সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত || Susasan gaṇatantrer purbasarta

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. পৌরনীতি মূলত কী বিষয়ক বিজ্ঞান?
উত্তর: পৌরনীতি মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান।

২. 'পুর' শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘পুর’ শব্দের অর্থ নগর।

৩. পৌৱনীতি সম্পর্কে E.I Gloud- এর সংজ্ঞাটি লেখো।
উত্তর: পৌরনীতি সম্পর্কে FIGloud- এর সংজ্ঞাটি হলো— "যে সকল প্রতিষ্ঠান, অভ্যাস , কার্যাবলি ও চেতনার দ্বারা মানুষ রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন এবং অধিকার ভোগ করতে পারে, তার অধ্যয়নই হচ্ছে পৌরনীতি।"

৪. POLIS কথাটির অর্থ কী? 
উত্তর: POLIS— কথাটির অর্থ হলো নগর।

৫. Civics শব্দটি কোন কোন শব্দ হতে এসেছে? 
উত্তর: Civics শব্দটি ল্যাটিন Civis ও Civitas থেকে এসেছে।

৬. ল্যাটিন শব্দ Civis এর অর্থ কী?
উত্তর:
ল্যাটিন শব্দ Civis এর অর্থ নাগরিক।

৭. Civitas শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: Civitas শব্দের অর্থ 'নগররাষ্ট্র'।

৮. পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর:
পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Civics.

৯. পৌরনীতি কী?
উত্তর: পৌরনীতি হচ্ছে এমন একটি শাস্ত্র, যা নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন এবং নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা করে।

১০. সিভিস ও সিভিটাস শব্দের অর্থ কী?
উত্তর:
সিভিস ও সিভিটাস শব্দের অর্থ যথাক্রমে 'নাগরিক' ও 'নগররাষ্ট্র।

১১. নগর রাষ্ট্র কী? 
উত্তর: প্রাচীন গ্রিসের ছোট ছোট নগরকে কেন্দ্র করে এক একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। নগরকেন্দ্রিক এ রাষ্ট্রগুলোকে নগররাষ্ট্র বলা হয়।

১২. নাগরিকতা কী?
উত্তর: রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে ব্যক্তি যে মর্যাদা ও সম্মান পায়, তাকে নাগরিকতা বলে।

১৩. পৌরনীতি সম্পর্কে ই.এম. হোয়াইট প্রদত্ত সংজ্ঞাটি লেখো।
উত্তর: পৌরনীতি সম্পর্কে ই . এম . হোয়াইট তার The Philosophy of Citizenship' গ্রন্থে বলেন— ' পৌরনীতি হচ্ছে জ্ঞানের সেই শাখা যা নাগরিকতার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

১৪. Polites শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: Polites শব্দের অর্থ হলো নাগরিক।

১৫. মানুষ স্বভাবতই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব – উক্তিটি কার? 
উত্তর: মানুষ স্বভাবতই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব — উক্তিটি অ্যারিস্টটলের।

১৬. রাষ্ট্র কী?
উত্তর: রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

১৭. কোন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পৌরনীতি গড়ে উঠেছে?
উত্তর: নাগরিকতার ওপর ভিত্তি করে পৌরনীতি গড়ে উঠেছে।

১৮. সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ লেখো।
উত্তর: সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Good Governance.

১৯. সুশাসন শব্দটি কোন প্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম ব্যবহার করে?
উত্তর: ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ব্যাংক সর্বপ্রথম 'সুশাসন' (Good Governance) শব্দটি ব্যবহার করে।

২০. সুশাসন কী?
উত্তর: যে শাসনব্যবস্থায় প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বৈধতা , স্বচ্ছতা , সবার অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে এবং বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান সে শাসনকে সুশাসন বলে।

২১. জবাবদিহিতা কাকে বলে? 
উত্তর: জবাবদিহিতা হলো সম্পাদিত কর্ম সম্পর্কে একজন ব্যক্তির ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতা।

২২. বিকেন্দ্রীকরণ কাকে বলে? 
উত্তর: প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে প্রত্যর্পণ করাকে বিকেন্দ্রীকরণ বলা হয়।

২৩. kubernao শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন? 
উত্তর: kubernao শব্দটি সর্বপ্রথম রূপক অর্থে ব্যবহার করেন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ।

