পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান || Paribar halo ekaṭi sarbajanin pratisthan

১ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. আচার–আচরণের পশ্চাতে মানসিক কারণ ছাড়া আর কোন শক্তির প্রভাব রয়েছে?
উত্তর: আচার–আচরণের পশ্চাতে মানসিক কারণ ছাড়া অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি শক্তির প্রভাব রয়েছে।

২. ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মালিকানা সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং শোষণের মূল’ – উক্তিটি কার?
উত্তর: উক্তিটি জার্মান দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ কার্ল মার্কস এর।

৩. এমিল ডুর্খেইম প্রদত্ত সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞাটি লিখ।
উত্তর: ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় বলেন, “সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।”
পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান
৪. ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের  বিজ্ঞান’ — উক্তিটি কার?
উত্তর: ‘সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান’ উক্তিটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানের জনক এমিল ডুর্খেইমের।

৫. “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে”— উক্তিটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর?
উত্তর: “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে”— উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী রবার্ট এম ম্যাকাইভার ও চার্লস এইচ পেজ এর।

৬. সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ম্যাকাইভার কী বলেছেন?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞায় ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজবিজ্ঞানই একমাত্র বিজ্ঞান, যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।”

৭. সমাজকল্যাণ কী?
উত্তর: সমাজকল্যাণ হচ্ছে মানুষের কল্যাণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা।

৮. মার্কসবাদী সমাজ বিকাশের ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক সমাজ কোনটি?
উত্তর: মার্কসবাদী সমাজ বিকাশের ধারা অনুযায়ী প্রাথমিক সমাজ হচ্ছে আদিম সাম্যবাদী সমাজ।

৯. ‘Sociology’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে কত খ্রিষ্টাব্দে?
উত্তর: ‘Sociology’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে ম্যাকিয়াভেলি কীরূপ অবদান রেখেছিলেন?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে যে কয়েকজন ব্যক্তির অবদান স্বীকার্য তার মধ্যে ম্যাকিয়াভেলি অন্যতম। সমাজদর্শন প্রচার করতে গিয়ে তিনি বাস্তবতার আশ্রয় নিয়েছেন। এর মাধ্যমে ম্যাকিয়াভেলি সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার The Prince গ্রন্থে আলোচনা করেন। তার সমাজ আলোচনার মূল ভিত্তি ছিল মানব প্রকৃতি ও মানব মনোভাব। তৎকালীন সময়ে সমাজের মানুষ যে নৈরাজ্যকর অবস্থায় ছিল ম্যাকিয়াভেলি তার সুষ্ঠু ব্যাখ্যা দেন যা সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও মালিকানা সব দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং শোষণের মূল’—উক্তিটি কার?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে আমেরিকান আইনবিদ ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরি মর্গান অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ইরোকুয়া ইন্ডিয়ান নৃগোষ্ঠীর উৎপত্তি ও বিবর্তন সম্পর্কে গবেষণা করে হেনরি মর্গান ১৮৭৭ সালে রচনা করেন ‘Ancient Society’, যেখানে তিনি সমাজ বিবর্তনের তিনটি ধাপ চিহ্নিত করেন; যথা— বন্যদশা, বর্বরদশা ও সভ্যতা।
এছাড়া মর্গান আদিম পরিবারব্যবস্থা, বিবাহ এবং সম্পত্তির বিকাশ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন, যা সামাজিক নৃবিজ্ঞানের ভিত্তিমূল হিসেবে বিবেচিত হয়। বস্তুত নতুন একটি বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পথচলায় লুইস হেনরি মর্গানের বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

৩. দলিল-দস্তাবেজনির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: দলিল-দস্তাবেজনির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বলতে ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে বোঝায়। ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে অতীত ঘটনা সম্পর্কে যুক্তিনির্ভর গবেষণা প্রচেষ্টাকে ঐতিহাসিক পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন সামাজিক ঘটনা, প্রক্রিয়া এবং প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করা হয়।
এ পদ্ধতির মাধ্যমে অতীতের কোনো বিশেষ সময়ের সামাজিক জীবনের গতি-প্রকৃতি, উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ঐতিহাসিক পদ্ধতির তথ্যের উৎস হলো দলিল বা নথিপত্র, আত্মজীবনী, ব্যক্তিগত রোজনামচা, চিঠিপত্র ইত্যাদি।

৪. ত্রয়স্তর সূত্রটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানব জ্ঞানের ক্রমোন্নতি এবং সমাজের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ যে তত্ত্ব প্রদান করেন, তা ত্রয়স্তর সূত্র নামে পরিচিত। অগাস্ট কোঁৎ-এর মতে, মানুষের চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণাসমূহ, জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং পৃথিবীর সব সমাজ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে তিনটি স্তর অতিক্রম করে এসেছে।
কোঁৎ-এর সমাজ বিকাশের এই তিনটি স্তরই ‘ত্রয়স্তর’ নামে পরিচিত। ত্রয়স্তরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হে মানুষের মৌলিক ধারণা ধর্মীয় যুগের স্তর, অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর ও দৃষ্টবাদ এ তিনটি বিবর্তনিক পর্যায় অতিক্রান্ত করেছে। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রথমে ধর্মীয় বা Theological ধারণা থেকে উৎপন্ন হয়ে Metaphysical বা অধিবিদ্যাগত হয়ে Positivism বা দৃষ্টবাদে আসে।

৫. শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:  শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজবিজ্ঞান অনুসন্ধানের একটি বিশেষ চিত্র। শিক্ষাকে সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা বা অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে ‘শিক্ষা সমাজবিজ্ঞানের’ উৎপত্তি। সমাজবিজ্ঞানের এ শাখাটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবিষয় বহির্ভূত নানাবিধ কার্যকলাপ, শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনিক দিক, শিক্ষার মাধ্যম, শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন, শিক্ষার সাথে সামাজিক শ্রেণির সম্পর্ক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এছাড়া এটি সমাজের অন্যান্য বিষয় যেমন- অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদির সাথে শিক্ষার সম্পর্ক নিয়েও পঠন-পাঠন এবং গবেষণা করে।


২য় অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. হার্বাট স্পেন্সার তার ‘The Principles of Sociology’ গ্রন্থে কয় ধরনের সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: হার্বার্ট স্পেন্সার তার ‘The Principles of Sociology’ গ্রন্থে চার ধরনের সমাজের কথা উল্লেখ করেছেন।

২. বিজ্ঞান শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর: বিজ্ঞান শব্দের আভিধানিক অর্থ বিশেষ জ্ঞান।

৩. পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: পদ্ধতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Method.

