অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে দুটি সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো || Adhikar O kartabyer modhye duṭi somporko byakhya koro

পৌরনীতি ১ম পত্র
পঞ্চম অধ্যায়: নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. অধিকার কী? 
উত্তর:
অধিকার হলো নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য এমন কিছু কল্যাণকর সুযোগ - সুবিধা , যেগুলো রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত।

২. অধিকারের উৎস কোথায়? 
উত্তর:
অধিকারের উৎস সমাজ।

৩. মৌলিক অধিকার কী?
উত্তর:
মৌলিক অধিকার হচ্ছে সেসব অধিকার যা রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবাহযোগ্য থাকে।

৪. অধিকার প্রথমত কত প্রকার? 
উত্তর:
অধিকার প্রথমত দুই প্রকার। যথা- নৈতিক অধিকার ও আইনগত অধিকার।

৫. শিক্ষা লাভের অধিকার কোন ধরনের অধিকার?
উত্তর:
শিক্ষা লাভের অধিকার হলো আইনগত অধিকারের অন্তর্ভুক্ত সামাজিক অধিকার।

৬. রাজনৈতিক অধিকার কী?  
উত্তর:
যেসব অধিকার একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় , সেগুলোকে রাজনৈতিক অধিকার বলে।

অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক

৭. আইনগত অধিকার কী? 
উত্তর:
আইনগত অধিকার বলতে ব্যক্তির সে অধিকারকে বোঝায় যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং অনুমোদিত।

৮. আইনগত অধিকার কত প্রকার? 
উত্তর:
আইনগত অধিকার হয় প্রকার।

৯. নাগরিকের সরকারি চাকরি লাভ কোন ধরনের অধিকার? 
উত্তর:
নাগরিকের সরকারি চাকরি লাভ রাজনৈতিক অধিকার।

১০. বিশ্বায়ন কী?
উত্তর:
ধর্ম , বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সব দেশের সব মানুষের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , প্রযুক্তিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য ও একাত্মতার ধারণাই হলো বিশ্বায়ন।

১১. কীসের ফলে নাগরিক সমাজ বিশ্ব নাগরিক সমাজে পরিণত হচ্ছে? 
উত্তর:
বিশ্বায়নের ফলে।

১২. কোন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি মৌলিক সঞ্চালক হিসেবে কাজ করছে? 
উত্তর:
বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি মৌলিক সঞ্চালক হিসেবে কাজ করছে।

১৩. তথ্য অধিকার কী?
উত্তর:
রাষ্ট্রের বিধানাবলী সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বিষয়ে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে।

১৪. বাংলদেশে তথ্য অধিকার আইন কখন প্রণীত হয়? 
উত্তর:
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয় ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল।

১৫. তথ্য কমিশন মোট কতজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।
উত্তর: তথ্য কমিশন মোট তিন জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।

১৬. তথ্য জানা থাকলে কোন বিষয়টি সহজ হয় ? 
উত্তর:
তথ্য জানা থাকলে অধিকার আদায় সহস্র হয়।

১৭. কত সালে কোথায় মৌলিক মানবাধিকারসমূহ ঘোষিত হয়েছে?
উত্তর:
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মৌলিক মানবাধিকারসমূহ ঘোষিত হয়েছে।

১৮. অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার সম্পর্কে কাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন ? 
উত্তর:
প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।

১৯ . নাগরিকের কর্তব্যকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর:
নাগরিকের কর্তব্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: নৈতিক ও আইনগত কর্তব্য।

২০. আইনগত কর্তব্য কাকে বলে? 
উত্তর:
রাষ্ট্রের আইনের দ্বারা আরোপিত কর্তব্যকে আইনগত কর্তব্য বলে।

২১. নৈতিক কর্তব্য কী?
উত্তর:
নীতি সচেতন হয়ে এবং ন্যায়বোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাগরিক যে কর্তব্য পালন করে তাকে নৈতিক কর্তব্য বলে।

