসদের গঠন || Formation of Jatiya Sangsad
জাতীয় সংসদের গঠন
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সরকারের তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আইন বিভাগ গণতন্ত্রের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। আইন প্রণয়ন, জনপ্রতিনিধিত্ব, নির্বাহী বিভাগে দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি , স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, তদারকির ব্যবস্থা প্রভৃতি আইন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাংলাদেশের আইন বিভাগ জাতীয় সংসদ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ ম ভাগের ১ম পরিচ্ছেদের ৬৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে , জাতী সংসদ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকার এবং সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের ৬৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে একক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, প্রবর্তন করা হয়। এ আইনসভার নাম হয় জাতীয় সংসদ। ইংরেজিতে একে বলা হয় "The House of the Nation"। রাজধানী ঢাকায় জাতীয় সংসদের অবস্থান।
শাসনতান্ত্রিক বিধান এবং সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী (৩ জুলাই ২০১১) অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। ৩০০ জন সাধারণ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একক নির্বাচনি এলাকা হাতে নির্বাচিত হন এবং বাকি ৫০ টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগণ সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।
তবে মহিলারা বাংলাদেশের নির্বাচনি এলাকা থেকেও সরাসরি সাধারণ সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর । তবে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রধানমন্ত্রীর শ্রামর্শক্রমে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার থাকেন। তারা সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের নেতা নির্বাচিত হন। আসনসংখ্যার দিক দিয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রধান সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কমিটি গঠন করে সংসদ তার কার্যক্রম সম্পাদন ও গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালায়।
জাতীয় সংসদের সদস্যপদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা Qualifications and Disqualifications of Membership of the Jatiya Sangsad
সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্যতা ও অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে।
যোগ্যতা (Qualifications): বাংলাদেশ সংবিধানের ৫৪ ভাগের ১ ম পরিচ্ছেদের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হতে হলে তাকে নিম্নলিখিত যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে:
১. বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
২. অন্যূন ২৫ বছর ব্যাক হতে হবে।
৩ . তার নাম সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
৪. কোনো উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা না করলে।
অযোগ্যতা (Disqualifications): বাংলাদেশ সংবিধানের ১ ম পরিচ্ছেদের ৬৬ (১) অনুযায়ী নিম্নলিখিত কারণে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন—
১. যদি কোনো ব্যক্তি আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন।
২. কোনো ব্যক্তি দেউলিয়া বলে ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায়মুক্ত না হয়ে থাকেন।
৩. যদি ঋণখেলাপি হন।
৪ . যদি তিনি অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন।
৫. যদি কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি অপরাধে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হয়ে থাকে।
৬ . আইন দ্বারা অযোগ্য ঘোষিত নয়, এমন পদ ব্যতীত যদি কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের এমন কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
৭ . ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশের অধীন যদি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন।
৮. যদি কোনো ব্যক্তি আইন দ্বারা নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হন।
প্রসঙ্গত আরও উল্লেখ করা দরকার , যদি কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার সদস্যপদের যোগ্যতার প্রশ্নে বিতর্ক পরিলক্ষিত হয়, তাহলে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে।