সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন কেন? || ''Sammo byatito Shadhinata arthahin''— kena?

তৃতীয় অধ্যায়: মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. মূল্যবোধ কী?
উত্তর: মূল্যবোধ হলো সমাজের মানুষের মৌলিক বিশ্বাস, সামাজিক রীতিনীতি ও আচার - আচরণের সমষ্টি।

২. সামাজিক মূল্যবোধ কী?  
উত্তর: যেসব চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের সামাজিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তার সমষ্টিই হলো সামাজিক মূল্যবোধ।

৩. ধর্মীয় মূল্যবোধ কী?
উত্তর: ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূতি ও আচার অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে এবং ধর্মীয় শিক্ষার দ্বারা মানুষের মাঝে যে মূল্যবোধ জাগ্রত হয় তাই ধর্মীয় মূল্যবোধ।

৪. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ (Democratic Values) কাকে বলে? 
উত্তর: একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেসব চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের গণতান্ত্রিক আচার - ব্যবহার এবং দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ (Democratic Values) বলে।

৫. মূল্যবোধ সমাজে কী হিসেবে কাজ করে? 
উত্তর: মূল্যবোধ সমাজে যোগসূত্র ও সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।

৬. দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে কোনটি প্রতিষ্ঠিত হয়? 
উত্তর: দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭. সরকার ও রাষ্ট্র জনকল্যাণমুখী না হলে তাকে কী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়?
উত্তর: সরকার ও রাষ্ট্র জনকল্যাণমুখী না হলে তাকে মূল্যবোধের অবক্ষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

৮. 'Law' শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে কোন শব্দ থেকে ?
উত্তর: 'Law' শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে টিউটিনিক শব্দ ‘Lag’ থেকে।
সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন

৯. প্রথা কী?
উত্তর: সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আচার - ব্যবহার , রীতিনীতি এবং লোকাচারকে প্রথা বলা হয়।

১০. 'Lag' শব্দের আভিধানিক অর্থ কী? 
উত্তর: 'Lag' শব্দের আভিধানিক অর্থ স্থির বা অপরিবর্তনীয়।

১১ . 'আইন' কোন শব্দ হতে বাংলায় এসেছে?
উত্তর: 'আইন' শব্দটি ফার্সি শব্দ থেকে বাংলায় এসেছে।

১২. আইনের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: রাষ্ট্র যেসব নিয়ম তৈরি করে , অনুমোদন দেয় এবং বলবৎ করে সেগুলোকে আইন বলা হয়।

১৩. “আইন হচ্ছে সার্বভৌম শাসকের আদেশ” – উক্তিটি কার?
উত্তর: আইন হচ্ছে সার্বভৌম শাসকের আদেশ – উদ্ভিটি জন অস্টিন - এর।

১৪. আইনের দুটি উৎসের নাম লেখো।
উত্তর: আইনের দুটি উৎস হলো প্রথা , আইনসভা।

১৫. যুক্তরাজ্যের আইন কোন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে? 
উত্তর: যুক্তরাজ্যের আইন প্রথার ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে।

১৬. আইনসভার প্রধান কাজ কী? 
উত্তর: আইনসভার প্রধান কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা।

১৭. Law is the passionless reason- উক্তিটি কার?
উত্তর: 'Law is the passionless reason' উক্তিটি গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের।

১৮. আইনের প্রাচীন উৎস কোনটি? 
উত্তর: আইনের প্রাচীন উৎস হলো প্রথা।

১৯. মুসলিম আইনের প্রধান উৎস কী? 
উত্তর: মুসলিম আইনের প্রধান উৎস হলো কুরআন ও হাদিস।

২০. হল্যান্ডের মতে , আইনের উৎস কয়টি? 
উত্তর: হল্যান্ডের মতে আইনের উৎস ছয়টি।

২১. আইনের সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন কে? 
উত্তর: আইনের সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন উড্রো উইলসন।

২২. অধ্যাদেশ কী? 
উত্তর: জরুরি প্রয়োজনে শাসন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত নির্দেশনা হলো অধ্যাদেশ।

২৩. আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস কোনটি? 
উত্তর: আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস হলো সংবিধান।

২৪. নৈতিকতা কী?  
উত্তর: নৈতিকতা হলো সমাজস্বীকৃত আচরণবিধি যা ঐ সমাজের সদস্যরা গ্রহণ করেছে।

২৫. Liberty শব্দটি ল্যাটিন কোন শব্দ থেকে এসেছে? 
উত্তর: Liberty শব্দটি ল্যাটিন 'Liber' শব্দ থেকে এসেছে।

২৬. স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: স্বাধীনতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Liberty.

