সপ্তম শ্রেণি, কৃষি শিক্ষা, প্রথম অধ্যায় (কৃষি এবং আমাদের সংস্কৃতি) || Class Seven, Agricultural Education, Chapter 1
২। নবান্ন উৎসব কাকে বলে?
উত্তর: হাড়ভাঙা খাটুনি এবং নানা সমস্যা মোকাবেলা করে কৃষক যখন ফসল কেটে আপন বাড়ির আঙিনায় এনে জড় করে তখন কৃষক পরিবারে খুশির প্লাবন বয়ে যায়। নতুন চালের গন্ধে গৃহস্থ বাড়ি ভরে ওঠে। উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। নতুন ভাতের এ উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হয়।
৩। কৃষি উৎপাদনের প্রধান লক্ষ্য কি?
উত্তর: মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য খাদ্য প্রয়োজন। আর খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ সম্পূর্ণভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষি উৎপাদনের প্রধান লক্ষ্য হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করা।
৪। ডিম উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয় হাঁসের নাম লেখ।
উত্তর : ডিম উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয় হাঁসের নাম হলো খাকি ক্যাম্বেল।
উত্তর: আমাদের দেশে নানা ধরনের সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ইতিহাস হলো গ্রাম্য মেলা। নবান্ন ইত্যাদি উৎসবের অংশ হিসেবে অথবা পৌষ মাসে গ্রাম্য মেলা বসত যা এখনও চালু আছে। এই সব মেলায় যেমন নানা প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র নিয়ে পসারিরা বিক্রি করতে বসে তেমনি এখানে তাঁতের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা, চুড়ি, মেয়েলি প্রসাধনি, কামার-কুমারের নানা ধাতব বা মাটির জিনিসপত্র, বইপত্র , পাটি বিক্রির জন্য ওঠে। বিনোদনেরও নানা আয়োজন দেখা যায়। রাতভর চলে যাত্রা বা পালা গান। এই সব মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। অর্থাৎ এই মেলাগুলো গ্রামীণ অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক মেলা।
২। উদাহরণসহ বাংলাদেশে ফসল বৈচিত্র্যের অনুকূল কারণগুলোর একটি তালিকা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশে ফসল বৈচিত্র্য বহুমাত্রিক। উদ্দীপকে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনে পণ্য বৈচিত্র্যময়তা দেখানো হয়েছে। এ বৈচিত্র্যময়তা বাংলাদেশের কৃষির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যেসব কারণে বাংলাদেশ এ বৈচিত্র্যময়তা দেখা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
মাটি: বাংলাদেশের নদী অববাহিকাগুলোতে বেলে দোআঁশ মাটির প্রাধান্য থাকলেও বেশ কিছু উঁচু অঞ্চল আছে যার মাটি লালচে ও এঁটেল। আবার হাওর অঞ্চলগুলোতে কালো, জৈব পদার্থ যুক্ত মাটির প্রাধান্য দেখা যায়। এই মাটি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় প্লাবিত থাকে। মাটির পার্থক্যের প্রভাবে কৃষিও বৈচিত্র্যতা পায়।
কৃষি মৌসুম: গড় বিবেচনায় প্রধান দুটি কৃষি মৌসুম অর্থাৎ রবি ও খরিফ থাকলেও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এখানে আরও ৪ টি ঋতুর প্রকাশ আছে অর্থাৎ মোট ছয়টি ঋতু। যার প্রভাবও কৃষিতে বৈচিত্র্য সৃষ্টির অন্যতম নিয়ামক।
নৃ-তাত্ত্বিক পরিবেশ: কথায় আছে বাংলাদেশে নানা জাতের মানুষ এসে স্থিতু হয়েছে। এঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে যেমন খাদ্যাভ্যাস, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও বৈচিত্র্য রয়েছে যার প্রভাবে এ দেশের কৃষিও বৈচিত্র্যময় হয়েছে।
বাংলাদেশের অবস্থানগত পরিবেশ: বাংলাদেশ পৃথিবীর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে জলজ মেঘমালা উৎপন্ন হয়ে মৌসুমি বায়ুবাহিত হয়ে উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টি ঝড়ায়। আবার এই পর্বতমালা দেয়ালের মতো শীতকালে সাইবেরিয়ার হিমশীতল বায়ু প্রবাহ আটকে দেয় ফলে শীতও কম। ফলে জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দেশ হতে পেরেছে বাংলাদেশ।
