ষষ্ঠ শ্রেণি, ইসলাম ও নৈতিকশিক্ষা, দ্বিতীয় অধ্যায় (ইবাদত) || Class Six, Islam, Chapter 2 (Ebadat)

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. ইবাদত শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ইবাদত অর্থ আনুগত্য করা।

২. ইবাদত কী?
উত্তর: আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যই হলো ইবাদত।

৩. ইবাদতকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর: ইবাদতকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

৪. ইবাদতে বাদানি কী?
উত্তর: শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে যে ইবাদত করা হয় তাকে বলা হয় ইবাদতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদত।

৫. ইবাদতে মালি কী?
উত্তর: অর্থের দ্বারা যে ইবাদত করতে হয় সেগুলোকে বলা হয় ইবাদতে মালি বা আর্থিক ইবাদত।

৬. নাজাসাতে হুকমি কী?
উত্তর: নাজাসাতে হুকমি হচ্ছে ঐ সকল অপবিত্রতা যা দেখা যায় না কিন্তু ইসলামি বিধানে তা নাজাসাত বা অপবিত্র বলে গণ্য।

৭. অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা কী?
উত্তর: হৃদয়কে যাবতীয় শিরক, আকিদা, রিয়া, গিবত ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখার নাম অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা।

৮. বাহ্যিক পবিত্রতা কী?
উত্তর: শরিয়তের বিধি মোতাবেক ওযু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে। পবিত্রতা অর্জনকে বাহ্যিক পবিত্রতা বলে।

৯. ওযু অর্থ কী?
উত্তর: ওযু অর্থ পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, উজ্জ্বলতা।

১০. ইবাদতে মালি ও বাদানি কী?
উত্তর: যে ইবাদতে শরীর ও অর্থ উভয়ের প্রয়োজন হয়। তাকে ইবাদতে মালি ও বাদানি বলে।

১১. ওযুর ফরজ কয়টি?
উত্তর: ওযুর ফরজ চারটি।

১২. তায়াম্মুম কী?
উত্তর: পবিত্র মাটি বা ঐ জাতীয় পবিত্র বস্তু দ্বারা পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখমণ্ডল ও-উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করাকে তায়াম্মুম বলে।

১৩. তায়াম্মুম-এর ফরজ কয়টি?
উত্তর: তায়াম্মুম-এর ফরজ তিনটি।

১৪. গোসল কী?
উত্তর: পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধোয়াকে গোসল বলে।

১৫. গোসলের ফরজ কয়টি?
উত্তর: গোসলের ফরজ হলো তিনটি।

১৬. সালাত-এর আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর: সালাত-এর আভিধানিক অর্থ হলো- দোয়া, রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি।

১৭. সালাত বা নামায কী?
উত্তর: আরকান আহকামসহ বিশেষ নিয়ম ও নির্দিষ্ট সময়ে আল্লাহর ইবাদতের নাম সালাত বা নামায।

১৮. ইসলামের কয়টি বুকন বা স্তম্ভ রয়েছে?
উত্তর: ইসলামের পাঁচটি বুকন বা স্তম্ভ রয়েছে।

১৯. সুবহে সাদিক কী?
উত্তর: আকাশের পূর্ব দিগন্তে লম্বমান যে আলোর রেখা দেখা দেয় তাকেই বলে সুবেহ সাদিক।

২০.  যোহরের সময় শুরু হয় কখন?
উত্তর: দ্বিপ্রহরের পর সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের সময় শুরু হয়।

২১. 'ছায়া আসলি' কী?
উত্তর: কোনো বস্তুর ঠিক দুপুরের সময়ে যে একটু ছায়া থাকে তাকেই 'ছায়া আসলি' বা আসল ছায়া বলে।

২২. নামাযের সময় 'আল্লাহু আকবার' বলে কোথায় হাত বাঁধতে হবে?
উত্তর: নামাযের সময় 'আল্লাহু আকবার' বলে নাভির উপরে হাত বাঁধতে হয়। তবে স্ত্রীলোকগণ বুকের ওপর হাত বাঁধবে।

২৩. রুকুতে গিয়ে কী বলতে হয়?
উত্তর: বুকুতে গিয়ে 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম' বলতে হয়।

২৪. নামাযের আহকাম কয়টি?
উত্তর: নামাযের আহকাম ৭টি।

২৫. নামাযের আরকান কয়টি?
উত্তর: নামাযের আরকান ৬টি।

২৬. নামাযের ওয়াজিব কয়টি?
উত্তর: নামাযের ওয়াজিব চৌদ্দটি।

২৭. নামাযের সুন্নাত কয়টি?
উত্তর: নামাযের সুন্নাত একশটি।

২৮. মাকরহ কী?
উত্তর: এমন কিছু কাজ আছে যা করলে নামায নষ্ট না হলেও সাওয়াব কম হয়। সেগুলোকে মাকরুহ বলে।

২৯. মোট কয়টি সময় সালাত পড়া নিষিদ্ধ?
উত্তর: মোট তিনটি সময় সালাত পড়া নিষিদ্ধ।

৩০. সিজদায়ে সাহ অর্থ কী?
উত্তর: সিজদায়ে সাহ অর্থ ভুলের জন্য সিজদাহ্।

৩১. সিজদায়ে সাহু কী?
উত্তর: ভুলবশত নামাযে ওয়াজিব বাদ পড়লে, তা সংশোধনের জন্য নামাযের শেষ বৈঠকে দুটি সিজদা করা হয়। একেই সিজদায়ে সাহু বলে।

৩২. নাজাসাত কী?
উত্তর: শরীর থেকে যেসব জিনিস বের হওয়ার কারণে শরীর অপবিত্র হয়ে যায় অথবা যে সব দ্রব্য কোনো বস্তুতে লাগলে অপবিত্র হয়ে যায়, তাকে নাজাসাত বলে।