২২. রাষ্ট্রীয় উৎপাদন ও উন্নয়নে অংশগ্রহণ করা কোন ধরনের কর্তব্য? 
উত্তর:
অর্থনৈতিক কর্তব্য।

২৩. অধিকার ভোগ করতে হলে কোন কাজটি করা আবশ্যক? 
উত্তর:
রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য সম্পাদন করা।

২৪. নাগরিকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য কোনটি? 
উত্তর:
নাগরিকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হলো রাষ্ট্রকে রক্ষা করা।

২৫. মানবাধিকার কী? 
উত্তর:
মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রাপ্য তাই মানবাধিকার।

২৬. বিশ্ব মানবাধিকার দিবস কবে পালিত হয়? 
উত্তর:
১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয়।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. অধিকার বলতে তুমি কী বোঝ? 
উত্তর:
সামাজিক জীব হিসেবে ব্যক্তি যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে তাই অধিকার। অধিকার হচ্ছে এমন কতগুলো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা যা সকলের জন্য আবশ্যক। অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। অধিকার ছাড়া মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করতে পারে না। অধ্যাপক লাস্কি এজন্যই বলেছেন, 'প্রত্যেক রাষ্ট্রই পরিচিত হয় তার প্রদত্ত অধিকার দ্বারা । জীবনের অধিকার, কর্মের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার প্রভৃতি মানুষের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অধিকার।

২ অধিকার কত প্রকার কী কী? 
উত্তর:
অধিকার প্রধানত দুই প্রকার। যথা- ১. নৈতিক অধিকার ও ২ . আইনগত অধিকার। সমাজের নৈতিকতা বা ন্যায়বোধ থেকে যে অধিকারের উৎপত্তি তাকে নৈতিক অধিকার বলে। আর রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত অধিকারকে আইনগত অধিকার বলে। আইনগত অধিকার আবার । সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক অধিকার এই তিন ভাগে বিভক্ত।

৩. চারটি রাজনৈতিক অধিকারের নাম লেখো।
উত্তর:
যে সব অধিকার একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় সেগুলোকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। রাজনৈতিক অধিকার সংবিধান অথবা আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত থাকে। এ অধিকার ভোগের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে। চারটি রাজনৈতিক অধিকার হলো: ১. ভোটদান করা ২. নির্বাচিত হওয়া ৩. সরকারি চাকরি লাভ ৪. বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভ।

৪. রাজনৈতিক অধিকার বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর:
রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বা শাসক নির্বাচনের অংশ হিসেবে জনগণ যেসব অধিকার ভোগ করে তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে । যেমন- ভোট প্রদানের অধিকার , নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার অধিকার , রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার অধিকার , সরকারি চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি । বাংলাদেশ সংবিধানে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।

৫. সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে আইনগত অধিকার বলা হয় কেন?
উত্তর:
সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদিত বলে এগুলোকে আইনগত অধিকার বলা হয়। আইনগত অধিকারের পশ্চাতে থাকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব। এই অধিকার অমান্যকারীকে শাস্তি প্রদান করা হয়। বিভিন্ন প্রকার সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার যেমন: চলাফেরার অধিকার, জীবনধারনের অধিকার, নির্বাচনের অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার প্রভৃতি আইন দ্বারা স্বীকৃত। এসব অধিকার অমান্যকারীকে রাষ্ট্র শাস্তি প্রদান করে। তাই সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে আইনগত অধিকার বলা হয়।

৬. অধিকারের মূল লক্ষ্য সর্বজনীন কল্যাণ সাধন কিন্তু অবাধ নয় মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
অধিকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যক্তির সর্বজনীন কল্যাণ সাধন করা। এটা কোনো বিশেষ ব্যক্তির কল্যাণের জন্য নয়। আমরা জানি, অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, অনুমোদিত ও সংরক্ষিত হয়। রাষ্ট্রের অনুমোদন ছাড়া কোনো সুযোগ-সুবিধা অধিকার বলে গণ্য হয় না। এছাড়া একজনের অধিকার সমাজের অন্য সকলের কর্তব্য পালনের ওপর নির্ভরশীল। তাই বলা যায়, অধিকারের মূল লক্ষ্য সর্বজনীন কল্যাণ সাধন কিন্তু অবাধ নয়।

