বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ || Bayu dusakera sreṇibibhaga

 বায়ু দূষণ

বায়ু জীবনের প্রাণস্বরূপ। তাই বায়ুতে জীবের পক্ষে ক্ষতিকারক পদার্থগুলোর পরিমাপ মাত্রাতিরিক্ত হলে তখন সেই বায়ুকে আমরা দূষিত বায়ু বলে থাকি। যে পদ্ধতিতে বায়ু দূষিত হয় সেই পদ্ধতিকে বায়ু দূষণ বলা হয়। 

মানব সভ্যতায় বায়ু দূষণ সর্বাপেক্ষা মারাত্মক। বায়ু দূষণকারী পদার্থগুলো বায়ুতে প্রবেশ করে তার জৈব ভূ রাসায়নিক চক্রে (Biogeochemical cycle) প্রবেশ করে। দূষণকারী পদার্থগুলো বায়ুর সাথে চলাচল করায় মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর শ্বাস - ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া দৃষিত বায়ু উদ্ভিদ ও জীর্ণের নানা প্রকার জৈবিক ক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করে। 

সুতরং বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে মানুষের সৃষ্ট কারণে উন্মুক্ত কঠিন বর্জ্য পদার্থ অথবা অপ্রয়োজনীয় বস্তুর ঘনত্ব বায়ুতে যদি স্বাভাবিক অনুপাতের থেকে কম বা বেশি হয়ে যায় , তাহলে বায়ুকে দূষিত বায়ু এবং এই পদ্ধতিকে বায়ু দূষণ (Air pollution) হলে। প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের কিছু অনিয়ন্ত্রিত ক্রিয়াকলাপের ফলে উদ্ভূত এক বা একাধিক রাসায়নিক পদার্থ বায়ুমন্ডলে মিশে মানুষ তথা অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যহানি ঘটালে অথবা জীবনযাত্রা প্রণালীতে ব্যাঘাত ঘটালে বলা হয় যে বায়ু দূষণ (Air pollution) ঘটেছে। 

বায়ু দূষণের সঠিক সংজ্ঞা প্রদান করা প্রায় অসম্ভব কারণ পৃথিবীর সর্বত্র বায়ু হুবহু একই নাও থাকতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই বায়ু দূষণের সংজ্ঞা প্রদান করার প্রচেষ্টায় আমরা সাধারণত বায়ুদূষকগুলোর সংজ্ঞা প্রদান করে থাকে।

১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( World Health Organization ie . WHO) এর মতে, বাতাসে মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন পদার্থ এরূপ ঘনত্বে উপস্থিত , যার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য , ফসল সম্পদ প্রভৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি ও সম্পদের উপভোগ্য ব্যাহত হওয়ার ঘটনাই হলো বায়ু দূষণ (Air pollution).

২. Indian Air Prevention and Control of Pollution Act - 1981 এর মতে, বাতাসে বিভিন্ন তরল , কঠিন ও গ্যাসের উপস্থিতিজনিত যে অবস্থার কারণে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী , উদ্ভিদ ও সম্পদের ক্ষতি সাধিত হয় তাকে বায়ু দূষণ (Air pollution) বলে। খুব সহজ ভাষায় , যেসব পদার্থ বায়ুদূষণ ঘটায় তাদের বায়ু দূষক (Air pollutant) বলা হয় এবং বায়ুদূষকের প্রভাবকে বায়ু দূষণ ( Air pollution ) বলে। কয়েকটি বায়ু দূষকের উদাহরণ হলোঃ সালফার ডাই - অক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড , কার্বন ডাই - অক্সাইড , নাইট্রিক অক্সাইড , নাইট্রোজেন ডাই - অক্সাইড , হাইড্রোজেন সালফাইড , অ্যামোনিয়া , ধূলিকণা , ছাই , ধোঁয়া , ধূম ইত্যাদি।


বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ

যেসব পদার্থ বায়ু দূষণ ঘটায় তাদের বায়ুদূষক বলা হয়। বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ গুলো নিম্নরূপ:

উৎসের ভিত্তিতে বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ (Classification of primary pollutants based on source):

