ডিজিটাল নিক্তির ব্যবহার || Digital niktir byabohar

 ডিজিটাল নিক্তি

রাসায়নিক বিশ্লেষণে প্রয়োজনীয় সঠিক ও সূক্ষ্ম ওজন নেওয়ার জন্য আধুনিক ইলেকট্রোনিক ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবস্থার করা হয়। এই ব্যালেন্স ব্যবহার করে অধিকতর সহজে রাসায়নিক দ্রব্য পরিমাপ করা যায়। ডিজিটাল ব্যালেন্সে বস্তুর ওজন পর্দার ওপর অংকে (digit) ভেসে ওঠে বা দৃশ্যমান হয়। এ ব্যালেন্স এখন সব দেশেই রসায়ন ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ব্যালেন্স অত্যন্ত সংবেদশীল যন্ত্র। এখানে বস্তুর ওজন মিলিগ্রাম (0.001g) লেভেলে মাপা সম্ভব। অর্থাৎ এক, দুই, তিন ও চার দশমিক ভগ্নাংশ (0.1, 0.01, 0.001, 0.0001) পর্যন্ত পরিমাপ করা যায়। বস্তুত ডিজিটাল নিক্তিগুলো একক প্যান বিশিষ্ট (single pan type)। এ প্যানের চারদিকে কাঁচের দরজা দিয়ে ঢাকা । প্যানের ডান, বাম ও ওপরের দরজা তিনটি স্লাইড (slide) করে খোলা যায়। ফলে প্যানের ওপর ওজনকৃত বস্তু রাখা বা বের করা সহজ হয়। 

নিক্তির সামনের দিকে একটি বার (bar) ও একটি ডিসপ্লে (display) জানালা আছে । ডিসপ্লে জানালার পাশে on / off অঞ্চল বা বার আছে, যা চাপ দিয়ে নিক্তি on বা off করা যায়। নিক্তি on করলে ডিজিটাল ডিসপ্লে 0.000 g বা 0 : 0000g দেখা যাবে। 
ডিজিটাল ব্যালেন্স দুই ধরনের। যথা, 
(i) 2 - ডিজিট ব্যালেন্স 
(ii) 4 - ডিজিট ব্যালেন্স। 

i. 2 - ডিজিট ব্যালেন্স প্রকৃতপক্ষে 0.001g পর্যন্ত নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায়। বিকারক প্রস্তুতি, সেকেন্ডারী পদার্থের ওজন পরিমাপ ও শতকরা এককে দ্রবণ প্রস্তুতিতে সাধারণত এই ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে সুক্ষ্ম পরিমাপের প্রয়োজন হয় না। সেসব ক্ষেত্রে এই ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।

ii. 4 - ডিজিট ব্যালেন্স প্রকৃতপক্ষে 0.0001g পর্যন্ত সূক্ষ্ম ও নির্ভুলতার পরিমাপ করা যায়। প্রাইমারি স্যান্ডার্ড পদার্থের প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুত করার জন্য এই ব্যালেন্স থেকে এদের ওজন নেওয়া হয়। প্রাইমারি স্যান্ডার্ড পদার্থের দ্রবণের ঘনমাত্রা পরিমাপে সূক্ষ্মতা অতি জরুরী।

ডিজিটাল ব্যালেন্স দ্বারা ওজন নির্ণয়ের পদ্ধতি
ডিজিটাল ব্যালেন্সের ধরন ভিন্ন ভিন্ন হলেও ওজন নেওয়ার পদ্ধতি প্রায় একই। সম্মুখ বারে ' ‘tare' শব্দ লিখিত বোতামে চাপ দিয়ে ব্যালেন্সকে শুন্য (0.000) প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। সে পাত্রে বা কাগজে রাসায়নিক পদার্থের ওজন নেওয়া হবে প্রথমে তার ওজন পরিমাপ করা হয়। এই ব্যালেন্সে পাত্রের ভর রেকর্ড না করলেও অসুবিধা হয় না। পাত্রের ওজনকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। 'tare' এ চাপ দিলে পুনরায় জিরো (0.000) প্রদর্শন করবে। ওজন নির্ণয়ের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়। 
১। কাগজ বা ওজন নৌকা বা ওজন নেওয়ার পাত্রকে প্যানের ওপর রাখা হয়। 
২। 'tare' চাপ দিয়ে মনিটরে জিরো (0.000) আনা হয়। 
৩। স্পাচুলার সাহায্যে রাসায়নিক দ্রব্য প্যানের ওপর রাখা পাত্রে স্থানান্তর করে কাঙ্খিত ওজন পরিমাপ করা হয়।
৪। ওজন পরিমাপ শেষে পাত্র ও রাসায়নিক দ্রব্য প্যান থেকে নেমে ব্যালেন্সের সুইচ বন্ধ করা হয়। 

ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহারের সতর্কতা 
১। রাসায়নিক দ্রব্য প্যানের ওপর রেখে দরজা বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হয় এবং তারপর স্থির ওজন গ্রহণ করা হয়। পর্দায় ভেসে ওঠা সকল অংক (digit) রেকর্ড করা উচিত। 

২। নিক্তির প্যানের ওপর সরাসরি কোন রাসায়নিক বস্তু রাখা ঠিক নয়। রাসায়নিক বস্তুর বেশির ভাগই ক্ষয়কারী (corrosive)। এসব বহু প্যানে লেগে থাকলে কয়েক মিনিটের মধ্যে নিষ্ক্রির সংবেদনশীলতা (sensitivity) ধ্বংস করবে এবং নিক্তির যান্ত্রিক কলাকৌশল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

৩। কখনই উত্তপ্ত বস্তুর ওজন নেয়া ঠিক নয়। কারণ বায়ুর কনভেকশন স্রোত (convection current) ওজনের তারতম্য (fluctuation) ঘটায় । 

৪। কক্ষ তাপমাত্রায় ওজন করা উচিত।

৫। কঠিন বস্তু ওজনকালে সামান্য ওজন যুক্ত বা হারাতে হতে পারে । কারণ কঠিন বস্তু সবসময় সম্পূর্ণভাবে শুষ্ক থাকে না। 

৬। তরল বস্তুর ওজন নিতে হলে মুখবদ্ধ ধারক ব্যবহার করতে হবে। 

৭। প্রতিটি ডিজিটাল নিক্তির সঙ্গে sable brush থাকে। এর দ্বারা প্যান ও আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে হয়। (ওজন শেষে)। 

৮। ওজনকালে কোন তরল পদার্থ ছিটকে পড়লে তা কাগঞ্জের তোয়ালে দ্বারা পরিষ্কার করতে হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url