২৭. স্বাধীনতা কী?
উত্তর: স্বাধীনতা হলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী অনুকূল সামাজিক ব্যবস্থা বা পরিবেশ।

২৮. 'চিরন্তন সতর্কতার মধ্যেই স্বাধীনতার মূল্য নিহিত'— উক্তিটি কার ? 
উত্তর: ‘চিরন্তন সতর্কতার মধ্যেই স্বাধীনতার মূল্য নিহিত ' – উদ্ভিটি গ্রিক দার্শনিক পেরিক্লিসের।

২৯. স্বাধীনতাকে কয় শ্রেণিতে ভাগ করা যায়? 
উত্তর: স্বাধীনতাকে চার শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।

৩০. 'যেখানে আইন নেই সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না'— এটি কার উক্তি? 
উত্তর: ‘যেখানে আইন নেই সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না'- এটি জন লকের উক্তি।

৩১. সাম্য কী?
উত্তর: সাম্য হলো সবার জন্য উন্মুক্ত পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার উপস্থিতি।

৩২. অর্থনৈতিক সাম্য কী? 
উত্তর: জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র সকল মানুষ যখন যোগ্যতানুযায়ী কাজ ও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার সুবিধা লাভ করে তখন তাকে অর্থনৈতিক সাম্য বলে।

৩৩. জনমতের কয়েকটি বাহনের নাম লেখো।
উত্তর: জনমতের কয়েকটি বাহন হচ্ছে- পরিবার , রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আইনসভা, ধর্মীয় সংঘ ইত্যাদি।

৩৪. কোনটি গণতন্ত্রের শক্তি? 
উত্তর: আইনের শাসন গণতন্ত্রের শক্তি।

৩৫. কীসের অভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অসঙ্গতি বৃদ্ধি পায়? 
উত্তর: ন্যায়বিচারের অভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অসঙ্গতি বৃদ্ধি পায়।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর:
মূল্যবোধ এমন একটি মানদণ্ড যা ভালো-মন্দ নির্ধারণের মাধ্যমে মানুষের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সমাজকাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান হলো মূল্যবোধ। মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও আচার - আচরণ প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সব সমাজেই বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ প্রচলিত থাকে। এ সব বিধিনিষেধ অর্থাৎ ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, কাঙ্ক্ষিত-অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে সমাজের সদস্যদের যে ধারণা ও বিশ্বাস তাই হলো মূল্যবোধ, মূল্যবোধকে সামাজিক , রাজনৈতিক , নৈতিক , বুদ্ধিবৃত্তিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা যায়।

২. সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সংকল্প মানুষের সামাজিক আচার ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তার সমষ্টিকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ স্টুয়ার্ট সি. ডড (Stuart Carter Dodd) এর মতে, 'সামাজিক মূল্যবোধ হলো সে সব রীতিনীতির সমষ্টি যা ব্যক্তি সমাজের কাছ থেকে আশা করে এবং সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে লাভ করে। সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি বা মানদণ্ড। সামাজিক শিষ্টাচার, সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা, সহনশীলতা, শৃঙ্খলাবোধ, শ্রমের মর্যাদা, দানশীলতা, আতিথেয়তা জনসেবা, আত্মত্যাগ প্রভৃতি মানবিক গুণাবলির সমষ্টি হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ। সামাজিক মূল্যবোধের মাপকাঠিতেই মানুষের আচরণ ও কাজের ভালোমন্দ বিচার করা হয়।

৩. সামাজিক ন্যায়বিচার সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় কেন? 
উত্তর: সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাজ, আচরণ ও ন্যায়-অন্যায় বিচারের মানদন্ড এক ও অভিন্ন হওয়াকে বোঝায়। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সকল ক্ষেত্রে নারী -পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে যা ঐ সমাজকে সুশাসনের দিকে ধাবিত করবে। তাই সামাজিক ন্যায়বিচার সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যে অতি প্রয়োজনীয়।

৪. অধ্যাদেশ বা Ordinance হলো জরুরি আইন। ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জাতীয় সংসদে যখন অধিবেশন থাকবে না , তখন যদি জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয় , তাহলে রাষ্ট্রপতি তার বিবেচনামতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যে জরুরি আইন প্রণয়ন বা জারি করতে পারেন , সেগুলোকেই অধ্যাদেশ বলা হয়। এসব অধ্যাদেশ আইনের মতোই কার্যকর হয়। তবে জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে এসব অধ্যাদেশ উপস্থাপিত হবে এবং ইতোপূর্বে বাতিল হয়ে না থাকলে উপস্থাপনের ৩০ দিন পর তা বাতিল হয়ে যাবে। আবার এসব অধ্যাদেশ সংসদে অনুমোদিত হলে তা আইনে পরিণত হবে।