৪. অগাস্ট কোঁৎ এর ক্রয়স্তর সূত্রের প্রথম স্তরটির নাম কী?
উত্তর: ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ—এর ত্রয়স্তর সূত্রের প্রথম স্তরটির নাম হলো ধর্মতাত্ত্বিক স্তর (Theological Stage).

৫. The Republic গ্রন্থের রচয়িতা কে?
উত্তর: The Republic গ্রন্থের রচয়িতা গ্রিক দার্শনিক প্লেটো।

৬. কখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি শব্দটি ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: জ্ঞান আহরণের উপায় হিসেবে যখন বিজ্ঞানকে বিবেচনায় আনা হয় তখন ‘বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

৭. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর কী?
উত্তর: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বিতীয় স্তর হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন।

৮. সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপ কোনটি?
উত্তর: সামাজিক গবেষণার শেষ ধাপ হচ্ছে, গবেষণাকৃত বিষয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা।

৯. সমাজ গবেষণার দ্বিতীয় ধাপ কোনটি?
উত্তর: সমাজ গবেষণার দ্বিতীয় ধাপ হলো সমস্যার সংজ্ঞায়ন।

১০. গবেষণা কী?
উত্তর: গবেষণা হলো এক প্রকারের জ্ঞান অন্বেষণ, যা বিশেষ যুক্তিপূর্ণ নীতিমালার দ্বারা পরিচালিত হয়।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. শিশুর সামাজিকীকরণে গণমাধ্যম অন্যতম শক্তিশালী একটি বাহন— ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গণমাধ্যম আধুনিককালে ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন নিয়ন্ত্রণের এক শক্তিশালী মাধ্যম।
গণমাধ্যম বলতে বোঝানো হয় সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইত্যাদিকে। এসব মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ, বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান শিশুদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এর ফলে শিশু-কিশোররা নিজেদেরকে সমাজ-সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শেখে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, বিজ্ঞানমনস্কতা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকশিত হয়।

২. একেশ্বরবাদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যুক্তি বিকাশের ধারাবাহিকতায় মানুষের অগ্রসর চিন্তার ফসল হচ্ছে একেশ্বরবাদ।
যুক্তির ধারাবাহিকতায় বহু ঈশ্বরের ক্ষমতা একজন ঈশ্বরের ওপর আরোপ করা হয়। এখানে মনে করা হয়, সকল প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঘটনার সর্বোচ্চ এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে সর্বশক্তিমান একক সত্তা।

৩. জৈবিক সাদৃশ্যের তত্ত্বটি কার? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জৈবিক সাদৃশ্যের তত্ত্বটি বিবর্তনবাদী মতবাদের প্রবক্তা ও বিশিষ্ট ব্রিটিশ দার্শনিক হার্বার্ট স্পেন্সার-এর। জৈবিক সাদৃশ্য তত্ত্বের মূলকথা হলো সমাজের বিবর্তন হয় জীব জগতের বিবর্তনের মতোই। হার্বার্ট স্পেন্সার জীবদেহের সাথে সমাজসত্ত্বার অনেক সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং তিনি মনে করেন প্রত্যেকটি সমাজ হলো এক একটি জীব দেহের মতো।
স্পেন্সারের মতে, এক কোষবিশিষ্ট অত্যন্ত সাধারণ একরকম প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আজকের জীবজগতের বিকাশ ঘটেছে, তেমনি মানবসমাজেও বিবর্তন ঘটছে। সমাজ আদিম অবস্থা থেকে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান স্তরে পৌঁছেছে। আর এটিই হলো স্পেন্সারের জৈবিক সাদৃশ্য তত্ত্ব।

৪. ‘আসাবিয়া’ কী? বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘আসাবিয়া’ হলো ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের সমাজ সম্পর্কিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আসাবিয়া হলো একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ সামাজিক সংহতি (Social Solidarity)। ইবনে খালদুন (Ibn Khaldun) তার ‘আল মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যাযাবর ও বেদুঈন সমাজ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন।
সাধারণত আসাবিয়া বা সামাজিক সংহতি বলতে মানসিক ঐক্যকে বোঝানো হয় যার দ্বারা মানুষ পরস্পরের সাথে একাত্মতা পোষণ করে, এমনকি সাধারণ বিপদ-আপদ এবং ভাগ্যের হেরফেরও তারা একই সাথে মোকাবিলা করে। ইবনে খালদুনের মতে, রক্ত, ধর্ম, জাতীয়তা প্রভৃতির মাধ্যমে এ সামাজিক সংহতি গড়ে ওঠে যার বিভিন্নতার কারণে সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারে।

৫. সমাজ গবেষণার চতুর্থ স্তরটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সমাজ গবেষণার চতুর্থ স্তরটি হলো কল্পনা প্রণয়ন। গবেষণা সমস্যার মধ্যকার ধারণাগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের একটি আনুমানিক বিবৃতিই অনুসিদ্ধান্ত বা কল্পনা। মূলত, গবেষণার সমস্যা বা বিষয়বস্তু নির্বাচনের পরই পর্যবেক্ষণ বা তথ্যসংগ্রহ করার পূর্বেই কল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব। তথ্য দ্বারা সমর্থিত না হলে সে কল্পনা বাতিল বলে গণ্য হতে পারে। সাধারণত গবেষকের ব্যক্তিগত ধারণা, প্রজ্ঞা ও অনুমানলব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে কল্পনা প্রণয়ন হয়।


৩য় অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. দৃষ্টবাদের জনক কে?
উত্তর: দৃষ্টবাদের জনক ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ।

২. ‘সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল’— উক্তিটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর?
উত্তর: ‘সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল’ — উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভারের।

৩. সামাজিক শ্রেণি কী?
উত্তর: সামাজিক শ্রেণি হচ্ছে এক একটি বাস্তবগোষ্ঠী, যাদের আইনানুগ ও ধর্মীয়ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।

৪. পরার্থপর আত্মহত্যা কী?
উত্তর: সমাজের স্বার্থে ও সমষ্টির ইচ্ছায় যে আত্মহত্যা সংঘটিত হয় তাকে পরার্থপর আত্মহত্যা বলে।

৫. ইবনে খালদুন রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল কত বছর বলেছেন?
উত্তর: বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইবনে খালদুনের মতে রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল ১২০ বছর।

৬. নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা কী?
উত্তর: সমাজের বিপর্যয় থেকে মানুষের মনে বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়। আর এই বিতৃষ্ণা থেকে যে আত্মহত্যা সংঘটিত হয় তাই নৈরাজ্যমূলক আত্মহত্যা।