৩৩. নাজাসাত কত প্রকার?
উত্তর: নাজাসাত দুই প্রকার।

৩৪. পবিত্রতার আরবি প্রতিশব্দ কী?
উত্তর: পবিত্রতার আরবি প্রতিশব্দ হলো তাহারাতুন।

৩৫. ওযু কী?
উত্তর: ওযু হলো- শরীর পবিত্র করার নিয়তে পবিত্র পানি দিয়ে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়া।

৩৬. 'নাজাসাতুন' এর বিপরীত শব্দ কী?
উত্তর: 'নাজাসাতুন' এর বিপরীত শব্দ হলো 'তাহারাতুন'।

৩৭. ইবাদতের দুটি অর্থ লেখ।
উত্তর: ইবাদতের দুটি অর্থ হলো- ১. দাসত্ব ও ২. আনুগত্য।

৩৮. নাজাসাত অর্থ কী?
উত্তর: নাজাসাত শব্দের অর্থ অপবিত্রতা বা পবিত্রতার বিপরীত অবস্থা।


প্রস্তুতি উপযোগী অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. কখন তায়াম্মুম করতে হয়? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: যখন পানি পাওয়া না যায় অথবা পাওয়া গেলেও ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধি বা প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকে। এসব অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা তায়াম্মুম করতে বলেছেন। তায়াম্মুম করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে।"

২. "নামায বেহেশতের চাবি"- উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: কারও হাতে কোনো ঘরের চাবি থাকলে অতি সহজেই ঘরে প্রবেশ করতে পারে। তেমনি যে ব্যক্তি নামায কায়েম করে সে অতি সহজেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। নামায অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা মুমিনের গুনাহ মাফের মাধ্যম। রাসুল (স.) বললেন, "যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।"

৩. আসর নামাযের ওয়াক্ত বর্ণনা কর।
উত্তর: যোহরের সময় শেষ হলেই আসরের সময় শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। তবে সূর্যের বর্ণ হলুদ রং ধারণ করলে আসরের নামায আদায় করা মাকরুহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "তোমরা নামাযসমূহ সংরক্ষণ কর বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসর) নামায।" (সূরা আল-বাকারা: ২৩৮)

৪. সিজদায়ে সাহু কেন দিতে হয়?
উত্তর: ভুলবশত নামাযে ওয়াজিব বাদ পড়ার কারণে সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। কারণ নামায সংশোধনের জন্য তা প্রয়োজন। তাই নামাযের শেষ বৈঠকে দুটি সিজদা দিতে হয়।

৫. সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ম বর্ণনা কর।
উত্তর: কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সিজদায়ে তিলাওয়াতের নিয়ত করে 'আল্লাহু আকবার' বলে সিজদাহ্ করতে হয়। সিজদা করার পর 'আল্লাহু আকবার' বলে উঠে দাঁড়াতে হয়। তাশাহহুদ পড়া ও সালাম ফিরানোর প্রয়োজন নেই। সিজদায়ে তিলাওয়াতে একটি সিজদা করলেই চলবে।

৬. কিয়ামতের দিন রাসুল (স.) কীভাবে উম্মতদেরকে চিনবেন?
উত্তর: ওযু করার ফলে উম্মতের মুখমণ্ডল এবং হাত-পা কিয়ামতের দিন উজ্জ্বলতায় ঝকঝক করবে। আর তা দেখে রাসুল (স.) তাঁর উম্মতদের চিনতে পারবেন।

৭. পবিত্র থাকার উপকারিতা কী?
উত্তর: পবিত্র থাকার উপকারিতা অনেক। পবিত্র থাকলে শরীর সুস্থ থাকে। মন প্রফুল্ল থাকে। লেখাপড়া ও কাজকর্মে মন বসে। আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়। সর্বোপরি আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা যায়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "আর উত্তমরূপে পবিত্রতা সম্পাদনকারীদের আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন।" (সূরা আত-তাওবা: ১০৮) তাছাড়া পবিত্রতা ইমানের অংশ। রাসুল (স.) বলেছেন, "পবিত্রতা ইমানের অংশ।” (মুসলিম)

৮. ইবাদত বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্য হলো ইবাদত। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদত। কারণ মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আসমান, জমিন, চাঁদ-সুরুজ, ফল-ফুল, নদীনালা সব মানবজাতির জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর দেওয়া এসব অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করার পর এর শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করতে হবে। নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর দেওয়া বিধানমতো চলার নামই ইবাদত।

৯. কেন তায়াম্মুম করতে হয়?
উত্তর: তায়াম্মুম হলো পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প পদ্ধতি। ওযু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে হয়। তায়াম্মুম আমাদের জন্য আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, "আর তোমরা যদি পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে।” (সূরা মায়িদা: ৬)

১০. তায়াম্মুম কখন ভঙ্গ হয়?
উত্তর: যেসব কারণে ওযু ভঙ্গ হয় সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়। যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়, সেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। পানি পাওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়। কোনো রোগের কারণে তায়াম্মুম করা হলে, সে রোগ দূর হওয়ার সাথে সাথে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।

১১. ইবাদতের জন্য তাহারাত প্রয়োজন কেন?
উত্তর: ইবাদতের জন্য তাহারাত তথা পবিত্রতা প্রয়োজন। পবিত্র না হয়ে নামায আদায় করা যায় না। এমনকি ইবাদতও কবুল হয় না। এ - প্রসঙ্গে মহানবি (স.) বলেন, "পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল হয় না এবং আত্মসাতের মাল সাদাকা (দান) হয় না।" (মুসলিম)
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url