৭. তথ্য অধিকার বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর:
তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। রাষ্ট্রের বিধানাবলি সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বিষয়ে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে। আইনানুগ কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, দাপ্তরিক নথিপত্র, আর্থিক সম্পদের বিবরণ ইত্যাদিকে তথ্য বলা হয়। প্রত্যেক নাগরিকেরই তথ্য জানার এবং জানানোর অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ ' পাস করে।

৮. তথ্য অধিকার আইন বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর:
বাংলাদেশ সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল যে আইন পাস করে তাই তথ্য অধিকার আইন তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার। রাষ্ট্রের বিধানাবলি মানা করা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে। এর আওতায় আইনানু কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, দাপ্তরিক নথিপত্র, আর্থিক সম্পদের বিবরণ ইত্যাদি তথ্য হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক নাগরিকেরই তথ্য জানার এবং জানানোর অধিকার রয়েছে।

৯. কর্তব্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:
কর্তব্য হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গতিশীল , সচল , ন্যায়ানুগ ও প্রাণবন্ত করার জন্য নাগরিকের বিশেষ দায়িত্ব । অধিকার ভোগের বিনিময়ে নাগরিককে বেশকিছু দায়িত্ব পালন করতে হয় । এসব দায়িত্বকেই নাগরিকের কর্তব্য বলা হয় । অর্থাৎ কর্তব্য বলতে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য কোনো কিছু করা বা না করার দায়িত্বকে বোঝায় । যেমন- আইন মেনে চলা , নিয়মিত কর প্রদান করা , যোগ্য প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা , অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোট প্রদান না করা , সন্তানকে শিক্ষাদান করা ইত্যাদি নাগরিকের কর্তব্য।

১০. তুমি কেন কর্তব্য পালন করবে?
উত্তর:
রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গতিশীল ও ন্যায়ানুগ করার জন্য নাগরিক হিসেবে আমি কর্তব্য পালন করব রাষ্ট্রের নাগরিকের কর্তব্য পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের কর্তব্য পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকার ভোগের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে উন্নতি লাভ করা যায়। রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা কেবল কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই সম্ভব। এসব কারণেই আমি রাষ্ট্রের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করব।

১১. সামাজিক কর্তব্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর:
সামাজিক জীব হিসেবে সমাজজীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলাই মানুষের সামাজিক কর্তব্য। সমাজে বসবাসরত অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গঠন এবং সেগুলো পরিচালনা , সন্তানাদিকে শিক্ষিত এবং সামাজিক করে গড়ে তোলা, তাদের লক্ষ্যে সামাজিক কৃষ্টি ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি সবই সামাজিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত । সমাজসেবামূলক কাজকেও সামাজিক কর্তব্য বলা যায়। যে কোনো দুর্যোগ ও মহামারিতে আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা সমাজসেবামূলক কাজ, যা সামাজিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।

১২. অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে দুটি সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে দুটি সম্পর্ক হলো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও উৎপত্তিগত সম্পর্ক। কারও অধিকার বলতে যেমন তার কর্তব্যকেন্ড বোঝায় তেমনি একজনের অধিকার বলতে অন্যের কর্তব্যকে বোঝায় । একজনের অধিকার ভোগ অন্যজনের কর্তব্য পালনের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর নির্ভরশীল । অধিকার ও কর্তব্য সমাজবোধ থেকে এসেছে। এদের উভয়ের অস্তিত সমাজের মধ্যে বিদ্যমান এবং সমাজের মধ্যেই এদের ভোগ ও পালন হয়ে থাকে। অধিকার ভোগ ও কর্তব্য পালনের মধ্যে সমাজের মঙ্গল নিহিত। অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবেও অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কিত।