৭. ‘Das Kapital’ গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তর: ‘Das Kapital’ গ্রন্থের লেখক বিশিষ্ট জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস।

৮. দৃষ্টবাদকে Auguste Comte কয় ভাগে ভাগ করেছেন?
উত্তর: দৃষ্টবাদকে Auguste Comte তিন ভাগে ভাগ করেছেন।

৯. ‘The Division of Labour in Society’— গ্রন্থটি কার লেখা?
উত্তর: ‘The Division of Labour in Society’ গ্রন্থটি ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমের লেখা।

১০. ‘কিতাব আল ইবার’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
উত্তর: ‘কিতাব আল ইবার’ গ্রন্থটি রচনা করেন চৌদ্দ শতকের দার্শনিক ইবনে খালদুন।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:



৪র্থ অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. মার্কসীয় তত্ত্বানুযায়ী শ্রেণির প্রকৃতি কীসের ওপর নির্ভরশীল?
উত্তর: মার্কসীয় তত্ত্বানুযায়ী শ্রেণির প্রকৃতি উৎপাদন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।

২. অপরাধ বিজ্ঞানের জনক কে?
উত্তর: অপরাধ বিজ্ঞানের জনক এডউইন এইচ. সাদারল্যান্ড।

৩. সাম্প্রতিককালে সমাজে সামাজিক গতিশীলতার সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: সাম্প্রতিককালে নগরায়ণ, শিল্পায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সমাজে সামাজিক গতিশীলতার সুযোগ ও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪. কাঠামোগত গতিশীলতা কী?
উত্তর: একটি বিশেষ সমাজের পেশাগত কাঠামোগত মৌলিক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট গতিশীলতাই হলো কাঠামোগত গতিশীলতা।

৫. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কী?
উত্তর: বিজ্ঞানসম্মত অনুসন্ধানের যুক্তিসংগত উপায়কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি (Scientific Method) বলা হয়।

৬. ‘আমরা বোধ’ কী?
উত্তর: ‘আমরা বোধ’ হলো এক গভীর পারস্পরিক ঐক্যবোধ।

৭. ‘সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল—বিশেষ যা সতত পরিবর্তনশীল’— উক্তিটি কার?
উত্তর: ‘সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের জাল—বিশেষ যা সতত পরিবর্তনশীল’ উক্তিটি আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার—এর।

৮. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় কোনটি?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হচ্ছে সমাজকাঠামো।

৯. প্রাথমিক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: প্রাথমিক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ হচ্ছে পরিবার।

১০. লোকরীতি কী?
উত্তর: লোকরীতি হচ্ছে সমাজের আদর্শ বা মানসম্পন্ন আচরণ যা সমাজের সদস্যদের জন্য অবশ্যপালনীয়।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. ভৌগোলিক প্রভাব কীভাবে মানুষের জীবিকা নির্ধারিত করে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জনসাধারণের পেশা ভৌগোলিক প্রভাবে নির্ধারিত হয় এবং তা সমাজজীবনকে প্রভাবিত করে। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ পাট উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। শীতলক্ষ্যার উপকূলে ডেমরা অঞ্চলে তাঁত শিল্প গড়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো যে, শীতলক্ষ্যার পানির প্রভাবে এ অঞ্চলের আবহাওয়া তাঁত-সুতার নমনীয়তা বাড়িয়ে দেয়।
ফলে তাঁতিদের সুতিবস্ত্র বয়নে সুবিধা হয়। বাংলাদেশের সিলেটে ও আসামে গড়ে ওঠেছে চা শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমেও মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে, আর এসব শিল্পের উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে ‘ভৌগোলিক পরিবেশ’।

২. ডুর্খেইমের ক্রিয়াবাদ তত্ত্বটি দ্বারা কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্রিয়াবাদের জনক ডুর্খেইম তার ক্রিয়াবাদের ব্যাখ্যায় সমাজকে জীবদেহের সাথে তুলনা করেন।
একটি জীব বা একজন ব্যক্তিমানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে এবং জীবদেহ বা ব্যক্তিমানুষকে সচল রাখার জন্য তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের কর্ম সঠিকভাবে সম্পাদন করলেই ব্যক্তিমানুষ সচল থাকে। তেমনি সমাজেরও থাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা অংশ। সমাজ সচল থাকে তখনই যখন সমাজের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ কর্ম ও দায়িত্ব পালন করে।

৩. “সামাজিক পরিবর্তনের হার সামাজিক গতিশীলতার সহায়ক বা প্রতিবন্ধক উপাদান হিসেবে কাজ করে” বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সামাজিক পরিবর্তনের হার সামাজিক গতিশীলতার সহায়ক বা প্রতিবন্ধক উপাদান হিসেবে কাজ করে। কেননা বিপ্লবের মতো দ্রুত সামাজিক পরিবর্তনের উপাদান উলম্ব সামাজিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। আবার প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সুযোগ যেখানে কম থাকে সেখানে সামাজিক গতিশীলতার সম্ভাবনাও কম থাকে।

৪. জীবনযাপনের রীতি সামাজিক গতিশীলতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সমাজের অপেক্ষাকৃত নীচু স্তরের মানুষ অপেক্ষাকৃত উঁচু স্তরে উপনীত হওয়ার উদ্দেশ্যে উঁচু স্তরভুক্ত ব্যক্তিবর্গের আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি প্রভৃতি জীবনযাপনের রীতি অনুকরণে আগ্রহী হতে পারে। এভাবে ঊর্ধ্বমুখী উলম্ব গতিশীলতা সৃষ্টি হয়। আবার সমাজের উঁচু স্তরের জনগণ যদি সেই স্তরের আচার-আচরণ থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে সামাজিক মর্যাদার হানি ঘটে সেক্ষেত্রে অধঃমুখী উলম্ব সামাজিক গতিশীলতার সৃষ্টি হয়।

৫. আত্মহত্যা কী? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: কোনো ব্যক্তি যদি নিজেই নিজেকে হত্যা করে তখন তাকে আত্মহত্যা বলে।
ফরাসি সমাজবিজ্ঞানের জনক এমিল ডুর্খেইম-এর মতে, আত্মহত্যা হলো ব্যক্তিগত ঘটনা কিন্তু আত্মহত্যার হার সামাজিক ঘটনা। তিনি বলেন, প্রতিটি মৃত্যু যিনি মারা গেলেন তার দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পাদিত কাজ, যা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক হতে পারে। এরকম কাজের ফলশ্রুতিতে কেউ মারা গেলে সে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে।


