পৌরসভা || Municipality

পৌরসভা কি?

পৌরসভা একটি স্থানীয় সরকারি সংগঠন, যা একটি নগরপালিকা বা শহরের অধিকাংশ শাসন ও প্রশাসন করে। পৌরসভা শহরের বিভিন্ন মৌখিক ও অমৌখিক সেবা সরবরাহ করে এবং স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়, নগরপালিকার উন্নত উন্নত উন্নতি ও বিকাশের দিকে নির্দেশ দেয়।

পৌরসভা প্রধানত একটি নির্বাচনী সংস্থা হয় এবং শহরের নাগরিকেরা নির্বাচনের মাধ্যমে পৌরসভা সদস্যদের নির্বাচন করে তাদের প্রতি প্রতিষ্ঠান দেয়। এই সদস্যরা নগরপালিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় এবং পৌরসভার প্রশাসনিক কাজে সহায়ক হয়।

পৌরসভার দায়িত্বে সম্মিলিত অবস্থানের মধ্যে শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যবস্থাপনা, সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং পরিচর্যা, জলাভম সরবরাহ, বাস ও ট্রেন সেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা, মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নতি সম্পর্কিত কাজ সম্পাদন করা হয়।

পৌরসভা শহরের স্থানীয় বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নাগরিকের দৈনন্দিন জীবন উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে।

পৌরসভা ইংরেজি কি?

"পৌরসভা" ইংরেজিতে হলে "Municipality" বা "City Corporation" বলা হতে পারে, সম্প্রতির প্রয়োজনে সাংঘটিত শহর বা পৌর এলাকার প্রশাসনিক সংগঠন। এটি স্থানীয় শহর বা শহরের সাথে সংগঠিত হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন, পারিষদ, ও অন্যান্য শহরের ব্যবসায়িক ও সামাজিক উন্নতির কাজে যোগ দেয়। পৌরসভার কাজের মধ্যে সাড়েপাঁচ বছরে একবার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং পৌরসভা নির্বাচনে নাগরিকরা নিজের নিজেদের নির্বাচন করে নির্বাচন করে। 

পৌরসভার কাজ কি?

পৌরসভা একটি স্থানীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান যা একটি নগর বা শহর এলাকার সার্বজনীন সেবা, পরিচ্ছন্নতা, বাণিজ্যিক কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, জনগণের সুখবর্ধন, আপাতকালীন সেবা, স্থানীয় বাণিজ্যিক বাজার নির্মাণ ও পরিচালনা, নগরী নির্মাণ, যাতায়াত ও পরিবহন নীতি নির্ধারণ, বসতি উন্নতি, সার্বজনীন উপকরণের ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা, শহরের নিরাপত্তা, জনগণের নাগরিক সেবা, পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ প্রদান করে। পৌরসভা নগর বা শহরের স্থানীয় প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে এবং নগরের উন্নতি ও সার্বজনীন সুখবর্ধনে ভূমিকা পালন করে। এটি নাগরিকের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে এবং নগরের উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে কাজ করে।

পৌরসভায় বাড়ি করার সময় জায়গা ছাড়ার নিয়ম

বাড়ি নির্মাণের জন্য পৌরসভা বা শহর পরিষদ বিভিন্ন নিয়ম এবং বিধিমালা স্থাপন করে থাকে, এই নিয়ম এবং বিধিমালা নগরপালিকা বা শহর পরিষদের অধীনে আপ্লাই করে। নিম্নলিখিত সাধারণ নির্মাণ নিয়মের একটি সংক্ষেপ:
1. ভূমি ও জায়গা চয়ন: প্রথমত, বাড়ি নির্মাণের জন্য যাত্রা করা জমি বা জায়গা বেছে নেতে হয়। জমি নির্মাণের জন্য অনুমোদিত হতে হবে এবং জমি ব্যবহারের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে।

2. নির্মাণের অনুমতি: পৌরসভা থেকে নির্মাণ অনুমোদন প্রাপ্ত করতে হবে। এই অনুমোদন নির্মাণের আপেক্ষিক সামগ্রী, নকশা, এবং নির্মাণের পরিকল্পনা সহ বিভিন্ন সার্বজনীন নির্মাণ নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রাপ্ত হতে পারে।

3. স্থাপনার মানচিত্র: নির্মাণের জন্য স্থাপনার মানচিত্র তৈরি করতে হবে এবং তা প্রাধিকৃত কর্মকর্তাদের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হবে।

4. নির্মাণ নির্দেশিকা: নির্মাণের সময়, নির্মাণ নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে, এটি ব্যবস্থাপনা, সেফটি, এবং নির্মাণের মান সংরক্ষণে সাহায্য করে।

5. ট্যাক্স ও অন্যান্য দায়িত্ব: নির্মাণের পরে, বাড়ির মালিকদের নগর কর এবং অন্যান্য আদায়ের জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

স্থানীয় পৌরসভা বা নগর পরিষদের নির্মাণ নির্দেশিকা এবং নীতি বাড়ি নির্মাণের সময়ে মানসিকভাবে অনুসরণ করা উচিত। এছাড়া, আপনি পৌরসভা অথবা শহর পরিষদের কাছে সরাসরি যোগাযোগ করে আপনার নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অধিক জানতে পারেন।

পৌরসভার গঠন ও কার্যাবলি

বাংলাদেশে শহরকেন্দ্রিক স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন কাঠামোর মৌলিক একক হচ্ছে পৌরসভা। আগে যেসব ছোট শহরে 'শহর কমিটি' ছিল সেগুলোতে বর্তমানে পৌরসভা গঠিত হয়েছে। এগুলো এদেশের শহরকেন্দ্রিক উন্নয়ন ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রধান স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।

