মহাকাশ অভিযান কি? || What is Space Exploration?

 মহাকাশ অভিযান 
মহাশূন্যের রহস্য আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে মহাকাশচারীসহ কিংবা মহাকাশচারী ছাড়াই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাঁধন কাটিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে একশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমণ্ডলের বাইরে গিয়ে কোনো মহাকাশযান কর্তৃক চালিত অনুসন্ধান বা অভিযানকে মহাকাশ অভিযান বলা হয়। পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে সম্পূর্ণ নতুন একটি মহাজাগতিক বিশ্বের আবিষ্কার সকলের মনকেই আন্দোলিত করে। প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বকে জানার অবিরাম চেষ্টা চলছে; হচ্ছে বিস্তর গবেষণা। 
আজ মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যতটুকু সাফল্য অর্জিত হয়েছে , তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া কখনই অর্জন করা সম্ভব হতো না। একবিংশ শতাব্দীতে মহাকাশ আবিষ্কারে আরও বেশি গবেষণার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হচ্ছে। মহাকাশে মানুষ ও রোবটিক অনুসন্ধান বিশ্ববাসীর জন্য বিরাট সুফল বয়ে এনেছে। চাঁদের মাটিতে অবতরণ, স্পেস স্টেশন ও অন্যান্য গ্রহে মিশন প্রেরণের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
Space Exploration

মহাকাশ অভিযানের কতিপয় ঘটনা 
১. ৩ অক্টোবর, ১৯৪২ সালে জার্মান বিজ্ঞানীরা রকেট "V-2" পরীক্ষামূলকভাবে মহাশূন্যে পাঠান। 
২. ৪ অক্টোবর, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন পৃথিবীর প্রথম উপগ্রহ 'স্পুটনিক -১ মহাকাশে প্রেরণ করে। 
৩. 'ভস্টক -১' বিশ্বের প্রথম মানুষ বহনকারী সোভিয়েত মহাকাশযান। ১২ এপ্রিল, ১৯৬১ সালে রাশিয়ার মহাকাশযাত্র ফরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণ করেন। 
৪. ১৬ জানুয়ারি , ১৯৬৩ সালে বিশ্বের ১ম মহিলা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্যালেনটিনা তেরেসকোভা ' ভস্টক -৬ ' এ করে আটচল্লিশবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। 
৫. ' অ্যাপোলো -১১ তে করে ২০ জুলাই , ১৯৬৯ সালে বিশ্বের সর্বপ্রথম মানুষ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে অবতরণ করেন। 
৬. শুক্রগ্রহে ১৯৭০ সালে ' ভেনেরা -৭ ' অবতরণ করে সেখান থেকে ২০ মিনিট যাবৎ পৃথিবীতে সরাসরি তথ্য প্রেরণ করে। ১৯৭১ সালে ' মার্স -৩ ' মিশনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম মঙ্গলগ্রহ থেকে সরাসরি পৃথিবীতে ২০ সেকেন্ড যাবৎ তথ্য প্রেরণ করা হয়।
৭. ১২ এপ্রিল , ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সর্বপ্রথম স্পেস শাটল উৎক্ষেপণ করে। 

মহাকাশ অভিযানের জন্য কোনো মহাকাশযানের ঘণ্টায় প্রায় ৩০,০০০ মাইল (৪৮,০০০ কি.মি.) গতিবেগ প্রয়োজন। এটি শব্দের গতিবেগ থেকে প্রায় আটগুণ বেশি। মহাকাশযানকে আবার পৃথিবীতে ফেরানোর ক্ষেত্রে এই প্রচণ্ড গতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় বাতাসের ঘর্ষণে সৃষ্ট তাপকে বিক্রিরণ করে মহাকাশযানের গতিবেগ স্বাভাবিক করতে হয়। মহাশূন্যে বসে গবেষণাকার্য পরিচালনার জন্য পৃথিবীর কক্ষপথে স্পেস স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পৃথিবী থেকে গবেষকদের একটি দল এ স্টেশনে গিয়ে অবস্থান করেন এবং আধুনিক সব প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে দূর নক্ষত্রসমূহের ওপর গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন।

মহাকাশযানের গতিপথ বের করার জন্য মহাকাশযানের অসংখ্য যন্ত্রপাতি নিখুঁতভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য , স্পেস স্টেশনের কোনো যন্ত্রাংশ বিকল হলে তা সরিয়ে নেওয়া বা মেরামতের জন্য এবং সর্বক্ষণ পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে মহাকাশচারীরা পুরো কার্যক্রমই পরিচালনা করেন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন রোবটিক ব্যবস্থা , টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিজেদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে।