৫ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. নৈতিকতা কী?
উত্তর: নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি।

২.  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো সুসংবদ্ধ জ্ঞান আহরণ।

৩. ‘জৈবিক বন্ধনের সামাজিক স্বীকৃতিই জ্ঞাতিসম্পর্ক’ উক্তিটি কার?
উত্তর: ‘জৈবিক বন্ধনের সামাজিক স্বীকৃতিই জ্ঞাতিসম্পর্ক‘ –উক্তিটি ব্রিটিশ নৃবিজ্ঞানী রিভার্স—এর।

৪. পরিবারের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: পরিবার হলো বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোকের যৌথভাবে বসবাস করার একটি সংগঠন।

৫. ‘The History of Human Marriage’ বইটি কার লেখা?
উত্তর: ‘The History of Human Marriage’ বইটি ফিনল্যান্ডের সমাজবিজ্ঞানী ওয়েস্টারমার্ক এর লেখা।

৬. প্রতিষ্ঠান কী?
উত্তর: প্রতিষ্ঠান হলো সমাজ কর্তৃক গৃহীত এমন এক স্থায়ী ব্যবস্থা যা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।

৭. সমাজের ক্ষুদ্র একক কী?
উত্তর: পরিবার হলো সমাজের ক্ষুদ্র একক।

৮. প্রথা কী?
উত্তর: সমাজের সুনির্দিষ্ট কতকগুলো নিয়ম, যা অনুসরণ করা সমাজবাসীর কর্তব্য, তা—ই হচ্ছে প্রথা।

৯. মাতৃপ্রধান পরিবার কী?
উত্তর: যে পরিবারে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা পরিবারের বয়স্ক মেয়েদের ওপর ন্যস্ত থাকে তাকে মাতৃপ্রধান পরিবার বলে।

১০. একক বিবাহ কী?
উত্তর: একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে সংঘটিত বিবাহকে একক বিবাহ বলে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. কাল্পনিক জ্ঞাতি বলতে কী বোঝ?
উত্তর: যে ব্যাক্তি রক্ত বা বৈবাহিক সূত্রে জ্ঞাতি নয় কিন্তু তার সাথে রক্ত সম্পর্কীয় বা বৈবাহিক জ্ঞাতিদের মতো আচরণ করা হয় তাই কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক। কাল্পনিক জ্ঞাতিসম্পর্ক দুই ধরনের হয়। যথা- পাতানো সম্পর্ক এবং ধর্মীয় সম্পর্ক। পাতানো সম্পর্ক সাধারণত দুজন পুরুষ বা দুজন মহিলা, অথবা একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে গড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে ধর্মীয় সম্পর্ক ধর্মের নামে গড়ে তোলা হয়। যেমন- ধর্ম মা, ধর্ম বাবা ইত্যাদি।

২. সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সমাজে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেই সমাজের শৃঙ্খলা, ভারসাম্য টিকে আছে। এগুলো মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের বিভিন্ন অভাব ও প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেমন- অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি মানুষের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি সাধনের উদ্দেশ্যে কাজ করে থাকে।

৩. পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান, কেননা মানবসমাজের বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই পরিবারের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়। পরিবারেই মানুষ জন্মগ্রহণ করে, বেড়ে ওঠে এবং বৃহত্তর সমাজজীবনে প্রবেশের শিক্ষা লাভ করে। সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবারের কাঠামো ও কার্যাবলিতে পরিবর্তন এলেও তা কখনো বিলুপ্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।

৪. মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলতে কী বোঝ?
উত্তর: যে পরিবারে পারিবারিক ব্যবস্থাপনা এবং পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বয়স্ক মহিলা যেমন স্ত্রী বা মাতার ওপর ন্যস্ত থাকে তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে নারীর অধিকার পুরুষ অপেক্ষা বেশি থাকে এবং মায়ের পরিচয়ে বংশ পরিচয় নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের গারো উপজাতিদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।

৫. পরিবার বলতে কী বোঝ?
উত্তর: পরিবার হলো মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের সর্বজনীন রূপ। পরিবারে স্বামী-স্ত্রী সমাজের নিয়মকানুন সাপেক্ষে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এবং সন্তান-সন্ততি জন্মদান ও লালনপালন করে। পরিবার সদস্যদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করে। সদস্যদের মধ্যে মানসিক ঐক্য গড়ে তোলে এবং পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় একটি অভিন্ন সংস্কৃতির জন্ম দেয়। সুতরাং বলা যায় পরিবার হলো সাধারণত বাসস্থান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সন্তান উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সামাজিক দল বা সংস্থা।


৬ষ্ঠ অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. টি.বি. বটোমোর—এর মতে সামাজিক স্তরবিন্যাস কী?
উত্তর: টি. বি. বটোমোর— এর মতে “সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের শ্রেণি বা স্তরভিত্তিক বিভাজন যা মর্যাদা ও ক্ষমতা গঠন করে।”

২. সমাজজীবনে কোন উপাদানের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়?
উত্তর: সমাজজীবনে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।

৩. সংস্কৃতি কাকে বলে?
উত্তর: সমাজের সদস্য হিসাবে মানুষ যেসব জ্ঞান—বিজ্ঞান, আচার বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিবোধ, আইনকানুন ও অভ্যাস অর্জন করে তার জটিল সমষ্টিকেই সংস্কৃতি বলে।

৪. সংস্কৃতি কী?
উত্তর: সংস্কৃতি হলো সার্বিক জীবনপ্রণালি।

৫. ‘শীতল জলবায়ু স্বাধীনতার অনুকূল’—এ উক্তিটি কার?
উত্তর: ‘শীতল জলবায়ু স্বাধীনতার অনুকূল’ উক্তিটি সমাজবিজ্ঞানী মন্টেস্কুর।

৬. কোনটি ব্যবহার করে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে সচেষ্ট হয়েছে?
উত্তর: বিজ্ঞানের কলাকৌশল ব্যবহার করে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করতে সচেষ্ট হয়েছে।

৭. সাধারণত কোন অঞ্চলের মানুষ কৃষ্ণবর্ণের হয়ে থাকে?
উত্তর: সাধারণত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষ কৃষ্ণবর্ণের হয়ে থাকে।

৮. ব্যক্তির অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনটি?
উত্তর: পরিবার ব্যক্তির অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

৯. ভৌগোলিক উপাদান কী?
উত্তর: সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই হলো ভৌগোলিক উপাদান।

