সপ্তম শ্রেণি, কৃষি শিক্ষা, তৃতীয় অধ্যায় (কৃষি উপকরণ) || Class Seven, Agricultural Education, Chapter 3 (Agricultural Materials)
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১। অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান বলতে কী বোঝ?
উত্তর: উদ্ভিদ তার বৃদ্ধি ও পরিপুষ্টির জন্য মাটি, বায়ু ও পানি হতে কতগুলো পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। এ উপাদানগুলোর অভাবে উদ্ভিদ সুষ্ঠুভাবে বাঁচতে পারে না। এ পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাব হলে তা অন্য কোনো উপাদান দ্বারা পূরণ করা যায় না। তাই এ পুষ্টি উপাদানগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান বলে।
২। উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানের উৎসসমূহ কয়টি ও কী কী?
উত্তর: উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদানসমূহের উৎস হলো ২ টি। এগুলো হলো-
প্রাকৃতিক উৎস: মাটি, বায়ু ও পানি।
কৃত্রিম উৎস: জৈব সার, রাসায়নিক সার।
৩। সম্পূরক খাদ্য বলতে কী বোঝ?
উত্তর: মাছ ও পশুপাখি থেকে দ্রুত ও অধিক উৎপাদন পেতে হলে প্রচলিত খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিনই কিছু অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। এ খাদ্যকেই সম্পূরক খাদ্য বলে।
৪। সবুজ সার কী?
উত্তর: জমিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহের জন্য যেকোনো সবুজ উদ্ভিদ জন্মিয়ে কচি অবস্থায় জমি চাষ করে মাটির নিচে ফেলে পচিয়ে যে সার প্রস্তুত করা হয় তাকে সবুজ সার বলে।
অনুধাবন মূলক প্রশ্ন:
১। সবুজ সারের উপকারিতা বর্ণনা কর।
উত্তর: সবুজ সারের নানাবিধ উপকারিতা আছে । এগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
উত্তর: সবুজ সারের নানাবিধ উপকারিতা আছে । এগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. মাটির উর্বরতা বাড়ে ;
২. মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ যোগ হয় ;
৩. মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ;
৪. মাটিশ্ব অণুজীবের কার্যাবলি বৃদ্ধি পায় ;
৫. মাটিস্থ পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ করে ;
৬. মাটির জৈবিক পরিবেশ উন্নত করে।
২. মাটিতে প্রচুর জৈব পদার্থ যোগ হয় ;
৩. মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ;
৪. মাটিশ্ব অণুজীবের কার্যাবলি বৃদ্ধি পায় ;
৫. মাটিস্থ পুষ্টি উপাদান সংরক্ষণ করে ;
৬. মাটির জৈবিক পরিবেশ উন্নত করে।
২। বালাইনাশক বলতে কী বোঝ? বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশকের বর্ণনা দাও।
উত্তর : রোগজীবাণু কীটপতঙ্গ ইত্যাদি হলো ফসলের জন্য বালাই। এই বালাই নিধনের জন্য যেসব জৈব, অরাসায়নিক ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাই হলো বালাইনাশক। যেসব বালাইনাশক বিভিন্নপ্রকার উদ্ভিদ রস / নির্যাস , প্রাণিজ ও বিভিন্ন জৈবিক কলাকৌশল থেকে তৈরি করা হয় তাদের জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশক বলা হয়।
নিচে জৈব ও অরাসায়নিক বালাইনাশকের বর্ণনা দেওয়া হলো-
ক. জৈব বালাইনাশক:
১. এলামণ্ডা গাছের নির্যাস ছত্রাকনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
২. রসুনের নির্যাস ব্যবহার করে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা যায়।
৩. নিমের নির্যাস ব্যবহার করে কীটপতঙ্গের আক্রমণ হতে রেহাই পাওয়া যায় । নিমের তেল ও খৈল ফসলের মূলের কৃমিনাশক । যেমন : নিমবিসিডিন।
৪. তামাক পাতার নির্যাস ' নিকোটিন সালফেট ' ব্যবহার করে ফসলের কাণ্ড বা পাতায় কীটপতঙ্গের আক্রমণ রোধ করা যায়।
৫. মুরগির পচনকৃত বিষ্ঠা ও সরিষার খৈল ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজি ফসলের মাটি বাহিত রোগ দমন করা যায়।
৬. সুগারবিটের শিকড় থেকে আহরিত লাইমো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি উদ্ভিদের মাটি বাহিত " ড্যাম্পিং অফ " রোগ দমনে একটি কার্যকরি ব্যাকটেরিয়াম।
৭. বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সার প্রয়োগ করে ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া হতে রেহাই পাওয়া যায়।
খ. অরাসায়নিক বালাইনাশক :
১. ধানের পাতার লালচে রেখা রোগ মুক্ত করতে হলে ধানের বীজ ৫৪ ° সে. তাপমাত্রায় পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বীজবাহিত রোগ ব্যাকটেরিয়া দূর করা যায়।
২. জাব পোকা দমনে লেডিবার্ড বিটল পোকা ডাল ও তেল জাতীয় ফসলে বৃদ্ধি করা যায়।
৩. আলোর ফাঁদ পেতে পূর্ণ বয়স্ক পোকা ধরে ফেলা বা মেরে ফেলা;
৪. হাত জাল ব্যবহার করে পোকা ধরে ফেলা।