২৪. কোন বিষয়ের শিক্ষা ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়? 
উত্তর: পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের শিক্ষা ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. শব্দগত অর্থে পৌরনীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: শব্দগত অর্থে পৌরনীতি হলো নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি ল্যাটিন শব্দ- Civis ও Civitas থেকে। Civis অর্থ 'নাগরিক' , আর Civites অর্থ ‘নগররাষ্ট্র'। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে নগররাষ্ট্র ও নগরবাসী সম্পর্কিত রীতি - নীতি, আচার - অনুষ্ঠান নিয়ে জ্ঞানের যে শাখা গড়ে উঠেছে তাই পৌরনীতি। সংস্কৃত ভাষায় নগরকে 'পুর' বা 'পুরী' এবং নগরের অধিবাসীদের 'পুরবাসী' বলা হয়। প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স, স্পার্টা ইত্যাদি ছিল এক একটি নগররাষ্ট্র। তবে বিশ্বের বর্তমান রাষ্ট্রগুলো প্রাচীন গ্রিসের 'নগররাষ্ট্রের' (City - State) মতো ছোট ও সরল নয়।

২. পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
উত্তর: নাগরিক ও নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত সকল বিষয় আলোচনা করে বলে পৌরনীতিকে নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান বলা হয়। নাগরিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকার ক্রিয়াকলাপ নিয়ে পৌরনীতি অনুশীলন চালায়। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে জড়িত ঘটনাবলি ও কার্যকলাপ এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। নাগরিক জীবনের ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথ্য সার্বিক দিকের আলোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

৩. পৌরনীতি শব্দের উদ্ভব বা উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে? বর্ণনা করো।
উত্তর: শব্দগত অর্থে পৌরনীতি হলো নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান। পৌরনীতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Civics. Civics শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি ল্যাটিন শব্দ – Civis ও Civitas থেকে। Civis অর্থ নাগরিক, আর Civitas অর্থ নগররাষ্ট্র। সুতরাং উৎপত্তিগত অর্থে নগর ও নগরবাসী সম্পর্কিত রীতি - নীতি, আচার - অনুষ্ঠান নিয়ে জ্ঞানের যে শাখা পড়ে উঠেছে তাই পৌরনীতি।

৪. পৌরনীতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: পৌরনীতি হচ্ছে এমন একটি শাস্ত্র যা নাগরিক হিসেবে মানুষের অধিকার ও কর্তব্য এবং নাগরিকের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। পৌরনীতি নাগরিকদের আচরণ ও কার্যাবলি সংক্রান্ত বিজ্ঞান।

৫. পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। আর সুশাসন নাগরিকের উত্তম জীবন নিশ্চিতকরণের একটি উপায়। নাগরিক হিসেবে মানুষের জীবনের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে পৌরনীতি আলোচনা করে। এর উদ্দেশ্য হলো নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আর সুশাসন নাগরিকের কল্যাণমুখী জীবন নিশ্চিত করে উন্নত নাগরিক জীবন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালায়। অর্থাৎ উভয়ের উদ্দেশ্য নাগরিক জীবনকে উন্নত ও সুসংহত করা। তাই পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা।

৬. একজন নাগরিকের পৌরনীতি বিষয়ক জ্ঞান থাকা আবশ্যক কেন?
উত্তর: নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে একজন নাগরিকের পৌরনীতি বিষয়ক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নাগরিক এবং নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে পৌরনীতি। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সাথে জড়িত ঘটনাবলি ও কার্যকলাপ এ শাস্ত্রে আলোচিত হয়। নাগরিক জীবনের ধর্মীয়, নৈতিক, রাজনৈতিক তথ্য সার্বিক দিকের কমবেশি আলোচনা পৌরনীতির বিষয়বস্তু। পৌরনীতি পাঠের মধ্য দিয়ে সুনাগরিকের গুণাবলি জানা যায় এবং নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায় তাই একজন নাগরিকের পৌরনীতি বিষয়ক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

৭. তুমি কীভাবে একজন স্থানীয় নাগরিক?
উত্তর: আমি স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করি এবং এর বিনিময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব - কর্তব্য পালন করি। এ সূত্রে আমি একজন স্থানীয় নাগরিক। স্থানীয়ভাবেই ব্যক্তির নাগরিক জীবন শুরু হয়। স্থানীয় এলাকায় বসবাস করতে গিয়ে নাগরিকের সাথে কতগুলো প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে নাগরিক কতগুলো সেবা ব্রাহণ করে এবং এই সেবার বিনিময়ে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আমরা নাগরিক সনদ, জন্মসনদসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করি। বিনিময়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের কর দেই।