১০. কোন অঞ্চল মানবসভ্যতার উপযোগী পরিবেশ?
উত্তর: নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল মানবসভ্যতার উপযোগী পরিবেশ।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. ব্যক্তিজীবনে বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে —ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যক্তির সামাজিক জীবনে বৈচিত্র্য আনে। বিদ্যালয়ে শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করে। বিদ্যালয়ে শিশু বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রদের সংস্পর্শে আসে। শিক্ষক, কর্মচারী, ইত্যাদির সান্নিধ্যে আসে। এখানে সে নিয়ম-শৃঙ্খলা, দায়িত্ব কর্তব্য ছাড়াও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। বিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। এই ধারণা তার জীবনবোধের রূপায়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে।

২. জনসংখ্যার বণ্টনে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জনসংখ্যার বণ্টনে ভৌগোলিক উপাদান গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
জনসংখ্যার ঘনত্ব নির্ভর করে মানুষের মৌল চাহিদা পূরণের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর। সাধারণত যেখানে খাদ্যের যোগান ও বসবাসের উপযোগী সেখানেই লোকজনের উপস্থিতি বেশি। অর্থাৎ ভৌগোলিক আবহাওয়ার জন্যই লোকজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমনাগমন করে যা জনসংখ্যার বণ্টনকেই নির্দেশ করে।
আবার যেখানে অনুকূল জলবায়ু ভারসাম্যপূর্ণ ভৌগোলিক পরিবেশ বিদ্যমান সেখানেও লোকজনের আনা-গোনা বেশি হয়। সুতরাং বলা যায় ভৌগোলিক উপাদানই জনসংখ্যাকে ভাগ বা বণ্টন করে থাকে।

৩. কুটিরশিল্প ও দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কুটিরশিল্প ও দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের ওপর ভৌগোলিক প্রভাব অনস্বীকার্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকার ডেমরা অঞ্চলে তাঁতিদের বাস এবং এখানেই বিখ্যাত ঢাকাই শাড়ি তৈরি হয়। অঞ্চলটি নদীবহুল এবং আবহাওয়া ঐ কুটিরশিল্প গড়ে ওঠার অনুকূল। মুর্শিদাবাদ ও রাজশাহীকে কেন্দ্র করে রেশমি শাড়ি শিল্প গড়ে উঠেছে।
কারণ ঐ অঞ্চলে তুঁত গাছে রেশমি কীট জন্মাতে পারে। সমাজের আচার অনুষ্ঠান ও ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাবে অঞ্চলভেদে পৃথক হয়। যেমন- হাওড় অঞ্চলের সামাজিক অনুষ্ঠান ও পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক অনুষ্ঠানের চেয়ে ভিন্ন ধরনের।

৪. সমাজজীবনে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সমাজজীবনের ওপর ভৌগোলিক তথা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব অনস্বীকার্য। সমাজজীবন ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অন্যতম ফসল। যেকোনো সমাজেরই একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকে, যে পরিবেশ সমাজের উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানব আচরণের বিভিন্ন দিক মৌলিকভাবে প্রভাবিত করে।
দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের, নীতিবোধের এমনকি মানুষের ভাষা, সাহিত্য, বেশভূষা, খাদ্যাভাস, রাজনীতি ও প্রশাসন ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত হয়।

৫. ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশে পারিবারিক পরিবেশ কীভাবে ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: সচেতনমূলক শিক্ষার মাধ্যমে পারিবারিক পরিবেশ ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলি বিকাশে ভূমিকা পালন করে ব্যক্তির প্রতি ব্যক্তির, সমাজের প্রতি ব্যক্তির, প্রতিবেশীর প্রতি ব্যক্তির আচার-ব্যবহার কী হবে, তার শিক্ষাজীবন, তার সামাজিক জীবন কীভাবে গড়ে উঠবে- এসব কিছুর জ্ঞান সে প্রাথমিকভাবে পরিবার থেকেই অর্জন করে।
বিশ্বাস, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব কীরূপ হবে তাও সে পরিবার থেকেই আয়ত্ত করে। সর্বোপরি একজন মানুষের সার্বিক ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলি। পারিবারিক পরিবেশেই বিকশিত হয়।

৭ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. কাকে ক্রিয়াবাদের জনক বলা হয়?
উত্তর: ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইমকে ক্রিয়াবাদের জনক বলা হয়।

২. ICT—এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর: ICT— এর পূর্ণরূপ — Information and Communication Technology.

৩. সমাজের মূল চালিকাশক্তি কোনটি?
উত্তর: সমাজের মূল চালিকাশক্তি অর্থনীতি।

৪. কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়ে ওঠে?
উত্তর: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।

৫. সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় কোনটি?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রত্যয় হলো সমাজ।

৬. সামাজিকীকরণ কাকে বলে?
উত্তর: সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।

৭. সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম কোনটি?
উত্তর: সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম পরিবার।

৮. মানব জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: মানব জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী প্রধান উপাদান হচ্ছে ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক উপাদান।

৯. Positive Philosophy গ্রন্থের লেখক কে?
উত্তর: Positive Philosophy গ্রন্থের লেখক ফরাসি দার্শনিক অগাস্ট কোঁৎ।

১০. পুঁজিবাদ কী?
উত্তর: পুঁজিবাদ হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাভিত্তিক অর্থব্যবস্থা।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. মানুষের মেধার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মানুষের মেধার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী উপাদানটি হলো বংশগতি ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগত উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ব্যক্তির প্রতিভা ও দক্ষতা বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত। এ প্রসঙ্গে গ্যালটন (Galton) বলেন, প্রতিভাবান পিতা-মাতার ঘরেই প্রতিভাবান সন্তানের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রতিভাবান লোকেরা অনেক প্রতিকূল পরিবেশে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২. সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে ভূমিকা রাখে?
উত্তর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে নৈতিক গুণাবলির শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে।
শিশু যখন প্রথম বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে তার দীক্ষিতকরণ শুরু হয় এবং সে বৃহত্তর সমাজে প্রচলিত আদবকায়দা এবং আচার-আচরণের সাথে পরিচিত হতে আরম্ভ করে। তার সহপাঠীরা বিভিন্ন পরিবার ও পরিবেশ থেকে আসে।
কাজেই বৃহত্তর পটভূমিকায় সে সমাজের মূল্যবোধ, ভাবাদর্শ, সমাজ অনুমোদিত আচার-আচরণ এবং সমাজে নিষিদ্ধ কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। শিক্ষকদের নৈতিক বাণীও তার সামাজিকীকরণে সাহায্য করে। এরূপ ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিকীকরণে ভূমিকা রাখে।