প্রাইমারি দূষক (Primary pollutants): যে সব দূষক তাদের উৎস থেকে নির্গত হয়ে সরাসরি পরিবেশে মিশে যায় , তাদের প্রাইমারি দূষক ( Primary pollutants ) বলে । যেমনঃ ধূলিকণা , ছাই , ধোঁয়া , ধূম্র , সালফার ডাই - অক্সাইড , কার্বন ডাই - অক্সাইড , কার্বন মনোক্সাইড , নাইট্রিক অক্সাইড সালফাইড , অ্যামোনিয়া , হাইড্রোকার্বন , তেজস্ক্রিয় পদার্থের সূক্ষ্মকণা ইত্যাদি।

সেকেন্ডারি দূষক (Secondary pollutants): পরিবেশের এক বা একাধিক উপাদানের সঙ্গে প্রাইমারি দূষক যুক্ত হয়ে যে নতুন দূষকের সৃষ্টি করে , তাকে সেকেন্ডারি দূষক ( Secondary pollutants ) বলে । যেমনঃ 

১। পেট্রোল ও ডিজেল চালিত ইঞ্জিন থেকে জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে যে কার্বন মনোক্সাইড ও নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয় , সেগুলি বায়ুর অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যথাক্রমে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডে পরিণত হয় । কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রিক অক্সাইড হল প্রাইমারি দূষক কিন্তু কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড হল সেকেন্ডারি দূষক।

২। বায়ুমন্ডলে উপস্থিত সালফার ডাই - অক্সাইড দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে জারিত হয়ে সালফার ট্রাই - অক্সাইডে পরিণত হয় । এক্ষেত্রে , সালফার ডাইঅক্সাইড হল প্রাইমারি দূষক , কিন্তু , সালফার ট্রাইঅক্সাইড হল সেকেন্ডারি দূষক।

৩। বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত হাইড্রোকার্বন বাষ্প এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পরস্পর বিক্রিয়া ঘটিয়ে পারক্সি অ্যাসাইল নাইট্রেট নামক একটি অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে । এক্ষেত্রে , হাইড্রোকার্বন বাষ্প ও নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ হল প্রাইমারি দূষক , কিন্তু , পারব্জি অ্যাসাইল নাইট্রেট হল সেকেন্ডারি দূষক।

রাসায়নিক প্রকৃতির ভিত্তিতে বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ 

জৈব দূষক (Organic pollutants):  যেসব জৈব যৌগের দূষণ ক্রিয়া আছে তাদের জৈব কৃষক (Organic pollutants) বলে। যেমনঃ হাইড্রোকার্বন (মিথেন, বেনজিন, টলুইন, বেনজোপাইরিন ইত্যাদি), অ্যালডিহাইড, কিটোন (অ্যাসিটোন), অ্যালকোহল (অ্যাসাইল অ্যালকোহল), ক্লোরোফর্ম ইত্যাদি।

অজৈব দূষক (Inorganic pollutants): যেসব অজৈব যৌগের দূষণ ক্রিয়া আছে সেগুলিকে অজৈব দূষক (Inorganic pollutants) বলে। যেমনঃ সালফার ডাই - অক্সাইড, কার্বন ডাই - অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই - অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড , অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, আরসাইন , হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, ক্লোরিন, ফসজিন, ওজোন ইত্যাদি।

ভৌত অবস্থার ভিত্তিতে বায়ু দূষকের শ্রেণীবিভাগ 

গ্যাসীয় দূষক (Gaseous pollutants): যেসব দূষক বায়ুমন্ডলে গ্যাসীয় পদার্থরূপে অবস্থান করে সেগুলিকে গ্যাসীয় দূষক (Gaseous pollutants) বলে । যেমনঃ সালফার ডাই - অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই - অক্সাইড , হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন ইত্যাদি। 

বায়ুতে প্রলম্বিত কণাজাতীয় দূষক (Suspended particulate Matter or SMP): কঠিন পদার্থের সূক্ষ্মকণা বায়ুতে প্রলম্বিত অবস্থায় ( ভাসমান অবস্থায়) থেকে এই প্রকার দূষক গঠন করে। যেমনঃ ধূলিকণা, সূক্ষ্ম ধাতব কণা, ধোঁয়া, ধুম্র, ছাই ইত্যাদি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url