৫. প্রথা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: প্রথা হলো সমাজ কর্তৃক অনুমোদিত আচার-আচরণের বিভিন্ন রীতি। সব সমাজে মানুষের আচার - ব্যবহারের কতগুলো সুনির্দিষ্ট রীতি বা ধারা লক্ষ করা যায় । এগুলো দীর্ঘকাল সমাজে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত থাকে। এসব রীতি বা ধারাকে প্রথা বলা হয় । সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিস (Kingsley Davis) - এর মতে, প্রথা হলো একটি ব্যাপক প্রত্যয় যা সব আদর্শ তথা লোকাচার ও অবশ্যপালনীয় লোকরীতির সমন্বয় । এগুলো বহুদিন ধরেই পালিত হচ্ছে বিধায় বর্তমানেও তা চালু আছে।

৬. নৈতিকতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সমাজের বিবেকের সাথে সংগতিপূর্ণ কতগুলো ধ্যান - ধারণা ও আদর্শের সমষ্টিকে নৈতিকতা বলে। এটি মানুষের আচার - আচরণ ও কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Morality, যা ল্যাটিন Moralitas শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ আচরণ (Manner), চরিত্র (Character) বা যথার্থ আচরণ (Proper behaviour)। ন্যায় ও সঠিক পথে থাকা হচ্ছে নৈতিকতা। এ প্রভাবে মানুষ আইন মেনে চলে, শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। নৈতিকতা মূলত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাপার। এর পেছনে সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের কর্তৃত থাকে না। বিবেকের দংশনই নৈতিকতার বড় রক্ষাকবচ।

৭. নৈতিকতার ধারণা সর্বজনীন ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ নৈতিকতা হচ্ছে নীতি সংক্রান্ত বিষয় যা সুনীতি, সম্প্রীতি বা উৎকৃষ্ট নীতিকে ধারণ করে। নৈতিকতা হলো সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত আচরণবিধি, যা মানুষের মনে উদ্ভব ও বিকাশ লাভ করে এবং এটিকে সমাজ লালন করে। নৈতিকতার বিধানগুলো। সব দেশের এবং সর্বকালের । মানুষ ইচ্ছা করলেই এগুলো পরিবর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ, নৈতিকতার ধারণা সব দেশ ও সমাজের ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। তাই বলা হয়, নৈতিকতার ধারণা সর্বজনীন।

৮. জনগণ কেন আইন মান্য করে?  
উত্তর: মানুষ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও কল্যাণ বজায় রাখার জন্য আইন মান্য করে থাকে। আইন মান্য করা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। ইংরেজ দার্শনিক টমাস হবস জেরেমি ব্যোম, জন অস্টিন প্রমুখ বলেন— মানুষ আইন মেনে চলে শাস্তির ভয়ে। কেননা আইন ভঙ্গ করলে অভিযুক্ত হতে এবং শাস্তি পেতে হয়। তাই ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে আইন মান্য করা উচিত।

৯. আইনের অনুশাসন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আইনের অনুশাসন বলতে বোঝায় , সকল নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমানাধিকার প্রাপ্তির অধিকার । সমাজে যখন মানুষে মানুষে সাম্য ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হয় এবং নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সমদৃষ্টি লাভ করে , তখন আইনের অনুশাসন নিশ্চিত হয়।

১০. আইন ও নৈতিকতা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল কেন?
উত্তর: আইন ও নৈতিকতা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। কারণ যে সকল কাজকে নৈতিকতা বিরোধী কাজ হিসেবে ধরা হয় সেগুলো কখনোই আইনে পরিণত হতে পারে না। যেমন: চুরি-ডাকাতি নীতিবিরোধী কাজ। তাই এটাকে আইন বিরোধী কাজ হিসেবে ধরা হয়। আবার, যেসব কাজ আইনের দিক থেকে অন্যায় সেসব কাজ নৈতিকতার দিক থেকেও অন্যায় কাজ বলে বিবেচিত। যেমন— খুন করা আইনগত দিক থেকে অপরাধ । আবার নৈতিকতার দিক থেকেও অন্যায়।