৩. “পরিবার হলো একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান”– ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পরিবার হলো সবচেয়ে প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান যার অস্তিত্ব আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সকল সমাজেই বিদ্যমান। সমাজ কাঠামোয় বিদ্যমান সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পরিবার হলো সংঘবদ্ধ জীবনের সবচেয়ে সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠান। পরিবারেই মানুষ জন্মগ্রহণ করে, বেড়ে ওঠে এবং বৃহত্তর সমাজে প্রবেশের শিক্ষা লাভ করে।
সময়ের পরিক্রমায় বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি সাধিত হলেও পরিবার নামক ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান কখনো বিলুপ্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। কারণ সমাজ বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই পরিবারের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত। আর এ জন্যই পরিবারকে একটি সর্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করা হয়।

৪. নমুনা জরিপ পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সামাজিক গবেষণার জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে নমুনা জরিপ অন্যতম।
জরিপ কথাটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু সরেজমিনে দেখা, পরিমাপ বা নিরূপণ করা। নমুনা হলো গোটা জিনিসের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ। একটি এলাকার বা কোনো দেশের সমগ্র জনসংখ্যা সম্পর্কে গবেষণা করতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত ঐ এলাকা বা দেশের জনসংখ্যার একটি প্রতিনিধিত্বকারী অংশকে নমুনা হিসেবে বেছে নেন এবং নমুনাভুক্ত জনসংখ্যার ওপর একটি প্রশ্নমালা প্রয়োগ করে গবেষণা চালান। এই পদ্ধতিতে গবেষণা কর্ম পরিচালনাকে ‘নমুনা জরিপ পদ্ধতি’ বলা হয়।

৫. বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সমাজে প্রচলিত আইন-কানুন, মূল্যবোধ ও রীতিনীতির পরিপন্থি আচরণকে বিচ্যুতিমূলক আচরণ বলে। প্রতিটি সমাজেই কতকগুলো নিজস্ব আচার-আচরণ, রীতিনীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ থাকে। সে অনুসারে সমাজ ব্যক্তির কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে বলা হয় কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত আচরণ। এই প্রত্যাশিত আচরণের বাইরে ব্যক্তি যে সকল আচরণ করে তাই বিচ্যুতি আচরণ। সুতরাং, বিচ্যুতি বলতে মূলত এমন সব আচরণকে বোঝায় যা স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত আচরণের পরিপন্থি।


৮ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. উন্নয়ন কী?
উত্তর: সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হলো উন্নয়ন।

২. যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম কয়টি?
উত্তর: যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম তিনটি।

৩. CEDAW এর পূর্ণরূপ লেখ।
উত্তর: CEDAW এর পূর্ণরূপ হলো Convention on the Elimination of all forms of Discrimination Against Women.

৪. আদর্শ আমলাতন্ত্রের রূপরেখা প্রদান করেন কে?
উত্তর: আদর্শ আমলাতন্ত্রের রূপরেখা প্রদান করেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

৫. Strata কী বোঝাতে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: Strata প্রত্যয়টি মাটি বা শিলার বিভিন্ন স্তর বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

৬. ‘Social Organization’ গ্রন্থটির লেখক কে?
উত্তর: ‘Social Organization’ গ্রন্থের লেখক সমাজবিজ্ঞানী চার্লস হরটন কুলি।

৭. এস্টেট প্রথার শ্রেণীসমূহ কী কী?
উত্তর: এস্টেট প্রথার শ্রেণিসমূহ হচ্ছে— ভূমি মালিক বা অভিজাত শ্রেণি, যাজক শ্রেণী এবং ভূমিদাস শ্রেণি।

৮. জেন্ডার কী?
উত্তর: নারী ও পুরুষের মধ্যে জীববিজ্ঞানের নিয়মে যে পার্থক্য তাকে জেন্ডার বলে চিহ্নিত করা হয়।

৯. ভারতীয় সমাজে কয় ধরনের জাতিবর্ণ প্রথা দেখতে পাওয়া যায়?
উত্তর: ভারতীয় সমাজে চার ধরনের জাতিবর্ণ প্রথা দেখা যায়। যথা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

১০. কোন আন্তর্জাতিক সংগঠন শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে?
উত্তর: জাতিসংঘ শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা দেখা দেয়— বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: বুদ্ধিমত্তা সামাজিক অসমতার অন্যতম নির্ধারক। কেননা বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, ধীশক্তি এগুলোর ভিত্তিতে সমাজের মানুষের মধ্যে পার্থক্য নির্ণীত হয় এবং সামাজিক অসমতা দেখা দেয়। এরিস্টটলের মতে, জন্মগতভাবেই মানুষ প্রজ্ঞাবান ও প্রজ্ঞাহীন হয় এবং বুদ্ধিমত্তার এরূপ পার্থক্যের জন্যেই সমাজে দাস ও মনিবের সৃষ্টি হয়। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রে যে সামাজিক শ্রেণিসমূহের কথা বলা হয়েছে তা মূলত বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য থেকেই সৃষ্ট।

২. শ্রেণি একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা’-বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: শ্রেণি অর্জিত সামাজিক অবস্থান বলে এটি একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা।
সমাজে সুনির্দিষ্ট মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিবর্গের সমষ্টিই হচ্ছে। শ্রেণি। সামাজিক পরিমাপে শ্রেণির অবস্থান মর্যাদার সাথে সম্পর্কযুক্ত। শ্রেণি মূলত আয়, ক্ষমতা, সম্পত্তি, পেশা, শিক্ষা ও বংশ মর্যাদার উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি নিজের কর্মদক্ষতার মাধ্যমে সামাজিক অবস্থা নির্ণয় করতে পারে। এ কারণেই মূলত শ্রেণিকে উন্মুক্ত ব্যবস্থা বলা হয়।

৩. সামাজিক সমস্যা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: সামাজিক সমস্যা সমাজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়। সামাজিক সমস্যা বলতে সমাজের এমন অবস্থাকে বোঝায় যে অবস্থাকে সমাজের অনেক লোকই অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করে, যে অবস্থা অনেকের ওপর অবাঞ্ছিত প্রভাব রাখে এবং যার | সমাধানের লক্ষ্যে অনেকেই যৌথ প্রয়াস চালানোর প্রয়োজন অনুভব করে।

৪. দাস প্রথা বলতে কী বোঝ?
উত্তর: দাসপ্রথা বলতে এমন এক অসমতার সমাজব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে কিছু লোক সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে অধিকারবিহীন। দাসপ্রথা পৃথিবীর প্রাচীন শ্রেণি ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। দাসপ্রথার একমাত্র পরিচয় হলো দাসরা তার প্রভু বা মনিবের সম্পত্তি। সামাজিক ক্ষেত্রে দাসরা ঘৃণার পাত্র। দাসপ্রথা ছিল একটি অর্থনৈতিক সম্পর্কনির্ভর সমাজব্যবস্থা। দাসপ্রথায় দাসদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না।