 পৌরসভার গঠন : প্রতিটি পৌরসভাকে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। পৌরসভার ওয়ার্ডসংখ্যা নির্ধারিত হয় শহরের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে। সমগ্র পৌর এলাকা থেকে একজন মেয়র , প্রত্যেকটি ওয়ার্ড থেকে একজন কাউন্সিলর এবং প্রতি তিনটি ওয়ার্ড থেকে একজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। পৌরসভার সদস্যদের কাউন্সিলর বলা হয় এবং এদের কার্যকাল পাঁচ বছর। বিভিন্ন কাজ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক পৌরসভায় একজন নির্বাহী কর্মকর্তা থাকেন।

 সদস্যদের অপসারণ : নির্দিষ্ট কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে মেয়র ও কাউন্সিলররা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার , দৈহিক ও মানসিক অক্ষমতা , অসদাচরণ , তহবিল আত্মসাতের মতো দুর্নীতির কারণে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে তাদের অপসারণ করা যায়। আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের পদচ্যুত করা যাবে।

 পৌরসভার কার্যাবলি : পৌর এলাকার জনগণের কল্যাণে স্থানীয় সরকারের এ অঙ্গটিকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো : 

১. শহর পরিকল্পনা: পৌরসভা সংশ্লিষ্ট শহর এলাকার উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে। শহর অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের দায়িত্ব পৌরসভার। 

২. উন্নয়নমূলক কাজ: পৌরসভাকে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করতে হয় । জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ , রাস্তার পাশে / মাঝে ( ডিভাইডারে ) বৃক্ষরোপণ ও এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রভৃতি পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজের অংশ। 

৩. জনকল্যাণমূলক কাজ : জনকল্যাণ সাধন করা পৌরসভার অন্যতম প্রধান কাজ । পৌর এলাকাকে আবর্জনামুক্ত রাখা , মাতৃসদন - শিশুমঙ্গল কেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনা , শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ , মিলনায়তন স্থাপনসহ বিভিন্ন রকম কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। 

৪. সমাজকল্যাণমূলক কাজ : পৌরসভা অনাথ ও দুস্থদের জন্য কল্যাণ কেন্দ্র অথবা এতিমখানা স্থাপন ও পরিচালনা , ভিক্ষাবৃত্তি ও জুয়াখেলা বন্ধের ব্যবস্থা , মৃতদেহ সৎকার প্রভৃতি সমাজকল্যাণমূলক কাজও সম্পাদন করে।

৫. জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজ: পৌরসভা পৌর এলাকার জনগণের জন্য স্বাস্থ্যরক্ষামূলক বিভিন্ন কাজ করে। জনগণের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পার্ক , উদ্যান ও খেলার মাঠ নির্মাণ , নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণের কাজ করে এ সংস্থা। এছাড়া জনসাধারণ ব্যবহার করে এমন পুকুর , দীঘি , কূপ , নলকূপের পানি দূষিত হলে নতুন কূপ ও নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা পৌরসভায় অন্যতম দায়িত্ব।

৬. শিক্ষামূলক কাজ: পৌর এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি নিজ এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন এবং শিক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে সাহায্য করে। নিরক্ষরতা দূর করে জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলা পৌরসভার বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

৭. বিচার বিভাগীয় কাজ: পৌরসভা বিচার সংক্রান্ত কিছু কাজও করে। এটি পৌর এলাকার ছোটখাটো বিবাদ ও কলত মীমাংসার জন্য সালিশি আদালত (Court of Conciliation) গঠন করে । মেয়রের নেতৃত্বে গঠিত এই আদালতের উদ্দেশ্য হলো এলাকার ছোটখাটো সমস্যাগুলোর সীমাংসা করে শান্তি - শৃঙ্খলা বজায় রাখা।

৮. গৃহনির্মাণ নিয়ন্ত্রণ : শহর এলাকায় সুশৃঙ্খল ও সুষমভাবে বাড়িঘর নির্মাণ এবং পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার জন্য পৌরসভা বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। এজন্য বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ শহর অঞ্চলের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে এবং জনসাধারণকে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেয় অথবা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।

৯ . শান্তি - শৃঙ্খলা রক্ষা: পৌর এলাকায় শান্তি - শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পৌরসভা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও বেসরকারি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে।

১০. পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশন: সর্বসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য পয়ঃপ্রণালির ব্যবস্থা করাও এর দায়িত্ব।

১১. বৃক্ষরোপণ , পার্ক ও মিলনায়তন স্থাপন: ব্যাপক বনায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ এবং জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের জন্য পার্ক , উদ্যান , উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ , মিলনায়তন স্থাপন ও সংরক্ষণ করা পৌরসভার কাজ। 

১২. কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন: কৃষ্টিগত ও সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্য পৌরসভা শহর এলাকায় তথ্যকেন্দ্র , জাদৃত , আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি স্থাপন এবং পরিচালনা করে। 

১৩. বিবিধ কাজ : পৌরসভা পৌর এলাকায় বাজার , যানবাহন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির প্রসার ও উন্নয়নে সচেষ্ট থাকে। বাস্তুহারা ও সর্বহারাদের পুনর্বাসন এবং তাদের সব ধরনের সাহায্য দান করা পৌরসভার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url