১১. ধর্ম কীভাবে আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে?
উত্তর: ধর্ম আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রাচীন সমাজব্যবস্থায় ধর্মের একচেটিয়া প্রভাব ছিল এবং মানুষের জীবন অনেকটা ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতো। যেমন— প্রাচীন কালে রোমের আইনকানুন কিংবা মধ্যযুগের নগররাষ্ট্রের আইনকানুন ধর্মের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমানদের ব্যক্তিগত আইন ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। ইহুদিদের আইনও ধর্মভিত্তিক। বর্তমানে ধর্ম ও ধর্মীয় গ্রন্থের আলোকে অনেক আইন প্রণীত হচ্ছে। যেমন – বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক সম্পত্তি ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনটি কুরআন ও হাদিসের আলোকে প্রণীত হয়েছে। আবার হিন্দু বিবাহ, সামাজিক সম্পর্ক ও উত্তরাধিকার আইনগুলো হিন্দুধর্মের বিধি - বিধানের সাথে সংগতি রেখে প্রণীত হয়েছে। তাই বলা যায় , ধর্ম আইনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

১২. আইনের উৎস হিসেবে আইনসভার ভূমিকা কতটুকু? 
উত্তর: আইনের উৎস হিসেবে আইনসভার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিককালে আইনের প্রধান উৎস হচ্ছে আইনসভা। বর্তমানে প্রত্যেক দেশের আইনসভা রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনার জন্য যাবতীয় আইন প্রণয়ন করে। এছাড়া আইনসভা প্রচলিত আইনের সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে থাকে। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন রাষ্ট্রীয় | আইন হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে অধিকাংশ দেশে প্রচলিত বেশিরভাগ আইন আইনসভা কর্তৃক প্রণীত। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। এজন্যই বলা হয়, আইনের উৎস হিসেবে । আইনসভার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

১৩. বিচারকের রায় কীভাবে আইনের মর্যাদা লাভ করে? 
উত্তর: বিচারকের রায় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিচারকগণ অনেক সময় বিচার করতে গিয়ে নতুন আইনের সৃষ্টি করেন । সাধারণভাবে তারা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে বিচার কাজ পরিচালনা করেন। তবে পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে কোনো মোকদ্দমা প্রচলিত আইনের আওতায় না এলে সেক্ষেত্রে বিচারকরা নিজেদের বিচার-বুদ্ধি, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার আলোকে রায় দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে তা অন্যদের দ্বারা সমর্থিত ও গৃহীত হয়ে আইনের মর্যাদা লাভ করে।

১৪. সাংবিধানিক আইন বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর: যে নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয় তাকে সাংবিধানিক আইন বলে। সাংবিধানিক আইন হলো এমন কতিপয় নীতি যার মাধ্যমে সরকারের শাসনক্ষমতা এবং শাসক ও শাসিতের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এই আইনের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষমতাও সেই ক্ষমতার পরিধি নির্ণীত হয়। সাংবিধানিক আইন লিখিত ও অলিখিত উভয় প্রকারেরই হতে পারে।

১৫. স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সাধারণ অর্থে স্বাধীনতা বলতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো কাজ করাকে বোঝায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা বলতে এ ধরনের অবাধ স্বাধীনতাকে বোঝায় না। পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কাজ করাই হলো স্বাধীনতা। অর্থাৎ স্বাধীনতা হলো এমন সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ, যেখানে কেউ কারও ক্ষতি না করে সবাই নিজের অধিকার ভোগ করে। স্বাধীনতা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে এবং অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বাধা অপসারণ করে।

১৬. কীভাবে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়? 
উত্তর: বিভিন্ন রক্ষাচের মাধ্যমে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। এছাড়া সংবিধানে মৌলিক অধিকারের সন্নিবেশ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শিক্ষার প্রসার, স্বাধীন গণমাধ্যম, সুচিন্তিত জনমত, সৎ ও সুনির্দিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়। সর্বোপরি, জনগণ সচেতন, সতর্ক ও সচেষ্ট হলে স্বাধীনতা রক্ষা করা যায়।

১৭. রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির অংশগ্রহণের স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার বোঝায়। অধ্যাপক নাস্কির মতে, রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপে ভূমিকা পালনের ক্ষমতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে। ভোটদানের অধিকার, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার , নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের অধিকার , সরকারি চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি রাজনৈতিক স্বাধীনতার উদাহরণ।

১৮. আইনগত স্বাধীনতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে আইনগত স্বাধীনতা বলে। আইনগত স্বাধীনতার বিষয়টি রাষ্ট্রের সংবিধানে ও আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। ব্যক্তি কল্যাণের স্বার্থে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে আইনগত স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে। আইনগত স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট এবং আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। রাষ্ট্রের আইনের মধ্যে ভিন্নতা থাকে বলে রাষ্ট্রভেদে আইনগত স্বাধীনতার তারতম্য লক্ষ করা যায়।