১৩. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও কর্তব্য বলতে কী বোঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
বিশ্ব নাগরিক হিসেবে একজন ব্যক্তি সারা বিশ্বের শান্তি ও প্রগতির জন্য যে দায়িত্ব পালন করে তাই নাগরিকের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব (village) আধুনিক বিশ্বে প্রয়োজনের তাগিদে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বকে পরিণত করেছে বিশ্বগ্রামে (Global) বিশ্বশান্তি ও প্রগতির জন্য বিশ্বের সকল নাগরিকের আন্তর্জাতিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কাজ কর , সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধিতা করা , আন্তর্জাতিক কল্যাণ সাধন করা এবং জাতিসংঘের আদর্শ ও কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।

১৪. অধিকার ও কর্তব্য পরস্পর পরিপুরক ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
অধিকার ও কর্তব্য একে অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করতে হলে নাগরিককে কতগুলো কর্তব্য পালন। করতে হয়। একজনের অধিকার বলতে অন্যজনের কর্তব্যকে বোঝায়। প্রত্যেকটি নাগরিক অধিকার এক একটি নাগরিক কর্তব্য। কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই অধিকার সুনিশ্চিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভোটদান হলো, অধিকার এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ হচ্ছে কর্তব্য। অর্থাৎ কর্তব্য পালনের মধ্যেই অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা নিহিত। তাই বলা যায় , অধিকার ও কর্তব্য পরস্পরের পরিপূরক।

১৫. মৌলিক অধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:
মৌলিক অধিকার হচ্ছে সেসব অধিকার যা রাষ্ট্রের সংবিধানে সন্নিবেশিত ও বলবৎযোগ্য থাকে। মৌলিক অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত হলে সে আদালতের মাধ্যমে তার অধিকার ফেরত পেতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত রায়ের মাধ্যমে সরকারকে ঐসব অধিকার বঞ্চিত ব্যক্তিকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার হুকুম দিতে পারে। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৭ থেকে ৪৪ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

১৬. মানবাধিকার বলতে কী বোঝায়?
উত্তর:
মানুষ হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে একজন ব্যক্তির যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রাপ্য তাই মানবাধিকার। যে কোনো ধরনের নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে মানবাধিকারের ধারণা বিকাশ লাভ করেছে। মানবাধিকার বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সভ্য সমাজে স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। জীবন ধারণ করা, ন্যায়বিচার পাওয়া, অবাধ ও মুক্ত চিন্তা , মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদের অধিকার ইত্যাদি কয়েকটি মানবাধিকার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, অঞ্চল নির্বিশেষে মানবাধিকারগুলো এক ধরনের হয়ে থাকে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুমোদন করে। এ মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে জাতীয় পর্যায়ে মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই করা যেতে পারে।

১৭. মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের পার্থক্য দেখাও।
উত্তর:
মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক অধিকারের উৎস হলো রাষ্ট্রের সংবিধান। অন্যদিকে, মানবাধিকারের উৎস হলো জাতিসংঘ। মৌলিক অধিকারের পরিধি নিজ রাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ, আর মানবাধিকারের পরিধি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। মৌলিক অধিকার বিকাশ লাভ করে রাষ্ট্রীয় চেতনবোধ থেকে। কিন্তু মানবাধিকার বিকাশ লাভ করে আন্তর্জাতিক চেতনাবোধ থেকে। মানবাধিকার অপেক্ষা মৌলিক অধিকার অনেকটা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট।

১৮. মৌলিক অধিকার কেন প্রয়োজন? 
উত্তর:
নাগরিকের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য মৌলিক অধিকার মৌলিক অধিকার হলো রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকের সেসব সুযোগ - সুবিধা, যা নাগরিকের বেঁচে থাকা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য প্রয়োজন। মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও বলকযোগ্য। এ অধিকার মানুষের মৌলিক চাহিদা বা প্রয়োজনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। আর মৌলিক চাহিদা পূরণ ব্যতীত নাগরিকের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ভার নয়। তাই নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার অপরিহার্য।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url