৫. জমিতে গাছের ডাল বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পাখি বসিয়ে পোকা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে।
৬. কলম চারা ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন ও টমেটোর ব্যাকটেরিয়াল উইন্ট রোগ দমন করা যায়।
৭. পরজীবী পোকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যেমন— নেকড়ে মাকড়সা, ঘাসফড়িং, ড্যামসেল মাছি, মিরিডবাগ ইত্যাদি।
৮. জমিতে ব্যাঙের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৩ । কৃষিতে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক উল্লেখ কর।
উত্তর : নিচে রাসায়নিক বালাইনাশকের ক্ষতিকর দিকগুলো বর্ণনা করা হলো-
১. দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে শস্য ক্ষেতে বালাই বা কীটপতঙ্গ বালাইনাশককে বাধাদানের ক্ষমতা অর্জন করে । ফলে ঐ বালাইনাশক দিয়ে আর নির্দিষ্ট কীট বা বালাইকে ধ্বংস করা যায় না।
২. অধিকাংশ কীটনাশক প্রাকৃতিক শিকারী জীব ও মৃত্তিকার উপকারী অণুজীবগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।
৩ . শস্যক্ষেতে প্রয়োগকৃত কীটনাশক ও বালাইনাশকের খুব সামান্য অংশ (১% বা এর কাছাকাছি) কাঙ্ক্ষিত কীট বা বালাইয়ের কাছে পৌঁছাতে পারে।
৪ . প্রয়োগকৃত রাসায়নিক বালাইনাশকের একটি বড় অংশ বাতাসে, ভূ - পৃষ্ঠের পানিতে, ভূ - গর্ভস্থ পানিতে অনুপ্রবেশ করে এবং জীবের খাদ্য চক্রে ঢুকে পড়ে।
৫. মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাস করে।
৬. রাসায়নিক বালাইনাশক জীব বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে।
৭. রাসায়নিক বালাইনাশক সার্বিকভাবে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরাট ক্ষতিসাধন করে থাকে।
৪। উদ্ভিদের জীবনচক্রে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়ামের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর: উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় ১৭ টি পুষ্টি উপাদানের মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম - এ তিনটি উপাদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মূখ্য পুষ্টি উপাদান। উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য এ পুষ্টি উপাদানগুলো অধিক পরিমাণে দরকার। উদ্ভিদের জীবনচক্রে এ পুষ্টি উপাদানগুলোর ভূমিকা নিচে বর্ণনা করা হলো নাইট্রোজেন:
১. গাছকে ঘন সবুজ রাখে।
২. গাছের পাতা , কাণ্ড ও ডালপালার বৃদ্ধি ঘটায়।
৩. অধিক কুশি সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
৪ . দানা জাতীয় ফসলে আমিষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৫. ফলের আকার আকৃতি বড় করে।
৬ . পাতা জাতীয় ফসলের পরিমাণ ও গুণাগুণ বৃদ্ধি করে।
৭. উদ্ভিদকে খরা ও শীত সহনশীল করে তোলে।
৮. গাছের পরিপক্বতা আনায়নে সাহায্য করে।
ফসফরাস:
১. উদ্ভিদের শিকড় গঠনে সাহায্য করে।
২. সময়মত ফুল ফোটায় ও ফসল পাকায়।
৩. ফসলের গুণগত মান বাড়ায়।
পটাসিয়াম:
১. শক্ত ও মজবুত কাণ্ড গঠন করে।
২. উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. উদ্ভিদের পাতা, কাণ্ড ও ফলের বৃদ্ধি সমুন্নত রাখে।
৪. গাছের শিকড় বৃদ্ধি করে।
৫. দানা জাতীয় শস্যের দানা পুষ্ট করে।
৬. তামাক পাতার গুণাগুণ বৃদ্ধি করে।
৫। কম্পোস্ট সার বলতে কী বোঝ? পরিখা পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরির বর্ণনা দাও।
উত্তর: গবাদিপশুর উচ্ছিষ্ট, খড়কুটা, বিভিন্ন প্রকার কৃষিবর্জ্য আগাছা, কচুরিপানা প্রভৃতি খামার প্রাঙ্গণে স্তরে স্তরে সাজিয়ে অণুজীবের সাহায্যে পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে কম্পোস্ট বলে। তাই অনেকগুলো জিনিস একত্রে পচিয়ে বা কখনও একটি মাত্র উপাদান দিয়েও কম্পোস্ট তৈরি করা যায়।
কম্পোস্ট সার তৈরিতে পরিখা পদ্ধতি:
১. প্রথমে একটি উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে;
২ . নির্বাচিত স্থানে ৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থ ও ১.২ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট পরিখা খনন করতে হবে;
৩. এভাবে ৬ টি পরিখা পাশাপাশি খনন করতে হবে;
৪. পরিখার উপর চালার ব্যবস্থা করতে হবে;
৫. পাঁচটি পরিখা স্তূপ পদ্ধতির ন্যায় আবর্জনা, খড়কুটা, লতাপাতা, গোবর দিয়ে পর্যায়ক্রমে সাজাতে হবে এবং একটি পরিখা খালি থাকবে;
৬. প্রতিটি পরিখার আবর্জনার স্তূপ ভূপৃষ্ঠ হতে ৩০ সে. মি. উঁচু;
৭. চার সপ্তাহ পর নিকটবর্তী পরিখার কম্পোস্ট খালি পরিখায় স্থানান্তর করতে হবে;
৮. এভাবে কম্পোস্টের উপাদানগুলো ওলটপালট করতে হবে। ফলে উপাদানগুলোর পচনক্রিয়াও ত্বরান্বিত হবে।