১৯. আইন আছে বলেই স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক গভীর এবং আইন আছে বলেই স্বাধীনতা টিকে আছে। আইন স্বাধীনতার শর্ত ও প্রধান রক্ষাকবচ। আইন স্বাধীনতা ভোগের পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে। আইন আপন শক্তির সাহায্যে স্বাধীনতাকে নিরাপদ রাখার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করে । আইন শাসকগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করে । আইন সংযত ও নির্দিষ্ট সীমারেখার গন্ডিতে সবাইকে আবদ্ধ রেখে স্বাধীনতা বজায় রাখে । তাই বলা যায় , আইন আছে বলেই স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়।

২০. আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।
উত্তয়: আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতভেদ রয়েছে । তবে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করার ক্ষেত্রে আইন ও স্বাধীনতার ভূমিকা অপরিসীম । আইন স্বাধীনতাকে সহজ করে তোলে । আইন আছে বলে পরিমিত স্বাধীনতা ভোগ করা যায়। এটি শাসকগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাচারিতা থেকে জনগণকে রক্ষা করে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতার পরিধি সম্প্রসারিত হয়। তাই বলা যায় আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

২১ . স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন ও অটুট রাখার জন্য কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এগুলোকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয়। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার । এটি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর তা রক্ষা করাও অত্যন্ত জরুরি। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারল্ড জোসেফ লাস্কি (Harold Joseph Laski) এর মতে, সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে অধিকাংশ ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। স্বাধীনতার অনেকগুলো রক্ষাকবচ রয়েছে। যেমন— আইন, সংবিধানে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, দায়িত্বশীল সরকারব্যবস্থা, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ইত্যাদি।

২২. স্বাধীনতার দুটি রক্ষাকবচ বর্ণনা করো।
উত্তর: স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন ও অটুট রাখার জন্য কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এ পদ্ধতিগুলোকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে। স্বাধীনতার দুটি ব্রক্ষাকবচ হলো— আইন ও দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা। আইন স্বাধীনতার শর্ত ও প্রধান রক্ষাকবচ। আইন স্বাধীনতা ভোগের পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং স্বাধীনতাকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে তোলে রাষ্ট্র আইনের সাহায্যে মানুষের অবাধ স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন আছে বলেই স্বাধীনতা সকলের নিকট সমভাবে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ। এ ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তার অনুসৃত নীতি ও কার্যাবলির জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকে। ফলে সরকার স্বৈরাচারী হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা বিরোধী কাজে লিপ্ত হতে সাহসী হয় না।

২৩. অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: অর্থনৈতিক সাম্য বলতে উৎপাদন ও কটনের ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূর করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান সুযোগ - সুবিধা প্রদান করাতে বোঝায় । অর্থনৈতিক সাম্য থাকলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষ কাজ করার ও ন্যায্য মজুরি পাওয়ার সুবিধা লাভ করে। অর্থনৈতিক সাম্যের মূল কথা হচ্ছে- যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদ ও সুযোগের বণ্টন। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারল্ড জোসেফ লাস্কি (Harold Joseph Laski) এর মতে, ‘ধনবৈষম্যের সাথে অর্থনৈতিক সাম্য অসঙ্গতিপূর্ণ হবে না, যদি এই বৈষম্য দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।'

২৪. 'সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন'— কেন?
উত্তর: সাম্যের মাধ্যমেই স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়। তাই সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে। সমাজে সাম্য না থাকলে স্বাধীনতা অর্জন করা বা বজায় রাখা সম্ভব নয়। আবার স্বাধীনতা সাম্যের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ বৈষম্যহীনভাবে অর্থনৈতিক , সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারে। স্বাধীনতা থাকলে সাম্যের এই আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। কারণ , স্বাধীনতা সবাইকে সমানভাবে সমাজের সুযোগ-সুবিধাগুলো ভোগ করার অধিকার দেয়। এ সুযোগ না থাকলে স্বাধীনতা নাগরিকের কাছে অর্থবহ হয় না। তাই বলা হয়, সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন।

২৫. রাজনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝ? 
উত্তর: রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে সমান সুযোগ থাকাকে রাজনৈতিক সাম্য বলে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনৈতিক সাম্যের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিক তার ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ সাধন ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার ভোটাধিকার , মতামত প্রকাশের অধিকার, চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি রাজনৈতিক সাম্যের উদাহরণ। 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url