৩। 'আমাদের দেশে নবান্ন উৎসব একটি কৃষিভিত্তিক উৎসব’ – ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: হাড়ভাঙা খাটুনি, নানা উৎকণ্ঠা ও দীর্ঘ অপেক্ষার পরে যখন সোনালি ফসল এসে বাড়ির আঙিনা ভরে যায় তখন কৃষক পরিবারের আবাল, বৃদ্ধ, বনিতার মনে খুশির প্লাবনে সিক্ত হয়ে ওঠে। কৃষক কৃষাণির চোখে মুখে ফুটে ওঠে দিগ্বিজয়ের আনন্দ। বুকভরা আনন্দ নিয়ে তারা লেগে যান ফসল মাড়াই, শুকানো ও গোলাজাতকরণের কাজে। ওদিকে মেয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঢেঁকিতে ধান ভানা ও নতুন চাল গুঁড়ো করার কাজে।
৪. পরিবার ও সমাজ গঠনে কৃষির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কৃষিকে কেন্দ্র করেই আমাদের পরিবার ও সমাজ গঠনের সূচনা হয়েছিল। কৃষি উদ্ভাবনের পূর্বে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো পশুপাখি শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ করে। জীবিকার তাগিদে তারা এখানে সৈখানে ঘুরে বেড়াত, বেছে নিয়েছিল যাযাবর জীবন। যেখানে পরিবার গঠনের ধারণাও ছিল না তাদের। এক পর্যায়ে পরিবেশ ও ঘটনা পরম্পরায় মানুষ দেখল ফল খেয়ে ফেলে রাখা বীজ থেকে নতুন গাছ জন্মে একই ফল দেওয়া শুরু করেছে। তখন মানুষের মনে জন্ম নিল কৃষির ধারণা। তারপর কৃষিকাজে মনোনিবেশ করে তারা । কাঙ্ক্ষিত ফসল পেতে নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের। জীবনে আসে স্থায়িত্ব, পরিত্যক্ত হয় যাযাবর জীবন।
৫। খাদ্য হিসেবে প্রাণিজ উৎপাদনের গুরুত্ব উদাহরণসহ আলোচনা কর ।
উত্তর: খাদ্য হিসেবে প্রাণিজ উৎপাদনের গুরুত্ব অপরিসীম । নিচে প্রাণিজ উৎপাদনের গুরুত্ব উদাহরণসহ আলোচনা করা হলো-
মাছ: বাঙালির একটি পরিচয় মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ পালন ও উৎপাদন আমাদের কৃষির অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমাদের দেহের আমিষের চাহিদার অধিকাংশই পূরণ হয় মাছের মাধ্যমে। তাছাড়া মাছ বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হচ্ছে।
কাঁকড়া: খাদ্য হিসেবে কাঁকড়া বাংলাদেশে জনপ্রিয় না হলেও এর চাহিদা থাকায় রপ্তানির জন্য দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন হচ্ছে।
মুরগি ও ডিম: গৃহস্থ পরিবারে মুরগি ও ডিম উৎপাদনের ঐতিহ্য বহুকালের। দেশি মুরগির মাংস সুস্বাদু কিন্তু ডিম কম দেয়। স্বাধীনতার পর থেকে খামারে মুরগি উৎপাদন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। খামারে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য পৃথক জাত ব্যবহৃত হয়।
হাঁস ও হাঁসের ডিম: খাদ্য হিসেবে হাঁস ও হাঁসের ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু। ‘খাকি ক্যাম্বেল' জাতীয় হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয়।
অন্যান্য পাখি: কবুতর পালনের পাশাপাশি বর্তমানে কোয়েল ও কোয়েলের ডিম উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
ছাগল: যাবর কাটা পশুদের মধ্যে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে ছাগল বেশ জনপ্রিয়। এর মাংস খুবই সুস্বাদু। ছাগল থেকে মাংস ছাড়াও দুধ পাওয়া যায়।
ভেড়া: দেশের কিছু কিছু এলাকায় ভেড়ার চাষ হয়। ভেড়ার মাংস আমিষের অভাব মিটায়।
গরু: পশুপালকদের সব চেয়ে প্রিয় পশু গরু। মাংস উৎপাদনের জন্য দেশি বিদেশি বহুজাতের গরু উৎপাদন করা হয়। এছাড়া দুধ উৎপাদনের জন্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দুধেল গরু বেশ জনপ্রিয়।
মহিষ: গরুর মতো মহিষও এদেশে অঞ্চল বিশেষে জনপ্রিয়। মহিষের দুধ ঘন হওয়ায় দধি ও মিষ্টান্ন শিল্পে এর বিশেষ কদর রয়েছে।