৮. স্বজনপ্রীতি বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর: স্বজনপ্রীতির সাধারণ অর্থ হলো আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজনের প্রতি ভালোবাসা । কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে এ বিষয়টি এক ধরনের দুর্নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে প্রচলিত নিয়ম-কানুন ভা করে এবং যোগ্য লোককে বঞ্চিত করে নিজের আত্মীয়-স্বজন বা ঘনিষ্ঠদের সুযোগ-সুবিধা দিলে তাকে স্বজনপ্রীতি (Nepotism) বলা হয়। যেমন , সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণত উচ্চপদের কর্তারা অনেক সময় স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অদক্ষ ও অযোগ্য লোক নিযুক্তি পায়। অন্যদিকে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী ব্যক্তিদের সেবা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয়।

৯. সুশাসন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সরকারের স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন সুশাসন হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুশাসনের মাধ্যমেই নাগরিকগণ তাদের আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ, অধিকার ভোগ এবং চাহিদাগুলো মেটাতে পারে। তাই বলা যায় , রাষ্ট্র ও নাগরিকের উন্নয়নের জন্য পরিচালিত ব্যবস্থাই হচ্ছে সুশাসন।

১০. প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর: অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাই হলো প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা বা জবাবদিহিতা। প্রশাসনিক দায়বদ্ধতার মধ্যে একটি হলো অভ্যন্তরীণ দায়বদ্ধতা। এটি প্রশাসনের পদসোপানভিত্তিক প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হয়। অপরটি হলো জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সিটিজেন চার্টার, তথ্য কমিশন প্রভৃতির মাধ্যমে এ ধরনের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়।

১১. জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়? 
উত্তর: নিজের কাজের জন্য অন্য ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যাদানের বাধ্যবাধকতাই জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতা সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তি যখন তার কাজটি কী উদ্দেশ্যে বা কীভাবে করা হয়েছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় তখন তাকে জবাবদিহি করা বলে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক সংগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা জনগণ এবং সংগঠনের সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের কাজের জন্য কমবেশি দায়বদ্ধ। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি কমবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে, সর্বোপরি জনকল্যাণ নিশ্চিত হবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

১২. স্বচ্ছতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সব ধরনের অনৈতিকতা পরিহার করে নিয়মনীতি মেনে কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করাকে স্বচ্ছতা বলে। স্বচ্ছতার অর্থ হলো স্পষ্টতা। কোনো কাজ কতটুকু ন্যায়সঙ্গত বা বৈধ তা এর মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারে । স্বচ্ছতা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। একে সুশাসনের পূর্বশর্তও বলা হয়। একটি দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম , নীতি বা সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া স্পষ্টতার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হলে তা সহজেই জনগণের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য হয়। এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।

১৩. সুশাসনের সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক নিরূপণ করো।
উত্তর: সুশাসনের (Good Governance) সাথে জবাবদিহিতার সম্পর্ক নিবিড়। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও চর্চার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা সুশাসনকে নিশ্চিত করে। বাকস্বাধীনতাসহ সকল নাগরিক অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন , আইনসভার নিকট শাসন বিভাগের জবাবদিহিতা সুশাসনের পরিচয় বহন করে। আর সুশাসনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা হলো প্রথম শর্ত। জবাবদিহিতা না থাকলেদায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না। ফলে দুর্নীতির প্রকোপ বাড়ে। আইনের অনুশাসনও প্রতিষ্ঠিত হয় না। অর্থাৎ সুশাসনের জন্য জবাবদিহিতা অপরিহার্য।

১৪. রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: রাজনৈতিক জবাবদিহিতা বলতে জনগণের কাছে রাজনীতিবিদদের কথা ও কাজের দায়বদ্ধতাকে বোঝানো হয়। সুশাসনের অন্যতম শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতার অভাবে রাজনৈতিক দলের নেতারা জনগণকে সেবা দানের পরিবর্তে শোষণ বা ভোটের জন্য ব্যবহার করে। রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে নেতারা ব্যক্তিগতভাবে পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। এর ফলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৫. সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত— যুক্তি দাও।
উত্তর: সুশাসন জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে। আর জনগণের অংশগ্রহণভিত্তিক এবং জবাবদিহিমূলক শাসনই হলো গণতন্ত্র। রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন ও সমান সুবিধা নিশ্চিতকরণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ; ন্যায়ভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুশাসন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। আর এই বিষয়গুলো সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই বৈশিষ্ট্য। তাই কোনো রাষ্ট্রে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় তাহলে গণতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি হয়। এ কারণেই বলা হয় সুশাসন গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url