৫. বয়স বৈষম্যবাদ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বয়স বৈষম্যবাদ বলতে কেবল বয়সের কারণে কোনো বয়স গোষ্ঠী বা তার কোনো সদস্যের প্রতি নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা বা মনোভাবপোষণ ও বৈষম্যমূলক আচরণ করাকে বুঝায়। বয়স বিদ্বেষী ব্যক্তি বা সমাজ প্রবীণদেরকে জৈবিক ও সামাজিকভাবে অযোগ্য বলে মনে করে। তাদেরকে বিচ্ছিন্ন, নির্ভরশীল, আবেগীয় দিক থেকে অস্থিতিশীল এবং দুর্বলচিত্তের অধিকারী বলে গণ্য করে। আর এ ধরনের মনোভাব থেকেই প্রবীণদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তৈরি হয়।


৯ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. ‘Authority’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘Authority’ শব্দের অর্থ কর্তৃত্ব।

২. সংস্কৃতি কী?
উত্তর: মানবসৃষ্ট সবকিছুর সমষ্টিই হলো সংস্কৃতি।

৩. জাতিবর্ণ কোন ধরণের ব্যবস্থা?
উত্তর: জাতিবর্ণ একটি বদ্ধ ব্যবস্থা।

৪. জাতিবর্ণ প্রথা কী?
উত্তর: বংশানুক্রমকে ভিত্তি করে সমাজে যে শ্রেণি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে জাতিবর্ণ প্রথা বলে।

৫. রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি?
উত্তর: রাষ্ট্রের উপাদান চারটি।

৬. রুশোর মতে, প্রকৃতির রাজ্য কেমন ছিল?
উত্তর: রুশোর মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল অনাবিল সুখ শান্তিতে পরিপূর্ণ।

৭. ‘Ageism’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘Ageism’ শব্দের অর্থ হলো বয়স বৈষম্যবাদ।

৮. কৃষি সমাজের উদ্বৃত্ত ফসল কীসের সূচনা করে?
উত্তর: কৃষি সমাজের উদ্বৃত্ত ফসল সভ্যতার সূচনা করে।

৯. সামাজিক বিবর্তনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা কে ছিলেন?
উত্তর: সামাজিক বিবর্তনবাদ তত্ত্বের প্রবক্তা ইংরেজ সমাজবিজ্ঞানী হার্বাট স্পেন্সার।

১০. ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার পূর্ণ বিকাশ ঘটে কোন সমাজে?
উত্তর: ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার পূর্ণ বিকাশ ঘটে শিল্প সমাজে।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সমাজের উঁচু-নিচু বিভিন্ন শ্রেণি বা মর্যাদার মানুষকে বোঝাতে সমাজবিজ্ঞানে যে প্রত্যয়টি গৃহীত হয়েছে তা সামাজিক স্তরবিন্যাস হিসেবে পরিচিত। সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে মর্যাদা, শ্রেণি ও অন্যান্য আরো কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী পিতিরিম এ. সরোকিন বলেন সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো একটি নির্দিষ্ট জনসমষ্টির ওপর চাপিয়ে দেয়া মানুষের উঁচু-নিচু ভেদাভেদ। অর্থাৎ, সমাজের বিভিন্ন উপাদানের ভিত্তিতে সমাজের মানুষের সাথে মানুষের যে পার্থক্য, তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস।

২. পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ বলতে বোঝায়, শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্ব পালন করা। শিশুর গোসল করানো, খাওয়ানো, পরিচর্যা, আদর-যত্ন সর্বোপরি তাকে স্নেহের পরশে লালন-পালনের কাজটি মূলত মনস্তাত্ত্বিক। এসব কাজ শিশুর প্রতি স্নেহ, আদর, ভালোবাসা ও আবেগের কারণেই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।
আধুনিক সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে পারিবারিক অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দেন। বস্তুত পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা শিশুর ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গঠনে যত্নবান থাকেন। শুধু শৈশব কালে নয়, কৈশোরে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। আর এসবই হচ্ছে পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক কাজ।

৩. কর্তৃত্ব বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ক্ষমতার প্রত্যাশিত ও বৈধ প্রভুত্বকারিকে কর্তৃত্ব বলে। সংজ্ঞায় প্রত্যাশিত কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে নীতি বা রাজনৈতিক ফর্মূলা অনুযায়ী কর্তৃত্ব যার বা যাদের ওপর ন্যস্ত করা উচিত এই অর্থে। সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার কর্তৃত্বের সংজ্ঞা প্রদানে, বলেন, ‘কর্তৃত্ব প্রায়শই ক্ষমতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়, যে ক্ষমতা অন্যকে মেনে চলতে বাধ্য করে। তবে কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রয়োগই শেষ কথা নয়, বরং ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার যখন স্বীকৃতি লাভ করে তখনই প্রকৃত কর্তৃত্বের উদ্ভব সম্ভব হয়।

৪. আদর্শ নমুনা কী? বুঝিয়ে বল।
উত্তর: ম্যাক্স ওয়েবারের সমাজ বিশ্লেষণের পদ্ধতি হলো আদর্শ নমুনা। কোনো সামাজিক প্রপঞ্চ বা ঐতিহাসিক সত্তাকে জানতে হলে, বিশ্লেষণ করতে হলে তার আদর্শ নমুনা তৈরি করতে হবে। আর এ নমুনা তৈরির জন্য বিজ্ঞানীকে অন্তর্দৃষ্টির আশ্রয় নিতে হবে। একটি প্রপঞ্চকে সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও যৌক্তিকতাকে আদর্শ ধরে নিয়ে অন্য প্রপঞ্চকে তার সাথে মিল বা অমিলের ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। ম্যাক্স ওয়েবারের আদর্শ নমুনা সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতির প্রবর্তন। তিনি আমলাতন্ত্রকে আদর্শ নমুনার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছেন।

৫. ‘সার্বভৌমত্ব হল সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত আইনানুগ কর্তৃত্ব’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সার্বভৌমত্ব হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত আইনানুগ কর্তৃত্ব। সার্বভৌমত্ব এমন এক অবিভাজ্য নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব যার দ্বারা অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ থেকে দেশকে রক্ষার চূড়ান্ত ক্ষমতা জন্ম নেয়। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো সংগঠনই রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। যেমন- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসংখ্যা এবং সরকার আছে; কিন্তু সার্বভৌমত্ব নেই বিধায় এটি রাষ্ট্র নয়। অন্যদিকে সার্বভৌমত্ব আছে বলেই বাংলাদেশ একটি রাষ্ট্র।