মহাকাশ অভিযানের গুরুত্ব 
১. কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ও রোবটিক মহাকাশযানের মাধ্যমে সৌরজগৎ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা যায়। 
২. কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কন্ঠস্বর , ছবি ও তথ্য মুহূর্তেই পাঠানো যায়। 
৩. কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য দ্বারা বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর ব্যবহার পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করেছেন। 
৪. বায়ুমণ্ডল ও আবহাওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্যই কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হয়। 
৫. পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলোর সহায়তা নিচ্ছে , যা নৌ , বিমান ও সেনাবাহিনীর মতোই গুরুত্বপূর্ণ। 
৬. হাবল টেলিস্কোপে তোলা গ্রহ - নক্ষত্রের ছবি বিজ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। কৃত্রিম ভূ - উপগ্রহ ও রোবটিক মহাকাশযানের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সৌরজগৎ সম্পর্কিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করেন।

মহাকাশ প্রযুক্তিকে কী বলা হয়?
মহাকাশ প্রযুক্তি বা Space Technology হলো প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম এবং পদ্ধতির সমষ্টি, যা মহাকাশ অনুসন্ধান, স্যাটেলাইট যোগাযোগ, এবং মহাকাশে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
1. স্যাটেলাইট: (যেমন: যোগাযোগ, আবহাওয়া, বা নজরদারির জন্য স্যাটেলাইট)
2. মহাকাশ যান: (যেমন: রকেট, স্পেসক্রাফট)
3. মহাকাশ স্টেশন: (যেমন: আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা ISS)
4. মহাকাশ টেলিস্কোপ: (যেমন: হাবল স্পেস টেলিস্কোপ)
5. লঞ্চ প্রযুক্তি: (যা মহাকাশযানকে পৃথিবীর কক্ষপথে বা মহাকাশে প্রেরণ করতে ব্যবহৃত হয়)
মহাকাশ প্রযুক্তি বিজ্ঞান, যোগাযোগ, এবং বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মহাকাশ গবেষণায় কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়?
মহাকাশ অনুসন্ধান বিভিন্ন উন্নত প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে রয়েছে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য রকেট, যোগাযোগ ও পর্যবেক্ষণের জন্য উপগ্রহ এবং দূরবর্তী গ্রহ ও চাঁদ অন্বেষণের জন্য স্পেস প্রোব। হাবলের মতো স্পেস টেলিস্কোপ দূরবর্তী মহাজাগতিক বস্তুর বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ সক্ষম করে। প্রযুক্তি যেমন রোভার গ্রহের উপরিভাগ অন্বেষণ করে, যখন স্পেস স্যুট মহাকাশের কঠোর শূন্যতায় নভোচারীদের রক্ষা করে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS) নতুন মহাকাশ প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের একটি কেন্দ্র। প্রপালশন সিস্টেম যেমন আয়ন থ্রাস্টার এবং নেভিগেশন প্রযুক্তি দূর-দূরত্বের মহাকাশ ভ্রমণ এবং মিশন সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

মহাকাশ অনুসন্ধান প্রযুক্তির মালিক কে?
স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন, সাধারণত স্পেসএক্স নামে পরিচিত, একটি বেসরকারী আমেরিকান মহাকাশ প্রস্তুতকারক এবং মহাকাশ পরিবহন কোম্পানি যা 2002 সালে এলন মাস্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মাস্ক সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিকারী, কোম্পানির প্রধান মালিক এবং সিইও হিসেবে রয়ে গেছেন বাজি যদিও সঠিক মালিকানার শতাংশ সর্বজনীন নয়, এটি অনুমান করা হয় যে Musk কোম্পানির প্রায় 50% নিয়ন্ত্রণ করে। অবশিষ্ট মালিকানায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যেমন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম যেমন ফাউন্ডারস ফান্ড এবং ফিডেলিটি অন্তর্ভুক্ত। স্পেসএক্স ব্যক্তিগতভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং সর্বজনীনভাবে যায় নি। সংস্থাটি মহাকাশ ভ্রমণের খরচ কমাতে এবং মঙ্গলে মানব মিশন সক্ষম করার দিকে মনোনিবেশ করছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url