১০ম অধ্যায়
জ্ঞানমূলক প্রশ্ন:
১. ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত একটি মতবাদের নাম লিখ।
উত্তর: ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত একটি মতবাদ হলো সর্বপ্রাণবাদ।

২. “সমাজবিজ্ঞান একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।”— উক্ত সংজ্ঞাটি কোন সমাজবিজ্ঞানীর?
উত্তর: “সমাজবিজ্ঞান একমাত্র বিজ্ঞান যা সমাজ এবং সামাজিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যয়ন করে।”— সংজ্ঞাটি সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজের।

৩. বাংলাদেশের পরিবার মূলত কীরূপ?
উত্তর: বাংলাদেশের পরিবার মূলত পিতৃপ্রধান।

৪. ব্যক্তির জন্য সংঘ কীরূপ সংগঠন?
উত্তর: ব্যক্তির জন্য সংঘ ঐচ্ছিক সংগঠন।

৫. সামাজিক প্রগতি কী?
উত্তর: কাঙ্খিত বা বাঞ্ছিত পরিবর্তনই হলো সামাজিক প্রগতি।

৬. ‘Polygamy’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘Polygamy’ শব্দের অর্থ বহুবিবাহ।

৭. আদর্শহীনতা কী?
উত্তর: ব্যক্তির মধ্যে সমাজে প্রচলিত নৈতিকতার বিপরীত চরিত্র সৃষ্টি হওয়াই আদর্শহীনতা।

৮. ভদ্রবেশী অপরাধ কী?
উত্তর: আর্থ–সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি যখন পেশাগত কাজের মাধ্যমে অপরাধ করে তখন তাকে ভদ্রবেশী অপরাধ বলে।

৯. ধর্ম কী?
উত্তর: ধর্ম বলতে কতকগুলো নিয়মকানুন, আচার অনুষ্ঠান ও বিশ্বাসকে বোঝায়।

১০. ডুর্খেইম কয় ধরনের নৈরাজ্যের কথা বলেছেন?
উত্তর: ডুর্খেইম দুই ধরনের নৈরাজ্যের কথা বলেছেন।


অনুধাবনমূলক প্রশ্ন:
১. নৈতিকতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত সূক্ষ্ম অনুভূতি। নৈতিকতা হলো ভালো ও মন্দের মধ্যকার ইচ্ছা, সিদ্ধান্ত ও কর্মগত বিভাজন। নির্দিষ্ট দর্শন, ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুযায়ী নৈতিক বিধানই নৈতিক ব্যবস্থা। সাধারণ অর্থে নৈতিকতা বলতে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট জনগণ বা সংস্কৃতির মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল কোনো কিছুর সত্যিকার ভালো বা মন্দের অবস্থা। যার মধ্যে নৈতিকতা নামক গুণ রয়েছে সে বা তারা ভালো এবং মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে।

২. আয়কর ফাঁকি দেয়া কোন ধরনের অপরাধ এবং কেন?
উত্তর: আয়কর ফাঁকি ভদ্রবেশী অপরাধ। আর্থ-সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কর্তৃক তাদের পেশাগত কাজের প্রক্রিয়ায় এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করে থাকে যা ভদ্রবেশী অপরাধ বলে আখ্যায়িত করা হয়। যেমন আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, ট্রেডমার্ক নকল করা ইত্যাদি। এই ভদ্রবেশী অপরাধের প্রভাব সমাজে নেতিবাচক।

৩. প্যারোল বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: কোনো অপরাধী কারাগারে শাস্তি ভোগের একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর তাকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থাকে প্যারোল বলা হয়। এ ব্যবস্থায় সাধারণত শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ ভোগ করার পর অপরাধীকে প্যারোলে আনা হয়। কারাগারে শাস্তি ভোগকালে অপরাধীর মধ্যে যদি তার অপরাধকর্মের জন্য অনুশোচনা হয় এবং তার মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তবেই তাকে প্যারোলে এনে চারিত্রিক সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

৪. অপরাধ ও বিচ্যুতির পার্থক্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আইন ভঙ্গমূলক কাজ হচ্ছে অপরাধ অন্যদিকে বিচ্যুতি হচ্ছে সমাজে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ।
বিচ্যুতি ও অপরাধ ঘনিষ্ঠ হলেও এরা এক নয়, প্রকৃতপক্ষে বিচ্যুতির ধারণা অপরাধের চেয়ে বড়। অপরাধ হলো কেবল আইনের লঙ্ঘন। অপরাধের শাস্তি রাষ্ট্র কতৃক নির্ধারিত। সে শাস্তি হতে পারে লঘু অথবা গুরু।
কিন্তু বিচ্যুতি হচ্ছে সেই আচরণ যা আইন লঙ্ঘন করে না তবে বিচ্যুতিমূলক আচরণকে সমাজের অধিকাংশ মানুষ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে থাকে। এর মাধ্যমে সামাজিক সংহতি কিছুটা হলেও বিনষ্ট হয়। তাই বলা যায়, অপরাধ ও বিচ্যুতি মূলত দুটি আলাদা বিষয় এবং উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়।

৫. এমিল ডুর্খেইমের বিচ্যুতিমূলক আচরণ বিশ্লেষণের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এমিল ডুর্খেইম নৈরাজ্য বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সমাজে যখন নৈরাজ্য দেখা দেয় তখন মানুষ বিচ্যুত আচরণ করে। নৈরাজ্য বলতে বুঝায় সমাজের আদর্শ বা মূল্যবোধহীনতা। অর্থাৎ নৈরাজ্যজনক বা বিশৃঙ্খল অবস্থায় সমাজে রীতিনীতি, আইন-কানুন, বিশ্বাস প্রভৃতি ভেঙে পড়ে, ব্যক্তির ওপর সমাজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না তখন মানুষ বিচ্যুত আচরণ করে।
ডুর্খেইম আরও দেখান বিচ্যুতির উচ্চ হারের ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ডুর্খেইমের মতানুযায়ী বিচ্যুতি দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে থাকে। এগুলো হলো— প্রথমত: বিচ্যুতির রয়েছে অভিযোজন ক্রিয়া। দ্বিতীয়ত: বিচ্যুতি সমাজে ভালো এবং মন্দ আচরণের মধ্যে সীমা নির্ধারণে সহায়তা করে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url